উচ্চশিক্ষার উদ্দেশে বিদেশ যাত্রায় প্রাথমিক পদক্ষেপের অংশ হিসেবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধাপ গুলোর একটি হল IELTS পরীক্ষা। একটু সচেতন এবং কৌশলী হলে এই পরীক্ষায় খুব সহজেই খুব ভালো স্কোর তুলা সম্ভব। আমি এই লেখায় চেষ্টা করবো IELTS পরীক্ষার প্রস্তুতি নিয়ে আমার নিজের অভিজ্ঞতা, অভিমত এবং প্রস্তুতি প্রক্রিয়া বর্ণনা করতে।

 

IELTS পরীক্ষার মূলত দুইটি ভিন্ন মডিউল রয়েছে। এর মধ্যে উচ্চশিক্ষার উদ্দেশে বিদেশের ভার্সিটিতে এডমিশন নিতে চাইলে আপনাকে অবশ্যই একাডেমিক মডিউলে পরীক্ষা দিতে হবে। আর আপনি যদি চাকরি কিংবা রেসিডেন্ট পারমিট এর জন্য বিদেশে ভিসার আবেদন করেন তাহলে জেনারেল ট্রেনিং মডিউলে পরীক্ষা দিবেন। এই দুইটি ভিন্ন মডিউলের জন্য পরীক্ষার প্রস্তুতিতে ভিন্নতা রয়েছে। আমি এই লেখায় কেবল মাত্র একাডেমিক মডিউলে পরীক্ষার প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনা করবো

 

 

১/ বইপত্র

IELTS পরীক্ষার প্রস্তুতির অংশ হিসেবে নিচের বইপত্র গুলো অনুসরণ করা যেতে পারে-

  1. Cambridge IELTS (Volume 1-12)
  2. Collin’s IELTS
  3. Kaplan IELTS

 

উপরের লিস্টের মধ্যে Cambridge IELTS সিরিজের বইগুলো হল IELTS পরীক্ষার অফিসিয়াল গাইড। এই বইগুলো এই পরীক্ষার অরিজিনাল কোয়েশ্চেন  সেটার দের দ্বারা লিখিত ও সম্পাদিত। আর তাছাড়া এই বইগুলোর অনেক প্রশ্নই পুরানো IELTS পরীক্ষা থেকে হুবুহু তুলে দেয়া (তবে মূল পরীক্ষায় কখনোই পুরানো প্রশ্ন রিপিট করা হয় না)। তাই পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য এবং কোয়েশ্চেন  প্যাটার্ন সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণার জন্য আপনাকে অবশ্যই এই বইগুলো আগা-গোরা অনুশীলন করে যেতে হবে। আপনার ইংরেজির বেসিক যদি দুর্বল থাকে তাহলে আপনি পুরো সিরিজের ১ থেকে ১২ সবগুলো বই-ই অনুশীলন করবেন। আর যদি মনে করেন যে আপনার ইংরেজির দক্ষতা মোটামুটি সন্তোষজনক অথবা আপনার হাতে প্রস্তুতির জন্য পর্যাপ্ত সময় নেই তাহলে ভলিউম ৭ থেকে ১২ পর্যন্ত প্র্যাকটিস করে যাবেন। এই বইগুলাতে পরীক্ষার চারটি ভিন্ন ব্যান্ড (লিসেনিং, রিডিং, রাইটিং, স্পিকিং) এর প্র্যাকটিস কোয়েশ্চেন  ও সল্যুশন ম্যানুয়াল/স্যাম্পল এন্সার/ইন্সট্রাকশন্স খুবি সুন্দর করে সাজিয়ে দেয়া রয়েছে, যা আপনার শতভাগ প্রস্তুতির জন্য যথেষ্ট। প্রতিটি বইয়ে একাডেমিক মডিউলের চারটি মডেল টেস্ট এবং জেনারেল ট্রেনিং মডিউলের দুইটি মডেল টেস্ট রয়েছে। আর আলাদা সিডিতে লিসেনিং ব্যান্ড এর অডিও গুলো রয়েছে। ক্যামব্রিজ প্রতি দেড়-দুই বছর পর পর এই সিরিজের বইয়ের নতুন ভলিউম বের করে। আমি এইখানে ভলিউম ১২ পর্যন্ত উল্লেখ করেছি। আপনি এই লেখা পড়তে পড়তে হয়তো আরও নতুন ভলিউম বের হয়ে যেতে পারে। আপনার পরীক্ষা দেবার সময় যদি আরও নতুন ভলিউম বের হয় তবে সেটিও অবশ্যই প্র্যাকটিস করে যাবেন।

