এরকম অনেকের ক্ষেত্রেই হয় যে এডমিশান পাওয়ার এবং ক্লাস শুরু হবার/এনরোলমেন্টের ডেডলাইনের মাঝে খুবি অল্প সময় থাকে। আমারো এরকম হয়েছিল, এডমিশান পাওয়ার পরে ডেডলাইন ছিল মাত্র ৫০ দিন! মাথা মোটামুটি খারাপ। কারন ভাগ্য খারাপ থাকলে ডয়েচ ব্যাঙ্কে ব্লক একাউন্ট তৈরী হতেই লাগে এক মাস, ভিসা হতে ১.৫ মাস! ভিসা পাবার পরে কেনাকাটা, সবার কাছে বিদায় নেয়া ইত্যাদিতে লাগে আরো ৪-৫ দিন কমপক্ষে। সো সেমিস্টার মিস করার ভয়! ইউনি যদি পরের সেমিস্টারে আমাকে না নেয়!
তাই, আমি আজ আমার এক্সপেরিয়ন্স থেকে কিছু টিপস দিব যেটা শুধু শুধু শুধু তাদের জন্যেই প্রযোজ্য যাদের হাতে সময় একবারেই নেই। বাকিদের এই রাস্তা অনুসরন না করার একান্ত পরামর্শ রইল, কারন সবাই এই কাজ করলে পরে এই সিস্টেমগুলো পরে আর কেউ কাজে লাগাতে পারবেনা। এবং এই টেকনিকগুলা যে ১০০% কাজ করবে তারো কোনো গ্যারান্টী নাই। সো, সময়ের কাজ সময়ে করে ফেলা ভালো। বাট বিপদে পরলে কি আর করা… আপনার জন্যেই এই আর্টিকেল। এগুলা সব আমার নিজের এক্সপেরিয়েন্স থেকে নেয়া।
** আমি এখানে দিন# ১/২/৩/* বলতে শুধু ওয়ার্কিং ডে বুঝাচ্ছি। দিন ১# বৃহঃস্পতিবার হলে, দিন ২# রবিবার।

দিন ১# অভিনন্দন! আপনি এডমিশান পেয়েছেন ! হাতে সময় নেই? সাথে সাথে আপনার কো অর্ডিনেটর অথবা ডিপার্টমেন্টকে মেইল দিয়ে জানান আপনি ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্ট, আপনার ভিসা প্রসেস হতে টাইম লাগবে ৮ সপ্তাহ এভারেজ সুতরাং আপনার একটা এনরোলমেন্ট এক্সটেনশান দরকার। তারা আপনাকে একটা এক্সটেন্ডেড এনরোলমেন্ট ডেডলাইন দেবে আশা করা যায়। আমার ইউনিতে ছিল সেটা ১১ দিন বেশি, শুধু ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্টদের জন্যে। এবং অবশ্যই ডর্মে রুমের জন্যে অনলাইনে এপ্লাই করে ফেলবেন।

দিন ২# ডয়েচ ব্যাঙ্কের ব্লক একাউন্ট অপেনিং ফর্ম (আপডেটেড ফর্ম, কারন তারা মাঝে মাঝে তাদের ফর্মে কিছু চেঞ্জ আনে। ফর্ম পাওয়া যাবে ডয়েচ ব্যাঙ্কের সাইটে)পুরন করে চলে যাবেন জার্মান এম্বাসিতে এটেস্টাশান করানোর জন্যে। সময় দুপুর ১.৩০ মিনিট। সাথে পাসপোর্ট এবং পাসপোর্টের একটা ফটোকপি। এটেস্টাশান সেদিনই করে দেবার কথা। এটেস্টাশান হয়ে গেলে সাথে সাথে চলে যাবেন DHL অথবা Aramex-এ। কারন তারা খুবি তাড়াতাড়ি ডেলিভার করতে পারে। আমি করেছিলাম Aramex, গুলশান ২ ব্রাঞ্চ থেকে,যেটা এম্বেসির খুবি কাছে। আমার সাথে আরো একজন ছিল, সেও সেম কাগজ ডয়েচ ব্যাঙ্কে পাঠাবে। দুইজনে একি খামে ভরে আমাদের ফর্ম দুটা পাঠিয়ে দিলাম। মোট খরচ ২০০০টাকা, পার হেড ১০০০ টাকা।

