ঘটনা ১:
বুয়েটে লেভেল-৩ টার্ম-২ এ অধ্যয়নের সময় মনের মধ্যে একটা অদ্ভুত দ্বন্দ্ব চলছিল। দেশে চাকরির বাজার ভাল থাকায় পাশ করার পরে খেয়েপরে বাঁচা নিয়ে চিন্তা ছিল না। কিন্তু বন্ধুদের সাথে আড্ডা শেষ করে রাতে ঘুমানোর আগে নিজেকে প্রশ্ন করতাম, “কেন এমন হল? আমরা তো সবাই একসাথেই বুয়েটে ভর্তি হয়েছিলাম। সময়ের বিবর্তনে আজকে আমার অবস্থান ক্লাসের শেষের দিকে। আর আমার বন্ধুদের সিজিপিএ অনেক ভাল। তারা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পড়াশুনা অথবা চাকরি করবে আর আমি সারাজীবন একঘেয়েমি ছাপোষা জীবন যাপন করব।”

বাস্তবতার কাছে হার মেনে নিয়ে ভবিষ্যতের পরিকল্পনা করছি, এমনই এক সন্ধ্যায় বাসে করে বাসায় ফেরার সময় প্রিয়বন্ধু রাশেদ বলল, “আগামী সপ্তাহে আমাদের ডিপার্টমেন্টের তত্বাবধানে উচ্চশিক্ষা বিষয়ে একটা সেমিনারের আয়োজন করা হয়েছে, তুমি আসবা নাকি?”
আমি বললাম, “না রে, আমার রেজাল্টের যা অবস্থা তা দিয়ে বাহিরে লেখাপড়ার সুযোগ পাওয়া সম্ভব না, তাই ওখানে গেলে মনটা আরো খারাপ হবে।”
রাশেদ বলল, “বুঝতে পেরেছি কিন্তু আমাদেরকে সঙ্গ দেওয়ার জন্য হলেও তোমাকে উপস্থিত থাকতে হবে।”

রাশেদ আর কয়েকজনের জোরাজুরিতে আমাদের ক্লাস রুমে আয়োজিত অনুষ্ঠানে গেলাম। আমেরিকা, কানাডা, সুইডেন সহ বিভিন্ন দেশ থেকে বেড়াতে আসা সিনিয়ররা একে একে তাদের নাম পরিচয়, বর্তমান অবস্থা, বুয়েটে পাওয়া সিজিপিএ এবং কিভাবে উচ্চশিক্ষার জন্য বাহিরে যাওয়া যায় তার বর্ণণা দিলেন। অনুষ্ঠানের মাঝে নিজের মধ্যে একটা আত্মবিশ্বাসের জন্ম হল। দুর্বল সিজিপিএ পাওয়া সিনিয়রদেরকে বারবার জিজ্ঞেস করছিলাম তাদের রেজাল্টের কথা, যেহেতু নিজের কানকে বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছিল।

মধ্যম আর দুর্বল গ্রেড পাওয়া বন্ধুরা মিলে সিদ্ধান্ত নিলাম জিআরই আর টোফেল কোচিং করার। ভর্তি হলাম ধানমন্ডির একটি কোচিং সেন্টারে। শুরু হল দলবেধে পড়াশুনা।
বছরখানেক পরে অনেকেই জিআরই আর টোফেল পরিক্ষা দিল। আমি অন্যদের চেয়ে অলস হওয়ায় চাকরির পাশাপাশি প্রস্তুতি নেওয়া সত্বেও কোন পরিক্ষায় অংশ নিলাম না। স্পনরশীপ পাওয়ায় চলে এলাম জার্মানিতে।

