টুরিস্টদের কাছে আর্ষনীয় ফ্রান্স ও সুইজারল্যান্ড এর সীমান্তবর্তী ফ্রাইবুর্গ শহরের যে ল্যাঙ্গুয়েজ স্কুলে আমরা এসেছি তার প্রথম বাংলাদেশি স্টুডেন্ট আমি । তাইতো আমার আইডি ছিল বিডি-১ , আমাদের ব্যাচে আরও ৩ জন বাংলাদেশি ছিল। ভিসা পাবার পর হাতে মাত্র ৩ সপ্তাহের মত টাইম থাকায় তাদের সাথে আসা হয়নি আমার। একেতো অফিসের ঝামেল অন্যের ঘাড়ে না চাপিয়ে দিয়ে আসতে পারব না , তার ওপর তারা ৩ জন ক্লাস শুরুর এক সপ্তাহ আগে এসেছিল । এক সপ্তাহের থাকার খরচ ১০০ ইউরো আর খাবার খরচ এর হিসাব করে সব ঝক্কি ঝামেলা পেরিয়ে ক্লাস এর ঠিক আগের দিন আসলাম । পরের দিন অন্যদের সাথে ল্যাঙ্গুয়েজ স্কুলে পরিচয় । তাদের মধ্যে ২ জন ল্যাঙ্গুয়েজ এর পর ব্যাচেলার আর অন্য জন আমার মত ল্যাঙ্গুয়েজের পর মাস্টার্স এর জন্য এসেছে।

অনেক দিন হল কার সাথেই তেমন যোগাযোগ হয় না। সবারই ল্যাঙ্গুয়েজ কোর্স শেষ হয়ে গেছে প্রায় ১০-১১ মাস এর মত হল।একজন ইতিমধ্যে কোথাও এডমিশন নিতে না পেড়ে আর ল্যাঙ্গুয়েজ কোর্স ও শেষ করতে না পেড়ে চলে গেছে আয়ারল্যান্ডে , আর একজন ২য় বার চেষ্টা করে স্টুডেন্ট কলিগ পাশ করে এখন চলে গেছে । বাকি অন্য জন এখনও ল্যাঙ্গুয়েজ কোর্স করছে। আমাদের প্রথম বাংলাদেশি ব্যাচ এর পর আরো ২ টা ব্যাচ এসেছিল । সব মিলিয়ে প্রায় ২৫ জনের মত ছিলাম আমারা সেই স্কুলে।যাদের অনেকেই HSC শেষ করে এসেছে। প্ল্যান ল্যাঙ্গুয়েজ কোর্স শেষে স্টুডেন্ট কলিগ করে ব্যাচেলর এর। এজেন্সি থেকেও এমনটাই জেনে এসেছে। সবার আগে আসায় প্রায়ই অন্যরা পরামর্শ চাইত । আমরাও আমাদের মত সাহায্য বা পরামর্স দেবার চেষ্টা করতাম ।দু এক জন হাতে গুনা ধনী পরিবারের ছেলেমেয়ে ছাড়া বাকিরা সবাই ছিল মুটামুটি মধ্যবিও আর নিন্মমধ্যবিও পরিবারের । তাই সমস্যগুলুও ছিল অনেক বেশি জটিল ।কেমন আছে তাঁরা আর কোথায় আছে তাঁরা তা জানার আগে যাদের কারনে আজ আমাদের এই অবস্তা তাদের সম্পর্কে বলে নেই। ভিসা ইন্টারভিও এর ডেট পারার পরে কি ঘটল , আগের ঘটনাগুলু পাবেন পুর্বের নিউজলেটারে।

