শুভকামনা, আশা করি আপনি জার্মানীতে এসেছেন অথবা আসতে যাচ্ছেন। আমি এই আর্টিকেলটিতে জার্মানীতে আসার পরে কি কি অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ কাজ করতে হয় সেগুলো বর্ণনা করবো। মনে রাখবেন এখানে যেই ডকুমেন্টগুলো বলছি সেগুলো অবশ্যই আপনাদের কোন না কোন সময় কাজে লাগবে। আমি জার্মানীতে আসার পরেই পার্টটাইম সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কাজ শুরু করি, তাই আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করিযে আপনারাও যদি স্টুডেন্ট জব বা যেকোন জব শুরু করতে চান তাহলে এই ডকুমেন্টগুলো কালেক্ট করতে দেরী না করাই ভালো হবে।

দেশ থেকে আসার আগে করণীয়:
যেহেতু দেশে ৪ কপি পাসপোর্ট সাইজ ছবি করতে মাত্র ~৫০টাকা লাগে আর এখানে লাগে ৪€ তাই আমি বলবো যে দেশ থেকে আসার আগে কমপক্ষে ১৬কপি ছবি করে আনবেন।

জার্মানী আসার পরে করণীয়:
এখানে আসার পরে মনে রাখবেন ২ ধাপে আপনার ডকুমেন্টগুলো পাবেন: ভার্সিটি এনরোলমেন্টের সময় এবং ভিসা এক্সটেন্ড করার পরে (আপনি ৩মাসের টেম্পোরারী ভিসায় আসবেন সুতরাং আপনাকে ভিসা এক্সটেন্ড করে নিতে হবে সেটার মেয়াদ শেষের আগেই)। আমি ধাপগুলো আলাদা করে লিখছি এখানে।

প্রথম ধাপ: ভার্সিটি এনরোলমেন্টের সময়

আপনারা জার্মানী নামার পরদিন থেকেই এই ধাপটির কাজগুলো শুরু করে দিন। এই ক্রমে ডকুমেন্টগুলো কালেক্ট করুন:

  1. আপনি যেই শহরে উঠেছেন, ওই শহরের সিটি রেজিস্ট্রেশন অফিসে যেয়ে রেজিস্ট্রেশন করুন। আপনি যেই বাসায় উঠেছেন ওই বাসার ঠিকানাতেই রেজিস্টার করুন। মনে রাখবেন যে, ওই বাসার মেইলবক্সে যেন আপনার নাম থাকে তানাহলে আপনি কোনই চিঠি পাবেন না এবং ভয়াবহ সমস্যায় পড়ে যেতে পারেন। যদি এমন হয় যে, আপনার পক্ষে মেইলবক্স ম্যানেজ করা সম্ভব হয়নি তাহলে কোন বন্ধুর c/o এ ঠিকানা দিবেন যাতে আপনার চিঠিগুলো আপনার বন্ধুর ঠিকানায় হলেও যায়। উদাহরণ:C/O ছাড়া:
    <FIRST LAST NAME>,
    <00> <STREET NAME>
    00000, DEC/O সহ:
    <FIRST LAST NAME>,
    C/O: <বন্ধুর নাম>
    <00> <STREET NAME>
    00000, DEসিটি রেজিস্ট্রেশনের সময় আপনার পাসপোর্ট চাইবে, তাই ওটা নিয়ে যেতে ভুলবেন না। মনে রাখবেন, আপনি যদি সিটি রেজিস্ট্রেশনে দেরী করেন তাহলে পরবর্তীতে ঝামেলায় পড়তে পারেন কারণ আপনাকে জিজ্ঞেস করবে: তুমি জার্মানী ল্যান্ড করার পর থেকে অমুক ডেট পর্যন্ত কোথায় ছিলে?
  2. এবার আপনার গন্তব্য হবে আপনার অ্যাকাউন্ট যেই ব্যাংকে (লোকেশন: গুগল ম্যাপস)/ডয়েশ্চ ব্যাংক, যেখানে আপনারা ব্লক অ্যাকাউন্ট খুলেছেন। এখানে যেয়ে আপনার সিটি রেজিস্ট্রেশন করার পরে পাওয়া কাগজটি দিন, ওরা ফটোকপি করে নিবে। ডয়েশ্চ ব্যাংক আপনাকে অ্যাকাউন্ট ইনফোগুলো দিয়ে একটা পেপার দিবে, ওটা রেখে দিন পরবর্তী কাজের জন্যে।
    ডয়েশ্চ ব্যাংক এরপরে আপনাকে পরবর্তী ৭ দিনের ভিতর এই ডকুমেন্টগুলো চিঠিতে পাঠাবে আপনি যেই ঠিকানায় সিটি রেজিস্ট্রেশন করেছেন:

