Sajedur Rahman

April 3 · 

ফাইনালি আপিল করে সেনজেন ভিসা পাইলাম।

একমাসের দৌড়াদৌড়ির পর অবশেষে হল৷ কলেজে পড়ার সময় জার্মানিতে পড়তে যাবার অনেক শখ ছিল। তখন থেকেই ইউরোপের অন্য দেশ থেকে জার্মানি কে বেশি চিনতাম৷ কেন জানি আপন আপন ফিল হইতো। লাস্ট ট্রিপে এক জার্মান শিবলিং এর সাথে পরিচয় হয়। ওদের থেকে আরো জানতে পারি।

দেশে ফিরে ভাবলাম নেক্সট ট্রিপ টা ইষ্টার্ন ইউরোপে দেই। যেহেতু বাজেট ব্যাকপ্যাকিং করি ইষ্টার্ন ইউরোপ বেষ্ট চয়েস ছিল। এরপর প্ল্যানিং শুরু সব পেপার রেডি করা শুরু করলাম। আমি রাজশাহী তে থাকি, তাই এই প্রসেসে গত ৩০ দিনে ৬ বার রাজশাহী থেকে ঢাকা আসতে হয়েছে।

আমার ফিন্যান্সিয়াল টাই খুব স্ট্রং ছিল না, তাই ভেবেছিলাম জার্মান এ্যামবাসীতে এপ্লাই করি। ইন্টারভিউ নেয় জার্মান এ্যামবাসী তাই ভাবলাম সেখানে কনভিন্স করতে পারবো আমি ট্যুরিস্টি ঘুরা শেষে দেশে ফিরবো।

২ মার্চ ডেলটা ইন্সুরেন্স থেকে ১ মাসের ইন্সুরেন্স করি। সেদিন ই এপয়েন্টমেন্ট নেই ১৩ তারিখের। এরপর অনলাইনে ফর্ম পুরন করে আবার ১৩ তারিখ আসি। সকাল সকাল গেলাম ঘন্টা দেড়েক অপেক্ষার পর আমার পালা আসলো।

বাংলাদেশী একটা লেডি ইন্টারভিউ নেয়া শুরু করলো। পুরো শেষন ই ইংলিশে হল। আমি প্রফেশন সেলফ এমপ্লয়েড দিয়েছিলাম। আমি এখনো ভার্সিটিতে পড়ি এটা বলিনাই। সে যখন ব্যবসা পড়াশোনা নিয়ে প্রশ্ন করে তখন এক পর্যায়ে বলে ফেলি ভার্সিটিতে পড়ি এখনো। এটা বলাতেই বললো লিভ লেটার সাবমিট করতে হবে। দুদিন সময় দিল,অর্থ্যাৎ ১৫ তারিখের মধ্যে দিতে হবে। সেদিন ই জিজ্ঞেস করলো আমার নামে কোন ল্যান্ড আছে কিনা। বললাম আছে, কিন্তু ডকুমেন্টস দেই নি।

১৩ তারিখ রাতের ট্রেন ধরে আবার রাজশাহী গেলাম৷ ১৪ তারিখ পেপার কালেক্ট করে সেদিন রওনা দিলাম। ১৫ তারিখ শুক্রবার এ্যামবাসীর গেটে গিয়ে পেপার জমা দিলাম।

এরপর অপেক্ষা করছি, ২১ তারিখ ডেলিভারি ডেট দিসে। আমি কয়েকজনের সাথে পুরো ইন্টারভিউ শেষন টা শেয়ার করার পর বললো তুমি ৭০% শিওর থাক পাবা ভিসা। আমিও কনফিডেন্ট ছিলাম হচ্ছে ভিসা। ইন্টারভিউ এ সবগুলার এন্সার দিয়েছি, কোন জায়গাতে ব্ল্যাংক হইনি।