যাই হোক অনেক চরাইউতরাই পেরেয়ে অবশেযে ভিসা িইন্টারভিও এর ডেট পেলাম। তাও আবার আমার ক্লাস শুরু এর মাত্র ১২ দিন আগে ভিসা সে ডেট। আমার অফার লেটার এ ক্লাশ শুরু এর ডেট ২৬ সে মার্চ ২০১২ আর আমার ভিসা ইন্টারভিও এর ডেট ১৪ ই মার্চ ২০১২ , কতকিছুই না করতে হল ভিসা পাবারতো দুরের কথা ভিসা ইন্টারভিওর ডেট নেবার জন্য । প্রথমেতো ডেটই পাই না, নতুন অফার লেটার আর নতুন ইমেল এড্রেস দিয়ে মেইল করে যাই হোক ভিসা ইন্টারভিও এর ডেট পেলাম। পরের দিন গেলাম ভিসা ওয়াল্ড এর অফিসে আমার পরবর্তি করনীয় কি তা জানতে । আমার কাউন্সিল আবার পাঠাল সেই মিস্টার আলমগিরের কাছে ভিসা ইন্টারভিওতে এর প্রস্তুতি এর জন্য, এর আগে যার কাছ থেকে ভিসা ইন্টারভিওর ডেট নেবার ইমেল কি করে লিখতে হবে তা জানতে গিয়েছিলাম । মজার ব্যাপার হচ্ছে তার কথামত প্রথমবার ইমেল পাঠিয়েছিলাম যার ফলস্বরুপ প্রথমবার কিছুতেই ডেট পাচ্ছিলাম না এম্বেসি থেকে। যেই আমি সে সময় অক্রফোর্ড, ব্যাংকক অফিসের আর আইএনজিও গুলুর সাথে কমুনিকেশনেজ জন্য দৈনিক কম করে হলেও ১৫০-২০০ ইমেল আদান প্রধান করতাম সেই আমি এজেন্সি এর কাউন্সিলর এর কথায় একজনের পরামর্শ নিতে গিয়েছিলাম ইমেল লেখার জন্য । যাই হোক তার রুমে গিয়ে দেখি সে ব্যাপক ব্যাস্ত , আর কয়েকজন বসে আছে , ইউকে ,আমেরিকা ইন্টারভিওর প্রস্তুতির জন্য এসেছে তার। যাই হোক ঘন্টাখানেক পর আমার সিরিয়াল এল। কোন দেশ , আর কোন সিটি , ভিসা ইন্টারভিও এর ডেট কবে , প্রাথমিক প্রশ্নের পর একটা সিট বের করে দিল যাতে ভিসা ইন্টারভিও এর ব্যাসিক প্রশ্নের একটা লিস্ট আছে । যার কয়েটা প্রশ্নটা আমার মনে আছে, What is Your Name ? Whay you would like to go Germany? জীবনে বহুত ইন্টারভিও দিছি । আলমগির সাহেব কিছুক্ষণ পর পর আপনার কি মনে হয় ৯ মাস জার্মান ভাষা শেখার জন্য যথেষ্ট ? এ প্রশ্নটা আর আপনি কেন জার্মান যেতে চান ? ঘুরে ফিরে এই দুটি প্রশ্ন করছেন আর তার উওর ও বলে দিচ্ছেন । যাই হোক আধা ঘন্টার মত তার সাথে ভিসা ইন্টারভিও এর প্রস্তুতি নিয়ে তিনি বিদায় দিলেন আর প্রশ্নগুলু শিখে পরের সপ্তাহে আবার আসতে বললেন। বাসায় বসে ইন্টারনেট ঘেটে ল্যাঙ্গুয়েজ স্কুল, শহর আর ইউনি সম্পর্কে ইনফরমেশন মুটামুটি কালেক্ট করে কিছুটা প্রশ্তুতি নিয়ে পরের সপ্তাহে গেলাম আবার । কিন্তু ওনাকে না পেয়ে গেলাম আমার কাউন্সিলর এর কাছে। অনেকক্ষণ বসিয়ে রেখে একথা সে কথার পর সে আসল পয়েন্ট এ আসল। ভিসাতো কনফার্ম। আমি ইন্টারভিও দিব আমার যতটানা কনফিডেন্স তার চেয়ে বেশি কনফিডেন্স তার। এখন তা হলে সার্ভিস চার্জটা পে করে দিতে। যেটা কিনা ১৫ হাজার টাকা ভ্যাট সহ ১৭৩২৫ টাকা এর মত ছিল। ভিসা এর আগে দিব কেন? কথাতো ছিল ভিসা এর পর। তার কথা ভিসাতো হবেই ।তার পর ও সেদিন আমি পে করি নি। পরে যদিও ইন্টারভিও এর আগেই পে করেছিলাম ।

