ঘন্টাখানেক ধরে বন্যার নিউজগুলো পড়ছিলাম। পড়তে পড়তে আসলে মনটা খুব খারাপ হয়ে গিয়েছে। সেই খারাপ মনটা নিয়েই কিছু বলতে আজকে আপনাদের কাছে এসেছি। তার আগে ছবিটা দেখুন। ভাল করে দেখুন। মগজে গেঁথে নিন। আমার মাথায় এই ছবিটা ঢুকে গেছে। আমি খুব করে চাইব আপনাদের মাথায়ও যেন ঢুকে যায়।
এই বন্যার পরিসর বিশাল। বাংলাদেশের ৬৪টি জেলায় মোট ৪৯১টি উপজেলা রয়েছে। এর মাঝে ১১৩টি উপজেলা কমবেশি বন্যা আক্রান্ত। ২০টি জেলার অবস্থা বেশ খারাপ। প্রথম আলোর “বানভাসি” থ্রেডটা পড়তে পড়তে দুঃখ বাড়তে থাকে।
‘বোরো ধান যাওয়ার পরে খাইয়া না-খাইয়া দিন যায়। মনে করছিলাম আমনটা পাইলে জানটা বাঁচব। এখন তো এইটাও গেল। ঘরও ছয়জন মানুষ। সকালে দুই কেজি আটা কিইন্যা দিয়া আইছি। এখন বেলা একটা বাজে, নিজে কুনতা খাইছি না। আরেকবার যে জমিত ধান লাগাইমু এই উপায় নাই।’
‘বাবারে, চার দিন থ্যাইকা বাড়িত ভাত রানবের পারিনি। পাড়ার মানসেরা এক বেলা খাবার দিইয়্যা যাত্তে, সেগলা খাইয়্যা বাঁইচ্যা আছি।’
‘বাপু, বিয়ানবেলা থেকে খাইনি। আমার নামটি লিহেন। স্বামী নেঙ্গা (পা ভাঙা) মানুষ। কিছু একটা দিলে তাঁরে খাওয়াতাম। কাছে কোনো খাউন নাই। তিন-চার দিন ধইরা এক বেলাও খাইয়া থাকতে হইতেছে। রিলিফ ছাড়া আমগরে চলবে কেমনে। বেশি করে রিলিফ দেন। আমগরে বাঁচান।’
লোকালয় বলে আর কিছু চেনা যায় না। যে দিকেই তাকানো যায়, কেবল থইথই পানি আর পানি। প্রবল স্রোতের টানে কচুরিপানার স্তূপ ভেসে যাচ্ছে। টিনের ঘরবাড়িগুলোর অধিকাংশই প্রায় জানালা অবধি ডুবে আছে। কোথাও কোথাও চালার কিনার ছোঁয়া পানি।
অথচ জলদাস নয়, জলের অধিপতি হিসেবেই বেঁচে থাকার কথা এসব মানুষের।
প্রবল বন্যায় জনপদ বিপর্যস্ত হলে কিংবা কালবৈশাখীতে সবকিছু লন্ডভন্ড হলে তার বেদনা তার যাতনা উঁচু অট্টালিকায় বসে অনুধাবন করা অসম্ভব। আমরা যারা বিদেশে থাকি তারাও এই দায় থেকে মুক্ত নই। মুক্ত নই বলেই বন্যাবকলিত দুর্ভাগা দেশের দুর্ভাগা মানুষের পাশে দাঁড়ানোর আকুলতা আমাদের। গত কদিনে আমরা বহুজনের মেসেজ, কল পেয়েছি, তারা এখান থেকেই দেশের জন্য কিছু করতে চায়।
কিন্তু গুটিকয়ের শক্তি বহু মানুষের শক্তি কাছে কিছুই নয়। কেউ হয়ত পঞ্চাশটি ইউরো দেশে পাঠাতে চায়। কিন্তু সেটি কার কাছে কিভাবে পাঠাবে তার ঠিক নেই। খাজনার চেয়ে বাজনাই বেশি। সেক্ষেত্রে যদি সবাই মিলে কিছু করে দেশের এই অসহায় মানুষদের প্রতি সাহায্যের হাত প্রসারিত করা যার তার থেকে মহান কাজ কিছু হতে পারে না। যার যা কিছু থাকে তাই দিয়ে অন্যের সহায়তায় দাঁড়িয়েই তো মানুষ প্রমাণ করে, মানুষ হয়ে জন্মানোর দায়।