 

আপনার হাতে যদি আরও সময় থাকে তাহলে আপনি ক্যামব্রিজ এর বইগুলোর পাশাপাশি কলিন্স এবং কাপলান এর বইগুলোও প্র্যাকটিস করতে পারেন। তবে এই বইগুলোর কোয়েশ্চেন গুলো আমার কাছে ঠিক ক্যামব্রিজ এর স্ট্যান্ডার্ড এর মনে হয়নি। তাই আপনি চাইলে এই বইগুলো সম্পূর্ণ এড়িয়ে যেতে পারেন যেমনটা আমি করেছিলাম। মনে রাখবেন IELTS পরীক্ষার প্রশ্নপত্র প্রণয়ন এবং এন্সার স্ক্রিপ্ট এভালুয়েট করবে ক্যামব্রিজ এর অথোরাইজড এক্সামিনার এবং ট্রেইনারগণ। তাই সর্বাবস্থায় ক্যামব্রিজ এর বইয়ের মডেল টেস্ট গুলোকেই এই পরীক্ষার একমাত্র স্ট্যান্ডার্ড কোয়েশ্চেন হিসেবে বিবেচনা করবেন।

 

 

২/ ভোকাবুলারি

IELTS পরীক্ষায় ভোকাবুলারি নিয়ে অনেকে অযথাই চিন্তিত থাকেন। এই পরীক্ষায় তেমন কোন কঠিন শব্দ আসে না বা প্রয়োগও করতে হয় না। বরং দৈনন্দিন জীবনের ব্যবহিত ইংরেজির অধিক প্রচলিত শব্দ গুলোই এখানে ঘুরে ফিরে আসে। তারপরও আপনি যদি আপনার ভোকাবুলারির দক্ষতা নিয়ে চিন্তিত থাকেন তাহলে Magoosh IELTS Vocabulary Flashcards এপটি আপনার ফোনে ডাউনলোড করে অধিক প্রচলিত ইংরেজি শব্দগুলো একবার ঝালিয়ে নিতে পারেন।

 

 

##########

IELTS পরীক্ষায় রিটেন এক্সামের দিন লিসেনিং, রিডিং এবং রাইটিং পরীক্ষা গুলো সিরিয়ালে হয়। স্পিকিং এক্সাম রিটেন এক্সামের ২-৩ দিন আগে বা পরে হতে পারে অথবা রিটেন এক্সামের এর শেষেও হতে পারে। আমার সময় আমার স্পিকিং টেস্ট হয়েছিলো মূল রিটেন এক্সামের তিনদিন আগে। পরীক্ষার সাধারণত এক সপ্তাহ আগে ব্রিটিশ কাউন্সিল থেকে মেইল দিয়ে আপনাকে পরীক্ষার বিস্তারিত সময়সূচী ও যাবতীয় নির্দেশনা জানিয়ে দেয়া হবে।

IELTS পরীক্ষায় প্রতিটা ব্যান্ড এর স্কোর হল 9। আর এই চারটি ব্যান্ড এর স্কোর গড় করে ওভারঅল ব্যান্ড স্কোর গণনা করা হয় যেটি হল আপনার ফাইনাল স্কোর। এখন তাহলে মূল পরীক্ষার প্রতিটা ব্যান্ড সম্পর্কে কিছুটা ধারণা নেয়া যাক-

 

 