ইতিমধ্যে ক্যালেন্ডারের পাতা থেকে আর একটি বছর চলে গেছে। নতুন বছর ২০১২ আমার জন্য নতুন একটা সুসংবাদ নিয়ে আসল। পৃথিবীর সেরা ইন্টারন্যাশনাল এনজিও (২০১২ সালে ওয়াল্ড এর টপ ১০০ তে নাম্বার ২ ) অক্সফাম থেকে ডাক পেলাম তাদের সাথে কাজ করার। যদিও এর জন্য অনেকগুলু ধাপ পার করতে হয়েছিল । এবারতো নতুন করে কনফিউশন তৈরি হয়েছে । জার্মান না আইএনজিও ? বাবা মার কোন মন্তব্য নেই। ১৫ ফেব্রুয়াবি ২০১২ তে জয়েন করে ১৪ ই মার্চ ভিসা ইন্টারভিও । কি করব ? কিছুতেই কিছু বুঝে উঠতে পারছি না। অবশেযে বিশেযজ্ঞদের পরামর্শের সাহয্য নিলাম , গেলাম আইসিসিডিডিআরবির সাবেক বস এর কাছে, অক্সফাম এর সাউথ এসিয়ান লজিস্টিক ম্যানেজার আর আমার তখনকার বস এর কাছে । তাদেরও কথা একটাই ভাল সুযোগ ছেড়ে দেওয়া উচিত নয়।

ভিসা ইন্টারভিও এর আগের দিন গেলাম আবার ফাইনাল প্রস্তুতিটা ঝালাইয়ের জন্য ভিসা ওয়াল্ড এর অফিসে। সে কথা না হয় আগামী পর্বে লিখব।

গত প্রায় মাস তিনেক ধরেই ভাবছি বন্ধুদের খুজখবর নেব। তাইত সবাইকে একটা কমন মেসেজ দিয়েছিলাম ফেসবুকে , তাদের বর্তমান অবস্তা জানতে।অবস্তানগত দুরত্বতার সাথে সময় আর ব্যস্ততার জন্য অনেকেই আমার মেসেজের জবাব দিতে পারে নি। কিন্তু তার কাছের বন্ধুর কাছে থেকে তাদের সম্পর্কে জানতে পেরেছি।

২৫ জনের মধ্যে ৭ জনের মত ছিল যারা জার্মান লান্গুয়াগে + ব্যাচেলার কোর্স এ পড়ার স্বপ্ন নিয়ে এসেছিল।তাদের সবারই লান্গুয়াগে কোর্স এর মেয়াদ ছিল ৬ মাস।যেকানে বি -১ লেভেল পর্যন্ত শেষ করার কথা ছিল।তার পর স্টুডেন্ট কলিগ এর এডমিশন টেস্ট দিয়ে পাস করলে দেন ১ বছর স্টুডেন্ট কলিগ করবে। কিন্ত দুঃখ জনক হলেও সত্য স্টুডেন্ট কলিগ এডমিশন টেস্টতো দুরের কথা , লান্গুয়াগে কোর্স বি -১ লেভেল পর্যন্ত শেষ করতে পারে নি এখন ও অনেকে। কেন পারে নি? এ প্রশ্নের জবাব অনেক গুলু , জার্মান ভাষআ কঠিন। তার অপর বাসা ভাড়া , নিজের চলার খারচ , তার উপর দেশ থেকে আসার সময় ৮-১২ লক্ষ টাকা এর ঋণ শোধ করা তাড়া ,এত টেনশন এর পর সারদিন কাজ করলে পড়ার টাইম কখন।
যার ফল ১৩ জন এর মধ্যে
১ জন(Ex Cadet , যার আইলটিএস ৬,৫ ছিল) ইংলিশ এ এডমিশন নিয়েছে ।
১ জন স্টুডেন্ট কলিগ এর এডমিশন টেস্ট দিয়ে পাস করা তা ও প্রথম বার নয় , সেকেন্ড বার দিযে।
৫ জন লান্গুয়াগে কোর্স বি -১ লেভেল পর্যন্ত শেষ করে নেক্ট জানয়ারিতে স্টুডেন্ট কলিগ এডমিশন টেস্ট এর প্রস্ততি নিচ্ছে।
১ জন আয়ার্ল্যান্ড এ চলে গেছে আর কোন পথ না দেখে।
১ জন জার্মানিতেই আছে কিন্তু রাজনীতিক আশ্রয় এর জন্য আবেদন করে, যদিও প্রথমে লান্গুয়াগে + ব্যাচেলার কোর্স এ পড়ার জন্য এসেছিল।
৪ জন ফ্রান্স এ চলে গেছে।

