জার্মানির বাসগুলোকে আমার কাছে একেকটা মিনি ট্রেনের বগি মনে হয়। একদম ট্রেনের বগির মতোই খাঁজকাটা মাঝখানে। রাস্তায় বাঁক নেয়ার সময় ট্রেনের মতই বেঁকে যায়।তো তখন মাত্র জার্মানিতে ল্যান্ড করা সদ্যজাত শিশু আমি। চোখ বড়বড় করে এদিক সেদিক তাকাই। যাই দেখি মুগ্ধ হই ধরনের অবস্থা। এদিকে বাসে উঠতে আমার আবার টিকেটও লাগে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের সেমিস্টার কার্ড দেখালেই বাসে উঠে যাওয়া যায়— বসে থাকা যায় যতক্ষণ খুশি, যাওয়া যায় যতদূর ইচ্ছে!

খুশিখুশি মনে প্রথমবার একেবারে হুদাই বাসে উঠলাম। কোনো গন্তব্য নাই। ইচ্ছে মতো কোনো একটা জায়গায় গিয়ে নেমে যাব, পরের বাস ধরে আবার বাসায় চলে আসব। কারণ, বলতে গেলে একেবারে আমার ঘরের সামনেই বাস স্টপেজ।তো সেমিস্টার কার্ড দেখিয়ে একেবারে বুক ফুলিয়ে বাসে উঠে গেলাম। আর ঝামেলাটা লাগল নামার সময়। আমাকে নামতে না দিয়েই লোকজন বাসে ওঠা শুরু করল। এ কী আজগুবি ব্যাপাররে, বাবা! যত জায়গায় জার্মানদেরকে নিয়ে পড়াশোনা করেছি; এক বাক্যে প্রত্যেকটা জায়গা থেকে জেনেছি— জার্মানরা জাতি হিসেবে অত্যন্ত ভদ্র। তো এটা কেমন ভদ্র জাতি যে একজনকে বাস থেকে নামতে না দিয়েই ঠেলেঠুলে নিজেরা উঠে যায়!

আমাদের দেশে বাসের দরজায় কী সুন্দর লেখা থাকে— আগে নামতে দিন। আর এরা? ম্যানার শিখল না!

যাক, কোথায় নেমেছি কী জানি! দু-চারটা সেলফি তুলে আম্মুকে পাঠালাম। আশেপাশে কিছুক্ষণ ঘোরাঘুরি করলাম। তারপর আবার ফিরতি বাস ধরলাম। আর কাহিনীটা টের পেলাম তখনই, যখন আবার বাস থেকে নামতে গেলাম। খেয়াল করলাম, আমি একাই সামনের দিকে যাচ্ছি, বাকি সব পিছন দিকে। ঘটনা কী?ঘটনা হচ্ছে— বাসের সামনের দরজা কেবল বাসে ওঠার জন্য। আর নামার জন্য হচ্ছে পেছনের দরজা। একটু আগে এরা কেউ আমাকে ঠেলে বাসে ওঠেনি; বরং আমিই এদেরকে ঠেলে নেমে গেছি। নেহাত ভদ্র জাতি বলেই এরা হয়তো মনেমনে গালি দিয়েছে, মুখে কিছু বলেনি। আর বললেও আমি কিছু বুঝিনি। কারণ আমার জার্মান ভাষার দৌড় তখন— হালো, ইশ হাইছে সোনিয়া। ইশ কমে আউস বাংলাদেশ! (হ্যালো, আমি সোনিয়া। আমি বাংলাদেশ থেকে এসছি!)

বাস বিড়ম্বনা—২

mm

By Khadizatul Sonya

M.Sc. student of Sustainable International Agriculture (SIA), at University of Goettingen, Germany.

Leave a Reply