অনেক সময় আমরা জার্মানির নানান গুনগান করি আবার কুত্সাও রটাই তবে অনেক ঘটনা এমন ঘটে যা কিনা আমাদের দেশেও ঘটে এবং এখানেও। লেখাটি লেখার উদ্যেশ্য দুইটি, বাংলাদেশী শিক্ষার্থীদের সাবধানে চলাফেরা করতে বলা এবং দ্বিতীয়ত মনে রাখা আপনার বসবাসের শহর আপনাকেই নিরাপদ রাখতে হবে। 1

এ মাসে বেশ কিছুদিন ধরে আমার পূর্ববর্তী ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাস থেকে নানান আলোচনা হচ্ছিল একজন শিক্ষার্থীর নিখোজ সংবাদ নিয়ে। চীনা বংশোদ্ভূত DIA মাস্টার প্রোগ্রাম এর শিক্ষার্থী ২৩ বছর বয়সী YangjieLi‬ সন্ধাবেলায় জগিং করতে বের হবার পরে আর ফিরে আসেনি। তার ফ্লাটের অন্যান্যরা বারবার সবাইকে প্রশ্ন করছিল কেউ তাকে দেখেছে কিনা এবং পুলিশের কাছেও রিপোর্ট করা হয়। দুইদিন পরে এক মেয়ের লাশ পাওয়া যায় Yeangjie এর বাসার ১০০ মিটারের মধ্যে এক ঝোপের মধ্যে। মুখমন্ডল খুব বাজে ভাবে থেতলানো ছিল এবং বস্ত্রহীন অবস্থায় থাকায় প্রথমেই সনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। পরবর্তিতে ময়নাতদন্ত থেকে বোঝা যায় যে এটি সেই দুর্ভাগা শিক্ষার্থীরই দেহ এবং তার ওপর যৌন নিপীড়ন চালানো হয় সেই সাথে অনেক শারীরিক নির্যাতনেরও ছাপ আছে। বারবার শিক্ষার্থীদের জেরা করা হয়, মিডিয়ার সাথে কথা বলতে নিষেধ করা হয়! অনেকেই মুখ বন্ধ করে রাখেনি যার ফলে পুলিশের ওপর ভিষনভাবে চাপ পরে অপরাধীকে খুঁজে বের করবার জন্যে। ছাত্রসমাজ এর প্রতিবাদ করতে থাকেন নানান ভাবে… চীনা সংবাদ মাধ্যমেও বারবার এই ঘটনাটি নিয়ে তীব্র সমালোচনা হচ্ছে।

অপরাধী সন্দেহে দুইজনকে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করছে বর্তমানে। দুইজনই বিশ বছর বয়সী তরুণ এবং তরুণী যারা পাশের বাড়িতেই বসবাস করতো। যতদুর সংবাদ মাধ্যম থেকে এই পর্যন্ত জানা গেছে তাতে তরুনটির মা পুলিশ কর্মকর্তা এবং বাবা উচ্চ পর্যায়ের পুলিশ কর্মকর্তা। অপরাধীদের জবানবন্দী যতটুকু সংবাদ মাধ্যমকে জানানো হয়েছে তাতে বোঝা যায় যে তারা YangjieLi‬ কে জোরপূর্বক তাদের এপার্টমেন্ট এ নিয়ে যায় উপর্যপরি নিপীড়ন চালায় এবং হত্যা করে। মৃতদেহ তারা তিনতলার জানালা থেকে পেছনের উঠানে (“courtyard” ) ফেলে দেয় এবং পরে টেনে হিচড়ে ঝোপের মাঝে ফেলে দিয়ে আসে।

ঘটনাটি যেকোনো জায়গায়ই ঘটতে পারে তবে প্রবাসী শিক্ষার্থীদের প্রতি বিশেষ অনুরোধ সাবধানে থাকবার জন্যে। অনেক সময়ই বাংলাদেশী শিক্ষার্থীরা দুইরকমের অবস্থার মধ্যে পরেন…প্রথমত বেশি ভালোভাবে সামাজিকতা রক্ষা করতে গিয়ে অনাকাঙ্খিত বিরম্বনায় পরেন। অনেক প্রবাসী বাঙালিরাও শিক্ষার্থীদের সরলতার সুযোগ নেন এবং তাদের নিচু মনমানসিকতার পরিচয় দেন। যেমন উদাহরন হিসেবে কিছু সাধারন প্রশ্নই ধরা যাক…কোথায় থাকেন, কোথায় যাচ্ছেন, কার সাথে যাচ্ছেন, বিয়ে করছেন,বউ/বর কি এখানে নাকি দেশে, একা থাকেন? দ্বিতীয়ত যারা কারো সাথেই মেশেন না তাদের এইসব উটকো ঝামেলা থেকে মুক্তি মেলে কিন্তু বিপদে আপদে অনেক সময়ই পাশে কেউ থাকেনা।