৩/ লিসেনিং

রিটেন এক্সাম শুরু হবে লিসেনিং দিয়ে। মোটামুটি ৩০ মিনিট সময় বরাদ্দ থাকে এই ব্যান্ড এ। চারটি ভিন্ন সেকশনে বিভিন্ন ধরণের প্রশ্ন (সর্বমোট 40 টি প্রশ্ন, প্রতিটির মান সমান) থাকবে, যেমন- short answer, multiple choice, form completion, sentence completion, map/diagram/plan questions, matching, flow chart, table, note, summary completion ইত্যাদি। প্রতিটা সেকশন শুরু হবার আগে আপনাকে কিছুটা সময় দেয়া হবে (সাধারণত এক মিনিট) কোয়েশ্চেন  পেপারে দেয়া ওই সেকশনের প্রশ্নগুলোতে একবার চোখ বুলিয়ে নেবার জন্য। এই সময়ে সেই সেকশনের প্রতিটা প্রশ্ন খুব মনোযোগ দিয়ে পড়বেন। তাহলে আপনার সেই সেকশনের অডিও সম্পর্কে একটি ধারণা চলে আসবে এবং পরবর্তীতে অডিও শোনার সাথে সাথে উত্তর চিহ্নিত করতে সুবিধা হবে। তারপর মূল অডিও আপনার হেডফোনে প্লে শুরু হলে আপনি তা শুনবেন এবং সে অনুযায়ী কোয়েশ্চেন  পেপারে পেন্সিল দিয়ে উত্তর গুলো লিখে ফেলবেন। প্রতিটা প্রশ্নের উপরে দেয়া নির্দেশনা গুলো অবশ্যই ভালো করে খেয়াল করবেন এবং সে অনুযায়ী উত্তর করবেন। যেমন কোন প্রশ্নের ব্ল্যাংকে যদি বলা থাকে যে কেবল মাত্র একটি শব্দ দিয়ে উত্তর করতে তাহলে ব্ল্যাংক স্পেসে একটি শব্দই লিখতে হবে। আর যদি সেখানে নির্দেশনার বাইরে বেশি শব্দ ব্যবহার করেন তাহলে কিন্তু সেই উত্তর কেটে দেয়া হবে।

লিসেনিং টেস্ট এর প্রথম সেকশনে সাধারণত দুইজন মানুষের মাঝে হালকা কথোপকথন দেয়া থাকে। দ্বিতীয় সেকশনেও সাধারণত থাকে একজন মানুষের নির্দেশনামূলক কথাবার্তা। যেমন ম্যাপ পরিচিতি বা কোন বিষয়/স্থান সম্পর্কে নির্দেশনা। তৃতীয় সেকশনে থাকবে দুইয়ের অধিক মানুষের মধ্যে কথাবার্তা। যেমন কোন এসাইনমেন্ট নিয়ে একজন প্রফেসরের সাথে কয়েকজন স্টুডেন্ট এর কথোপকথন। সর্বশেষ চতুর্থ সেকশনে থাকে সাধারণত একজন মানুষের দেয়া প্রেজেন্টেশন বা লেকচার। প্রথম সুই সেকশন সহজ হলেও শেষের দুই সেকশন এর কথাবার্তার ধরণ হয় বেশ জটিল এবং প্রশ্নগুলোও হয় কিছুটা পেঁচানো ধরণের। তাই খুবি মনোযোগের সাথে অডিওগুলো শুনে শুনে ঠাণ্ডা মাথায় এন্সার করতে হবে। চারটি সেকশন এর অডিও প্লে শেষ হলে আপনাকে আরও দশ মিনিট অতিরিক্ত সময় দেয়া হবে মূল এন্সার স্ক্রিপ্ট এ উত্তর গুলো তুলে ফেলবার জন্য। আগে কোয়েশ্চেন  পেপারে যেই উত্তর গুলো আপনি লিখেছিলেন এ পর্যায়ে আপনি পেন্সিল দিয়ে সেই উত্তর গুলো ফ্রেস করে এন্সার স্ক্রিপ্টে তুলে ফেলবেন।

এবার প্রস্তুতি নিয়ে কিছু কথা বলা যাক। ক্যামব্রিজ এর বইগুলো সলভ করলেই আপনার প্রশ্নের ধরণ সম্পর্কে ধারণা চলে আসবে। কিন্তু পরীক্ষার সময় অডিও শুনে দ্রুত এন্সার করবার জন্য আপনাকে ভালো লিসেনিং হেবিট তৈরি করতে হবে। এর জন্য প্রচুর ইংরেজি অডিও শুনতে হবে। ইংরেজি মুভি/সিরিজ দেখার সময় সাবটাইটেল দিয়ে দেখবেন। এতে করে শব্দ শুনে দ্রুত বুঝতে পারার দক্ষতা তৈরি হবে। এছাড়া নিয়মিত BBC radio শুনবেন কিংবা ইউটিউবে Ted, Ted Ed, Graham Norton Show, The Ellen Show, National Geographic, Nerdwriter, Last Week Tonight ইত্যাদি চ্যানেল বা বিভিন্ন ধরণের Tech Reviews, Cinema Reviews দেখতে পারেন। আমার মনে হয় এইগুলা ফলো করলে খুব দ্রুত লিসেনিং এ দক্ষতা বাড়ানো সম্ভব।

