৩ বছরের প্রবাস জীবনের ক্ষুদ্র অভিজ্ঞতা আজ আপনাদের সাথে শেয়ার করতে চাই । আমরা আসলে এখানে যারা পড়তে আসি, আসার আগে থাকে দুই চোখ ভর্তি রঙ্গিন স্বপ্ন । পরবর্তীতে বুঝতে পারি স্বপ্ন দেখা যতটা সহজ সেই রঙ্গিন সপ্ন পুরন করার বাস্তবতা ততটাই কঠিন। পড়ালেখা, নিজের জন্য রান্না করা,রান্নার বাজার করা থেকে শুরু করে সবটাই করতে হয় একা। তার উপর চাকরির সাথে এইসব কাজ করা! সব মিলিয়ে বেপার গুলো এতটাই কঠিন হয়ে যায় যে রঙ্গিন স্বপ্ন ধিরে ধিরে সাদা কালোর বাস্তবতায় গিয়ে আটকায়। এক পর্যায় আমরা সবাই ডিপ্রেসড হয়ে পরি। নাই বাবা মা , ভাই , বোন, নাই কোন কাছের রিলেটিভ । এমন কি ভাল বন্ধু/ বান্ধবী খুজে পাওয়াটাও খুব ভাগ্যের বেপার। এদিকে সূর্য্যি মামার দেখা ও নাই উইন্টারে ! কিছু দিন আগে পরিচিত এক আপু কে অনেক রাতে ফোন করলাম। ফোন করতেই আপুর কান্না ভাঙ্গা আওয়াজ। পরে জানতে পারলাম চাকরি পাচ্ছেন না মন মতো, এদিকে পড়া শেষ এখন প্রাইভেট বাসা খুজতে লাগবে। মূলত সব গুলো বিষয় মিলিয়ে উনি অনেক ডিপ্রেসড। যাইহোক আপুকে অত রাতে ফোনে শান্তনা দেয়া ছাড়া আমার আর কিছুই করার ছিল না। তারপর ও ওনাকে বুঝিয়ে বললাম আপনি তো সব থেকে বড় রাস্তাটা পার করে এসেছেন,মানে এখানে মাস্টারস শেষ করেছেন । এবার একটু সময় দিয়ে চাকরি খুজলেই সমস্যার সমাধান। আর পারলে একা বসে না থেকে বন্ধু বান্ধবের সাথে সময় কাটান। সেটাও যদি সম্ভব না হয় প্রতিদিন বাড়িতে কথা বলেন ,মায়ের সাথে ভাই বোনের সাথে। পারলে নামাজ পরেন (যদিও আমি নিজেও সময় মতো নামাজ পরি না)। আমার ব্যক্তিগত জীবন থেকে বলি, আমি এখানে আসার পর বাসা খুজে পাচ্ছিলাম না। যেটাও পাচ্ছিলাম মন মতো হচ্ছিলো না। আমি শুরু থেকেই চাইছিলাম আমার বোনের সাথে একটা বাসায় থাকব। যেহেতু আমার বোন ও পিএইচডি করছে, আমরা চাইলে একটা ডাবল এপার্টমেন্ট পেতে পারি স্টুডেন্ট ডর্মেই(প্রাইভেট বাসা কম্পারেটিভ্লি দাম বেশি তাছাড়া জব না থাকলে পাওয়া কষ্টকর) । মুশকিল হল এদেশিরা এক্টু ভিন্ন ভাবে চিন্তা করে, আপনি এখানে বয়/গার্ল ফ্রেন্ড নিয়ে থাকতে পারলেও ভাই বোন নিয়ে থাকতে গেলে নানা কাহিনি এদের। এবার বাসা তো দেয় কিন্তু দুই বোন কে আলাদা ডর্মে, ভাই এক শহরে দুই বোন আলাদা বাড়িতে থাকব! এটা আমার জন্যে মেনে নেয়া অসম্ভব! studentenwerk এর অফিসে যাই ভদ্র মহিলা স্থানীয়, আমি ইংলিশে কথা বলাতেই বলে উঠলো ‘Es ist nicht England, es ist deutchland’! আমিও ইংলিশে বলে উঠলাম তাহলে তোমরা ইংলিশে মাস্টারস সাবজেক্ট গুলা কেন রাখছ? আর কেনই বা ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্ট দের পড়তে আসতে বল? মহিলা বিব্রত হয়ে পাশের রুমের রাস্তা দেখাই দিল। এবার যার কাছে গেলাম বহু কস্টে ইংলিশ বলল, দন্ত প্রায় ভাঙ্গার অবস্থা! ভদ্র মহিলাকে বললাম আমার এখানে কেউ নাই আমি একলা থাকতে পারব না, আই মিস মাই ফ্যামিলি সো আমাকে এখানে একটা ডাবল এপার্টমেন্ট দাও যেখানে দুই বোন একসাথে থাকিতে পারিব। মহিলা কি বুঝল সেটা বুঝি নাই, আমি যে তার কথা বুঝিনাই সেটা সিওর ছিলাম ।

