এই সমারে ২০১৭, অনেকের ভিসা রিজেক্ট হইছে, কিন্তু আমি নিজেকে ভাগ্যবান মনে করি কারন অপ্রত্যাশিত ভাবেই ভিসা পাইছি। শুরুটা ২৪ ফেব্রুয়ারি বিকেলে আমার অফার লেটার আসে, এর পরেই শুরু হয় মহাটেনশন হাতে সময় নেই আমার ক্লাস শুরু ৪ এপ্রিল। চিন্তায় ছিলাম ভিসার জন্য আপ্ল্যাই করবো কি না, এত অল্পসময়ের মধ্যে সব কাজ শেষ করা প্রায় অস্যাধ্য। যাইহোক নেমে পড়লাম “খোজ দ্যা ভিসা”, ২৬ তারিখে ছবি, আইডিকার্ড, একাডেমিক কাগজপত্র আর অফারলেটার টা নিয়ে গেলাম বনানী ইবিএল ব্রাঞ্চের তিন তলায় ওখানে বিদেশ গামী সব ছাত্রদের স্টুডেন্ট ফাইল খোলে। ইবিএল এ গিয়ে দেখলাম স্টুডেন্ট ফাইল আর ব্যাক্তিগত ব্যাংক একাউন্ট একইসাথে খোলে আর আগেই এই গ্রুপে পোস্ট দিয়ে জেনে গেছিলাম যে ব্যাক্তিগত (পার্সোনাল) একাউন্ট খোলতে হবে যা নিরাপদ ভিসার জন্য। ফর্ম পুরন করার পর ইবিএল এর ভদ্রমহিলা জানালো যে আপনার ছবিটা পুরনো তাই নতুন ছবি তুলতে হবে। কই পাই নতুন ছবি এই মুহুর্তে, কইলো কাছেই বনানী মার্কেট আছে সেখানে গিয়ে তুলতে পারবেন। চলে গেলাম বনানী মার্কেটে ৩০ মিনিটের মধ্যে ছবি তুলে নিয়ে আসলাম উনাকে জমা দিলাম তারপর ভদ্রমহিলা জানালে এখন কিছু টাকা দিয়ে ব্যাংক একাউন্ট ওপেন করেন।

এরপর বাসায় গিয়ে ডয়েচ ব্যংক এর ফর্ম ডাউনলোড করলাম কিন্তু ক্যামনে পুরন করমু তা জানিনা, এরপর ফেইসবুকে ভাইকে নক করলাম যে এই ফর্ম পুরন করবো ক্যামনে উনি কিছু টিপস দিলেন আর বললেন কয়েকদিন আগে আঃরহিম ভাই পুরন করছে তুমি উনার কাছে থেকে নিতে পার। উনার কাছে থেকে মোবাইলফোন নাম্বার নিয়ে রহিম ভাইকে কল করলেই একজন মহিলা ফোন ধরে বলে “আমি রহিম না”, ল্যাওঠ্যালা কি করি আবার ফোন নাম্বার নিয়ে রহিম ভাই এর সাথে কথা বলে উনার কাছে থেকে উনার পুরন কৃত ফর্ম নিলাম ওইটাই শুধু সিগনেচার ছাড়া ফর্ম নিজের নাম ঠিকানা আর যা যা লাগে তা দিয়া পুরন করে নিয়ে গেলাম বনানীতে ইবিএল এ ওখান থেকে আমার ব্যাংক ষ্টেট্ম্যান্ট তুলে গেলাম ফেডেক্স এ ওখান থেকে ৩২০০ টাকা দিয়ে প্রিপেইড এনভেলপ কিনলাম। ওখান থেকে এনভেলপ, ব্যাংক ষ্টেট্ম্যান্ট, পুরনকৃত ফর্ম ও ১৭০০ টাকা(১০০০+৫০০+২০০) এই নিয়া গেলাম জার্মান এম্বাসিতে দুপুর একটায় । ঢুকে ১ ঘন্টা পরে ডাক পরলো অফিসার বললো তোমার পাসপোর্টের ঠিকানা আর ব্যাঙ্ক ফর্মের ঠিকানা সেইম আছে আমি বললাম হ্যা একই আছে, বললো এখানে ওখানে আর এখানে সাইন কর আমি গ্যাচাং করে পাসপোর্টের যে সিগনেচার আছে সেই একই রকম সিগনেচার বসাইয়া দিলাম আর ১৭০০ টাকা জমা দিলাম আর ফিরে আসলাম। বাসায় এসে খোঁজ নিলাম ব্যাংক একাউণ্ট তৈরি হতে প্রায় ১০-১৫ দিন লাগে এখন উপায় এতদিন অপেক্ষা করলে তো সব শেষ !! এর পর জানতে পারলাম আমার ইউনিভার্সিটির বড় ভাই জাবেদ ইকবাল সিহাব ব্যাংক একাউন্ট কনফার্মেশন ছাড়াই ভিসা ইন্টারভিউ দিয়ে এসেছে। এর পর উনারা সাথে যোগাযোগ করে ভরসা পেলাম ব্যাংক কনফার্মেশন ছাড়াই ভিসা ইন্টারভিউ দেওয়া যায়।

