২০১৫ সালের ফেব্রিয়ারি মাসে বই মেলাতে এসেছে বাংলা ভাষায় লেখা রাগিব হাসানের দুইটি বই। বই এর কিছু অংশ আমরা আমাদের এখানে শেয়ার করা হবে আপনাদের পড়ার জন্যে…হয়তো চট করে একটা অংশ পড়া দরকার, হাতের কাছে বইটি নেই তখন ঘুরে যেতে পারেন এখানে…অনলাইন এ বইটি কেনার সুজোগ ও রয়েছে(দেশে এবং বিদেশে)। বইটি কেনার জন্যেও অনুরোধ থাকলো কারণ তা থেকে লেখকের যথাযোগ্য সন্মান দেয়া হয় আর সেই সাথে ছাপানো বই পড়ার আমেজই আলাদা…সর্বপরি এই লেখাগুলো লেখার একটাই উদ্যেশ্য: লেখক চেয়েছেন যাতে বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা গবেষণা কি এবং কিভাবে করতে হয় তা সহজে শিখতে পারে। সেই উদ্যেশ্যকে সফল করার ইচ্ছা নিয়েই আমাদের এই বিশেষ প্রচেষ্টা।লেখক এবং প্রকাশক উভয়কে আমাদের ধন্যবাদ এই পোস্টগুলো শেয়ার দেয়ার অনুমতি দেয়ার জন্যে।
রিসার্চ বা গবেষণার নানা দিক নিয়ে লিখেছি, আজ লিখবো রিসার্চ করার আগে কী কী জিনিষ শিখে নেয়া ভালো। এর মাঝে আছে নানা রকমের সফটওয়ার বা এপ্লিকেশন, সাইটেশন করার কায়দা, এবং কিছু বেস্ট প্রাকটিস।
(১) নোটবুক – না, ইলেকট্রনিক নোটবুক, বা অনলাইনের কোনো টুল নয়, বরং বলছি একেবারে আদ্যিকালের বাঁধানো খাতার কথা।
রিসার্চ শুরুর প্রথম কাজ হলো নোটবুক ব্যবহার করা। আমার ছাত্রদের প্রথম যেটা শিখাই তা হলো ছেড়া বা লুজ শিটে কখনোই কিছু না লিখতে। কারণ সেটা হারাবে নিশ্চিত। কাজেই একটা ভালো বাঁধানো এবং কয়েকশ পাতার খাতা কিনে নিন। প্রতিদিন নতুন একটা পাতায় তারিখ লিখে কাজ শুরু করবেন। রিসার্চের আইডিয়া, কী করছেন, কী করতে চান, এগুলা সব সেখানে লিখে রাখবেন।
কখনো যদি মিটিং করেন সুপারভাইজর অথবা সহযোগী গবেষকদের সাথে, অবশ্যই সিদ্ধান্ত এবং কী কী করা দরকার, তা লিখে রাখবেন সাথে সাথেই। খেয়াল রাখবেন, মানুষের মনে ৭টার বেশি জিনিষ থাকে না, আর সব মনে থাকবে বলে ভাবলেও আসলে ৫ মিনিটের মাথায় অধিকাংশ জিনিষ মাথা থেকে হারিয়ে যায়।
অনেক বিষয়ে ল্যাব নোটবুক একেবারেই বাধ্যতামূলক, যেমন বায়োলজি, যেকোনো এক্সপেরিমেন্টাল সাবজেক্ট, এরকম।
(২) লেখার সফটওয়ার – রিসার্চ পেপার লেখার জন্য এক কথায় সেরা সফটওয়ার সিস্টেম হলো LaTeX — এটা শিখে নিন। প্রথমে একটু কঠিন লাগতে পারে, কিন্তু ল্যাটেকে করা পেপারের চেহারা দেখলে বুঝবেন কেনো এটাকে ব্যবহার করতে বলছি, ছাপার মান থেকে শুরু করে অনেক কিছুই নিখুঁতভাবে সেখানে নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