ব্লক একাউন্ট এর নতুন নিয়মের শর্টকাট

রাতে বাসায় এসেই মিনিমাম ৭ দিন পরের একটা ভিসা ইন্টারভিউ ডেট নেবেন। সুতরাং আপনার ভিসা ইন্টারভিউ দিন #৮-এ, টাইমের টানাটানি খুউউউব বেশি থাকলে ৪ দিন পরের ডেট নিন।

দিন ৩# রিলাক্স এন্ড সামনের প্লানগুলা মাথায় সাজিয়ে নেবেন।
দিন ৪# স্টুডেন্ট ফাইল খুলার প্রস্তুতি নিবেন। আমি EBL বনানী ব্রাঞ্চে করেছিলাম, তাদের সার্ভিস এবং ব্যবহার অসাধারন! আমি হাইলি রিকমেন্ড করব তাদের কাছ থেকে স্টুডেন্ট ফাইল করার জন্যে, কারন তারা এটাতে খুবি এক্সপার্ট এবং তাদের আলাদা একটা ডিপার্ট্মেন্টই আছে যারা এগুলা হ্যান্ডেল করে। সো এইদিন আপনি তাদের কাছে যাবেন, গিয়ে আপনার স্টুডেন্ট ফাইল খুলতে কি কি কাগজ লাগবে সেগুলার লিস্ট নিয়ে আসবেন।
দিন ৫# আপনি অনলাইনে Aramex এ ট্রেক করে জানতে পারলেন আপনার ফর্ম তার ঠিকানায় পৌছে গেছে! ভালো সংবাদ! এখন আপনি স্টুডেন্ট ফাইল খুলবেন। ব্যাঙ্কে যাবেন, গিয়ে স্টুডেন্ট ফাইল খুলে ফেলবেন। টাকা ওই ব্যাঙ্কে ট্রান্সফার করে আপনার একাউন্টে জমা করে রেখে দিলে ভালো যাতে যখনই চান তখনই সাথে সাথে যেন ইউরো ট্রান্সফার করে দিতে পারেন।
দিন ৬#খন লাগবে আপনার ট্রাভেল ইন্সুরেন্স। গ্রীন ডেল্টা লাইফ ইন্সুরেন্সে যাবেন, গিয়ে বলবেন ট্র্যাভেল ইন্সুরেন্স লাগবে, প্রায় ৪৫০০ টাকার মত লাগবে। স্টুডেন্ট ভিসাতে যাবেন বললে তারা অন্য একটা ইন্সুরেন্স দিতে চাবে, বলবে যে ট্রাভেল ইন্সুরেন্সেতো হবেনা, ইত্যাদি। তাদের কথায় পাত্তা দেয়ার দরকার নাই, আপনি ট্রাভেল ইন্সুরেন্সই করবেন। তাদের কথা শুনলে ৭০০০ টাকা লাগবে।

দিন ৭# ডয়েচ ব্যাঙ্ক থেকে এখনো একাউন্ট অপেনিং এর কনফার্মেশান না আসলে তাদের কন্টাক্ট ফর্মে  গিয়ে তাদের জানাবেন যে কবে আপনার ফর্ম তাদের কাছে পৌছেছে। মাঝে মাঝে তারা ঢিলামি করে, তখন কন্টাক্ট ফর্ম হচ্ছে ঔষুধ। তারা আপনার রিকোয়েস্ট পেয়ে আপনার একাউন্ট খুলে আপনাকে দুই একদিনের মাঝে মেইল করে কনফার্মেশান পাঠিয়ে দিবে।

