২০১৫ সালের ফেব্রিয়ারি মাসে বই মেলাতে এসেছে বাংলা ভাষায় লেখা রাগিব হাসানের দুইটি বই। বই এর কিছু অংশ আমরা আমাদের এখানে শেয়ার করা হবে আপনাদের পড়ার জন্যে…হয়তো চট করে একটা অংশ পড়া দরকার, হাতের কাছে বইটি নেই তখন ঘুরে যেতে পারেন এখানে…অনলাইন এ বইটি কেনার সুযোগ ও রয়েছে(দেশে এবং বিদেশে)। বইটি কেনার জন্যেও অনুরোধ থাকলো কারণ তা থেকে লেখকের যথাযোগ্য সন্মান দেয়া হয় আর সেই সাথে ছাপানো বই পড়ার আমেজই আলাদা…সর্বোপরি এই লেখাগুলো লেখার একটাই উদ্যেশ্য: লেখক চেয়েছেন যাতে বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা গবেষণা কি এবং কিভাবে করতে হয় তা সহজে শিখতে পারে। সেই উদ্যেশ্যকে সফল করার ইচ্ছা নিয়েই আমাদের এই বিশেষ প্রচেষ্টা।লেখক এবং প্রকাশক উভয়কে আমাদের ধন্যবাদ এই পোস্টগুলো শেয়ার দেয়ার অনুমতি দেয়ার জন্যে।


(আপনার লেকচার শুনে কি দর্শকে হাই তুলে? ফেইসবুক চেক করতে চলে যায়? অথবা আপনার নিজের হাঁটু কাপে ভয়ে? তাহলে পড়তে থাকেন। )

রিসার্চ বা গবেষনার ফলাফল বা যেকোনো প্রজেক্ট রিপোর্ট বা সেমিনারের সাথে অবধারিতভাবে যেটা জড়িত, তা হলো প্রেজেন্টেশন দেয়া। এক কালে ব্লাকবোর্ডে বা স্লাইড প্রজেক্টর দিয়ে সেটা করা হতো। কিন্তু এখন সেটার প্রায় একমাত্র মাধ্যম হলো স্লাইড প্রেজেন্ট করা – পাওয়ারপয়েন্ট, পিডিএফ, ওপেন অফিস, এপলের প্রেজেন্টেশন টুল, অথবা হালের নতুন সংযোজন প্রেযি (prezi)। কিন্তু প্রেজেন্টেশনের টুলটা মুখ্য না, সবার যেখানে সমস্যা হয়, সেটা হলো প্রেজেন্টেশন তৈরী করা, আর মানুষের সামনে সেটা (নির্ভয়ে) উপস্থাপন করা।

আমার আজকের লেখার উদ্দেশ্য হবে প্রেজেন্টেশন বানাবার কিছু সহজ কিন্তু কার্যকর টিপস দেয়া।

১) সময়ের হিসাব করুন সবার আগে

কোনো বিষয়ে অনেক কিছু জানলে একটা প্রবনতা হলো সবকিছুকে উগরে দেয়া বিশাল লম্বা প্রেজেন্টেশন বানিয়ে। এর অবধারিত পরিণাম হলো সময়ের মধ্যে লেকচার শেষ করতে না পারা, ফলতঃ অনেক কিছু বাদ দিয়ে শেষের দিকে তাড়াহুড়া করে শেষ করা বা শেষ করতেই না পারা।

তাই সবার আগের কাজ হলো স্লাইড কয়টা হবে তা ঠিক করা। একটা খুব সহজ ফরমুলা হলো, টাইটেল আর অন্য কিছু লিস্ট মার্কা স্লাইড বাদে অন্য স্লাইডগুলার জন্য স্লাইডপিছু এক বা দুই মিনিট বরাদ্দ করা। অর্থাৎ আপনার সময় যদি ১৫ মিনিট হয়, তাহলে বড়জোর ৮টা স্লাইড বানাবেন। এর বেশি বানালে আপনার স্লাইডগুলাতে তথ্য কমই থাকবে, অথবা আপনি শেষ করতে পারবেন না এই সময়ে।

২) ছবি কথা বলে …

A picture is worth a thousand words …

হানিফ সংকেতের ইত্যাদির সাথে অমুক বিষয়ের একাডেমিক লেকচারের পার্থক্য কী? (অমুক বললাম, কারণ কোনো বিষয়ের নাম বলে ফেলে ধাওয়া খেতে চাই না wink emoticon )

যেকোনো সেমিনারে গেলেই দেখবেন, হাত পা নেড়ে খুব উৎসাহের সাথে প্রেজেন্টার অনেক কিছু বলে যাচ্ছেন। কিছু দর্শক মনোযোগ (আসল) দিয়েই দেখছে। বাকিরা হাই তুলছে, কয়েকজন ঘুমাচ্ছে। আর বাকিরা ফোন বা কম্পিউটারে মেইল/ফেইসবুক চেক করছে।

এর কারণটা কী? ইত্যাদির সময়ে তো এরাই কেউ ঘুমাবেনা এরকম।

কারণটা হলো প্রেজেন্টেশন এতোই বোরিং যে যারা ঘুম ঘুম ভাব ছিলো, তারা ঘুমিয়ে গেছে, আর যারা ছিলো সজাগ, তাদেরও ঘুম ঘুম ভাব হয়েছে।