 

 

৪/ রিডিং

রিডিং ব্যান্ড এ সময় থাকে ১ ঘণ্টা আর সেকশন তিনটি। প্রতিটা সেকশনে একটি করে আর্টিকেল এবং সে সম্পর্কিত multiple choice, true/false/not given, yes/no/not given, matching, sentence completion, short answer, notes/table/diagram/summery completion ইত্যাদি ধরণের প্রশ্ন থাকবে। সুতরাং বুঝতেই পারছেন যে প্রতিটা সেকশন পড়ে উত্তর করবার জন্য আপনি ২০ মিনিট করে সময় পাচ্ছেন।

রিডিং ব্যান্ডে এন্সার করবার সময় আমি সাজেস্ট করবো যে প্রতিটা সেকশনের প্যাসেজ পড়বার আগে আপনি দ্রুত একবার ওই সেকশনের সবগুলা প্রশ্নে চোখ বুলিয়ে নিন। তাহলে সেই সেকশন থেকে কি ধরণের প্রশ্ন এসেছে তা সম্পর্কে আপনার ধারণা হয়ে যাবে। এবার আপনি আর্টিকেলটি পড়া শুরু করুন। আর্টিকেলের একটি করে প্যারাগ্রাফ পড়ুন এবং সাথে সাথে প্রশ্নপত্রে যেয়ে সেই প্যারাগ্রাফ সম্পর্কিত প্রশ্নগুলোর উত্তর করে ফেলুন। আয়েল্টস পরীক্ষায় কিন্তু সব প্রশ্ন সিরিয়ালে থাকবে। অর্থাৎ প্রথম প্যারাগ্রাফ থেকে দেয়া প্রশ্ন কিন্তু প্রশ্নপত্রের একেবারে শুরুর দিকেই থাকবে। আবার প্রশ্নপত্রের শেষের দিকে থাকবে শেষ প্যারাগ্রাফ সম্পর্কিত প্রশ্ন। কোন প্রশ্নের উত্তর খুঁজে না পেলে সেখানে দাগ দিয়ে রাখুন এবং সময় পেলে একেবারে শেষে সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজুন। প্যাসেজ পড়বার সময়ও ইম্পরট্যান্ট শব্দ গুলোর নিচে আন্ডারলাইন করে রাখুন। যেহেতু আপনি মূল প্যাসেজ টি পড়বার আগেই ওই সেকশনের সবগুলো প্রশ্নে একবার চোখ বুলিয়ে ফেলেছেন এবং প্যারাগ্রাফ অনুযায়ী সিরিয়ালি এন্সার করছেন তাই দেখবেন যে প্রতিটা প্রশ্নের উত্তরই আপনি খুব সহজে অল্প সময়ে খুঁজে পাচ্ছেন। অন্তত আমার ক্ষেত্রে এইভাবে এন্সার করাটা খুবি সুবিধাজনক হয়েছিলো। তবে অনেকেই পুরো প্যাসেজ/আর্টিকেল একবার পড়ে তারপর একসাথে ওই সেকশনের সব প্রশ্ন এন্সার করে। কিন্তু এই পদ্ধতি সবার ক্ষেত্রে ভালো ফল নাও দিতে পারে। হয়তো আপনি দেখবেন যে সব প্রশ্ন একসাথে এন্সার করতে যেয়ে আপনি মূল প্যাসেজের বিষয় বস্তু অনেকটাই ভুলে গিয়েছেন বা তালগোল পাকিয়ে ফেলেছেন এবং আবার নতুন করে উত্তরের জন্য প্যাসেজ হাতড়ে বেড়াচ্ছেন। এতে করে সময় অনেক নষ্ট হবে এবং উত্তর ভুল হবার সম্ভাবনা বেঁড়ে যায়।

আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হল এই পরীক্ষায় প্রতিটা প্রশ্নের উত্তর অবশ্যই খুব পরিষ্কার ভাবে প্যাসেজে উল্লেখ করা থাকে। তাই অনুমানে এন্সার দেবার সুযোগ নেই বা প্রয়োজন নেই। প্যাসেজে যদি বলা থাকে যে সূর্য প্রতিদিন দক্ষিণ দিকে উঠে তাহলে প্রশ্নের এন্সারে আপনি দক্ষিণ-ই লিখবেন, নিজের জ্ঞান থেকে আবার এন্সার পূর্ব লিখে বসবেন না যেনো। প্যাসেজে যেই তথ্য দেয়া থাকবে তার ভিত্তিতেই উত্তর দিবেন নতুবা এন্সার কেটে দিবে। আর নিশ্চিত থাকুন যে প্রতিটা প্রশ্নের উত্তরই খুব পরিষ্কার ভাবে প্যাসেজে বলে দেয়া আছে। আপনাকে কেবল মনোযোগের সাথে সেই উত্তরটি খুঁজে বের করতে হবে।

এই ব্যান্ডে দ্রুত প্যাসেজ পড়া, ভাবার্থ বোঝা এবং এন্সার করবার জন্য শক্ত রিডিং হেবিট খুবি জরুরি। রিডিঙে ভালো দক্ষতা তৈরির জন্য নিয়মিত প্রচুর ইংরেজি বইপত্র/ পত্রিকা (প্রতিদিন অন্তত ১ ঘণ্টা) পড়তে হবে। ভালো পাঠাভ্যাস তৈরির জন্য আপনি নিউ ইয়র্ক টাইমস বেষ্ট সেলিং বুক লিস্ট কিংবা গুডরিডসে বইয়ের সাজেশন দেখে পড়া শুরু করতে পারেন এবং প্রতিদিন National Geographic/ The Economist/ Scientific American/ New Scientist/ Reader’s Digest/ BBC News/ Wired/ Popular Scientist/ Time/ Forbes/ Smithsonian/ Vogue/ Wall Street Journal/ AL Daily থেকে কিছু আর্টিকেল পড়তে পারেন। পাশাপাশি সময় থাকলে গানের লিরিক কিংবা ইংরেজি কবিতাও পড়তে পারেন। এতে করে রিডিং এ যেমন ভালো দক্ষতা তৈরি হবে তেমনি আপনার প্রস্তুতিটাও আনন্দময় হবে।

 

 

/ রাইটিং

রাইটিং এর জন্য দুইটি ভিন্ন সেকশন থাকবে। সময় প্রতিটা সেকশনে তিরিশ মিনিট করে মোট ১ ঘণ্টা। প্রথম সেকশনে আপনাকে প্রশ্নপত্রে দেয়া গ্রাফ, চার্ট, ডায়াগ্রাম, কিংবা কোন ছবির বর্ণনা সামারাইজ করে লিখতে হবে। শব্দ সংখ্যা হতে হবে কমপক্ষে ১৫০ টা। বেশি হলে সমস্যা নেই, কিন্তু শব্দ সংখ্যা এর কম হলে কিন্তু নাম্বার অনেক কমে যাবে। এক্সামিনার কিন্তু এন্সার স্ক্রিপ্টে আপনার লেখায় শব্দ সংখ্যা গুনে দেখবেন।

রাইটিং এর দ্বিতীয় সেকশনে আপনাকে কোন একাডেমিক বিষয়ে আপনার মতামত ফর্মাল লেখনীতে উপস্থাপন করতে হবে। এই সেকশনে মিনিমাম শব্দ সংখ্যা হতে হবে ২৫০। আপনার দেয়া মতামত কতোটুকু লজিকাল বা ইরলজিকাল হল সেটা ব্যাপার না কিন্তু আপনাকে অবশ্যই আপনার চিন্তা ভাবনা ও স্টেটমেন্ট এর পক্ষে/বিপক্ষে অবস্থান পরিষ্কার ভাষায় বর্ণনা করতে হবে।

প্রতিটা সেকশন শুরু করবার আগে ৫ মিনিট ভেবে মনে মনে আপনার উত্তরটি সাজিয়ে ফেলবেন। তারপর বিশ মিনিট লিখবেন এবং শেষের পাঁচ মিনিট আবার আপনার লিখাটি রিভাইজ দিবেন। এই পর্যায়ে ভুল বানান বা গ্রামার ঠিক করবেন। আপনার উত্তরটি সুন্দর করে কয়েকটি প্যাসেজে উপস্থান করবেন। এবং লেখায় কোথাও কোন অপ্রীতিকর বা এবিউসিভ শব্দ ব্যবহার করবেন না। খেয়াল রাখবেন যেন লেখার মধ্যে একই শব্দ বারবার ব্যবহার করা না হয়, বরং ভিন্ন ভিন্ন সিনোনিম ব্যবহার করুন।

