সেই দিনটির কথা এখনো মনে পরে … যখন এক জন করে স্টুডেন্টের ডাক পরছে বিশাল হল রুমে আর সে তার পছন্দের ইউনিভার্সিটি নিয়ে নিচ্ছে আর আমি মনে মনে দোয়া করছি যেন আমার কল আসা পর্যন্ত জার্মানির একটা অন্তত ভার্সিটি থাকে, কারন আমি তো ঐখানেই যেতে চাই যেখানে চাইলেই আমি ঐ সদা হাস্যোজ্জল মুখটা দেখতে পারবো। জি আমি আমার ইরাস্মুস প্লাস স্কলারশিপ এর এর অভিজ্ঞতাই শেয়ার করবো আর সুহাসিনী ঐ রমনীর কথা না হয় আর একদিন হবে। ইরাস্মুসে আমার ভার্সিটির (ইউনিভার্সিটি অফ রোম) সাথে ইউরোপের কম বেশি ২৫০ টা ভার্সিটির পার্টনারশিপ ছিলো, যার মধ্যে জার্মানিতেই ৩০ টা ছিলো, এগুলোর মধ্য থেকে আমি ড্রেসডেন নিয়েছিলাম কারন এই একটা শহর নিয়ে আমার অনেক রোমাঞ্চ কাজ করতো। ইরাস্মুসে আবেদন থেকে ভার্সিটি পছন্দ করা পর্যন্ত সব কিছু ঠিক থাকলেও আমার জার্মান যাত্রা ছিলো কণ্টক পূর্ণ। আমি কখনো স্বপ্নেও ভাবিনি আমাকে জার্মানি যেতে এতোটা কষ্ট সহ্য করতে হবে। একটি হাসিমুখ আর নতুন শহর দেখার রোমাঞ্চের কাছে যদিও এই কষ্ট আসলে কিছুই ছিলো না আমার কাছে । আমি দুই তিন ধাপে চেষ্টা করবো আমার জার্মান যাত্রা, জার্মানদের ভালোবাসা, গুটি কয়েক জার্মানদের বর্ণবাদ, জার্মানির সৌন্দর্য আর জার্মানিতে প্রেমিকার সাথে প্রেম নিয়ে কিছু লিখার।

::জার্মান যাত্রা ::
আমার জীবনের সব চেয়ে লম্বা আর রোমাঞ্চ পূর্ণ বাসযাত্রা ছিলো এই জার্মানযাত্রা , ১৭০০ মাইল লম্বা আর ২২ ঘন্টার এই যাত্রায় আমাকে পারি দিতে হয়েছিলো ইতালি, অস্টিয়া, চেক রিপাবলিক আর ফাইনালি জার্মানি এই ৪ টি দেশের নাম না জানা অনেক অনেক শহর। আমি কখনো চিন্তাও করিনি যে বাসে করে জার্মানি যাবো আর এমন কোন প্ল্যান ও ছিলোনা কখনো। এয়ার টিকিট কাটা নিয়ে আমি একটু বিভ্রান্ত হয়ে গিয়েছিলাম কারন ভিসা অফিসার আমাকে ব্লক অ্যাকাউন্ট ধরিয়ে দিয়েছিলো যার জন্য আমি একদমি প্রস্তুত ছিলাম না। আমার ইতালিতে একটা ছোট স্কলারশিপ ছিলো আর ইরাস্মুসের স্কলারশিপ এই দুইটা মিলিয়ে মাসে এক হাজার ইউরোর মতো আমি পাই তাই আমি ভেবেছিলাম আমার হয়তো ব্লক করা লাগবে না, কিন্তু আমি আমার ইতালির স্কলারশিপের পেপারটা ওয়েবসাইট থেকে প্রিন্ট করে নিয়ে গিয়েছিলাম তাই ঐটা ভিসা অফিসার গ্রহন করেনি। যাই হোক ভিসা অফিসারকে এটা বলার পর উনি আমাকে উনার মেইল দিয়ে বলল অফিসিয়াল পেপারটা মেইল করে দিতে। মেইল করার ২০ দিন পর উনি আমার ভিসা ব্লক ছাড়াই অ্যাপ্প্রুভ করেছিলো। তখন আমার হাতে সময় অনেক কম তাই গরীবের এয়ারলাইন রাইন এয়ার এ সার্চ দিয়ে দেখি টিকিটের দাম অনেক বেশী, তখন অনেক খুজে এয়ার বার্লিন এ টিকিট করলাম ৮৮ ইউরো দিয়ে আর এই টিকিটাই আমার কাল হয়ে দারালো।

