দূর থেকে গরম পোশাকটা দেখেই চিনতে পারলাম C&A থেকে কেনা। অফিসে সদ্য জয়েন করা কলিগ এটা পড়ে এসেছে। ঝটপট একটা এক্সপেরিমেন্ট করব বলে সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলাম। অফিসে নতুন কলিগদের সাথে পরিচিত হবার সময় তারা জিজ্ঞাস করে, “Where are you from?” আমি এই প্রশ্নটা শোনার জন্যই অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি। আমি নিশ্চিত ছিলাম সে প্রশ্নটা জিজ্ঞেস করবেই। আমার telepathy power আবার তুখোড় কিনা! হলও তাই! ভদ্রলোক মুখে বিনয়ের হাসি ফুটিয়ে জিজ্ঞাস করলেন, “Where are you from?”…so, this is the right time.. এখনই এক্সপেরিমেন্টটা অ্যাপ্লাই করতে হবে! আমি মুখে রহস্যের হাসি মেখে বললাম, “I am from the country which name has been written on the tag of your dress that you’ve worn! ”…কথাটা শুনে সে কিছুটা বিভ্রান্ত হয়, ঘাড় ঘুরিয়ে পিছন ফিরে জামার ট্যাগটা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখার চেষ্টা করে। একটুপর জামার ট্যাগে দেশের নামটা আবিষ্কার করে সে বলে, “Oohh, you are from Bangladesh!!”… ইয়েস!!! success!! তার মানে এক্সপেরিমেন্ট সফল হয়েছে!! আমিও গাড়ির হেড লাইটের মত জ্বলে উঠে বললাম, “Yes, I am :)” তারপর আরও একটু যোগ করে বললাম, “Bangladesh is the second largest global apparel exporter!”…দেশের ইমেজটাই বদলে গেলো। দেশের সম্মানের কারনেই কিনা আমাকেও তারা একটু সম্মানের দৃষ্টিতেই দেখতে থাকল। Just এই একটি ঘটনা দিয়েই এই জার্মান কলিগটার সাথে আমার খুব সুন্দর একটা বন্ধুত্তপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। আমার প্রফাইল পিকটা কিন্তু এই বন্ধুটাই খুব যত্ন করে তুলে দিয়েছে!! বিশ্বাস করুন বা নাই করুন, বেশির ভাগ নামি-দামি ব্রান্ডের (For example, C&A, H&m, New Yorkers, 1982 etc) দোকানে ৬০-৭০ ভাগ পোশাকি Made in Bangladesh. ঝড়,বন্যা, দারিদ্র কিংবা দুর্নীতিকে ছাপিয়ে এই এক গার্মেন্টস শিল্পই আমাদেরকে বাংলাদেশকে সম্মান জনক ভাবে উপস্থাপন করার সুযোগ করে দিয়েছে।

শুধু কি তাই? আরও আছে, আমার এক আইরিশ বন্ধুকে যখন বললাম এবারের মিস আয়ারল্যান্ডের মেয়েটি বাংলাদেশের, তখন সে রীতিমতো হা করে তাকিয়ে ছিল! ২১ সে ফেব্রুয়ারীতে অফিসে গিয়ে যখন বললাম ৫২-এর ভাষা আন্দলনের স্বীকৃতি সরূপ আজকে বিশ্ব মাতৃ ভাষা দিবস পালিত হচ্ছে, বিস্ময়ে তারা হতবাক হয়ে গিয়েছিল! ভাবতেই গর্বে বুক ভরে যায়! আমি যখন সুইজারল্যান্ডে গিয়েছিলাম, তখন অবাক হয়ে দেখলাম তাদের বেশির ভাগই জার্মান ভাষায় কথা বলে! এত বিখ্যাত একটি দেশের নিজেদের ভাষা নেই এটা আমার জানা ছিলনা! অষ্ট্রিয়াতেও গিয়ে দেখেছি তাদেরও নিজেদের ভাষা নেই, জার্মান ভাষায় কথা বলে! আমারা কতটা ভাগ্যবান যে আমাদের নিজেদের একটি ভাষা আছে। আমাদের দেশের মত এত গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস, সংস্কৃতি খুব কম দেশেরই আছে। বিশ্বের সামনে এগুলো তুলে ধরার দায়িত্বটা কিন্তু আমাদেরই। অস্বীকার করছিনা, আমাদের দেশ হাজারও সমস্যায় জর্জরিত। এতদিনে দেশটা ধ্বংস হয়ে যাবার কথা। কিন্তু তারপরও সেটা হচ্ছেনা, কারণ something is there!! দোষ যদি থেকেই থাকে, তাহলে সেটা এই দেশের মানুষের, দেশের না। দেশকে ভালবাসুন, সম্মান করুন, আপনিও সম্মান পাবেন।

mm

By Rashed Shelim

বর্তমানে RWTH Aachen ইউনিভার্সিটিতে Communication Engineering এ মাস্টার্স করছি। পাশাপাশি P3 Communication GmbH এ রিসার্চ অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসাবে কাজ করছি। এর আগে Huawei Bangladesh Ltd এ Core Network Engineer(PS) হিসেবে কর্মরত ছিলাম। ২০১০ সালে নর্থ-সাউথ ইউনিভার্সিটি থেকে Electronics and Telecommunication Engineering এ ব্যাচেলর সম্পন্ন করি। অবসর সময়ে গিটার, রান্না-বান্না, গান, আড্ডা, লেখালেখি, চা খেতে আর WWF দেখতে পছন্দ করি।

One thought on “এক্সপেরিমেন্টিং দ্যা ইমেজ অফ বাংলাদেশ…”
  1. জার্মানি তে টেক্সটাইল ক্যামিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে মাস্টার্স পিএইচডি ডিগ্রী নেবার ক্ষেত্র এবং এই বিষয়ে চাকরি করার সুযোগ এবং ক্ষেত্র রয়েছে?

Leave a Reply