সাবধান

Kazi Mohammad Salah

আসসালামু আলাইকুম,অনেকদিন যাবত চিন্তা ভাবনা করেছি আমাদের দেশের “এজেন্সি” নিয়ে কিছু একটা লিখবো কিন্তু আমি লিখনিতে ততটা দক্ষ না হওয়াতে, লিখতে ভয় হইতেছিলো। তবে এখন সময় এসেছে কিছু একটা লিখার। ভুল ত্রুটিগুলো ক্ষমা দৃষ্টিতে দেখবেন।আজকাল ইনবক্সে অনেকেই এজেন্সি নিয়ে একই টাইপের কিছু প্রশ্ন জিগ্যেস করে তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি হলোঃ

১. এজেন্সি কি ভিসা দিতে পারে?২. এজেন্সি কি এপ্যায়নম্যান্ট ব্যবস্থা করে দিতে পারে?৩. ভিসা পেতে এজেন্সির হাত কতটুকু পর্যন্ত সীমাবদ্ধ?সব গুলো প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার আগে চলেন ব্যক্তিগত একটা গল্প শুনি।

★আমার খুব কাছের একজন ভাল ফ্রেন্ড(ছেলে) ছিলো। উনি নিজের সর্বোচ্চ চেষ্টা ও ফ্রেন্ডসদের সাহায্য সহযোগিতা নিয়ে অফার লেটার থেকে শুরু করে যাবতীয় কাজ গুলো নিজে নিজে সম্পূর্ণ করেছেন। করোনা গত সমস্যার কারনে ইন্টারভিউ ডেট পেতে অনেক সময় লাগতেছিলো(আনুমানিক ৬ মাসের মতো অপেক্ষারত) ।

স্বাভাবিক ভাবে একটু ডিপ্রেশনে চলে যাচ্ছিলো। আমার ভালো ফ্রেন্ড হওয়াতে নিজের সাধ্যের মধ্যে বুঝানোর বা সাহায্য করার চেষ্টা করতাম। এজেন্সির কিছু কর্মকাণ্ড ও ব্যক্তিগত কিছু ঘটনার কারণে হঠাৎ উনার সাথে আমার ব্যক্তিগত ভাবে সম্পর্ক নষ্ট হতে থাকে। আমি সব সময় উনাকে এজেন্সি সম্পর্কে নেগেটিভ ধারণা দিতাম। উনি নিজেও এজেন্সি একদম পছন্দ করতেন না কিন্তু হঠাৎ তার ছোট জীবনে লেজ কাটা এক শিয়ালের আগমন এবং তাকে শিয়ালের লেজ না থাকলে সৌন্দর্য অনেক বেশি পরিমাণে হয়ে যায় সেটা বুঝিয়ে তাকে এজেন্সির ফাঁদে ফেলেছে (মানে হলো যেই ফ্রেন্ডের সাথে পরিচয় হয়েছে সে এজেন্সিতে গিয়ে আগেই নিজের লেজ কেটেছে)।এবং তাকে পরামর্শ দিয়েছেন লাখ খানিক টাকার বিনিময়ে দ্রুত এপ্যায়নম্যান্ট ও ভিসা নিয়ে দিবে। উনি আমার ভাল ফ্রেন্ড হওয়াতে স্বাভাবিক ভাবেই আমি উত্তেজিত হয়ে এজেন্সির খারাপ দিক গুলো বুঝানোর চেষ্টা করি কিন্তু লেজ কাটা শিয়ালের পরামর্শে তখন আমাকে উন্মাদ ও আমি ফ্রেন্ড নামের কলংক বলেও দাবি করেন এবং উনার ফ্যামিলি আর্থিক ভাবে অনেক ভাল সেটাও বুঝানোর চেষ্টা করেন এবং এরকম সামান্য কিছু টাকা উনাদের ফ্যামিলির জন্য কিছুই না।

আমি চুপ!যাইহোক এই সত্য ঘটনা বলার অন্যতম কারন হলো গ্রুপে বা আমাদের আশেপাশে অনেকেই আছেন যারা নিজেরা জার্মানি রিলেটেড বিভিন্ন গ্রুপ,জার্মানি বা দেশে অবস্থানরত সকলের কাছে পরামর্শ নিয়েও চুপেচাপে এজেন্সিতে ঝাপিয়ে পরে!!এদের মধ্যে আমার ফ্রেন্ড টাইপের মতো কিছু লাখপতি আছেন যারা ফ্যামিলির টাকার ক্ষমতা দেখান, কিছু আছেন নিজে কিছুই করতে চায় না(অলস)! আর কিছু আছেন ভয়ে(কিভাবে কি করবে ইত্যাদি ইত্যাদি)।গল্প শেষ চলেন তিনটা প্রশ্নের উত্তর দেই,

* প্রশ্ন নাম্বার ১মঃ আমি যতটুকু জানি ভিসা দেওয়ার ক্ষমতা একমাত্র Auslanderbehörde(রাথ হাউস), আপনি যেই ভার্সিটি থেকে অফার লেটার পেয়েছেন এবং আপনার ভার্সিটির যে এড্রেস দিবেন সেখানকার Auslanderbehörde। তাছাড়া এম্বাসি অফিসারও আপনাকে ভিসা দিতে পারবেন না। মূলত উনারা আপনার যোগ্যতা যাচাই করতে পারবেন। আপনি যোগ্য না হলে কেউই ভিসা দিতে পারবে না।তবে উনারা আপনার সম্পর্কে ভাল রিভিউ দিলে ভিসা পাওয়ার সম্ভবনা অনেক বেশি থাকে।আর এখানে এজেন্সি ভিসা দিতে পারবে প্রশ্নই আসে না!! তার মানে উনারা এখানে শূন্য (০)।

