হাজব্যান্ড জার্মানিতে আছে আর আপনি দেশে বসে দিন গুনছেন কবে যাবো তাহার কাছে! তাহার কাছে যাওয়ার জন্য ছোট্ট প্রসেসিং এর মধ্য দিয়ে যেতে হবে আপনাকে। অনেক সময় আমাদের কিছু অজানা তথ্যের জন্য তিনমাসের প্রসেসিং শেষ হতে সময় নেয় ছয়-সাত মাস। কিভাবে তিনমাস সময়কে যথাযথভাবে কাজে লাগাবেন সেটা নিয়েই লিখছি,আশা করছি উপকারে আসবে।
আপনার হাজব্যান্ড যদি ব্লুকার্ডধারী না হয় সেক্ষেত্রে ভিসাশর্ত পূরণ করার গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট হচ্ছে জার্মান ল্যাংগুয়েজ কোর্সের সার্টিফিকেট থাকা। অনেকেই মনে করে সার্টিফিকেট হাতে না পাওয়া পর্যন্ত ভিসার জন্য এপ্লাই করা যাবেনা। এটা ভুল ধারনা। এই ভুলটা করলে আপনি বিনাবাক্যে তিন মাস পিছিয়ে যাবেন। কিভাবে? তিন মাসের কোর্স শেষ করে সার্টিফিকেট পাবেন। তারপর ভিসা এপ্লাই করার পর প্রসেসিং হতে আরো তিনমাস। এই হলো ছয়মাস।
যদি পাসপোর্ট করা থাকে তাহলে প্রথম কাজ হচ্ছে ওয়েবসাইটে ঢুকে অনলাইন এপয়েন্টমেন্ট সিস্টেম থেকে সুবিধামত একটা ডেট নেয়া। হাতে মিনিমাম সাত থেকে দশদিন সময় রেখে এপয়েন্টমেন্ট নিবেন যাতে এর মধ্যে প্রয়োজনীয় কাগজ-পত্র গুছিয়ে নিতে পারেন। এপয়েন্টমেন্টের দিন কাগজ পত্র জমা দিয়ে আসবেন। ভিসা অফিসার টুকিটাকি সাধারন জ্ঞানের কিছু প্রশ্ন করবে আপনাকে। যেমন: আপনার বিয়ে কবে হয়েছে, বিয়েতে কতজন গেস্ট উপস্থিত ছিলেন ইত্যাদি।
আপনি ভিসা এপয়েন্টমেন্ট/ইন্টারভিউ দিয়ে ধীরে সুস্থে ল্যাংগুয়েজ কোর্সে ভর্তি হোন। ইন্টারভিউ দেয়ার আড়াই থেকে তিন মাসের মধ্যে আপনার ভিসা এপ্রুভ হয়ে থাকবে। A1 কোর্সে পাশ করলে আপনি সার্টিফিকেটও পেয়ে যাবেন। এরপর আপনি সুবিধামতো সময়ে সার্টিফিকেট জমা দিয়ে আসলে সাত দিনের মধ্যে ভিসা কালেক্ট করার ফোন পাবেন। 🙂
ভিসা এপ্লাইয়ের জন্য যা যা ডকুমেন্টস লাগবে:
(সমস্ত ডকুমেন্টস দুই সেট করে লাগবে।)
ওয়েবসাইটে গেলে রিইউনিয়ন ভিসার একটা ফর্ম পাবেন। দুই সেট ফর্মের সাথে দুইটা বায়োমেট্রিক ছবি দিবেন।
ওয়াইফ এর-
১.পাসপোর
২. বার্থ সার্টিফিকেট
৩. ম্যারেজ সার্টিফিকেট (বাংলা, ইংলিশ)
৪.নিকাহ নামা (বাংলা, ইংলিশ)
৫. ল্যাংগুয়েজ কোর্স সার্টিফিকেট (পরে জমা দিলেও চলবে)
(সবগুলার মেইনকপি+ ফটোকপি)
হাজব্যান্ডের-
১. পাসপোর্ট
২. ভিসা
৩. সিটি রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট
৪. হেলথ ইন্সুরেন্স
৫. বার্থ সার্টিফিকেট
৬. হাউজ কন্ট্রাক্ট ডকুমেন্ট
৭. লাস্ট তিন মাসের স্যালারি স্টেটমেন্ট।
এছাড়াও লাগবে-
*দুইজনের বর্তমান এবং স্থায়ী ঠিকানার হাতে আঁকা মানচিত্র।
* আপনারা বিবাহিত এটা বুঝানোর জন্য রোমান্টিক/পারিবারিক কিছু ছবির হার্ডপ্রিন্ট
ইন্টার্ভিউয়ের কিছু কমন প্রশ্ন:
-হাজব্যান্ড কি করেন, কোন শহরে থাকেন, বাসা থেকে অফিস কত দূর?
