বাংলাদেশের একবছর পড়াশুনা ও সমীকরণ

বাংলাদেশে ইন্টার পরীক্ষা বা এইচএসসি পরীক্ষার পর উন্নত দেশে শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষা নেয়ার একটা হিড়িক লক্ষ্য করা যায়।বিশেষ করে অর্থনৈতিক ভাবে সামর্থবানদের মাঝে এই ব্যাপার সবচে বেশি।কানাডা,অস্ট্রেলিয়া তে অনেক বাংলাদেশি শিক্ষার্থী পড়াশুনা করছে বা করতে যাবে বলে প্রস্তুত হয়ে আছে।এসকল উন্নত দেশে পড়াশুনার মান যেমন উন্নত পড়তে গেলে টিউশন ফি তেমন উচ্চ।দেখা যায় অনেক ভালো ভালো শিক্ষার্থী অর্থনৈতিক অসঙ্গতির কারনে সব প্রস্তুতি নিয়েও শেষ পর্যন্ত পিছিয়ে আসে।সেসব ক্ষেত্রে ইউরোপ এর দেশগুলো আবার অন্যরকম।কিছু কিছু দেশ ছাড়া কমবেশ সব দেশেই টিউশন ফি পরিমাণ অল্প অথবা একদমই নেই।এই নন টিউশন ফি দেশের মধ্যে জার্মানি বহু আগে থেকে সবার কাছে গ্রহণযোগ্যতা পেয়ে আসছে।

তো আজ আমি জার্মানিতে কীভাবে এইচএসসির পর এক বছর পড়াশুনা করেই ডিরেক্ট এপ্লাই করা যায় সেই ব্যাপার নিয়ে আলোচনা করবো।

১.মানসিক প্রস্তুতিঃ হ্যা এই ব্যাপারটাকে সবার প্রথমে রেখেছি কারন আগে সিদ্ধান্ত নিতে হবে কি করতে চান আপনি।দেশেই ব্যচেলর করে মাস্টার্স করতে যাবেন নাকি এক বছর পড়াশুনা করে ব্যচেলর এ নতুন করে এপ্লাই করবো।উল্লেখ্য জার্মানিতে ব্যাচেলর করতে গেলে নতুন করে প্রথম থেকে শুরু করতে হবে।কোন প্রকার ক্রেডিট ট্রান্সফার এর নিয়ম নেই।এমনকি আপনি এই যে এক বছর পড়ে যাচ্ছেন সেটা মোটেও ক্রেডিট ট্রান্সফার টাইপ কিছু না।বাসার মানুষদের ও বুঝানোর ব্যাপারটা এই অংশে থাকবে।তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে কিছুই করতে পারবেন না আপনি।

২. বিষয় সিলেকশনঃ এই ধাপে এসে আপনাকে বাংলাদেশ ও জার্মানি দুই দেশের কথাই ভাবতে হবে।বাংলাদেশে একটি বছর হয়ত স্ব স্ব বিভাগের(বিজ্ঞান,ব্যবসায় শিক্ষা,মানবিক) বিষয় নিয়ে জার্মান এপ্রুভড বাংলাদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়লেন তবে ওখানে আপনাকে আগে থেকেই বিষয় সিলেক্ট করে ফেলতে হবে।সেই হিসেবে একটি বছর নিজেকে প্রস্তুত করতে হবে।ঊদাহরন সরূপ আমি আমার কথাই বলতে পারি।জার্মানিতে আমি ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়বো বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম।সেই হিসেবে এক বছর বাংলাদেশে একটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় এ ইইই সাব্জেক্টে পড়াশুনা করেছি।এখন এইটা আসলে এমনও না যে বাংলাদেশে এক বছর যেটায় পড়বো ওটাই ওখানে পড়তে হবে।তবে এভাবে আগানোই ভালো বলে আমি মনে করি।এতে করে ওই বিষয় রিলেটেড পরিষ্কার ধারনা পাওয়া যায়।

https://www.study-in-germany.de/en/plan-your-studies/find-programme-and-university/

৩.রিকোয়ারমেন্ট ফুলফিলঃ এক্ষেত্রে প্রথমেই জার্মানিতে যে বিষয় সিলেক্ট করা হয়েছে সেই বিষয় এর রিকোয়ারমেন্ট এ কি কি(ভাষাগত দক্ষতা,বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির যোগ্যাতা,এক্সট্রা কারিকুলার একটিভিজ) লাগে তার লিস্ট করে ফেলতে হবে।