    • আপনার ডেবিট কার্ড
    • ডেবিট কার্ডের পিন কোড
    • অনলাইন ব্যাংকিং ব্যবহার করার পিনকোড। মনে রাখবেন যে এই দেশে ৯৯.৯৯% ট্রানজিকশন অনলাইনেই হয় তাই এটায় অভ্যস্থ হতে হবে
    • অনলাইন ব্যাংকিং এ ট্রানজিকশন করার পিনকোড
    • টেলিফোন ব্যাংকিং এর পিনকোড
  3. এবার হেলথ ইন্স্যুরেন্স করে ফেলুন। আমি সাজেস্ট করবো TK তেই হেলথ ইন্স্যুরেন্স করুন কারণ এদের কাভারেজ সর্বোচ্চ। TK এর অফিস কোথায় সেটা আগেই গুগল ম্যাপসে দেখে নিবেন যাতে সহজেই যেতে পারেন
  4. এবার ভার্সিটির এনরোলমেন্ট অফিসে চলে যান। এনরোলমেন্ট করার সময়ে আপনার অরিজিনাল সার্টিফিকেটগুলো নিয়ে যাবেন এবং আলাদা করে ইন্স্যুরেন্সের কাগজটি। এনরোলমেন্ট করা শেষ হলে আপনার প্রথম ধাপের কাজ মোটামুটি সম্পন্ন। তবে আমি বলবো নিচের জিনিসগুলিও জেনে নিবেন এনরোলমেন্টের সময়:
    • কিভাবে ভার্সিটি ওয়াইফাইতে কানেক্ট করতে হয়, মানে আপনার আইডি-পাসওয়ার্ড কি হবে
    • কিভাবে ভার্সিটি মেইলে কানেক্ট করতে হয় (এটার আইডি পাসওয়ার্ড আর ওয়াইফাইয়ের আইডি পাসওয়ার্ড আলাদা RWTH-Aachen এ)
    • কিভাবে আপনার ভার্সিটির আইডি কার্ড কালেক্ট করতে হবে
    • ট্রান্সপোর্ট টিকেট পেতে কি করতে হবে
    • ভিসা এক্সটেন্ড করার প্রসেস কোথায় জানতে পারবেন, এনরোলমেন্ট অফিস বলতে পারবে না ডিটেইলস তবে তারা এটা বলতে পারবে যে কোথায় ডিটেইলস পাওয়া যাবে

এবার দ্বিতীয় ধাপ: ভিসা এক্সটেন্ড করার সময়

ভিসা এক্সটেন্ড করার সময়ে কি কি ডকুমেন্ট লাগে সেগুলো ম্যানেজ করে, প্রসেস ফলো করে অ্যাপ্লাই করুন। ভিসা এক্সটেনশন অ্যাপ্লাই এর নিয়ম একেক শহরে একেক রকম, তাই আপনার শহরের নিয়ম ভালোভাবে জেনে নিন ভিসা অফিসে যেয়ে, কোনভাবেই অন্যের কথায় বিশ্বাস করবেন না কারণ একেকজনের নিয়ম একেক রকম হয়। তবে সবক্ষেত্রেই ৮০€ ভিসা ফি ও ২ কপি ছবি লাগে যা জানি।

ভিসা এক্সটেন্ড হয়ে গেলে নিচের ডকুমেন্টগুলোর জন্যে অপেক্ষা করুন:

