IELTS কি?

IELTS হল ইংরেজি ভাষার দক্ষতা (Communicative) যাচাই করার একটা পরীক্ষা। এই পরীক্ষা পদ্ধতি মূলত ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের একটা ভাষা সেন্টারের তৈরি। বিশ্বব্যাপী এই পরীক্ষাটি Brithish Council আর IDP নিতে পারে।  কিন্তু প্রশ্ন সেট করে ক্যামব্রিজ অ্যাসেসমেন্ট ইংলিশ। এই পরীক্ষা পদ্ধতি মূলত দুই রকমের – “একাডেমিক” আর “জেনারেল”। আপনি যদি উচ্চশিক্ষার উদ্দ্যেশে বিদেশযাত্রা করতে চান, তাহলে আপনাকে একাডেমিক IELTS দিতে হবে। তাছাড়া অন্য কোন উদ্দ্যেশে (যেমন- চাকুরী/ব্যবসা/ইমিগ্রেশন ইত্যাদি) বিদেশযাত্রা করতে চাইলে আপনাকে জেনারেল IELTS দিতে হবে। এই দুইটি পদ্ধতির মধ্যে পার্থক্য যৎসামান্যই। ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি একাডেমিক-এর তুলনায় জেনারেল পরীক্ষার ব্যাপ্তি একটু বেশি। আর ঢাকায় সাধারণত প্রতি মাসেই ৫-৬ টার মত পরীক্ষার তারিখ থাকে। কিন্তু খুলনাতে মাসে ১/২ টা পরীক্ষার তারিখ থাকে। পরীক্ষা দিতে ১৬৫০০ টাকা আর পাসপোর্ট লাগে। রেজাল্ট পেতে সময় লাগে ১৩ দিন।

IELTS কেন?

বিদেশে M.Sc অথবা Phd করতে চাইলে আপনি যে ইংরেজিতে পড়াশোনা/কথোপকথন করতে পারবেন তার একটা দলিলপত্র থাকতে হয়। সেই দক্ষতা প্রমাণ করতেই IELTS স্কোর লাগে। আর আমেরিকার কিছু বিশ্ববিদ্যালয় বাদে সারা বিশ্বে IELTS সমাদৃত। এমনকি কিছু প্রগ্রামে IELTS না চাইলেও ভিসা অফিস এর রিকয়ারমেন্টে IELTS থাকে এখন।  আমার আর্টিকেলের বাকি অংশ একাডেমিক IELTS এর সম্পর্কে ধারনা দিতে লেখা। 

আমি তো ১ম / ২য় বর্ষে এখন প্যারা নিব কেন? 

কারণ হঠাৎ করে একটা ভাষার দক্ষতা অর্জন করা যায় না। চেষ্টা করলে হতাশ হবার সম্ভবনা বেশি। এইটা একটা Continuous Process। যদিও বেশির ভাগ বিষয়গুলো আমরা ইংরেজিতে পড়ি, কিন্তু বাংলিশ-এর চক্কর থেকে বেড়িয়ে স্ট্যান্ডার্ড ইংলিশে অভ্যস্থ হতে চাইলে আগে থেকেই শুরু করা উচিত। 

নিজের অবস্থা যাচাই করা

নিজের বর্তমান ইংরেজির অবস্থা জানতে এইখানে একটা অনলনাইন পরীক্ষা দেওয়া যায়। এই ওয়েবসাইটটা হচ্ছে যারা IELTS এর প্রশ্ন করে মানে ক্যামব্রিজ অ্যাসেসমেন্ট ইংলিশের। 
https://www.cambridgeenglish.org/test-your-english/for-schools/  (আমার ২১ আসছিল, ২৫ টার ভিতরে)

IELTS পরীক্ষার সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত ধারনা

দুই দিনে IELTS পরীক্ষা হয়। যে তারিখের জন্য রেজিস্ট্রেশন করা হয় সেই দিনে লিসেনিং, রিডিং আর রাইটিং হয় যথাক্রমে। আর এই দিনের দুই/তিন দিন আগে বা রে স্পিকিং টেস্ট হয়। নিচে প্রতিটা মডিউল সম্পর্কে ধারনা দিবার চেষ্টা করব।
  • লিসেনিং :  এই মডিউলে ৪ টা সেকশন থাকে। প্রতি সেকশনে ১০ টা করে প্রশ্ন থাকে। মোট ৪০ টা প্রশ্ন থাকে যার প্রতিটার মার্ক ১ করে। এই ৪০ টার কতটা ঠিক হবে তার উপরে আসলে ব্যান্ড স্কোর দেওয়া হয়। এইখানে আসলে ৪ সেকশনে ৪ টা অডিও থাকে। অডিও শুনতে শুনতে প্রশ্নের উত্তর করতে হয়। ভয় পাবার কিছু নেই, ৪-৫ টা প্রশ্ন পড়ে পরের ৪-৫টা পড়ার জন্য সময় দেওয়া হয় আর উত্তর প্রশ্নের ক্রমানুসারে থাকে। সাধারণত ৬ ধরনের প্রশ্ন থাকে লিসেনিং এ। https://www.ielts.org/about-the-test/test-format এই সাইটে সুন্দর করে প্রতি টাইপের সম্পর্কে ধারনা দেওয়া আছে। 
 
