জার্মানীতে সবচেয়ে সময়সাপেক্ষ ভিসা হচ্ছে ফ্যামিলি রিইউনিয়ন ভিসা। জার্মান এম্বাসির ওয়েবসাইটে দেওয়াই আছে মিনিমাম ১২ সপ্তাহ লাগে। আমি খুব স্পেসিফিকালি আমার ভিসা সংক্রান্ত যাবতীয় কর্মকান্ড ও অভিজ্ঞতা বর্ণনা করছি। আশা করি অনেকেরই উপকার হবে যেহেতু প্রায়ই নানারকম কনফিউশনে ভরা পোস্ট দেখা যায়।
আমার ভিসা কার্যক্রেমের টাইমলাইন –
• ভিসা ইন্টারভিউ – ২৭ মার্চ,২০১৮
• বাংলাদেশের ভেরিফিকেশন শেষ – ২৭ এপ্রিল, ২০১৮
• আমার স্পাউস চিঠি পায় – ২২ মে,২০১৮
• সে তার কাগজ জমা দেয় – ১২ জুন,২০১৮
• আমাকে এম্বাসি থেকে মেইল দেয় – ২৫ জুন,২০১৮

এবার আসি কাজের বর্ণনায়। আপনার ফার্স্ট এন্ড ফরমোস্ট কাজ হচ্ছে এপয়েন্টমেন্ট নেয়া, এম্বাসির ওয়েবসাইট থেকে, ন্যাশনাল/ডি ভিসার জন্য। যদি অনেক দেরী তে এপয়েন্টমেন্ট পান, অপেক্ষা না করে নিয়ে নিবেন৷ এরপর প্রতিদিন চেক করবেন স্লট ফাঁকা হয়েছে কিনা। যেমন – আমি প্রথম পাই ২০ এপ্রিল, এরপর একদিন চেক করে দেখি ২৭ মার্চ ফাঁকা। এরকম দেখলে সাথে সাথে আগের এপয়েন্টমেন্ট ক্যানসেল করতে হবে এবং নতুন ডেট বুক করতে হবে। ক্যানসেল না করে নিতে পারবেন না।
এরপর ডকুমেন্ট গোছানোর পালা। ওয়েবসাইট এর রিসেন্ট চেকলিস্ট ফলো করবেন। পুরানো কিছু নিয়ে মাথা ঘামানোর দরকার নেই। তবুও বলি বিশেষ খেয়াল কোথায় লাগবে-
• দুইটা ভিসা এপ্লিকেশন ফর্ম, জার্মান নিয়মে (৩৫×৪৫ মিমি) তোলা ছবি এবং সিগনেচার সহ।
• আপনার পাসপোর্ট
• নিকাহনামা বাংলা + ইংরেজি দিতে হবে।নিকাহনামায় উল্লেখিত আপনার ও আপনার স্পাউসের নাম, ঠিকানা, বাবা-মা এর নাম অবশ্যই পাসপোর্ট অনুযায়ী হতে হবে, এমনকি বানানও। অতি অবশ্যই যে ব্যক্তি বিয়ে পড়াইছে, অর্থাৎ কাজী সাহেব এর নাম ও স্বাক্ষর থাকতে হবে। রেজিস্ট্রেশন যে করছে বিয়ে তার নাম ও স্বাক্ষর থাকতে হবে। সীল সঠিক রাখবেন এবং যে ওয়ার্ডের বাসিন্দা সেই ওয়ার্ডের কাজী দিয়ে বিয়ে পড়াবেন। নিকাহনামা লেখার সময় সবকিছু চেক করে নিবেন। আমার কাজী পরিচিত ছিলো বিধায় ৩ বার কারেকশন করাইতে পারছি, সব কাজী এইটা করবেনা। তাই খুব সাবধান এখানে। দিন-তারিখ-মোহরানা সব যেন প্রোপার থাকে।
• ম্যারেজ সার্টিফিকেট – ইংরেজি । এটাতে কাজীর স্বাক্ষর লাগেনা , যিনি বিবাহ রেজিস্ট্রেশন করান তার স্বাক্ষর লাগে। তবে দুজনে একই ব্যক্তি হলে তো হইলোই।
• ছবি – উভয়ের বাবা মা সহ, পারলে কাজী বিয়ে পড়াচ্ছে এমন ছবি। আমার ছিলো, VO খুশি হইছিল।
• আপনার বার্থ সার্টিফিকেট ইংরেজিতে, অবশ্যই পাসপোর্টের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ ।
• ম্যাপ – আপনার ও স্পাউসের পাসপোর্টে উল্লেখিত প্রেজেন্ট ও পার্মানেন্ট এড্রেস এবং কাজী অফিসের। ম্যাপ আঁকবেন গুগল দেখেই তবে নিজ হাতে। একটা রেফারেন্স পয়েন্ট ধরে আঁকা শুরু করবেন, আশেপাশে ইমপর্ট্যান্ট প্লেসগুলা চিহ্নিত করবেন। যেমন – আমার স্পাউসের প্রেজেন্ট এড্রেস মগবাজার ওয়্যারলেস, তো আমি মগবাজার মোড় থেকে বাসা পর্যন্ত ম্যাপ এঁকেছি গুগল ম্যাপ দেখে। বাহির থেকে বাসার ছবি এবং লোকাল ট্রান্সপোর্ট ইউজ করে কিভাবে ওই রেফারেন্স পয়েন্ট থেকে বাসায় যাওয়া যায় সেটা পয়েন্ট আকারে হাতে লিখে দিবেন দূরত্বসহ (মিটারে-গুগল ম্যাপে পাবেন)
• স্পাউসের ব্লু কার্ড থাকলে A1 সার্টিফিকেট লাগে না, কিন্তু যেহেতু আমার করা ছিলো, তাই VO দিতে বলায় আমি জমা দিছিলাম।