বোরিং হয় কখন? যখন স্লাইড ভর্তি করে একগাদা লেখা দিয়ে দেন, আর তার পর রিডিং পড়তে থাকেন। এটা খুব কমন একটা ঘটনা, বিশেষত নতুন নতুন করে যারা প্রেজেন্টেশন বানান, তারা এই কাজটা করেন।

থামুন! একটু ভেবে দেখুন লেকচার কেনো মানুষ দেখতে গেছে। স্ক্রিনের লেখাতেই যদি সব ভরে দেয়া যেতো, তাহলে কিন্তু আপনার উপস্থিতিরই দরকার ছিলো না। স্লাইড শো দিলেই হতো। প্রেজেন্টারের উপস্থিতির কারণ হলো লেকচারের বিষয়টা বুঝিয়ে দেয়া, *কথা বলে, নিজের ভাষায়*। সেটা করতে হলে স্লাইডে কথা থাকবে কম, সেই কথাগুলা বলবেন আপনি।

তাহলে ইন্টারেস্টিং স্লাইড কীভাবে বানাবেন? প্রতি স্লাইডে একটা ছবি দেন। ডানে ছবি, বামে সেই স্লাইডের বিষয়ের উপরে অল্প কিছু কথা। এর পর স্লাইডটা দেখিয়ে বিস্তারিত ব্যাখ্যা নিজে বলুন।

এর ফলটা হবে চমৎকার। স্ক্রিনের একগাদা লেখা দিলে দর্শকেরা আপনার দিকে না তাকিয়ে সেই লেখাই পড়তে থাকে, এর চাইতে ছবিটা দিলে সেই ছবি থেকে কিছু আইডিয়া পেতে পারে শুরুতেই, আর বাকিটা সময়ে আপনার কথাগুলা মনোযোগ দিয়েই শুনবে।

কী ছবি? মনে রাখুন, আপনার মূল লক্ষ্য হলো আইডিয়াটা বোঝানো। তাই সেই আইডিয়াকে তুলে ধরে এমন ছবি দেন। যেমন ধরা যাক কোনো নতুন সিস্টেমের পারফরমেন্স অথবা দাম কম, সেটা বুঝাচ্ছেন। এক বস্তা টাকার ছবি দেন। এক মুহূর্তেই সবাই বুঝে যাবে কীসের কথা বলছেন। আমাদের মস্তিষ্কের পক্ষে ছবি প্রসেস করা অনেক সহজ, রাশি রাশি লেখার চাইতে।
৩) বাদ দিন গতানুগতিক ফরম্যাট

পাওয়ারপয়েন্টে লেখার বড় সমস্যা হলো, সেই গৎবাধা বুলেট পয়েন্ট মার্কা স্লাইড বানিয়ে ফেলে সবাই। ফলে রিসার্চ প্রেজেন্টেশনকে বিজনেস প্রেজেন্টেশনের মতো লাগে।

কিন্তু সেটা আসলে আপনার করতেই হবে এমন কিন্তু কথা নাই। নিজের মতো করে লিখুন, বুলেট পয়েন্ট বাদ দিয়ে। এক্ষেত্রে একটা ভালো সাজেশন হলো স্লাইডের টাইটেলে একটাদুইটা শব্দ না লিখে ঐ স্লাইডের বর্ণনা দিয়ে বা যা সিদ্ধান্ত উপস্থাপন করা হয়েছে, সেটা লিখুন।

ধরা যাক, আপনার স্লাইডে একটা গ্রাফ দেখিয়ে বলছেন, আপনার বানানো সিস্টেম ১০% দ্রুত কাজ করে। এই ক্ষেত্রে স্লাইডের টাইটেল Results না দিয়ে সেখানে এভাবে লিখতে পারেন –
Results show that system X works 10% faster
আর বিস্তারিত কথা নিজে মুখে বলেন। এতে করে আপনার স্লাইডের প্রথম অংশ মানে টাইটেল দেখেই সবাই শুরুতেই ধারণা পাবে এই স্লাইডের মোদ্দা কথা কী, সেটা।
[বাকিটা পরের অংশে বলবো। এটা গবেষনা সংক্রান্ত আমি যে ই-বুকটা লিখছি, সেটার অংশ]

‪#‎গবেষণা‬ ‪#‎রিসার্চ‬ ‪#‎প্রেজেন্টেশন‬ ‪#‎সেমিনার‬

বই এর প্রকাশকের  পেজটি দেখতে করতে ক্লিক করুন আর ফেইসবুক পেজ দেখতে চাইলে ক্লিক করুন এবং দ্বিতীয় লিংক

গবেষণা : জঘন্য প্রেজেন্টেশন বা লেকচার দিবেন ক্যামনে: রাগিব হাসান – পর্ব ২

গবেষণা: পিএইচডি করার রোডম্যাপ: রাগিব হাসান – পর্ব ৬

 

mm

By Tanzia Islam

Tanzia Islam is an admin of BSAAG, learn german and Germanprobashe.com this is a volunteer work from her side for the Bangladeshi community. She is also an admin of Free Advice Berlin. Her volunteer activities are related to educational development, city development and environmental protection. Tanzia is a freelance writer and researcher. Currently she is a doctoral researcher at Technical University of Berlin.

Leave a Reply