  • রিডিং : এই মডিউলে ৩ টা সেকশন থাকে। প্রতি সেকশনে ১৩ থেকে ১৪ টা করে প্রশ্ন থাকে। সাধারণত শেষেরটায় ১৪ টা থাকে। মোট ৪০ টা প্রশ্ন থাকে যার প্রতিটার মার্ক ১ করে। এই ৪০ টার কতটা ঠিক হবে তার উপরে আসলে ব্যান্ড স্কোর দেওয়া হয়। এই মডিউলে ৩ টা প্যাসেজ থাকবে। প্যাসেজ পরে উত্তর করতে হবে। আমাদের ৯ম -১০ম শ্রেণির  ইংরেজি ১ম পত্রের মত করে আরকি। এইখানে সময় আর প্যারাফ্রেজ(একই কথা ঘুরিয়ে বলা যেটাকে বলে) বেশি গুরুত্বপূর্ণ। রিডিং এ সাধারণত ১১ ধরনের প্রশ্ন থাকে। https://www.ielts.org/about-the-test/test-format এই সাইটে সুন্দর করে প্রতি টাইপের সম্পর্কে ধারনা দেওয়া আছে। 
    
  • রাইটিং : এই মডিউলে আসলে ২ টা প্যাসেজ লিখতে হয়। ১ম প্যাসেজটায় একটা ভিজুয়ালের বর্ণনা করতে হয় আর ২য় প্যাসেজে একটা বিষয়ে মতামত ও তার পক্ষে যুক্তি দিতে হয়। টাস্ক ১ ও ২ এর জন্য ieltsliz ওয়েবসাইট খুবই অসাধারণ। খুব যত্ন করে এইখানের উত্তর আর পরামর্শ গুলা ফলো করে প্রস্তুতি নিলে রাইটিং এ ভাল করা যায়। আশা করি লিঙ্কটা কাজে আসবে… http://ieltsliz.com/ielts-writing-task-1-lessons-and-tips/ http://ieltsliz.com/ielts-writing-task-2/
  • স্পিকিং : এই মডিউলে আসলে একজন শিক্ষকের সাথে ১১-১২ মিনিট কথা বলতে হবে। প্রথম ৪-৫ মিনিট কিছু সাধারণ প্রশ্নের উত্তর করতে হয়। তারপর একটা টপিকের উপরে ১-২ মিনিট কথা বলতে হবে। প্রস্তুতির জন্য ১ মিনিট সময় দেওয়া হয়। এরপর ৫-৬ মিনিট আবার প্রশ্ন-উত্তর করতে হবে। কিন্তু এইবারে প্রশ্নগুলা একটুু বিশ্লেষণধর্মী। ৩-৫ লাইনে উত্তর করতে হয়। আসলে উত্তরটার কারণ ব্যাখ্যা করতে হবে মূলত। IELTS speaking sample লিঙ্কটাতে ঘুরে আসলে সম্যক ধারণা পাওয়া যাবে।

কোচিং এ ভর্তি হব নাকি নিজেই প্রস্তুতি নিব?

আমি আসলে কোচিং করিনি। নিজেই প্রস্তুতি নিছিলাম। কিন্তু পরীক্ষার আগে কলাবাগানের মেন্টরসে ৫ টা মকটেস্ট দিছিলাম জড়তা কাটাতে। এইটা আসলে ডিপেন্ড করে। অলসদের জন্য কোচিং করা ভাল। আর যারা সিরিয়াস তারা অনলাইন রিসোর্স আর বই দিয়েই ভাল করতে পারবে। আসল কথা হল প্র্যাক্টিস করতে হবে আর যে জায়গায় সমস্যা বের করে তার সমাধান করতে হবে। রাইটিং মূল্যায়নের জন্য ফেসবুকের কিছু গ্রুপ আছে, যেখানে পোষ্ট করলে অভিজ্ঞরা দেখে দেয়। ভাল করার জন্য পরামর্শ দেয়। 

কিভাবে ইংরেজি এর দক্ষতা বাড়াব?