২১ তারিখ আবার ঢাকা গেলাম, দুুপুরের কড়া রোদে দাড়িয়ে অপেক্ষা করছি। ২.৩০ টা বাজে সবার পাসপোর্ট দেয়া শুরু করলো। আমার আর কজনের পাসপোর্ট নাই। এরপর ডাক দিয়ে ভিতরে নিয়ে গেল। গার্ড বললো যাদের সমস্যা হয় তাদের ভিতরে ডাকে।

আবার ভিতরে গেলাম, ১৫ মিনিট পর ব্ল্যাংক পাসপোর্ট ধরাই দিল সাথে কেন রিজেক্ট করেছে তার কারণ সহ৷ মন ভেঙে গেল একদম। এত পরিশ্রম করে সব কাগজ নিজে নিজে রেডি করে এপ্লাই করলাম সব জলে৷ রিমন্সট্রেশনের কথা জার্মান ভাষায় লেখা ছিল সেটা পরে ট্রান্সলেট করে পড়ে বুঝলাম।

অনেক আগে জার্মানিতে হায়ার স্টাডি নিয়ে ঘাটতে গিয়ে আপিলের কথা জেনেছিলাম। ভাবলাম আপিল করবো কিনা। আমার রিজেকশনের কারণ ছিল

Your Intention to leave the territory of the Member States before the expiry of the visa could not be ascertained.

এটার এগেনস্টে আপিল করে ভিসা কেউ পায়না নাকি। যারে জিজ্ঞেস করেছি সেই এ কথা বলে। আমিও জেদি তাই ভাবলাম শেষ টা দেখে ছাড়ি। খোঁজ নেয়া শুরু করলাম কিভাবে কি করতে হয়। ঢাকার জার্মান এ্যামবাসীর সাইটে কোন ডিটেইলস নাই। বিসাগের সাইটে একজনের পেলাম সেটা স্টুডেন্ট ভিসার।

পরে ইথিওপিয়ান জার্মান এ্যামবাসীর সাইট থেকে একটা গাইডলাইন পেলাম। সেটা ফলো করে আর কিছু ব্লগ ঘেটে লেটার লিখলাম। একটু স্টুপিড টাইপ ছিল যদিও।

সাথে নোটারাইজড করা প্রোপারটি ডকুমেন্ট, এসেট ভ্যালুয়েশন, ভার্সিটির রিসেন্ট পে স্লিপ, আইডি কার্ড, আমার সার্ভ করা সব ক্লায়েন্টের ডিটেইলস আর আমার বর্তমান পড়াশোনা থেকে কাজের ফিল্ড ডিফারেন্ট তাই যে ফিল্ডে কাজ করি তার একটা সার্টিফিকেট এর কপি।

সব সহ সাবমিট করলাম ৩০ তারিখ, শনিবার এ্যামবাসীর গেটে। ১ এপ্রিল আমার কাছে ইমেইল আসলো যে তারা আমার আপিল এপ্লিকেশন পেয়েছে এবং এটার ফলাফল পেতে তিনমাস পর্যন্ত সময় লাগতে পারে।

সবার এক্সপেরিয়েন্স অনুযায়ী আমি বুঝলাম মিনিমাম ২ সপ্তাহ লাগবে। আবার নির্ঘুম রাত, ভাবলাম এত এফোর্ট টাকা আর সময় নষ্ট করলাম। পরদিন মানে ২ এপ্রিল আমাকে কল দিল জার্মান এ্যামবাসী থেকে। আমি ক্লাসে ছিলাম, রিসিভ করলাম।

প্রথমে বুঝতে পারিনাই কে ফোন দিসে পরে বললো জার্মান এ্যামবাসী। আগে হলে খুব গুরুত্ব দিয়ে কথা বলতাম। আমি রিতিমত ঘুরতে ঘুরতে ক্লান্ত। তাই খুব ক্যাজুয়ালি কথা বললাম পুরোটা সময়।

