বছরখানেক আগে ঘটে যাওয়া একটা ঘটনা গ্রুপে শেয়ার করি। নিজের সামান্য অসতর্কতার জন্য মোটামুটি ভালো টাকাই গচ্ছা দিয়েছিলাম। নতুন যারা আসবেন তাদের হেল্প হবে আশা করি। জার্মানি আসার সাথে সাথে বাংলাদেশেই আপনাদের “কেয়ারলেস” মেন্টালিটিটা রেখে আসবেন কাইন্ডলি। জার্মান না পারলে সব কিছু সময় নিয়ে হলেও গুগোল ট্রান্সলাট দিয়ে ট্রান্সলেট করে বুঝে শুনে নিবেন। কোন কাগজে সাইন, বা কোন জায়গায় ফ্রী অফার পেয়ে লাফাতে শুরু করবেন না। আর সব থেকে ইম্পরটেন্ট হলো এমাজন বা কোথাও থেকে কোন কিছু অর্ডার করলে সেই সব চিঠি বা বাক্স যেখানে আপনার ঠিকানা আছে সেই যায়গাটা ভালো করে মুছে না নষ্ট করে ফেলবেন। আমি নিজেও অনেক কেয়ারলেস ছিলাম কিছু ব্যপারে তাই ১৮২ ইউরো গচ্ছা দিয়ে নিজের শিক্ষাটা হাতে নাতে পেয়েছি। কি সেই কেচ্চা সেটাই বলছি।

বছরখানেক আগে আমার ঠিকানায় হুট করে ২.১৫ ইউরোর সাপ্তাহিক একটা ম্যাগাজিন আসা শুরু করে। PVZ Pressevertriebszentrale GmbH & Co. KG নামক এক কোম্পানি দাবী করে বসে আমি নাকি ফোন কলে তাদের বাৎসরিক এই ম্যাগাজিনের জন্য সাবস্ক্রিপ্সন করেছি যা ডাহা মিথ্যা কথা। Trustpilot এও এদের রিভিউ পড়লে বুঝতে পারবেন এরা মুলত টার্গেট করে জার্মানি থাকা বিদেশীদের বিশেষ স্টুডেন্টদের যাদের হয়তবা লিগাল ইনস্যুরেন্স বা আইনি ঝামেলায় জড়ানোর কোন ইচ্ছা নেই ( https://www.trustpilot.com/review/www.pvz.de) । ঠিক কিভাবে আপনি এইসব স্ক্যামে পরতে পারেন তার কিছু ধারনা দেই।

ফেবু বা অনলাইনে হুট করেই দেখলেন বড় কোন কোম্পানিতে অফার দিয়েছে আর যা পাবার জন্য আপনার ইনফো দিতে হবে। আপনি ভাবলেন আরে বাহ ৫০ ইউরো ডিস্কাউন্ট দিয়ে দেই নিজের ঠিকানা , ব্যাস খেলা শুরু।

আপনার সামান্য পরিচিত কাউকে আপনার বাসার Wifi শেয়ার করলেন। সে আপনার IP ইউজ করে কোন কিছুর জন্য রেজি করে বসল। বাশ খেলেন আপনি। কারন এটা যে আপনি করেন নাই তার জন্য আইনি ঝামেলায় জড়ানোর মত টাকা পয়সা স্টুডেন্ট লাইফে আমাদের ঠিক ভাবে থাকে না।

অহেতুক নিজের বাসার ঠিকানা বা মোবাইল নাম্বার শেয়ার করা।


অপরিচত নাম্বারে কল এলে কারন ছাড়া রিসিভ না করা।

যেহেতু বুড়িগঙ্গার পানি পেটে পড়েছে তাই ম্যাগাজিনের ঝামেলায় পরে তাদের শেষ দেখে নেওয়ার ইচ্ছা মাথায় প্রবল ভাবে চাড়া দিয়ে উঠল। সেসময় সরাসরি কল দিলাম জার্মান হেল্প লাইনে, তারা পরামর্শ দিলো থানায় গিয়ে মামলা করতে। থানায় গিয়ে মামলা করার আগে হুট করেই আমার ভার্সিটির এক এক্স জার্মান স্টুডেন্টের সাথে পরিচয়। পুলিশের অফিসার গোছের সেই ভদ্রমহিলা জিজ্ঞেস করলেন আমার ” লিগাল ইনস্যুরেন্স আছে নাকি”। নাই শুনে পরামর্শ দিলেন ভার্সিটির ল ডিপার্টমেন্টে নাকি স্টুডেন্টদের আইনি সহায়তা দেওয়ার জন্য একটা ক্লাব আছে, সেখানে আগে যাবার জন্য। উনি চাইছিলেন আমি যেন আরো ঝামেলায় না পরি। পরে ভার্সিটির সেই ক্লাবে গিয়ে আলোচনা করে বুঝলাম টাকাটা দিয়ে দেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ আর ইমেইল করে নেক্সট ইয়ারের সাবস্ক্রিপ্সন কান্সেল করা। কারন ম্যাগাজিন পাঠায় তারা আর টাকা তোলার জন্য তারা ইউজ করে একটা ল ফার্মকে। নিজের আইনজীবী ছাড়া ওদের সাথে লাগাটা ভুল হবে। যাই হউক এর পরে ১ বছর ধরে জার্মান ভাষার এই ম্যাগাজিন প্রতি সপ্তাহে আমার কাছেই আসত। মেজাজ খারাপ হয়ে যেত। তবে সেই ম্যাগাজিন পড়েই নিজের ডয়েচ ইম্প্রুভের ট্রাই করছি। বলতে পারেন নিজেকে শান্তনা দেওয়া আর কি।

এমনটা না যে অনলাইন জগত সমন্ধে আমার জানা বা সতর্কতা খুব কম। এত কিছু জানা আর বোঝার পরেও ঝামেলায় পড়েছিলাম। এই পোস্টে জার্মানি সম্পর্কে নেগেটিভ কিছু খোজার দরকার নেই। বরং আমাদের ভুলেই বা অসতর্কতায় যে আমরা ঝামেলায় পরি তার উদাহরণ দিলাম। আমাদের অভিজ্ঞতা গুলোই পারে সবাইকে ঝামেলা এড়িয়ে ইউরোপের সুন্দর এই দেশটিতে স্বাভাবিক ভাবে বাস করতে। আমি না হয় সাপ্তাহিক ২.১৫ ইউরোর ঝামেলায় পড়েছিলাম, কিন্তু অনেকেই দেখলাম ৬ বা ৫ ইউরোর ঝামেলায়ো পরতে। ভালো থাকবেন সবাই।

No photo description available.
No photo description available.

Leave a Reply