আমাদের বিশেষ অনুরোধ:

# আপনার সবার সাথে যোগাযোগ রক্ষা করতে হবে এমন কোনো কথা নেই। চিন্তা করে দেখুন, আপনি দেশে থাকলে কি সবার সাথেই একভাবে মেলামেশা করতেন? নিঃশ্চয় না….তাহলে বিদেশে আসছেন দেখে তার পরিবর্তন কেন করবেন? শুধুমাত্র কম সংখ্যায় দেশীয় মানুষ আপনার আসেপাশে আছে বলেই কি? সমমনা মানুষ খুঁজে বের করুন তা সে যে দেশের নাগরিকই হোক না কেন।

 # সবসময় ইমার্জেন্সি নম্বরগুলো নোট্ করে সাথে রাখুন এবং বিশেষ কিছু শব্দ, বাক্য মনে রাখুন যা বিপদে পড়লে ফোনে বলতে পারেন অথবা সামনে যে আছে বলতে পারেন। আর একটা কথা মনে রাখবেন, বিপদে পড়লে আতংকিত হয়ে বাকহারা হলে চলবে না। আপনকে প্রয়োজনে মুখের ওপর উত্তর এবং প্রতিবাদ করতে জানতে হবে, শিখতে হবে।

# অযাচিত কেউ এগিয়ে আসলে প্রয়োজনে চিত্কার দিন আশেপাশের মানুষজন যাতে ব্যাপারটি টের পায়। আর যদি ব্যাপারটি ছেচরা বাঙালির পর্যায়ে পরে তবে সরাসরি কথা বলুন। ভদ্রতা করে চুপ থাকলে আপনার জন্যে ব্যাপারটি মোটেও মঙ্গলজনক হবে না। আপনার ব্যাপারে যদি বন্ধুবান্ধবের কাছে খোঁজখবর নেয়, তাকে সরাসরি প্রশ্ন করুন-আপনার খেয়েদেয়ে আর কোন কাজ নাই?

# আপনার পাশে যদি আর কেউ নাও থাকে, আমরা কিন্তু আছি-কথাটা মানুন আর নাই মানুন…বিপদে আপদে আমাদের সাহায্য পাবার পরে সবাই ব্যাপারটা ভুলে যায়…এই আর কি; তারপরেও আমরা সাহায্য করতে ভুলি না।

কিছুদিন আগে বাংলাদেশে তনু নামের এক তরুণী সেনা নিবাসের ভেতরে মারা যায় যাকে অনুরূপভাবে ধর্ষন এবং নিপীড়নের পরে হত্যা করা হয়। পার্থক্য একটাই…. কোথাও হাজার মানুষ প্রতিবাদ করলে প্রতিকার পাওয়া যায়, অপরাধী ধরা পরে আর কোথাও আপনি যতই প্রতিবাদ করেন তার কোনো প্রতিকার হয় না।

জার্মানিতে ছেলে ধরা/বাচ্চা নিখোঁজ

২০১৭ তে স্বীকারোক্তি

mm

By Tanzia Islam

Tanzia Islam is an admin of BSAAG, learn german and Germanprobashe.com this is a volunteer work from her side for the Bangladeshi community. She is also an admin of Free Advice Berlin. Her volunteer activities are related to educational development, city development and environmental protection. Tanzia is a freelance writer and researcher. Currently she is a doctoral researcher at Technical University of Berlin.

2 thoughts on “Yangjie Li, জার্মানিতে এক হতভাগ্য বিদেশী শিক্ষার্থী”
  1. Sad story…

    I’m an Erasmus exchange student in Greece right now and I live alone and even travel alone most of the time since I’m not a very social person. My family and relatives back home sometimes ask me if I meet and socialize with any Bangladeshi people. Sadly, there are lots of people from Bangladesh here but rarely the kind you would like to socialize with… or simply like you said “ছেচরা বাঙালি”! I have encountered a situation like this once in Athens but cleverly managed to get away.

    So yes, you always have to be a little extra careful when you’re living on your own. And of course, socialize with the right people.

Leave a Reply