সাহায্যের ব্যাপারে শান্তা আপু (Assistant Professor, Department of Communication Disorders, Dhaka University) আমাদের মেসেজ দিয়েছিলেন কয়েকদিন আগে। ব্যক্তিগতভাবে আমি এসবের বিপক্ষে থাকি। তবে আবারও এগিয়ে আসতে হল। আপু কাইসার্সলাউটার্ন, জার্মানিতে উচ্চশিক্ষা ও গবেষণার কাজে রয়েছেন এবং ইতিমধ্যে সেখান থেকে কিছু ফান্ড তুলেছেন। ৩১শে আগস্ট দেশে যাবেন এবং টাকাটা ডোনেট করবেন টিএসসির সম্মিলিত সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন জোটের ত্রাণ কার্যক্রমে। আপু প্রস্তাব দিলেন, আমরা জার্মান প্রবাসের সবাই মিলে কিছু টাকা তোলা গেলে অনেক ভাল হয়। আমরা আপুর সাথে আলোচনা করে ব্যাপারটা এগিয়ে নিয়ে যেতে সম্মত হয়েছি।
আশাকরি বরাবরের মতই জার্মান প্রবাসের এই উদ্যোগের প্রতি আপনারা অকুণ্ঠ সমর্থন নিয়ে পাশে দাঁড়াবেন, যেমনটি দাঁড়িয়েছিলেন সুজনের বেলায়। আপনারা আপনাদের সামর্থ্য আর ইচ্ছা অনুয়াযী এগিয়ে আসুন এই বন্যার্ত মানুষদের সাহায্যার্থে।
নিচে আপুর ব্যাংক ডিটেলস দেয়া হলঃ
Name: Tawhida Jahan
Bank: Deutsche Bank
IBAN: DE94 5407 0024 0037 4736 00
Payment details: Flood Help Fund
ডেডলাইনঃ ২৯শে আগস্ট (৩০ তারিখ টাকাটা তুলে ফেলা হবে)
প্রতিদিন রাত ১০টায় আপডেট দেয়া হবে এই থ্রেডের কমেন্ট সেকশনে। অবশ্যই দাতার নাম, ডিটেলস ব্লার করা থাকবে।
অন্য দিকে বাংলাদেশ থেকে যারা এই ফান্ডে সাহায্য করতে চাইছেন তারা তাদের সাহায্য পাঠাতে পারেন এখানেঃ https://www.facebook.com/events/120460971939372
এই উদ্যোগের ব্যাপারে আমরা শান্তা আপুর সাথে কথা বলেছি। যারা পরিচালনা করছেন তাদের সাথেও আমরা কথা বলেছি। স্বচ্ছ এবং পরিচ্ছন্নভাবে ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনা করার জন্য টিএসসির সম্মিলিত সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন জোটকে অভিনন্দন। আরো জানতে চাইলেঃ
https://www.facebook.com/Sadeq.du
https://www.facebook.com/mirlokman.mime
বন্যা: সর্বশেষ চিত্র
বিস্তারিত তথ্য জানার জন্য ম্যাপপয়েন্টে ক্লিক করুন ও বারে কারসর রাখুন। কৃতজ্ঞতাঃ প্রথম আলো
লেখাটি পিডিএফ আকারে এখানে আছে! ডাউনলোড করে, প্রিন্ট করে আপনার শহরের মানুষদের দিতে পারেন! ধন্যবাদ!