বাকি ডকুমেন্ট ( স্পাউসের স্ক্যান করে পাঠানো – পাসপোর্ট, স্যালারি স্টেটমেন্ট, সিটি রেজিস্ট্রেশন, বাসার কাগজ ইত্যাদি) চেকলিস্ট অনুযায়ী সাজালেই হবে।
এরপর এম্বাসিতে যাবেন, ভিতরে ঢুকে VO ডাকলে তাকে কাগজপত্র দিবেন, তিনি টুকটাক প্রশ্ন করতে পারেন। কনফিডেন্টলি উত্তর দিবেন। যেমন আমাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন – আমি কি করি, বিয়ে কই হইছে মানে কাজী কই বসে বিয়ে পড়াইছে, মেহমান কত ছিল, হাজবেন্ড কোন জায়গায় থাকে, কোন কোম্পানিতে জব করে এগুলোই।
আপনার স্পাউসের যদি ব্লু কার্ড থাকে তবে সেটা VO না জিজ্ঞেস করলেও আপনি নিজে থেকে বলবেন, উনারা খেয়াল করেন না অনেক সময়, আপনার স্পাউসের পাসপোর্টে দেখবেন ভিসা দেওয়ার কোনো এক জায়গায় ‘Blau Karte’ কথাটা লেখা আছে , এটা ওনাকে দেখায় দিবেন – যেটা আমাকে দিতে হয়েছিলো , VO দেখতে পাচ্ছিলো না! -_- এরপর টাকা দিয়ে ( ভেরিফিকেশন ফি ২৪০০০/- + ভিসা ফি ৭৫ ইউরো ওইদিনের রেট অনুযায়ী ) পাসপোর্ট কালেকশন রিসিপ্ট নিয়ে নাচতে নাচতে চলে আসবেন।

আপনার বাসার আশেপাশের মানুষজন বা বাড়িওয়ালাকে জানায় রাখতে পারেন যে ভেরিফিকেশন এ আসতে পারে, বিয়েশাদীর ব্যপারে মানে আপনাকে VO যা জিজ্ঞেস করছে এবং আপনার ব্যপারে তথ্য দিয়ে রাখতে পারেন। যেমন – আমার স্পাউসের আর আমার প্রেজেন্ট এড্রেস ও কাজী অফিসে ভেরিফিকেশন হইছিলো । ওদের বাসার নিচের রিসিপশনিস্ট আর আমার বাসার বাড়িওয়ালার কাছে খোঁজ নিছিলো আর কাজীকেও আগে থেকে বলে রাখছিলাম , উনি সেভাবেই উত্তর দিছিল।
আমি গ্রুপে অনেক অসুবিধা হয়েছে এমন পোস্ট দেখে ফ্রিক আউট করছিলাম অনেক৷ তাই এম্বাসিতে অনেক মেইল আর ফোন দিছিলাম নতুন কোনো ডক লাগবে কিনা জানার জন্য। অরা বলছে লাগলে সেটা সপ্তাহ খানেকের ভিতরেই জানায় ওরা। তবে ভিসার অগ্রগতির ব্যপারে ওনারা খুলে বলেন না কিছু। কিন্তু আভাস দিছিলো যে পজিটিভ কিছু।

তো এরপর আপনি শুধু অপেক্ষা করবেন। আপনার স্পাউসের কাছে যা যা চাইবে তিনি সেগুলো সেভাবে জমা দিবেন। অতঃপর এম্বাসি আপনাকে ডাকবে মেইল বা ফোনে। আপনি একটা ‘ট্রাভেল হেলথ ইন্স্যুরেন্স’ করায়ে পাসপোর্ট আর সেইইই ইন্টারভিউ এর দিন দেওয়া রিসিপ্ট টা নিয়ে হাজির হয়ে যাবেন এম্বাসিতে ভিসা কালেক্ট করতে। আমি ডেলটা লাইফ থেকে ইন্স্যুরেন্স করাইছি, গুলশান ২ সার্কেলে যেটা, সকালে ৩০ মিনিটের ভিতর। ৩০ দিন করবো বলছি, ওনারা ৪৫ দিনের দিছে , টাকা লাগছে ২৬৪৩/- , এরপর দুপুরে মেইলে দেয়া সময় অনুযায়ী ভিসা নিয়ে আসছি।

তো এইটা হইলো মোটামুটি আমার ফ্যামিলি রিইউনিয়ন ভিসা প্রাপ্তির ২ মাস ২৮ দিনের জার্নি। একটু কেয়ারফুল হয়ে কাজগুলো করলে কোনো ঝামেলা ছাড়াই সব প্রোপারলি করা সম্ভব। আই হোপ এই লেখা পড়ে কারো না কারো উপকার হবে। 😁

2 thoughts on “ফ্যামিলি রিইউনিয়ন ভিসা জার্নি (Family Reunion Visa Journey – summed up!)”
  1. family reunion visa apply korar shomoi.jeshob documents niye jawa lagbe seshob ektu ollekh kore likhe din plz?ekta chart den spouse er ki ki documents lagbe? Joma dewar shomoi ki ki nite hobe? koto tk lagbe?plz inform me!

  2. আমি কিভাবে স্টুডেন্ট ভিসায় বাচ্চা সহ এপ্লাই করতে পারবো?

Leave a Reply to farjana Cancel reply