প্রথমেই ইউরোপে বাংলাদেশের দুতাবাসগুলোর কাছে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি এক সপ্তাহ ধরে কিছু কল আসার জন্যে। আমি সেই কালপ্রীট যে এই লেখাটি লেখার জন্যে বাধ্য হয়ে পয়সা খরচ করে ইউরোপে অবস্থিত বেশিরভাগ বাংলাদেশী দুতাবাসে ফোন দিয়েছি একটি মাত্র তথ্য জানবার জন্যে…MRP পাসপোর্ট করার জন্যে কি করতে হবে, এপয়েন্টমেন্ট এর দরকার হবে কিনা…

এই সার্ভেটি করা হয়েছে অক্টোবর ২০১৫ তে প্রতিদিন অফিস শুরু হবার ঠিক ৩০মিনিট-১ ঘন্টার মধ্যে অথবা অফিস শেষ হওয়ার ১ঘন্টা পূর্বে ফোন কল করা হয়। উদ্দেশ্য খুবই সাধারন অনেকদিন ধরে বার্লিনের এম্বেসী নিয়ে কথা হচ্ছে, আলাপ হছে অনেক ভুক্তভোগির নানান গল্প কানে আসে। আমি নিজেও ভুক্তভোগী তবে কেউ কথা গুলো বলে না। সরকারী অফিসের অনীহার কথা সবাই বলে, অনেকে বলেন অনেক কাজের চাপ থাকে। ঘটনাটি শুরু হয় যখন আমি নিজে বার্লিন এম্বাসিতে বারবার কল করে, মেইল করে কোনো উত্তর না পেয়ে নিজে যাই এপয়েন্টমেন্ট নেবার জন্যে। নিজে গিয়েও কোনো এপয়েন্টমেন্ট ছাড়াই আমাকে ফেরত আসতে হয়। বলে দেয়া হয় আমরা ব্যস্ত, সব ঠিকঠাক থাকলে ৬-৭ সপ্তাহ পরে এপয়েন্টমেন্ট পাবেন। আমার একটি একাডেমিক কনফারেন্সে অংশগ্রহণ করার কথা কিন্তু পাসপোর্টের সময়সীমা ৬ মাসের কম থাকাতে আমি যেতে পারছি না। এই কথা বলা সত্তেও আমাকে ফেরত পাঠানো হয়।

আমি নিরুপায় হয়ে চেষ্টা করি পাশের দেশের (ভিয়েনা, অস্ট্রিয়া) এম্বেসীতে ফোন করার এবং আমি ফোন করার সাথে সাথেই কানেকশন পেয়ে যাই এবং প্রশ্ন করি- আমি একজন বাংলাদেশী নাগরিক, আমার MRP পাসপোর্ট আছে তবে মেয়াদ শেষ হয়ে যাচ্ছে, কনফারেন্সে যেতে হবে আমাকে কি দয়া করে সময় দেয়া যাবে কিনা। প্রথম উত্তর আসে, আপনার এম্বেসী আপনার কেন এপয়েন্টমেন্ট নিতে হবে? তারপরে আমি যখন বলি যে আমি বার্লিন থেকে আসবো, ব্যাপারটির সাথে সময় এবং ব্যয়বহুল যাত্রা সম্পৃক্ত। অবশ্যই প্রশ্ন আসে, বার্লিনে এম্বেসী থাকতে আমার কেন অন্য জায়গায় ১০-১১ ঘন্টার যাত্রা করতে হবে…পরের দিন আমাকে সেই এম্বাসি থেকে ফোন করে বলা হয় যাতে আমি কারন এবং প্রমানসহ মেইল করি। আমি যথারীতি ইমেইল করে অপেক্ষা করি পরের দিন ফোন আসে, আমাকে বলা হয় আমার আবদেনটি বার্লিনের এম্বাস্সীতে প্রেরণ করা হয়েছে এবং আমি হয়তবা কল পাব। আর তারপরেও যদি আমার প্রয়োজন হয় এপয়েন্টমেন্ট এর প্রয়োজন হবে না সরাসরি খুব সকালে চলে আসলে যদি ওই দেশের বাংলাদেশী নাগরিকদের ভীর না থাকে আবেদন গ্রহন করা হবে। নাহলে ঘন্টা খানেক অপেক্ষা করা লাগতে পারে। আমার পরের সপ্তাহে ঐ শহরে একটি কনফারেন্সে অংশগ্রহণ করার কথা থাকাতে সকালে চলে যাই (বলে রাখা ভালো যে বার্লিন বাংলাদেশ এম্বাস্সী থেকে কোনো কল আসেনি!) এবং ১৫-২০ মিনিটের মাঝে সম্পুর্ন কাজটি হয়ে যায় এমনকি কবে এসে পাসপোর্ট নিয়ে যেতে হবে সেই তারিখও দিয়ে দেয়া হয়। যা কিনা ৪ সপ্তাহ পরেই!