এর পর চিন্তা করতে থাকলাম ভিসা ইন্টারভিউ এর তারিখ নিব কি নিব না , হুট করে ৪ তারিখে ডেট টা নিয়েই ফেললাম। ইন্টারভিউ এর আগের দিন রাতে ঝড়ে বিদ্যুৎ চলে যায় আর আসে না আমি না ঘুমিয়ে ফর্ম পুরন করে সব কিছু নিয়া রওনা দেই এমব্যাসির উদেশ্যে, জ্যাম ঠ্যেলে এম্বাসি তি পৌছি ৮.৪৫ এদিকে আমার ঢুকার কথা ৮ টায় সিকিরিটির লোক ঢুকতে দিবে না বলে আরেক দিনের ডেট নিয়া আসেন, আমি কইলাম ভিতরে গিয়া বল জ্যামে পরছিলাম তাই আসতে পারি নাই না আমাকে ঢুকতেই দিবে না ,আমিও গেট থেকে সরে আসি না এর পর ১০ মিনিট পরে এসে বলে আপনাকে ঢুকতে বলেছে। ভিতরে ঢুকার সময় সিকুইরিটির মহিলা এমন একটা ভাব নিয়া আমারে বল্লো ভিতরে যাইয়া দেখেন আপনার ইন্টারভিউ নেয় কি না । যাইহোক এর পর ভয়ে ভয়ে ঢুকলাম দেখি আমার মত কয়েকজন আসছে ইন্টারভিও দিতে আমি তাদের। তাদের থেকে দেখে দেখে আমি কাগজ গুলো গোছালাম আর পাসপোর্ট সহ এক মহিলার কাছে জমাদিলাম। এর পর এক ঘন্টা পরে ডাক পড়লো। গুড মর্নিং বলে ভিতরে ঢুকলাম ভিসা অফিসার জিজ্ঞেস করলো ইংরেজিতে আর ইউ এরশাদ ? আমি বললাম হ্যাঁ।

এর পর বায়োমেট্রিক ডাটা দিতে সে হাত দিয়া দেখাইলো দুই হাতের ৪ টা করে মোট ৮ আঙ্গুলের ছাপ দিতে হবে আমি যত বারই চাপ দেই হয় না বার বার ভিসা অফিসার মাথা নাড়ে বলে আবার শেষ মেষ ৪ বারের সময় হইলো এর পর দুই বুড়ো আঙ্গুল একসাথে করে দেখাইলো বুঝলাম এই বার বুড়ো আঙ্গুলের খেলা তাউ দিলাম। এর পর ভিসা অফিসার জিজ্ঞেস করলো কোন বিষয়ে পড়েত যাচ্ছি ? বললাম আর্থসাইন্সেস। এর পর জিজ্ঞেস করলো পড়া শেষ করে কি করবা আমি বললাম গবেষণা করবো। আবার প্রশ্নঃ কি নিয়া গবেষণা করবা ? রিমোট সেনন্সিং টেকনোলজি ব্যাবহার করে খনিজ সম্পদ এর অবস্থান নির্নয় করা। এরপর কইলো রিমোট সেন্সিং কি? বললাম নাসা যে সিষ্টেম দিয়া এখান থেকে মঙ্গলের ছবি তুলে ওইটা। এরপর আবার প্রশ্নঃ স্যাটেলাইট থেকে ছবি দিয়া ক্যামনে কাজ করবা। আমি বলাম ছবি নিয়া বিশ্লেষণ করে জায়গা সিলেক্ট করতে হবে এর পর অনুসন্ধান কাজ করতে হবে। এর পর কাগজপাতি দেখে প্রশ্ন করলো বলেন তো সাইস্মিক ডাটা ইন্টারপিটেশন তো পড়েছেন? আমি বললাম হ্যাঁ, এখানে সাইসমিক ডাটা ক্যামনে কাজ করে উত্তর দিলাম এটা রিফ্লেকশন র রিফ্রেকশন হিসাবে কাজে লাগানো হয় আরো অনেক কিছু । এর পর ভিসা অফিসার একটা কাগজ দিয়া বল্লো এখানে সাইন করেন করলাম আর পর তিনি আমাকে পাসপোর্ট ফেরত দিলেন ভবলাম ইন্টারভিও মনে হয় ভালো হয় নাই এই জন্য পাসপোর্ট ফেরত দিল তার পর টাকা জমা দেওয়ার রশিদ দিয়া বল্লো জমা দিয়া আসেন।

এর পর টাকা জমাদিয়ে এসে কাগজটি ভিসা অফিসার কে দিলাম এর পর ১৩ মার্চ আমার ব্যাংক এর সব কাগজ জমাদিই আর ৮ এপ্রিল ওদের মেইল করি ভিসার অবস্থা জানানোর জন্য ১১ এপ্রিল উত্তর আসে আমার অফার লেটারের অথেনটিকেশন পায় নাই তাই আমার ভিসা প্রসেসিং এখনো শুরু করা যায় নি। মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়লো এই সরাসরি আমার ইউনির কো-অর্ডিনেটর কে ফোন দিয়া সব বললাম আর সে বলল দেখতেছি। এর পর ১২ তারিখে ঘুম থেকে উঠে এস এম এস আসে আপনার ই মেইল চেক করেন। ইমেই চেক করে দেখি স্মার্টফোন সহ পাসপোর্ট আর ইনভয়েচ নিয়ে যেতে বলছে। যাইহোক অবশেষে ১২ তারিখেই ভিসা হাতে পেয়েছিলাম।

অফার পেয়েছি এখন আমি কি করব ? ভিসা সহ ২০১৭

ভিসা ইন্টারভিউ – সামার সেমিস্টার ‘১৭

mm

By Ershad Ud Dowlah Pahlowan

Student Masters of Earth Sciences speciality on Geo Resources and Environment in Ernst Moritz Arndt University of Greifswald. Blogger bdnews24.com. B.Sc Geological Sciences Jahangirnagar university (37th Batch).

Leave a Reply