পরীক্ষার আগে অবশ্যই দুই সেকশন মিলিয়ে ৫-৫ করে অন্তত ১০ টি প্যাসেজ নিজে হাতে লিখে প্র্যাকটিস করে যাবেন। স্যাম্পল কোয়েশ্চেন এবং এন্সার এর জন্য ক্যামব্রিজ এর বইগুলো অনুসরণ করবেন। নিজে আগে বাসায় হাতে লিখে প্র্যাকটিস না করলে দেখবেন পরীক্ষার সময় লিখতে যেয়ে চিন্তা ভাবনা সব গুবলেট পাকিয়ে যাচ্ছে। আর তাছাড়া ভালো রিডিং হেবিটও আপনাকে ভালো লিখতে অনেক সহায়তা করবে।

৬/ স্পিকিং

স্পিকিং এক্সামের তিনটি সেকশন রয়েছে। প্রথম সেকশনে একজন ইন্টারভিউয়ার আপনাকে কিছু ব্যক্তিগত প্রশ্ন করবেন। যেমন আপনার প্রিয় খাবার, দৈনন্দিন কর্মকাণ্ড, পেশা, পরিবার, শহর, আবহাওয়া ইত্যাদি নিয়ে প্রশ্ন করবে। আপনি চেষ্টা করবেন প্রতিটা প্রশ্নের উত্তর ২-৩-৪ লাইন করে দিতে।

দ্বিতীয় সেকশনে ইন্টারভিউয়ার আপনাকে কোন নির্দিষ্ট টপিকের (যেমন কোন ঘুরাঘুরি বা কাজ করার অভিজ্ঞতা) উপর ২ মিনিট কথা বলতে বলবে। তবে এর আগে আপনাকে ১ মিনিট সময় দেয়া হবে টপিকের উপর নিজের রেসপন্স মনে মনে সাজিয়ে নেবার জন্য। তারপর ইন্টারভিউয়ার সিগন্যাল দিলে আপনি কথা বলা শুরু করবেন। আপনি আপনার মতো করে গুছিয়ে কথা বলতে থাকবেন কিন্তু থেমে যাবেন না। সময় শেষ হয়ে গেলে ইন্টারভিউয়ারই আপনাকে থামিয়ে দিবে।

তৃতীয় সেকশনে ইন্টারভিউয়ার আপনাকে দ্বিতীয় সেকশনের টপিক থেকে বিভিন্ন প্রশ্ন করবে। আর আপনাকে সেসব প্রশ্নে নিজের মতামত, অভিমত, মন্তব্য, অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে হবে। এই পর্যায়ে প্রশ্নগুলোর সাইজ বড় হবে আর তাই আপনাকেও একটু বিশদ ভাবে উত্তর দিতে হবে।

স্পিকিং টেস্টে আপনার সব কথা রেকর্ড করা হবে। এই রেকর্ডিং শুনেই পরবর্তীতে এক্সামিনার আপনাকে নাম্বারিং করবে। নাম্বারিং এ ইন্টারভিউয়ার এর কোন ভূমিকা নেই। নাম্বারিং করা হবে কথা বার্তায় আপনার ফ্লুয়েন্সি বা সাবলীলতা ও স্বতঃস্ফূর্ততা, ধারাবাহিকতা, , সুস্পষ্টটা, শব্দের সঠিক ব্যবহার ও ব্যাপ্তি, গ্রামার, উচ্চারণ ইত্যাদির উপর। ইন্টারভিউয়ার এর কোন প্রশ্ন বুঝতে না পারলে ভুলভাল অপ্রাসঙ্গিক উত্তর না দিয়ে বরং কনফিডেন্টলি বলুন sorry/excuse me/ can you please repeat the question. এটিও আপনার স্পিকিং দক্ষতার একটি প্রমাণ।