ল্যাটেক শিখতে যদি নাই পারেন আলসেমির জন্য, সেক্ষেত্রে ওয়ার্ড বা এরকম অন্যান্য ওয়ার্ডপ্রসেসরে কীভাবে ফুটনোট, সাইটেশন, এসব দিতে হয়, তা শিখে নিন। অনলাইনে বিস্তর টিউটোরিয়াল আছে।
ছবি যোগের জন্য ছবি এডিট, ডেটা থেকে গ্রাফ তৈরীর নানা কৌশল, এসব শিখতে হবে। গ্রাফ তৈরীর জন্য এক্সেল মোটামুটি চলে, তবে ভালো গ্রাফ পেতে হলে আপনাকে R অথবা SAS/SPSS/JMP এসব ব্যবহার শিখতে হবে।
(৩) লিটারেচার সার্চ – নাহ, এটা সাহিত্য না, বরং আপনার বিষয়ে নানা কাজ যা ইতিমধ্যেই হয়ে গেছে, সেটার কথা বলছি। যেকোনো রিসার্চের শুরুর কাজ এটাই। নানা অনলাইন রিসার্চ ইনডেক্স/সার্চ ইঞ্জিন ব্যবহার শিখে নিন। যেমন Google scholar, Pubmed, scopus এসব। কীভাবে গবেষণার সাথে সম্পর্কিত পেপার খুঁজে পাবেন, সেগুলার তালিকা বানাবেন, তা শিখতে হবে। LaTeX এর সাথে আসা BibTeX এই ক্ষেত্রে সেরা। তবে সেটা না পারলে অন্তত EndNote বা এই জাতীয় জিনিষ শিখে নিন। আর রিসার্চ সাইটেশন গুছিয়ে রাখার জন্য Zotero বা এরকম সাইটেশন ম্যানেজার ব্য্বহার করতে পারেন। নানা জার্নালে বা কনফারেন্সে নানা রকমের সাইটেশন স্টাইল ব্যবহার করা হয়। BibTeX জানা থাকলে এটা নিয়ে মাথা ঘামাতে হয় না, তবে সেটা ব্যবহার না করলে নানা রকমের সাইটেশন স্টাইল সম্পর্কে ধারণা নিতে হবে।
(৪) ভার্শন কন্ট্রোল – রিসার্চের পেপার যেখানে লিখবেন, সেটাকে ভার্শন কন্ট্রোলের অধীনে আনুন। ড্রপবক্সে রাখলে এমনিতেই এটা হয়, তবে git, subversion এগুলা শিখে নিতে পারলে অনেক বেশি কাজে আসবে। এটা আবশ্যক, কারণ আপনার কম্পিউটার ক্রাশ করলে আপনার রিসার্চ যদি হারিয়েও যায়, অনলাইনে এভাবে ব্যাকাপ করা থাকলে সব ভার্শনের, আপনি সহজেই ফেরত যেতে পারবেন। তাছাড়া একাধিক জনে একসাথে কাজ করলে এই গুলা ব্যবহার করা নিতান্তই অপরিহার্য।
শুরুর কাজ এটাই, এর সাথে থাকবে অভিধান, বানান নীরিক্ষক, এগুলো ব্যবহার করতে জানা।
—-
আশা করি এই পরামর্শগুলা আপনাদের কাজে আসবে। গবেষণায় হাতে খড়ি এই বিষয়ে আমার প্রায় ১০-১২টি লেখা নিয়ে একত্রে ই-বুক বানাচ্ছি। আর আগ্রহী প্রকাশক পেলে সেটা আসন্ন বইমেলা নাগাদ প্রকাশ করতেও পারি।
বই এর প্রকাশকের পেজটি দেখতে করতে ক্লিক করুন আর ফেইসবুক পেজ দেখতে চাইলে ক্লিক করুন এবং দ্বিতীয় লিংক