  • ভাষাগত দক্ষতাঃ সোজা কথায় ইংরেজি মিডিয়াম এ আইয়েলটস(৫.৫-৬.৫)/টোয়েফেল এগুলা মাস্ট লাগবে তবে কোর্স ভেদে জার্মান ভাষা চাইতেও পারে আবার চাইবে না।আর যদি সম্পূর্ণ জার্মান মিডিয়াম হয় সেক্ষত্রে জার্মান(বি২/সি১) লাগবেই মাস্ট।
  • বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি যোগ্যতাঃ এটিই মূলত এক বছর পড়াশুনা রিলেটেড ব্যাপার।ইন্টার এর পর ২ সেমিস্টার(পাব্লিক ভার্সিটি,ইঞ্জিনিয়ারিং ভার্সিটি)/১ বছর(ন্যাশনাল ভার্সিটি)/২৫% ক্রেডিট(প্রাইভেট ভার্সিটি) করতে পারলেই আপাত দৃষ্টিতে যোগ্য বলে ধরা হয়।এছাড়াও আরেকটি মেজর ব্যাপার বাংলাদেশে আপনি যেই বিষয়ে উক্ত ১ বছরের পড়াশুনা পড়েছেন ওই সম্পর্কিত বিষয়ে আপনাকে আবেদন করতে হবে নতুবা এপ্লাই হয়ত করতে পারবেন কিন্তু সুযোগ পাওয়ার সম্ভাবনা কমে যাবে।
  • এক্সট্রা কারিকুলার একটিভিটিজঃ কিছু কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের পড়াশুনার পাশাপাশি কিছু কাজ যেমনঃ সাব্জেক্ট রিলেটেড ইন্টার্ণশিপ,ভলান্টারি এসব দেখে সুযোগ দিয়ে থাকে।

এইচএসসির পর জার্মানিতে ব্যাচেলরে ডিরেক্ট এপ্লাই করতে বাংলাদেশে কত ক্রেডিট/সেমিস্টার শেষ করতে হবে?

৪.এপ্লিকেশনঃ জার্মানিতে জার্মান ভার্সিটিতে দুটি মাধ্যমে এপ্লাই করা যায়।“ইউনি এসিস্ট” এর মাধ্যমে আর ভার্সিটির অনলাইন পোর্টাল এ।তো কীভাবে এপ্লাই করতে হবে আপনার পছন্দ করা বিষয়ে আপনি ঘাটলেই পেয়ে যাবেন।সেভাবে এপ্লাই করার পর ১-১.৫ মাস বা সর্বোচ্চ ২ মাসের মধ্যেই ভার্সিটি থেকে ডিসিশন জানিয়ে দিবে।অফার লেটার পেয়ে গেলে পরবর্তী কাজ করতে হবে।

৫.অফার লেটার পাওয়ার পরঃ অফার লেটার পাওয়ার পর সর্বপ্রথম কাজ যেটা হবে নিজের সুবিধা বুঝে বাংলাদেশের জার্মান এমব্যাসি তে ভিসা এপয়েন্টমেন্ট স্লট নিয়ে ফেলা।এরপর ব্লক একাউন্ট খোলা,ব্লকের টাকা পাঠানো,ট্রাভেল হেলথ ইন্সুরেন্স করা,ভিসা ইন্টার্ভিউর প্রস্তুতি নেয়া।এত সব করতে করতে জার্মান ভিসা ইন্টার্ভিউর সময় হয়ে আসে।এমব্যাসি রিকোয়ারমেন্ট অনুযায়ী ইন্টার্ভিউ দিয়ে আসার ৪-৬ সপ্তাহ মধ্যেই ফাইনাল ডিসিশন চলে আসে।ভিসা পেয়ে গেলে আলহামদুলিল্লাহ্‌ বলে জার্মান জীবনের প্রস্তুতি নিতে শুরু করা।

এভাবে এক বছর দীর্ঘ এক পথচলা শেষে জার্মান ড্রিম বাস্তবে পরিনত হয়।

Bachelor Study in Germany-বাংলাদেশ থেকে জার্মানিতে ব্যাচেলর করতে আসবেন কিভাবে?

mm

By Shak E Nobat

Undergraduate student of Electrical Engineering at Dresden University of Applied Sciences.

5 thoughts on ““জার্মানিতে উচ্চশিক্ষাঃ ব্যাচেলর এ ডিরেক্ট এপ্লাই””
  1. I have a question. I have passed HSC in 2017 and I also got admitted in rajshahi university but because of some family issues I couldn’t continue my studies. In addition I am admitted in a college under national University also. I admitted there in 2017. if I complete first year in this year so can I apply in Germany in the next year .Is study gap will be a major problem ?

    1. প্রায় একই প্রশ্ন আমারও।
      আমার স্টাডি গ্যাপ ৪ বছর।
      আপনি কি কোনো উত্তর পেয়েছেন?

  2. ভাইয়া আমার সংশোধন কৃত পাসপোর্ট দিয়ে স্টুডেন্ট ভিসার জন্য আবেদন করলে, আমি কি ভিসা পাবো বা কোন সমস্যা হবে কিনা ?

  3. আমি বাংলাদেশে একটি প্রাইভেট ভার্সিটিতে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং এ পড়াশোনা করছি।আমি বর্তমানে তৃতীয় বর্ষে অধ্যায়নরত।চার বছরে আমার ভার্সিটিতে টোটাল ক্রেডিট ১৬৩ এবং আমি প্রথম এক বছরে ৩৫.৭৫ ক্রেডিট কমপ্লিট করেছি।তিন বছরে আমার মোট ক্রেডিট কমপ্লিট হয়েছে ১১৮।আমার আইএলটিএস স্কোর ৬।এখন আমি জানতে চাচ্ছি জার্মানি তে যদি আমি কোন ভার্সিটিতে অ্যাপ্লিকেশন করি তাহলে আমার অফার লেটার পাওয়ার কি সম্ভাবনা আছে?

Leave a Reply