* প্রশ্ন নাম্বার ২য়ঃ আমি যতটুকু জানি এপ্যায়নম্যান্ট এর ব্যবস্থাও এজেন্সি করতে পারে না। এখানেও উনারা শূন্য(০)।

* প্রশ্ন নাম্বার ৩য়ঃ এজেন্সির সীমাবদ্ধ কতটুকু যারা এজেন্সিতে একবার যান তারা সবচেয়ে ভালো বলতে পারবেন। পরিচিত কিছু মানুষের অভিজ্ঞতা থেকে যতটুকু জানতে পেরেছি, এজেন্সি আপনাকে যা করতে পারবেন তা হলোঃ

১, আপনার সকল পেপার্স পার্সেল করে ইউনি এসিস্ট এ পাঠাতে পারবেন।

২, ইউনি এসিস্ট এ একটা একাউন্ট খুলে দিতে পারবেন।

৩, ইউনি এসিস্টর এর টাকা সেন্ড করে দিতে পারবে।

৪, অফার লেটার এর জন্য এপ্লাই করে দিতে পারবে।

৫, অফার লেটার পাওয়ার পর জার্মান এম্বাসি তে এপ্যায়নম্যান্ট এর জন্য এপ্লাই করে দিতে পারবে।

৬, এম্বাসি ইন্টারভিউ এর জন্য পুর্বে দেওয়া কারো ইন্টারভিউর প্রশ্নের পিডিএফ ফাইলটা দিতে পারবে। তবে নিজের এডিট করে নিতে হবে!

৭, ভিসা পাওয়ার পর আপনার বড়লোক বাবার লাখ খানিক টাকা তাদের পকেটে ঢুকাতে পারবে।

৮, আপনার একটা স্টাইল করা সুন্দর ছবি এডিট করে তাদের পেইজে আপলোড করে আপনাকে শুভ কামনা ও তাদের ক্ষমতা এজেন্সির সম্পর্কে জানাতে পারবে।

তাছাড়া আরো টুকটাক কিছু টাকলা টাইপের কাজ করতে পারে।আশা করি উনাদের ক্ষমতা সম্পর্কে ধারণা পেয়ে গেছেন।উপরে যেই কাজ গুলো এজেন্সি করতে পারবে সেইগুলা আপনি চাইলেও সহজে করতে পারেন। তবে অবশ্যই আপনাকে নড়াচড়া দিয়ে বসতে হবে। এই গ্রুপ বা জার্মান স্টুডেন্টস টাইপের যেকোনো গ্রুপ কিংবা জার্মানিতে বসবাসরত ফ্রেন্ডস,ভাই-বোন বা অন্যন্য আত্বীয়স্বজনদের কাছে সাহায্য নিতে পারেন।আপনার কাছে হয়তো টাকাটা কিছু না তবে শিক্ষা টাকা দিয়ে কেনা যায় না।

আজ আপনি নিজের যোগ্যতায় সকল কিছু করবেন, কাল আপনি আরেকজনকে এই ব্যাপারে সাহায্য করতে পারবেন।আপনি যখন এজেন্সি দিয়ে কাজ গুলো করাবেন তখন টাকার সাথে নিজের অভিজ্ঞতা গুলোও বিক্রি করে দিবেন (যদি এই ব্যাপারটা ভবিষ্যতে বুঝতে পারবেন)।আমার নিজস্ব মতামত শুনে হয়তোবা অনেকেই আমাকে বাজে মন্তব্য করবেন বা এজেন্সির সম্মানিত ব্যক্তিবর্গ খারাপ ভাবে নিবে কিন্তু তাতে আমার কিছুই আশে যায় না।

কারণ কিছু কটু কথায় যদি আপনার মঙ্গল আসে তাতে সামান্য লোকের সমালোচনায় কিছুই আশে যায় না।আপনারা যারা এখনো দেশে আছেন, উপরের লিখা গুলো মনযোগ সহকারে পড়ুন, সামান্য একটু চিন্তা করুন ভাবুন আর নিজেকে প্রশ্ন করুন। আপনি কি কি করতে পারেন, কি কি করতে পারেন না? আর এজেন্সি কি পারে?যখন আপনি নিজেকে বুঝতে সক্ষম হবেন, তখন যারা নিজের সার্থের কথা চিন্তা না করে আপনাদের সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন তাদের সার্থকতা লাভ হবে। আশা করি আমি যা বুঝাতে চেয়েছি আপনারা সহজে বুঝতে সক্ষম হয়েছেন।উপরের লিখায় ভুলভ্রান্তি হলে ক্ষমা দৃষ্টিতে দেখবেন,আর লেজ ছাড়া শিয়াল সাহেবরা আমাকে ভুল বুঝবেন না।ধন্যবাদ!

#এজেন্সিকে_না_বলুন

#নিজে_নিজে_সব_কিছু_করুন

#অন্যকে_সাহায্যের_হাত_বাড়িয়ে_দিন

mm

By টিম জার্মান প্রবাসে

আমি জার্মান প্রবাসে! আপনাদের সাথে ছিলাম, আছি, থাকব! :)

Leave a Reply