দিন ৮# আজকে আপনার ভিসা ইন্টারভিউ। টাইমের ১৫ মিনিট আগেই চলে যাবেন এম্বেসিতে সব কাগজ নিয়ে। সব কাগজপত্র ঠিক থাকলে ঘাবরাবার কিছু নাই। এম্বেসির লোকজন খুবি ভালো। ওদের কোয়েশ্চান ঘুরেফিরে ওই একরকম্‌… কই পড়ছেন, কি করেন, স্টাডি গ্যাপে কি করছেন, জব করলে আপনার কাজটা কি ছিল, ব্যাচেলার স্টাডির সাথে মাস্টার্সের কোর্সের মিল আছে কিনা, আপনার মাস্টার্সের কোর্সের মডিউল কি কি, পড়াশুনা শেষে কি করবেন, কেনো যেতে চান… এসব কোয়েশ্চানের উত্তরগুলা একটু হোমওয়ার্ক করে যাবেন।

এবার আসি আসল কথায়, আপনি যে ইন্টারভিউ দিতে আসলেন আপনার কাছে কিন্তু এখনো ব্লক একাউন্টে টাকা জমা দেয়ার কনফার্মেশান নাই, কিন্তু এটা কোনো প্রব্লেম না। নিয়ম হচ্ছে আপনার ভিসা ইন্টারভিউ দেবার ১৫ দিনের মধ্যে ব্লক একাউন্টের কনফার্মেশান এম্বেসির কাছে আসতে হবে। সো আপনাকে জিজ্ঞেস করবে, ব্লক একাউন্টের কাগজ কই? আপনি বলবেন আমি এখনো কনফার্মেশান পাই নি, কনফার্মেশান পেলেই এম্বেসিকে ফরোয়ার্ড করব। তখন তারাই আপনাকে একটা ইমেল এড্রেস দিয়ে বলবে, কনফার্মেশান আসলে এই এড্রেসে ইমেইল করতে। আপনি আপনার এনরোলমেন্টের ডেডলাইনটাও ভিসা অফিসারকে জানাবেন।

দিন ৯# আপনি আপনার ব্লক একাউন্ট অপেনিং কনফার্মেশান পেয়ে গেছেন, এখন টাকা পাঠাবার পালা। এক দৌড়ে আপনার আপনার স্টুডেন্ট ফাইলের ব্যাঙ্কে যাবেন, গিয়ে ৮০৯০ ইউরো পাঠিয়ে দেবেন।

দিন ১২/১৩# আপনি এবং জার্মার এম্বেসি আপনার ব্লক একাউন্টে টাকা জমার কনফার্মেশান পেয়ে যাবেন! কাজ শেষ… এখন অপেক্ষার পালা।
…………………………………………………………………………………………………