আমার ফ্লাইট ছিলো ১ অক্টোবর ২০১৭ কিন্তু হঠাৎ আমি ২৯ তারিখ বিকেলে একটা মেইল পেলাম যেখানে এয়ার বার্লিন দুঃখ প্রকাশ করে জানালো যে তারা তাদের ফ্লাইট বাতিল করেছে আমি যেন অন্য ব্যবস্থা করি, এটা দেখে আমার অবস্থা নিশ্চয় আপনারা অনুমান করতে পারছেন? যাই হোক আমি ওদের সাথে যোগাযোগ করার অনেক চেষ্টা করলাম কিন্তু কোন লাভ হলো না। তখন এয়ারে ৪০০ ইউরোর নিছে আর কোন টিকিট নেই , ঐ দিকে আমাকে ভার্সিটির হোস্টেল ১ তারিখ সকালেই ছাড়তে হবে তাই বধ্য হয়ে ফ্লিক্সবাসে ১১০ ইউরো দিয়ে টিকিট করলাম ভাবলাম লাইফ ইজ নাথিং বাট এ এডভেঞ্চার।

১ তারিখ সকালে দুইটা লাগেজ নিয়ে আমি ১ ঘন্টা আগেই পৌঁছে গেলাম টার্মিনালে কিন্তু বাস নেই, বাস আসলো ডিপারচার টাইমের ১৫ মিনিট আগে । তো ওরা একে একে যাত্রীর পাসপোর্ট চেক করে বাসে তুলছে যখন আমার পালা আসলো তখন ব্যাগ থেকে ফাইল বের করে চেকারকে পাসপোর্ট দিতে যেয়ে দেখি আমার পাসপোর্ট ফাইলে নেই, ব্যাগে খুজলাম কিন্তু নেই, লাগেজ চেক করলাম ঐখানেই নেই। টারমিলানের ভিতর আমি পুরো লাগেজ খুলে ফেললাম কিন্তু নেই … নেই কোথাও নেই। চেকার আমকে বলল ওদের সময় হয়ে গেছে ওরা বাস ছেড়ে দিবে আমার কিছু বলার আছে কিনা আমি ওর দিকে তাকিয়ে দুই পাশে মাথা নাড়ালাম। বাস আমাকে রেখে চলে যাচ্ছে আমি চেয়ে চেয়ে দেখছি, আমি দোয়া করি এই অভিজ্ঞতা যেন কারো না হয়, এটা দুমড়ে মচকে যাওয়ার অভিজ্ঞতা। আমি কিছুক্ষণ কিংকর্তব্য বিমুখ হয়ে চেয়ারে বসে থাকলাম হটাত মনে পরলো টিকিট কেনসেল করতে হবে দ্রুত ফ্লিক্সবাসের ওয়েবে ঢুকে দেখি কেনসেল করার টাইম শেষ, সাথে আমার ১১০ ইউরোও শেষ। মন খারাপ করে অনেক্ষন বসে ছিলাম টারমিনালে ……

(বাকি অংশ পরের ধাপে)
আমি ভালো লিখাতে পারি না তাই যদি কুনো ভুল হয়ে থাকে তাহলে কিছু মনে করবেন না প্লিজ।

mm

By Habib

2 thoughts on “ডয়েচল্যান্ডের গল্প : পর্ব ১”

Leave a Reply