আমার সেই বন্ধুরা বিভিন্ন দেশে মাস্টার্স শেষ করে এখন চাকরি অথবা পিএইচডি করছে।

ঘটনা ২:
সেদিনের সেই আয়োজনে উপস্থিত শিমুল ভাই (ছদ্মনাম, তবে ওনার সিজিপিএ মধ্যম পর্যায়ের ছিল) তখন মালয়েশিয়ার একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার্স করছিলেন। সেসময় মালয়েশিয়ায় পড়াশুনা করতে যাওয়াটা অনেকটা সাহসী পদক্ষেপ বলে গণ্য করা হত। আসলে শিমুল ভাই চাকরি করতে সেখানে গিয়েছিলেন। কিন্তু চাকরি ভাল না লাগায় মাস্টার্সের জন্য এডমিশন নেন এবং একজন প্রফেসরকে ম্যানেজ করে সস্ত্রীক কোন রকমে দিনানিপাতে সক্ষম বৃত্তির ব্যবস্থা করেন। কয়েকটি আন্তর্জাতিক পাবলিকেশনসহ মাস্টার্স শেষ করেন। অফার পান বিশ্বের অন্যতম সেরা বিশ্ববিদ্যালয় ব্রিটিশ কলম্বিয়ায় পিএইচডি করার। ডক্টর উপাধি নিয়ে শিমুল ভাই এখন কাজ করে যাচ্ছেন বিজ্ঞানকে আরো সমৃদ্ধির দিকে এগিয়ে নিতে।

ঘটনা ৩:
চাকরিতে কলিগ হিসেবে পাই মেকানিক্যালের এক সিনিয়র ভাইকে। তার সিজিপিএ ছিল তিনের অনেক নিচে। মেইন্টেনেন্সে কাজ করায় চাকরি নিয়ে অসন্তুষ্ট ছিলেন। উচ্চশিক্ষার জন্য আবেদন করলেন দক্ষিণ কোরিয়ার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে।একটি স্বল্প বেতনের এসিস্টেন্টশিপ পেয়ে গেলেন। খুব ভালভাবে মাস্টার্স সম্পন্ন করে এখন পিএইচডি করছেন কানাডার একটি নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ে।

শেষকথা:
এরকম আরো কয়েকজনকে ব্যক্তিগতভাবে চিনি যাদের জিপিএ অনেক দুর্বল, কিন্তু দক্ষিণ কোরিয়া, মালয়েশিয়া এবং হংকং এ স্বল্প বেতনের স্কলারশিপ নিয়ে কৃতিত্বের সাথে মাস্টার্স সম্পন্ন করে আমেরিকা, কানাডা, অস্ট্রেলিয়ার নামকরা ভার্সিটিতে উচ্চমানের বৃত্তি নিয়ে পিএইচডি করছেন। দক্ষিণ কোরিয়া, মালয়েশিয়া এবং হংকং ছিল তাদের কাছে উচ্চশিক্ষা ও সফলতার ট্রানজিট।

জার্মানিতে এপ্লাই করার ধাপসমূহ (Steps To Apply At A German University )
Fachhochschule এবং University এর মধ্যে পার্থক্য
mm

By Shariat Rahman

আমি বর্তমানে রাইন-ওয়াল ইউনিভার্সিটি অফ এপ্লায়িড সাইন্সে সায়েন্টিফিক এসিস্ট্যান্ট (Wissenschaftlicher Mitarbeiter) হিসেবে কাজ করছি। ২০০৯ সালে বুয়েট থেকে আইপিইতে ব্যাচেলর আর ২০১২ সালে রাইন-ওয়াল ইউনিভার্সিটি অফ এপ্লায়িড সাইন্স থেকে বায়োনিক্সে মাস্টার্স সম্পন্ন করি। অবসর সময়ে সোস্যাল মিডিয়া, আড্ডাবাজি আর খেলাধুলা নিয়ে ব্যস্ত থাকার চেষ্টা করি।

3 thoughts on “উচ্চশিক্ষা এবং ট্রানজিট”
  1. Very helpful. I want to add something. If anyone write from the beginning to the end together it would be more helpful. For example, step one, university and subject search,and its rules to fill up then how to apply , prerequisites for apply, needs to fill application form, how to pay application fee, by whom, easier way, how many days have to wait for offer letter, activities after getting offer letter, actually what a student does from the beginning till he or share starts class in the university for under and for post graduation. If anybody writes step by step together on a single page then the students will not become victim of wicked people named consultancy farms.

Leave a Reply