একটু বড় লেখা, ধৈর্যের এক বড় পরীক্ষার অভিজ্ঞতা। ভালো না লাগলে ক্ষমা করবেন৷

যখন থার্ড ইয়ারে ছিলাম মোটামুটি কোন দেশ সম্পর্কে না জেনেই ভেবে নিলাম জার্মানি যাবো। চাইনা শুনলে একটু নাক শিটকাতাম আবার এটাও ভাবছি কানাডা অস্ট্রেলিয়া ছাড়া অন্য কোথাও ভাবা যায় নাকি! 🥴 যায়হোক জার্মানি ফিক্সড করার পর আমি আমার পড়ার টেবিলের দেয়ালে এগুলো লিখে রাখছিলাম যা আমাকে সব সময় মনে করিয়ে দিতো আমার লক্ষকে। এটা ২০১৭ এর কথা যখন থার্ড ইয়ারে ছিলাম। এর পর এই গ্রুপের সন্ধ্যান পেলাম। তখন সসম্ভবত ৪৫+ হাজার মেম্বর ছিলো। আমার ক্যাম্পাস (বশেমুরবিপ্রবি, গোপালগঞ্জ) যেহেতু নবীন অনেক সেজন্য ক্যাম্পাসের এলাইমনাই জার্মাতি আছে বা থাকতে পারে এরকম ধারনা তখন ছিলো না। এরপর এই গ্রুপের মাধ্যমে খুটিনাটি যা কিছু জানার, যেখানে যেখানে আটকে গেছি সব রকম তথ্যের ও সমস্যার সমাধান পেয়েছি৷ হয়তো বা সিনিয়র দের থেকে নতুবা গ্রুপের ফাইল সেকশন থেকে। মোটামুটি অনেক গুলো দিন #জার্মান_প্রবাশের ওয়েবসাইটে প্রায় প্রতিটা পোস্ট খুটে খুটে পড়ছি। এক্ষেত্রে এই গ্রুপের সিনিয়র ও গ্রুপের সে সকল সদস্যদের শুধু ধন্যবাদ দিলে অনেক কম হয়ে যায় তবুও তাদের আন্তরিকতা আর সঠিক তথ্য আমার মত অনেক কে আজ জার্মানিতে আসতে সাহায্য করেছে। আল্লাহ তা’লা আপনাদের উত্তম প্রতিদান দিক এই দোয়া করি।

এবার আসি বিরহের আলোচনা তে। ২০১৯ এর মার্চে সাপ্লিমেন্ট দেওয়ার পর ধরেই নিছিলাম আমার সিজি ৩ আসবে। বাট ভাগ্যের নির্মম পরিহাস এমনই যে রেজাল্ট ২.৯৯ এ এসে থেমে গেলো৷ এর পর গোপালগঞ্জ থেকে ঢাকা চলে আসলাম আর মেন্টরস এ ভর্তি হলাম। এর ফাকে ফাকে প্রায় ৭/৮ টা এজেন্সিতে গেছি আমি আর MD Mustahidur Rahman ভাই। তারা সবাই আমাকে এটাই বলছে “#হবে_না” কারণ একটাই আপনার রেজাল্ট কম। যায়তাম অনেক আশা নিয়ে আর ফিরে আসতাম হতাশা নিয়ে৷ এরপর দিলাম IELTS সে কি ভয়ানক গা শিহরিত করা অভিজ্ঞতা আর পাইলাম ৬ 🥴

এর পর এম্বাসি থেকে নোটারী, Uni Assist সব কিছুতেই এই গ্রুপ নির্ভর আমি। নভেম্বর এ এপ্লাই শুরু করলাম সামার টার্ম ২০২০ এর জন্য ৭ টা তে এপ্লাই করলাম। এর মধ্যে জার্মান গ্রেডে ২.৫১ রেজাল্ট হবার জন্য Uni Assist ৩ টা এপ্লিকেশন ফরওয়ার্ড ই করলো না। আর ২ টা তে করলো আর বাকি ২ টা তে সরাসরি এপ্লিকেশন করছিলাম। শুরু হলো ডিসেম্বরের শেষের দিক থেকে রিজেকশন। এর পর আল্লাহর অশেষ রহমতে জানুয়ারি ১৫ তারিখে TU Chemnitz আর ২৭ তারিখে Hochschule Emden/Leer থেকে এডমিশন পেলাম আর অনেক কষ্টে যুদ্ধ করে রাত ৫ টার দিকে অনেক দিন জেগে জেগেও এপোইন্মেন্ট না নিতে পেরে এক ভাই এর সন্ধ্যান পেলাম সে এপোইন্মেন্ট নিয়ে দিলো। এপোইন্মেন্ট ছিলো মার্চের ২৫ তারিখে আর আমার লাস্ট এনরোলমেন্ট ছিলো ৩০ এপ্রিল । কিছু দিন পর হঠাত দেখি জার্মান এম্বাসির ওয়েবসাইট ডাউন তারপর তারা খুব সম্ভবত ২৮ জানুয়ারীতে নতুন সিস্টেম আপডেট করলো। আমার যেহেতু ২৫ শে মার্চ ইন্টারভিউ ডেট আর আমার লাস্ট এনরোলমেন্ট ছিলো ৩০ এপ্রিলে আর সিনিয়র দের অভিজ্ঞতা থেকে জানলাম Chemnitz এ ভিসা প্রোসেসিং এ দেরি হয়। সেজন্য সহযাত্রী কয়েক ভাই এর পরামর্শ নিয়ে ওই ২৮ জানুয়ারীতে নতুন সিস্টেম এ এপ্লাই করলাম। পাইলাম ১৫ ফেব্রুয়ারিতে স্পেশাল ইন্টারভিউ । এখন মোটামুটি মহা খুশি আমি ডেট পেয়ে সত্যি এবার মনে হচ্ছে চলে যাবো জার্মানি। সব রেডি করে সুটেড বুটেড হয়ে ইন্টারভিউ দিতে গেলাম। ৬ নম্বর কাউন্টারের ভিসা অফিসার শুরুতেই বলল
” Show me the scholarship paper” আমি তো অবাক স্কলারশিপ পেপার আবার কি? তো বললাম I have two admission Later but scholarship! তখন ভিসা অফিসার বলল
-Who is financing you?