ক্যামব্রিজ এর বইগুলো ঘাঁটলেই স্পিকিং টেস্ট এ কি ধরণের প্রশ্ন আসে সে সম্পর্কে ধারণা হয়ে যাবে। সাধারণত বইয়ের মডেল টেস্টে দেয়া প্রশ্ন গুলোই ঘুরিয়ে ফিরিয়ে করা হয় সবাইকে। স্পিকিং এ ভালো করবার জন্য অবশ্যই ইংরেজিতে কথা বলবার প্র্যাকটিস করতে হবে। সম্ভব হলে কোন বন্ধু বা পার্টনার জোগাড় করে একসাথে কথা বলার প্র্যাকটিস করুন। পার্টনার না পেলে নিজেই বইয়ের প্রশ্নগুলো দেখে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে কথা বলার/ উত্তর দেবার প্র্যাকটিস করুন। প্রথম দিকে কথা বলতে গেলে অনেক ভুলভাল হয়, শব্দ, উচ্চারণ গুলিয়ে যায়। নিজের মান উন্নয়নের জন্য কিন্তু নিজেকেই চর্চা করে যেতে হবে, এক্ষেত্রে কে কি ভাবলো, বুঝলো, বললো নাকি হাসলো তা পাত্তা দিলে চলবে না। একটা ভাষায় কথা বলার ব্যাপারটা কিন্তু আমাদের মুখের, গলার মাসেল মেমরির উপর নির্ভর করে, তাই যতক্ষণ পর্যন্ত না আপনি জোরে উচ্চারণ করে কথা বলছেন ততক্ষণ পর্যন্ত আপনার কথায় ফ্লুয়েন্সি আসবে না।

 

 

৭/ অন্যান্য রেফারেন্স ও রিসোর্স  

উপরের লেখায় আমি কেবল প্রতিটা টেস্ট ব্যান্ড সম্পর্কে একটা প্রাথমিক ধারণা দিয়েছি। প্রতিটা টেস্ট ব্যান্ড এবং কোয়েশ্চেন  টাইপ গুলো সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণার জন্য নিচের দেয়া লিঙ্ক গুলোতে একবার ঘুরে আসতে পারেন–

 

 

Online Model Tests

http://ieltsonlinetests.com/

http://takeielts.britishcouncil.org/prepare-test/free-practice-tests

https://www.ieltsessentials.com/global/prepare/freepracticetests

https://www.ielts-exam.net/practice_tests/

 

 

Mobile Apps

— Magoosh IELTS Flashcards

— British Council Word Power

— Magoosh Vocabulary Builder

— Magoosh IELTS

— IELTS NGOCBACH

— IELTS Skills

— IELTS Test prep

 

 

উপরের লিঙ্কগুলোতে ঘুরলে আপনি নিজে নিজেই IELTS পরীক্ষার জন্য পূর্ণ প্রস্তুতি নিয়ে ফেলতে পারবেন। এই পরীক্ষার জন্য আলাদা করে আর কোথাও কোন কোচিং করবার দরকার আছে বলে আমি মনে করি না। আপনার যদি টেস্টগুলো নিয়ে কোন দ্বিধা বা প্রশ্ন থাকে তাহলে ফেসবুকে- GRE Center, Higher Study Aboard, NexTop USA, BSAAG গ্রুপগুলোতে চোখ বুলাতে পারেন। এই গ্রুপগুলোতে সিনিয়রদের দেয়া অসংখ্য নোটস, লেকচার, ইন্সট্রাকশন্স, এক্সপেরিয়েন্স ইত্যাদি নিয়ে ফাইল রয়েছে। আরও বাড়তি কিছু জানার প্রয়োজন পড়লে সাথে গুগল এবং ইউটিউব তো আছেই।

 

 

৮/ পরীক্ষা রেজিস্ট্রেশন

বাংলাদেশে IELTS পরীক্ষার রেজিস্ট্রেশন British Council অথবা IDP থেকে করা যায়। রেজিস্ট্রেশন করতে অবশ্যই ভ্যালিড পাসপোর্ট লাগবে এবং পাসপোর্ট থাকা ইনফরমেশন অনুযায়ীই আপনি আপনার রেজিস্ট্রেশন ফর্ম পূরণ করবেন। যেখান থেকেই রেজিস্ট্রেশন করুন না কেনো অথবা যেই ভেন্যুতেই পরীক্ষা দিন না  কেনো সব পরীক্ষার স্ট্যান্ডার্ড/ডিফিকাল্টি/ এভালুয়েশন একই হবে। IELTS পরীক্ষার প্রশ্নপত্র প্রণয়ন এবং উত্তরপত্র যাচাই এর কাজ করে Cambridge; আর British Council বা IDP কেবলমাত্র পরীক্ষার লজিস্টিক সাপোর্ট দেয়। রেজিস্ট্রেশনের পর নিয়মিত মেইলে চোখ রাখবেন। সাধারণত পরীক্ষার এক সপ্তাহ আগে পরীক্ষা সংক্রান্ত বিস্তারিত নির্দেশনা দিয়ে মেইল পাঠানো হয় আবেদনকারীকে। রিটেন এক্সামের ১৩-১৪ দিন পর অনলাইনে রেজাল্ট পাবলিশ করা হয়। রেজাল্ট এর হার্ড কপি ব্রিটিশ কাউন্সিল বা আইডিপি এর অফিস থেকে সংগ্রহ করতে পারবেন।