আমি যে নতুন সব ডকুমেন্টস দিয়েছি সেগুলো নিয়ে প্রশ্ন করলো কোথায় থাকি কি করি এসব জানলো। রীতিমত একটা ছোটখাট ইন্টারভিউ নিল এরপর বলে আপনি পাসপোর্ট নিয়ে এ্যামবাসি তে আসেন এর মধ্যে।

আমি ওভার শিওর হবার জন্য বললাম আমি কি তাহলে ভিসা টা পাচ্ছি? ভদ্রলোক রিপ্লাই করলো ” আবার জিগায়” আমরা আপনাকে ভিসা টা দিচ্ছি তবে শর্ত হল ফিরে এসে রিপোর্ট করতে হবে, ১৫ তারিখ যাচ্ছে তাই তো? বললাম হ্যা। তারপর বললো যে কোন ওয়ার্কিং ডে তে ১.৩০ বাজে আসবেন। আমি বললাম ভিসা ইস্যু করতে কতদিন নিবেন? আমি তো আসবো অনেক দুর থেকে তাহলে সেভাবে আসতাম। বললো সেদিন ই আবার চাপ থাকলে পরের দিন। “আবার জিগায় ” কথাটা সে সিরিয়াসলি বলেছে, এটা শুনে আমার মনে হল সব ক্লান্তি চলে গেল।

দেখলাম পরের দু সপ্তাহ বিজি আমি। রাতের ট্রেন ধরে রওনা দিলাম ঢাকা ভিসা আনতে। এ্যামবাসীতে গেলাম ১.৩০ টা বাজে। কাউন্টারে বললাম আমি রিজেক্টের পর আপিল করেছিলাম পাসপোর্ট নিয়ে ডেকেছে৷ সে বললো পাসপোর্ট নিয়ে ডেকেছে তাহলে ভিসা পাবেন।

গেলাম ভিতরে বসে আছি। আগের দিন ইন্টারভিউ নেয়া লেডি একবার ডাক দিল তারপর খোঁজখবর নিল। বললো বসেন ডাকবে আপনাকে। আধাঘন্টা পর ডাক দিল, এরপর আমার পাসপোর্টে গরম গরম প্রিন্টেড জার্মান ভিসা।

এক ঘন্টায় ভিসা পেয়ে নিজেকে ডিপ্লোম্যাট মনে হচ্ছিল 😂। আজকে বেশ কজন ডিপ্লোম্যাট আর বড় বড় সরকারি কর্মকর্তা ছিল। একটা জিনিষ ভাল লাগলো জার্মান এ্যামবাসী দু পয়সার এক্সট্রা পাত্তা দেয়না। নরমাল একজনকে যেভাবে ট্রিট করে, প্রশ্ন করে সেভাবেই তাদের সব করলো৷ এমনকি তাদের বসায় রেখে মিটিং লাঞ্চে চলে গিয়েছিল।

শেষমেশ আমি ভিসা পেলাম ১৬ দিনের৷ ১৫ মে থেকে ৩০ মে, আর সবচেয়ে বড় জোক হল মাল্টিপল এন্ট্রি! একদম যেভাবে আইটিনারি দিসিলাম সেভাবে দিয়েছে ভিসা। ভেবেছিলাম ৪-৫ দিন বেশি দিবে। যাইহোক স্টুডেন্ট হিসাবে হয়তো স্বপ্নের জার্মানি যাওয়া হবেনা, তবে ঘুরতে যেতে পারছি অবশেষে। যেভাবেই হোক যাচ্ছি শেষমেষ।

দিনশেষে স্টুডেন্ট, ফ্রিল্যান্স টাইপের জব, আর কমবয়সী হয়ে সেনজেন ভিসা পাওয়া কে মিরাকল বলা যায়।

mm

By টিম জার্মান প্রবাসে

আমি জার্মান প্রবাসে! আপনাদের সাথে ছিলাম, আছি, থাকব! :)

Leave a Reply