আর বাকি প্রায় ১২ জন জার্মান লান্গুয়াগে + মাস্টার্স কোর্স এসেছে।
১ জন অলরেডি বিডিতে ব্যাক করে চলে গেছে।
৪ জন ইংলিশ এ এডমিশন নিয়েছে।
আর ৭ জন এখন লান্গুয়াগে কোর্স লেভেল শেষ করে টেস্টডাফট এর প্রস্ততি নিচ্ছে
।৯ মাসের লান্গুয়াগে কোর্স শেষ করে অনেকেই আবার ১০০০-১২০০ ইউর দিয়ে লান্গুয়াগে কোর্স আবার রিপিট করছে কারন ভিসা ও তো এতদিনে শেষ হয়ে গেছে। এম্বেসিতে ভিসা বাড়াতে গেলেতো আবার ইউনি এডমিশন বা যে কোন একটা পেপারস দেখাতে হবে যে কি কারনে সে জার্মানি তে থাকেত চায়। লান্গুয়াগে স্কুল ও এতে করে লাভবান হচ্ছে। প্রথম যখন আমার ভিসা বাড়াতে দিয়েছিলাম তখন একাউন্ট এ টাকা দেখাতে হত না , আর এখন বলে দিছে ৮০০০ ইউর নিজের একাউন্ট এ থাকতে হবে। আর সবচেয়ে আপডেট নিউজ হচ্ছে , স্টুডেন্ট কলিগ এর জন্য যে ২ জন প্রস্তুতি নিচ্ছে তাদেরকে ইতিমধ্যে বলে দিয়েছে স্টুডেন্ট কলিগ এ চান্স না পেলে তাদের আর নতুন করে ভিসা দেয়া হবে না, দেশে চলে যেতে হবে। একমাত্র আল্লাহই জানে কি আছে তাদের কপালে।

এজেন্সি- স্বপ্ন ও বাস্তবতা (পর্ব ১ )

এজেন্সি – স্বপ্ন ও বাস্তবতা (পর্ব 2 ) – ফাঁদে পা দেয়া

এজেন্সি – স্বপ্ন ও বাস্তবতা (পর্ব ৩ ) -বিশ্বাস এখানে ও সেখানে

এজেন্সি – স্বপ্ন ও বাস্তবতা (পর্ব ৪)- খরচের আসল হিসাব

এজেন্সি – স্বপ্ন ও বাস্তবতা- (পর্ব ৫ )- ইনকাম এর হিসাব

এজেন্সি স্বপ্ন ও বাস্তবতা- পর্ব ৬ (ভুলের সূচনা)

এজেন্সি- স্বপ্ন ও বাস্তবতা (পর্ব ৭) -বন্ধুত্বতা

এজেন্সি- স্বপ্ন ও বাস্তবতা (পর্ব ৮ )- সম্মান আর ভালবাসা

এজেন্সি- স্বপ্ন ও বাস্তবতা (পর্ব ৯ )– নতুন আত্মপরিচয়

এজেন্সি- স্বপ্ন ও বাস্তবতা (পর্ব১১ ) – বাংলাদেশি মেয়ের স্বপ্নভঙ্গ

mm

By Anis

Vice-President (Media & Marketing) Overall moderation, group, page, website, magazine. Responsible for learn German for FREE movement.

Leave a Reply