এই ঘটনার পরে আমার মনে প্রশ্ন জাগে তাহলে এতদিন যা শুনছিলাম যে বাংলাদেশ সরকার MRP প্রদানের নানান সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে তার সাথে আরো একটি কারণ এই রকমের ঘটনাগুলো। পাসপোর্ট প্রদানের জন্যে সেন্ট্রাল ওয়েবসাইট করা হয়েছে, পাসপোর্ট দ্রুত প্রদান করার চেষ্টাও করা হচ্ছে তবে কতিপয় দুতাবাসের অল্প কিছু নিষ্ঠাবান কর্মীরা নিষ্ঠার সাথে কাজটিতে বাধা প্রদান করে যাচ্ছেন। এখানে বলে রাখা ভালো যে MRP পাসপোর্টের টেকনিকাল সাপোর্ট হিসেবে দুতাবাসে যাদের বাংলাদেশ সরকার পাঠিয়েছেন, তারা কিন্তু দ্রুত ভালোভাবেই কাজ করে যাচ্ছেন এমনকি বের্লিনেও!

অনেক চিন্তাভাবনা করে দেখলাম দশের স্বার্থে এই ঘটনাটির তদন্ত করা উচিত। আমি এক সপ্তাহ ধরে ইউরোপে অবস্থিত বেশকয়েকটি বাংলাদেশ দুতাবাস এবং কন্সুলোর এ যোগাযোগ করি। এখন আসুন দেখা যাক আমার গবেষনা এবং সার্ভে কি বলে?

শহর সোমবার মঙ্গলবার বুধবার বৃহস্পতিবার শুক্রবার  উত্তর দিয়েছেন উত্তর পাওয়া যায়নি
ভিয়েনা yes yes yes yes yes 5 0
বার্লিন no no yes no no 1 4
ব্রাসেলস Yes Yes Yes Yes Yes 5 0
প্যারিস No Yes Yes No yes 3 2
লিসবন Yes Yes Yes Yes No 5 0
হগ Yes Yes Yes Yes Yes 5 0
Rome Yes Yes Yes Yes Yes 5 0

এখন আমার প্রশ্ন? আপনি, আমি বাংলাদেশের নাগরিক বিদেশে বাংলাদেশী হিসেবে বিপদে আপদে দুতাবাসে যাবার প্রয়োজন কারন দুতাবাসই বিদেশের বুকে একটুকরো বাংলাদেশ। সবার দৃষ্টি আকর্ষন করে বলছি, সবাইতো বলে কিন্তু বিড়ালের গলায় ঘন্টা বাধবে কে? আমি কাজটি করে দিলাম। এখন আপনার দায়িত্ব আপনার অভিজ্ঞতা জানিয়ে বাংলাদেশ সরকারকে সাহায্য করা। ডিজিটাল বাংলাদেশের যুগ বেশি সময় লাগবে না দুরবস্থার অবসান ঘটাতে যদি আপনি নিজে চান! মনে রাখবেন বাংলাদেশ কিন্তু “গনপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ” (Peoples’ Republic of Bangladesh)

সবার জন্যে রইলো শুভ কামনা…পোস্টটি কোনো রাজনৌতিক চিন্তা থেকে লেখা নয়। আমি একজন সাধারন বাংলাদেশী নাগরিক, আমি আমার দেশের এবং দশের উন্নতি চাই। ধন্যবাদ চাইলে পোস্টটি শেয়ার করতে পারেন।

facebook ref

MRP পাসপোর্ট এখন থেকে করা যাবে বার্লিনে
MRP Passport Berlin এবং একজন মোহাম্মদ আলী মহসিন রেজা
‘যার ধন তার ধন নয়, নেপোয় মারে দই’: কীভাবে বার্লিনে নির্ধারিত হল MRP পাসপোর্টের ফি? অজানা কিছু কথা

 

mm

By Tanzia Islam

Tanzia Islam is an admin of BSAAG, learn german and Germanprobashe.com this is a volunteer work from her side for the Bangladeshi community. She is also an admin of Free Advice Berlin. Her volunteer activities are related to educational development, city development and environmental protection. Tanzia is a freelance writer and researcher. Currently she is a doctoral researcher at Technical University of Berlin.

4 thoughts on “প্রবাসী বাংলাদেশীদের MRP পাসপোর্টের সাতকাহন”

Leave a Reply