  1. আপনার সোশ্যাল আইডি নাম্বার। আপনার জার্মানীতে ভবিষ্যতের সকল রেকর্ড এই আইডি দিয়ে সংরক্ষিত হবে।
  2. আপনার রেসিডেন্স পারমিট কার্ড রেডি হয়েছে এই মর্মে একটি চিঠি পাবেন। তবে এই চিঠি পেলেই কার্ডটি তুলতে পারবেন না, আরেকটা চিঠির জন্যে অপেক্ষা করতে হবে
  3. আপনার রেসিডেন্স পারমিট কার্ডের পিন কোড আপনার ঠিকানায় আসবে এবং ওই চিঠি পেলে তখন ভিসা অফিসে যেয়ে রেসিডেন্স কার্ডটি তুলতে পারবেন। এইসময় আপনার পাসপোর্ট নিয়ে যেতে ভুলবেন না
  4. আপনার ওয়ার্ক পারমিট এই রেসিডেন্ট কার্ডের সাথেই দেয়া হবে
  5. আপনি যখন কোন চাকুরী শুরু করবেন তখন আপনার ট্যাক্স পেপার প্রয়োজন হবে যেটা আপনার নিয়োগকর্তাকে দিতে হবে। ওই ট্যাক্স পেপারে নিয়োগকর্তা লিখে দিবেন প্রতিমাসে কত € বেতন দিলো আর ট্যাক্স কত দিলো এবং আপনার নিয়োগকর্তাই গর্ভমেন্ট ট্যাক্স অফিসকে এটা জানাবেন (জার্মান নিয়ম)। এই ট্যাক্স পেপার আনতে আপনার পার্সোনাল আইডেন্টিফিকেশন নাম্বার ও পাসপোর্ট (অথবা রেসিডেন্ট কার্ড পেয়ে গেলে সেটা) সহ যেতে হবে
  6. যদি এমন হয় যে, আপনি জার্মানী এসেই চাকুরি শুরু করতে চাইছেন তখন কিন্তু আপনার রেসিডেন্ট কার্ড পর্যন্ত বসে থাকার কোন সুযোগ নেই। এই অবস্থায় ভিসা অফিসে যেয়ে বলুন যে আপনি একটা চাকুরী পেয়েছেন কিন্তু ওখানে আপনার ওয়ার্ক পারমিটের ডকুমেন্ট দিতে হবে। তখন ভিসা অফিসার আপনাকে একটা ডকুমেন্ট দিবেন যেটায় আপনার ওয়ার্ক পারমিট কবে শুরু কবে শেষ এটা লেখা থাকবে। মনে রাখবেন এটা কিন্তু আলাদা করে না চাইলে দেয়া হয়না, তাই প্রয়োজন হলে চাইবেন এবং অবশ্যই পাবেন

১.৫তম ধাপ: প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপের মাঝামাঝি করণীয়:

  • মোবাইল ফোন: আপনি প্রিপেইড নাকি পোস্টপেইড ফোন নিবেন সেটা আপনার ব্যক্তিগত বিষয়। যদি পোস্টপেইড নেন তাহলে মনে রাখবেন যে o2 নেটওয়ার্কে ফ্ল্যাটরেট এবং অন্য নেটওয়ার্কে ১০০ মিনিট সহ প্যাকেজ ১০€ এর মাঝেই পাওয়া যাওয়ার কথা, অথবা ১০€ এর কমবেশী হবে। কোনভাবেই ১৫€ এর বেশী প্যাকেজ নিবেন না যতই ভুজুং দিক আপনাকে, প্রয়োজনে আমাদের গ্রুপে পোস্ট দিয়ে শিওর হয়ে নিন।
  • ইন্টারনেট: যদি আপনাকে কোন ইন্টারনেট কোম্পানীর লাইন নিতে হয় তাহলে সবগুলো অপারেটর খুঁজে দেখে এরপরে নিবেন। আমাদের আখেনে Unitymedia এর লাইন সবচেয়ে কমে সবচেয়ে ভালো (২৩€ তে ৫০ mbps)। ইন্টারনেট লাইন কিন্তু চাওয়ার সাথে সাথে দেয়না, ৩ সপ্তাহমতো সময় লাগতে পারে।
  • বাংলাদেশী খাবারের দোকান: আপনার শহরের কোথায় বাংলাদেশী খাবার (মরিচ, শাক ইত্যাদি) পাওয়া যায় সেটা জেনে নিন যাতে সহজেই কেনাকাটা করতে পারেন দরকার হলে

সবশেষে, এই পর্যন্তই আপনাদের গুরুত্বপূর্ণ ফাইলগুলোর লিস্ট। আরো কিছু বাদ গেলে বা কোন প্রশ্ন থাকলে কমেন্ট সেকশনে জানাবেন

By Seoul Raihan

সাইট অ্যাডমিন - জার্মান প্রবাসে.com

15 thoughts on “জার্মানী আসার পরে অবশ্য করণীয় অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ কাজসমূহ: after your arrival in germany”
  1. Via ami german a study purpose asta chai.
    Gurman language na janla kevabay hoba.ami ke korbo aktu suggests korban.r full free students ship ar jonno kevabay apply korbo

  2. আমি Kempten University of Applied Sciences এবং University of Bremen থেকে summer সেমিস্টার এর admission letter পাইছি। এখন আমি যদি Kempten University of Applied Sciences এর জন্য ভিসা ইন্টারভিউ দিয়ে ভিসা পেয়ে জার্মানি গিয়ে University of Bremen এ যাই, কোনো অসুবিধা হবে? আমাকে কি কি করতে হবে যদি সম্ভব হয়?

  3. Hello. Do you think it will be a problem to get these administrative works done if I don’t know the German language? If so, what solutions do you suggest if I plan to pursue my education in Germany in the coming winter semester? Thank you.

  4. জার্মানিতে কোন ডকুমেন্ট কিভাবে সত্যায়িত করব?? কম খরচে কোন উপায় আছে কি??

Leave a Reply