  • My father
    তখন ভদ্রলোক বাংলা তে বলল আপনি এপোইন্মেন্ট নেওয়ার সময় ভুল/মিথ্যা তথ্য দিয়েছেন আপনার ইন্টারভিউ ক্যানসেল, আপনি আবার ইন্টারভিউ ডেট নিয়ে আসেন৷ দুঃখ আর ভয়ভীতিমূলক ভারাক্রান্ত হৃদয়ে বের হয়ে আসলাম। এখন বন্ধুদের বলার পর বলল এবার সঠিক ভাবে এপোইন্মেন্ট নিতে। ব্যাচ আবার নিলাম নতুন সিস্টেম এ আর ডেট পেলাম ২৭ এপ্রিলে। এখন হয়ে গেলো আমার দুইটা ইন্টারভিউ ডেট। এরপর ২৪ ফেব্রুয়ারিতে এম্বাসি আমি সহ অনেকের ইন্টারভিউ ডেট দিলো ক্যানসেল করে। :'( :'( এবার তো আমার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়া অবস্থা। মোটামুটি ভেঙে গেছি বলা যায়। ভয় ও পাইছি প্রচুর। এপোইন্মেন্ট এর জন্য অনেক দৌড়াদৌড়ি করলাম লাভ হলো না৷ এর পর জবে জয়েন করলাম মার্চে। জীবনের প্রথম ভাইভা আর প্রথম জব তাও করনার জন্য থেমে গেলো মাস খানেক করার আগে। তারপরের কাহিনী তো সবার ই জানা মোটামুটি করোনাতে বাসায় বন্ধী। এডমিশন ডেফার করলাম দুইটা ইউনিভার্সিটি থেকেই। উইন্টার এ আরো ৬/৭ টা তে এপ্লাই করলাম সব গুলো রিজেক্ট হলো। জুলাই তে এম্বাসী একটু একটু করে কাজ শুরু করলো। অথচ এপোইন্মেন্ট এর কোন খোজ নেই৷ বাড়িতে থাকতে থাকতে পাগল হবার অবস্থা৷ এরপর সেপ্টেম্বরের ১ তারিখে র‍্যাংসে এসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার হয়ে ঢুকলাম। করোনার মধ্যে জবে জয়েন করার আগে আমার বড় ভাই বার বার বলছে জবটব লাগবে না দেখিস তোর জার্মানি তেই হয়ে যাবে। আমার পরিবার সব থেকে বড় সাপোর্ট আমার জন্য সবসময়ই। যায়হোক এরই মধ্যে যত রকম অনলাইন আন্দোলন, টুইট, DW নিউজ সব কিছুতে অংশ নিলাম। সময় চলে যাচ্ছে সেপ্টেম্বর চলে আসলো ব্লক সহ সব কিছুই রেডি এদিকে আমার লাস্ট এনরোলমেন্ট ২৭ নভেম্বর। যেদিন ২৪ সেপ্টেম্বর রিশিডিউল এর একজন মেইল পেলো ৭ দিনের মধ্যে ডক সাবমিশন এর তখন তো আরো ঘাবড়ে গেলাম এটা ভেবেই যে যদি তখন আমার কাছে ভ্যালিড এডমিশন লেটার না থাকে বা এমন টাইমে ডক সাবমিশন এর মেইল পেলাম দেখা গেলো লাস্ট এনরোলমেন্ট এর আর ১০ দিন সময় হাতে আছে। তাহলে আম ছালা দুইটাই যেত। ভয় আর ভয়, যায়হোক আল্লাহর অশেষ রহমতে এম্বাসি রিশিডিউল দের মেইল দেওয়ার কয়েকদিনের মধ্যে যারা এপোইন্মেন্ট এর রেজিষ্ট্রেশন করে রাখছে অথচ ডেট পাইনি তাদেরকে মেইল দেওয়া শুরু করলো। আমিও আলহামদুলিল্লাহ পেয়ে গেলাম ৪ অক্টোবর ডক সাবমিশন এর মেইল। আল্লাহর অশেষ রহমত এখানে কেননা রিশিডিউল দের আগে নিউ এপোইন্মেন্ট দেবে এটা কেউ ই ভাবি নি। আমি ২৪ ফেব্রুয়ারিতে অন্যরা মেইল পাচ্ছে দেখে ট্রাভেল ইন্সুরেন্স, বায়োমেট্রিক ছবি সহ যা যা লাগবে সব রেডি করে রাখলাম যেন মেইল পাওয়ার সাথে সাথে আমি চেকলিস্ট অনুযায়ী সব এম্বাসিতে পাঠিয়ে দিতে পারি৷ সেজন্য ৫ অক্টোবর এ মেইল দিয়ে দিলাম ৬ অক্টোবর আমাকে কল দিয়ে বলল ১২ অক্টোবরে সকাল ১১ টায় ইন্টারভিউ।

