দেখতে দেখতে জার্মানিতে এক বছর পার করে ফেললাম । অনেক চড়াই উতরাই এর মধ্যদিয়ে কেটে গেল প্রায় ১৫ টি মাস । অনেক কিছুই বদলে গেছে এইক দিনে। আনেক দিন হল ল্যাঙ্গুয়েজ স্কুল এর বন্ধুদের সাথে যোগাযোগ হয়না। ব্যাস্ততা আর বাস্তবতা সব মিলিয়ে আনেক দিন হয়ে গেল কারও খবর নেয়া হয় না । সবার কি অবস্তা তা জানার জন্য এক বন্ধুকে কল দিয়ে তার মোবাইল অফপেয়ে তারই রুমমেটকে কল করে যা শুনলাম তাতে যতটা না অবাক হলাম তার চেয়ে বেশি কষ্ট পেলাম।। জার্মানীতে এই ল্যাঙ্গুয়েজ স্কুলে আসা প্রথম ৪ জন স্টুডেন্ট গ্রুপে ছিলাম আমরা । মনে আছে প্রথম ল্যাঙ্গুয়েজ ক্লাস শেযে তার মন্তব্য ছিল আয়ারল্যান্ডে তার চাচা আছে আমরা রাজি থাকলে সে ব্যবস্তা করবে । যাই হোক সে সময় আর জাওয়া আর না হলে ও ১ বছর এ কিছুতেই জার্মান ল্যাঙ্গুয়েজ আর কোথাও এডমিশন নিতে না পেরে অনেকেই যখন ৮০০-১২০০ ইউরো দিয়ে ল্যাঙ্গুয়েজ কোর্স করছে ভিসা বাড়ানোর জন্য , তখন সে হয়ত এর চেয়ে বরং চাচার কাছে পাড়ি দেয়াকেই বেশি নিরাপদ মনে করেছে । তার অবস্তা কেমন তা জানা হয় নি , তার রিসেন্ট ফেজবুক স্টেটাসটা এইরকম Everything Going wrong…..সু কারূই বুঝতে বাকি নেই সে কেমন আছে…
মোটামুটি দেশের ৪ টা নামকরা বড়বড় এজেন্সি ঘুরে যে অভিজ্ঞতা নিয়েছি তা বাস্তবায়নের সময় বরাবর এর মত যে জিনিসটার কথা চিন্তাকরেছি তা হল টাকা…কেউ বলেছে ভিসার আগে ৭ লাখ,কেউ ৬ লাখ , কেউ ৪.৫ লাখ…সবার কথার মধ্যে যেগুলু মিলেছে তার কিছু হল… ভিসা পাবার পর ব্লক এর টাকা তুলে ফেলা যাবে, কাজ করে খরচ চালিয়ে দেশে টাকা পাঠানো যাবে,…যাই হোক সববিচার বিশ্লেযন করে শেযমেয আবার ভিসা ওয়াল্ড অফিসে গেলাম…কাউন্সিলরকে আমার অবস্তা বললাম…বাপের ১০ লাখ টাকা আছে প্রভিডেন্ড ফান্ডের… সে আমাকে বলল সেই আগের কথা …ভিসা এর আগে শুরুতে ২ লাখ ৮০ হাজার টাকা ল্যাঙ্গুয়েজ কোর্স ফির হাফ , প্লাস এডমিসন ফি, প্লেন ফেয়ার, কেনাকাটা সব মিলিয়ে ৪.৫ লাখ টাকা এর মত লাখবে…আর ভিসা এর পরতো ব্লক এর টাকা তোলা যাবে… প্রব্লেম হবে না…আমি যেন যত তারাতারি পারি পেপারস এর ফটোকপি , ছবি আর ফাইল ওপেন এর জন্য ৩১৩৫ টাকা নিযে আসি…ফাইল ওপেন হলে পেপারস তাঁরা জার্মান পাঠাবে…এসেসমেন্ট এর জন্য…তারা ওকে বললে দেন ল্যাঙ্গুয়েজ কোর্স এর হাফ, কোর্স রেজিস্টেসন ফি, ইউনি এনরোলমেন্ট ফি, ব্যাঙ্ক ট্রন্সফার ফি বাবদ সব মিলিয়ে ২ লাখ ৮০ হাজার টাকা জমা দিতে হবে…কাউন্সিলর এর ভরসা পেয়ে পরের দিন…কাগজপএ এর ফটোকপি আর ৩১৫০ টাকা দিয়ে ফাইল ওপেন ক্রে…লাইফের চরম তম দিনের খাতায় নাম লেখালাম…জিবনের সবচেয়ে করলাম… মজার ব্যাপার হচ্ছে…ফাইল ওপেন ফি ৩০০০ টাকা আর ১৩৫ টাকা হচ্ছে ভ্যাট…যার রশিদ ও কিনা দিয়ে দেয়… ভিসা ওয়াল্ড গভমেন্ট ভ্যাট দেয় … ভ্যাট রশিদ ও দিচ্ছে…ভ্যাট রশিদ দেখে পুরোনো একটা ঘটনা মনে পরে গেল…গুলশানের একটা ৩ স্টার হোটেলে জব করার সুযোগ হযে ছিল…IELTS এর ভাইবা এর পরিখা হয় এই হোটেলে…একবার কোরবানির ঈদ এর আগে একদিন এক লোক এসে নিজেকে ভ্যাট অফিসার পরিচয় দিয়ে আমাদের এক কলিগকে মোটামুটি ভয় দেখিয়ে তার কাছ থেকে হোটলের রেজিস্টার খাতা নিয়ে যায়।। সবাই যখন টেনশেনে কি হবে এখন…তার পরের দিনই এই একই লোককে তার পরিবার সহ হোটেলের রেস্টুরেন্টে আমাদের ডাইরেক্টে এর সাথে লাঞ্চে দেখে ব্যাপার বুঝতে বাকি রইলনা… যেটুকু বাকি ছিল লাঞ্চ শেষে ডাইরেক্টে যখন একটা খামে ২০ হাজার টাকা ভরে দিতে বলল তখন বাকিটা ও ক্লিয়ার হয়ে গেল…
৩১৩৫ টাকা দিয়ে ফাইল ওপেন করলাম ৪ অক্টোবর ২০১১ তে…তার ২ দিন পরই ভিসা অফিসের ফোন আমার ল্যাঙ্গুয়েজ কোর্স এর অফার লেটার আসছে…এখন ২ লাখ ৮০ হাজার টাকা দিয়ে অপেক্ষা করতে হবে ভার্সিটি এর অফার লেটার এর জন্য…মাস খানেকের মধ্যে আশা করা যায় অফার লেটার চলে আসবে। টাকা দেয়া এর শুরু হয়ে গেল…এত টাকাতো আমার কাছে নাই … টাকাতো বাপের কাছে…তিনি থাকেন গ্রামে। খালাতো বোন এর কাছ থেকে ধার করে লাখ টাকা নিয়ে দিলাম। আর শুরু করলাম অফার লেখার এর অপেক্ষা । সে অপেক্ষা এর কথা না হয় আগামি লেখায় বলব…ততদিন অপেক্ষায় থাকুন…