ইংরেজি এর ব্যবহার দুইরকম। একটা হল Passive, অপরটা হল Active। Passive বলতে আসলে লিসেনিং আর রিডিংকে বুঝায়। আর Active বলতে রাইটিং আর স্পিকিংকে বুঝায়। Passive দিয়ে আমরা বুঝি আর Active দিয়ে বুঝাই। যারা ইংলিশ মুভি, টিভি সিরিজ, টেড ইত্যাদি দেখে তাদের স্বাভাবিক ভাবেই লিসেনিংটা হয়। আর যারা ইংরেজি গল্পের বই, ইংরেজি আর্টিকেল পড়ে তাদের রিডিংও ভাল হয়। ভাল করে লিখতে হলে, ভাল করে পড়তে হবে। আর ভাল করে শুনলে, ভাল করে বলতে পারা যাবে। কারণ তখন একটা ধারনা আমাদের ব্রেনে তৈরি হয়ে যায়। তারমানে এই না যে শুধু পড়লেই, লেখা ভাল হবে। পড়ার পাশাপাশি, লেখার অভ্যাস করতে হবে। একইভাবে লিসেনিং স্পিকিং এর জন্য কাঁচামাল সরবরাহ করবে, স্পিকিং এর মাধ্যমেই স্পিকিং এর উন্নতি হবে। 

Passive English(Listening, Reading) কেন বেশি গুরুত্বপূর্ণ?

আমার অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি IELTS  এর লিসেনিং ও রিডিং এ একটু টেকনিক্যালি প্রাকটিস করলে ৮/৮.৫ পাওয়া সম্ভব। এই দুইটা দিয়ে খুবই সহজে ওভারঅল স্কোর আপ করা যায়। তার জন্য passive ইংলিশ এর ব্যবহার বাড়াতে হবে। আমার পরিচিত বন্ধু, সিনিয়র ভাই, শিক্ষককে চিনি যারা ৭.৫-৮ স্কোর পাইছে খুবই সহজে তাদের passive ইংলিশ এর কারণে। জাস্ট পরীক্ষার আগে ১-১.৫ মাস ভাল করে প্র্যাক্টিস করে। 

Active English (Writing, Speaking) কেন রেগুলার পরীক্ষার আগে অবশ্যই প্র্যাক্টিস করতে হবে?

Active ইংলিশ এর জন্য আসলে টেস্ট দিয়ে ভাল করে ইভালুয়েট করতে হবে। কারণ আমাদের চিন্তা করার সাথে বলা, লিখার synchronization হইতে সমস্যা হয়। ফলে নিজের লিখা, বলা নিজের চেক করলেও বুঝা যায় যে যেমন চিন্তা করছিলাম তাড়াতাড়ি বলতে বা লিখতে যেয়ে তেমন বের হচ্ছে না কারণ আমরা নেটিভ ইউজার না। এইটা অভ্যাস সাপেক্ষ। এই জন্যই প্র্যাকটিস টা মুখ্য।  

Grammer

আমাদের অনেকের ধারনা থাকে যে, IELTS এর জন্য মনে হয় বিশাল গ্রামারের ধারনা লাগবে। আসলে কিছু বেসিক টপিক আছে যেগুলাই যথেষ্ট। যেমন : Tense, Article, Preposition, Sentence Structure। মূলত রাইটিং, স্পিকিং এ গ্রামার টা দেখা হয়।   

আমার কথা 

আমি ২০ অক্টোবর, ২০১৮ IELTS পরীক্ষা দেই। আমার স্কোর ওভারঅল ৭ (L=8, R=7, W=6.5, S=6.5)। আমার passive ইংলিশ এর অবস্থা ৩য় বর্ষ পর্যন্ত খুবই খারাপ ছিল। ৪র্থ বর্ষ পুরা টিভি সিরিজের উপর গেছে। আমার এখনও মনে আছে ৪-১ টার্ম ফাইনাল পরীক্ষার ভিতরে Game of Thrones এর সাতটা সিজিন শেষ করছি face with stuck-out tongue । আর রিডিং এর কথা বলতে এই পর্যন্ত ২-৩ টা ইংরেজি গল্পের বই পড়েছি (বাংলার তো আরও খারাপ অবস্থা) তাও শেষের দিকে। আনাড়ি হাতের লেখা দেখেই আশা করি বাকিটা বুঝে গেছেন। 
বন্ধু মৃদুল, মিশুক (kucse-14) আর রায়হান ভাইকে (kucse-13) অসংখ্য ধন্যবাদ সময় নিয়ে লেখাটাকে পড়ার যোগ্য করতে সাহায্য করায়। 
শুভ কামনা থাকবে সবার জন্য।

Materials To Learn     

Sites for Practice

  • https://ieltsonlinetests.com (এইখানে যখন তখন রিডিং আর লিসেনিং টেস্ট দেওয়া যায় আর সাথে সাথে স্কোরও পাওয়া যায়)
  • Cambridge test 7-12
5 thoughts on “IELTS-এর অ আ ক খ”

Leave a Reply