অনেকদিন অপেক্ষা হল…
ধরুন আপনার এক্সটেন্ডেড ডেডলাইনের আর মাত্র ১০ দিন বাকি আছে বাট এখনো ভিসা পান নি,তাহলে এম্বেসিতে ফোন দিন। ফোন দিয়ে বলুন আপনার ডেডলাইন কবে এবং আপনি এখনো ভিসা পান নি। আশা করি তারা তখন আপনার ফাইলটা ওপেন করে আপনাকে জানাবে কখন পাসপোর্ট কালেক্ট করতে হবে। আমাকে সাথে সাথে ফাইল ওপেন করে বলেছিল যে আপনি আগামীদিন এসে পাসপোর্ট নিয়ে যান, এবং আমি পরের দিন ভিসা পেয়ে যাই। আমার ইন্টারভিউয়ের পরে ভিসা পেতে ৩৪ দিন লেগেছিল।
আরেকটা সাজেশান, আমি ভিসা পাবার আগেই প্লেনের টিকেট কেটে ফেলছিলাম। কারন তখন আমার খরচ পড়েছিল ফ্রাঙ্কফুর্ট পর্যন্ত ৪৩০০০ টাকা এবং আমি জানতাম আমার ভিসা পাবার ৩ দিনের মধ্যে ফ্লাই করতে হবে, ভিসা পাবার পরে যদি টিকেট কাটি তখন আমার ৫০০০০+ খরচ লাগার পসিবিলিটি খুবি হাই! আমি একজনের কথা শুনেছিলাম যার কিনা বিপদে পরে ৬০০০০+ দিয়ে টিকেট কিনতে হয়েছিল। আমি যদি ভিসা না পাই তাহলে ফ্লাইটের ২৪ ঘন্টা আগে রিফান্ড দিলে আমার ৫০ ডলার (একেক এয়ারলাইন্সে একেক রকম, এতিহাদ-এ ৭৫/১০০ ডলার) কাটা যাবে, কিন্তু ভিসা হলে ৮০০০ টাকা বেচে যাবে। ইন্টারভিউ দেবার পরে যখন দেখলাম ২৫ দিন পার হয়ে গেছে, এখনো রিজেক্ট করেনি আমার ভিসা তার মানে আমার ভিসা হবার চান্স হাই। নরমালি রিজেক্ট করলে ১৫-২০ দিনের মাথায় জানিয়ে দেয়। সো এই ক্ষেত্রে আপনি একটু হিসাব নিকাশ করে স্টেপটা নিতে পারেন।

আমি TU Darmstadt -এ মাস্টার্স করছি Distributed Software Systems-এ। আমি জার্মানী এসেছি ৮ এপ্রিল শুক্রবার সন্ধায়,২০১৬ এবং ১১ এপ্রিল সোমবার ভর্তি হয়েছি এবং সেদিনই আমার ফুল এন্ড ফাইনাল ডেডলাইন ছিল :-P। আশা রাখুন, সাহস রাখুন… না হলে নাই, এটলিস্ট ট্রাইতো করছেন। কি আছে জীবনে?

ব্লক একাউন্ট এর নতুন নিয়মের শর্টকাট

mm

By Imdadul Huq Naim

Studying at TU Darmstadt, living in Darmstadt, Germany.

15 thoughts on “কুইক ভিসা প্রসেসিং, যদি হাতে কম সময় থাকে”
    1. এপ্লাই করতে টাকা লাগে না। সিট যদি পান তখন সেটা কনফার্ম করতে টাকা লাগে। আমি এখনো সিট পাই নি, তাই বলতে পারছিনা কিভাবে পেমেন্ট করতে হয়। ব্যাঙ্ক ট্রান্সফার মে বি।

  1. Travel insurance ki mandatory visa processing er jonno? Travel insurance koto masher jonno korsilen vaia? porer semester er jonno abar korte hoise? naki Germany giye okhane insurance korsen porer semester er jonno? one more thing vaia, health insurance ki koren ni visa processing er shomoy? ekhane lekhen ni to, tai.

    1. Travel insurance is Mandatory. For 90 days. But that does not count once you enter into Germany, cause you have to make a health insurance from a German health insurance company here again and for every month they will charge you 82 euros, if you are under 30 age.

      So in summary, that travel/health insurance from BD is required for the visa application.
      And a new health insurance you have to do once you come to Germany, from a German health insurance company.

    1. হ্যা করে রাখা ভাল। আমার সময় চায় নি, বাট অনেকেরই চাইছে। আমি স্টুডেন্ট হোস্টেলে বুকিং দিয়ে গিয়েছিলাম (ফ্রি বুকিং), সেটার কনফার্মেশান সাথে ছিল।

  2. Naim bhaia, Amio dorm a apply korechi, kintu ekhono room paini. Kindly amake link ta diben jekhan theke free student hostel book korte parbo? Khub e upokar hobe bhaia.

Leave a Reply