– বিয়ে কবে হয়েছে,কোথায় হয়েছে?
– বিয়েতে কতজন গেস্ট উপস্থিত ছিলেন? (ভেবেছিলাম নেক্সট কোশ্চেন করবে তাকে দাওয়াত দেইনাই কেন )
-বিয়ের দিন রেজিস্ট্রেশন হয়েছে কিনা?
-বর্তমানে আপনি কোথায় থাকেন, কি করেন, পড়াশুনা কতদুর?
– যে পারিবারিক ছবি আপনি জমা দিবেন সে ছবিতে কে কে আছেন জিজ্ঞাসা করতে পারে।
কোথায় করবেন ল্যাংগুয়েজ কোর্স:
ঢাকার মধ্যে অবশ্যই গ্যেটে ইন্সটিটিউট। চাইলে বাসায় এক-দুই মাস প্রিপারেশন নিয়েও পরীক্ষা দিতে পারেন। কঠিন কিছুই না। আপনাকে পেতে হবে ষাট নাম্বার। একটু পরিশ্রম করলে আশি,পঁচাশি নাম্বার খুব সহজেই উঠানো যায়। তবে স্পিকিং এ আলাদা ভাবে পাশ করতে হয়। মানে পঁচিশে মিনিমাম পনের পেতে হয়। বাকী তিনটা পার্টে একসাথে ৪৫ পেলেই আপনি পাশ।
A1 কোর্সে আপনার টোটাল খরচ হবে ২৭হাজার টাকা।
আনুষঙ্গিক আরও কিছু কাজ:
কোর্স কমপ্লিট, ভিসা কম্পলিট, এখন শুধু ফ্লাইটের অপেক্ষা! দাড়ান,আরো কিছু কাজ আছে। যাওয়ার আগে ম্যারেজ সার্টিফিকেট জার্মান ভাষায় ট্রান্সলেট করে নিয়ে যান। জার্মানি যেয়ে সিটি রেজিস্ট্রেশন এর কাজে লাগবে। সম্ভব হলে একবার ডেন্টিস্ট এর কাছ থেকে ঘুরে আসেন। জার্মানি এসে শীতের প্রকোপে দুই একটা দাঁত খুলে পড়ার সম্ভাবনা এড়িয়ে যাবেন না। তাই আগে থেকে মেরামত করে আসা ভালো। আর জার্মানি যেয়ে উচ্চশিক্ষার ইচ্ছা থাকলে সমস্ত একাডেমিক সার্টিফিকেট দেখে শুনে গুছিয়ে নেন। মিডিয়াম অব ইন্সট্রাকশন, জব এক্সপেরিয়েন্স সার্টিফিকেট এগুলা তুলতে ভুলবেন না।
পরিশেষে বলবো,সময়কে কাজে লাগান। হাজব্যান্ড সাথে নাই,আপনাকে একা একা সব সামলাতে হচ্ছে, বুঝে উঠতে পারছেন না, হিমশিম খাচ্ছেন? হাজব্যান্ড দূর থেকে যতটুকু সহযোগিতা করছেন সেটা নিয়ে সামনে আগান। বিসাগের রিলেটেড পোস্টগুলো দেখেন। ভিসা এপ্লাই করেন। বাকীটা আল্লাহ ভরসা।
এরপর ভিসা হয়ে গেলে বিসাগে একটা পোস্ট দিয়ে যাওয়ার পার্টনার খুঁজেন, পার্টনার না পেলে একা একাই খুশি মনে নাচতে নাচতে মান এর কাছে চলে যান :
#happyjourney