রেজিস্ট্রেশন সংক্রান্ত বিস্তারিত নির্দেশনা পাবেন ওয়েবসাইটে-

  • British Council

https://www.britishcouncil.org.bd/en/exam/ielts/registration/

 

 

৯/ স্কোর পাঠানো

রেজাল্ট পাবলিশের পর আপনাকে বিদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে স্কোর পাঠাতে হবে। যদি ইলেক্ট্রনিক স্কোর পাঠান তবে সেটা ফ্রি তেই পাঠাতে পারবেন। আর যদি স্কোরের হার্ড কপি পাঠাতে হয় তাহলে প্রতি ভার্সিটি ভেদে খরচ ১৫০০-৩৫০০ টাকার মধ্যে পড়বে। কিভাবে স্কোর পাঠাতে হবে সে সম্পর্কে বিস্তারিত নির্দেশনা ভার্সিটিতে আবেদনের সময়ই সেখানে উল্লেখ করা থাকবে। স্কোর পাঠানোর জন্য আপনি যেখান থেকে পরীক্ষার রেজিস্ট্রেশন করেছিলেন সেখানেই যোগাযোগ করুন।

 

 

১০/ অন্যান্য

  • পরীক্ষার দিন নির্ধারিত সময়ের এক ঘণ্টা আগেই ভেন্যুতে উপস্থিত হন। কারণ চেকিং, ছবি তোলা, আঙ্গুলের ছাপ নেয়া ইত্যাদি কাজে বেশ সময় লাগে।
  • পরীক্ষার দিন ভেন্যুতে ৬-৭ ঘণ্টা সময় কাটাতে হতে পারে। তাই সেভাবে প্রস্তুতি নিয়েই ঘর থেকে বের হবেন।
  • পরীক্ষার দিন কোন বাড়তি ব্যাগ, পেনড্রাইভ, চাবিইত্যাদি  নিয়ে আসবেন না। তবে মোবাইল রেখে পরীক্ষার হলে ঢুকবার সুযোগ রয়েছে। পরীক্ষার দিন অবশ্যই পাসপোর্ট নিয়ে যাবেন।
  • পরীক্ষার সকল প্রশ্ন পেন্সিল দিয়ে লিখার চেষ্টা করবেন। এতে করে উত্তর ভুল লিখলে খুব সহজেই তা শোধরানো যাবে। কয়েক সেট পেন্সিল, কলম, ইরেজার, পেন্সিল  শার্পনার ইত্যাদি নিয়ে যাবেন। অবশ্য ভেন্যুতেও আপনাকে বাড়তি পেন্সিল ও ইরেজার দেয়া হবে।
  • পরীক্ষার দিন কোন নির্দিষ্ট ড্রেস কোড নেই। ফর্মাল বা ক্যাজুয়াল যেকোনো ড্রেসই পড়তে পারেন। লম্বা সময় পরীক্ষা কেন্দ্রে থাকতে হবে। তাই যেই ধরণের পোশাকে আপনি বেশি কমফোর্ট ফিল করেন সে ধরণের পোশাকই পড়ে যাবেন।
  • পরীক্ষার আগের রাতে অবশ্যই ভালো ঘুম দিবেন এবং পরীক্ষার দিন চাপ মুক্ত, ফ্রেস মাইন্ডে থাকবেন।

 

উচ্চশিক্ষার উদ্দেশ্যে পথচলায় আপনার জন্য শুভকামনা

 

IELTS Score- 8.0 (L- 8.5; R- 8.5; W- 7.5; S- 7.0)
Email- [email protected]
MD. Tariqul Islam

Koblenz, Deutschland

Facebook    |    Twitter

3 thoughts on “IELTS প্রস্তুতি”

Leave a Reply