☹

তিনি আমাকে অন্য এক জায়গার ঠিকানা দিলেন। এড্রেস মতো যেয়ে দেখলাম সাইকোলজিক্যাল ব্যারাতুং ! আমি তোঁ শেষ ! বলে কি আমাকে পাগল মনে করল! যাইহোক,রেগে আবার ও ফিরে গেলাম ওই মহিলার কাছে, আরও চিৎকার করে বললাম আমি তো পাগল না! তখন মহিলা আমাকে বয়ান করে বলল আমি জানি তুমি পাগল না। তাহলে আমাকে কেন পাঠাইছ? তখন বুঝিয়ে বলল, সাইকোলজিক্যাল ব্যারাতুং এ ফ্রি কাউন্সেলিং হয়, যেখানে সব শুনার পর সাইক্রায়াটিস্ট যদি মনে করেন আমি সত্যি একা থাকতে পারব না, একা থাকলে আমার মানসিক সমস্যা হতে পারে। তখন ভদ্রলোক আমাকে একটা লেটার দিবে যে,আমি একা থাকলে অসুস্থ ফিল করি তাই বোনের সাথে থাকা উচিৎ! ওই চিঠি নিয়ে গেলে আমাকে একটা বড় বাসা দিবে যেখানে আমি বোনের সাথে থাকতে পারব। এবার গেলাম সাইক্রায়াটিস্ট এর কাছে ভদ্রলোক চরম হ্যান্ডসাম, আমাকে সব শুনে দেখে চিঠি দিয়ে দিল আর বলল কখন ও যদি সমস্যা বোধ করি তাহলে যেন অনার কাছে আবার যাই (আমি শুনে মহা খুশি ছিলাম ব্যাটা যেই হ্যান্ডসাম , তার সাথে কথা বলার আরও সুযোগ হইল)। বাসা পেয়ে গেলাম। এর পর থেকে কোন কারনে মন খারাপ হইলেই ডাক্তার সাহেবকে ই-মেইল দিলেই আমারকে কাউন্সেলিং এর সময় দিত (মূলত আমার অনার সাথে কথা বলে ভাল লাগত, ভদ্রলোক আমাকে অনেক সাজেসন দিতেন, ভাববেন না আমার আসলেই কোন মানসিক সমস্যা ছিল )। আর একটা কথা এই একলা, বরফময় গ্লুমি , আন্ধারময় জীবনে শারীরিক অসুস্থতার সাথে মেন্টাল হেলথ এরও চেক আপের দরকার আছে। এতে যদি আপনি জাজমেন্টাল হয়ে আমাকে মানসিক রোগী ভাবেন, আই কেয়ার এ ড্যাম! এবার ফিরে আসি এত কথা কেন বললাম। সবার প্রতি এটাই সাজেশন নিজেকে ডিপ্রেশন মুক্ত ও সুস্থ রাখতে হলে প্রয়োজনে সাইক্রায়াটিস্ট এর কাছেও যেতে পারেন। নিজের কমুনিটির লোকের সাথে যোগাযোগ রাখবেন। এই বিদেশ বীরভূমে দেশী ভাই বোনই উপকারে আসে, এটা আমার প্রবাশজিবনের ধারনা। তাও যদি ভাল না লাগে বই পড়ুন। আমি নিজে ও প্রচুর বই পড়ি, পাঠ্য পুস্তক না গল্প ও উপন্যাস! দেশে গেলে লাগেজে অন্য জিনিসের সাথে বই এর জায়গাটা রিসার্ভ রাখার চেষ্টা করি (পিলিজ এবার কেউ বই ধার চাবেন না, অতিব ভালবাসার মানুষ না হইলে আমি বই দিতে চাই না, তাই বই চাহিয়া লজ্জা দিবেন না।)। নিজেকে ব্যস্ত রাখার ও ডিপ্রেশন মুক্ত রাখার অনেক ভাল উপায় আছে ,যেমন আমি আজকের লেখাটা লিখে ফেললাম এটাও ডিপ্রেশনের ফলাফল

😀

। সবার সুস্থ ,সুন্দর ও ডিপ্রেশন মুক্ত জীবনের কামনায় ।

mm

By Bithi Anjuman

আমি বিথী । বার্লিন, জার্মানিতে লেখাপড়া করছি।

2 thoughts on “উইন্টার ইফেক্ট: প্রবাস জীবন ও ডিপ্রেশন”
  1. অস্থির লেখনী !! অশেষ ধন্যবাদ প্রবাসের সাদা-কালো দিন তুলে ধরার জন্য।

Leave a Reply