ওই দিন গিয়ে সকাল ১০ টায় দাঁড়িয়ে পড়ছি ভদ্রলোক হয়ে টনটনে রোদ্রের ভিতর। এরপর হঠাত ১০ঃ৪০ এ আমাকে ডেকে পাসপোর্স্ট দেখে ঢুকিয়ে সরাসরি বলল ৬ নম্বর কাউন্টারে চলে যান। এবার আমার হাত পা কাপাকাপি সিচুয়েশন

Vo- Arrange your documents
Give me one set of photocopy
Which University are you going?
Which Course?
How many credits?
Give me another set of photocopy
And 2 sets of LOM and CV
What was your University here?
which subject?
Which state?
Bachelor?
Result?
Me – 2.99
Vo- How many University have you applied? How many rejected? What they have said?
Then HSC BSC Result Passing Year,
How many siblings do you have?
About Father Mother

Which city are going?
Tell about the city
What about accomodation?
What is room size? 🥴🥴🥴
“Unexpected Question it was”
Bla bla bla আরো অনেক কিছু ছিলো।

এর মধ্যে আমার পাসিং ইয়ার সার্টিফিকেট এ ২০১৮ লেখা বাট আমি ২০১৯ বলছি। আর ক্লাশ শুরু কবে থেকে এটাও ভুল বলছিলাম।

এর পর অপেক্ষা আর অপেক্ষা সাথে ভয় কেননা হাতে সময় কম এদিকে আমার লাস্ট এনরোলমেন্ট ২৭ নভেম্বর । ৮ নভেম্বর পেলাম ফ্লাইট রিজার্ভেশন এর মেইল তারপর ১২ নভেম্বর ভিসা কালেক্ট করলাম ৬ মাসের (আলহামদুলিল্লাহ) । আর ২২ তারিখে জার্মানি চলে আসছি। কারণ আমার ফিজিকাল এনরোল্মেন্ট যার লাস্ট ডেট ২৭ নভেম্বর ছিলো। এসে মোটামুটি বাকি কাজ আলহামদুলিল্লাহ করে ফেলছি৷ এখন শুধু সিটি রেজিষ্ট্রেশন বাকি।

২০১৭ তে প্লান করা ২০২০ এর শেষে এসে বাস্তবায়ন এই মহামারির মধ্যে। একটা জিনিস সর্বশেষ আমার উপলব্ধি তা হলো “আমাদের কাজ শুধু চেষ্টা করা আর আল্লাহর পথে চলা নামাজ কালাম পড়া সাথে ধৈর্য ধরা কারণ দেওয়ার মালিক আল্লাহ।” উনি সব ই হয়তো দিবেন বাট সঠিক সময়ে৷
“Higher Education is a game of patience” যারা ভবিষ্যতে আসবেন তারা আগে এটা মুখস্ত করবেন৷ একটু বেশি মানে অনেক বেশি লিখে ফেললাম। কষ্ট নিয়ে পড়ার জন্য ধন্যবাদ। অনেক দিনের আবেগের কথা এগুলো। ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন। ছবি গুলো আমার পড়ার টেবিলের সামনে রাখা লিখে রাখছিলাম। গত এক বছর অনেক ভয়ভীতি মূলক আর অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন গেছে৷ তারপর ও সব কিছুর জন্য আলহামদুলিল্লাহ। আর গ্রুপের সকল তথ্য দাতা, সহযোগী ভাই বোন, আমার সকল শুভাকাঙ্ক্ষী ভাই বন্ধু সবাইকে আল্লাহ উত্তম প্রতিদান দিক।

মোঃ সোহানুর রহমান
ফলিত রসায়ন ও রাসায়নিক প্রকৌশল বিভাগ, বশেমুরবিপ্রবি
২.৯৯ (২.৫১ জার্মান গ্রেড)
আইএল্টস ৬
২ ইন্টার্নশিপ
এমএসসি এডভ্যানস ফাংশনাল ম্যাটেরিয়ালস, টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটি অফ কেমনিটজ।

Leave a Reply