জার্মানী যারা এসেছেন তাদের জন্যে কিছু সাবধাণ বাণী। ভয় পাবার কিছু নেই কারণ মাঝেমাঝে ছোট্ট একটা ভুল আপনাকে ফেলে দিতে পারে মস্তবড় বিপদে। আমি বেশ কিছুদিন থেকে ভেবেই আপনাদের জন্যে লেখলাম।

 

১) কর্মচাপে পিষ্টনের জন্যে বাকনাঙ্গে যেতাম প্রতিদিন। সেখানে ষ্টেশনে নেমেই দশ মিনিটের জন্যে একটা বিশ্রাম পেতাম যেটা আমার সকালের ধুমপান তৃষ্ণা মেটানোর জন্যে যথেষ্ট ছিলো। এখানে আপনারা ইতিমধ্যেই সিগারেটের অটোম্যাট মেশিন দেখেছেন। একটা পর্যায়ে যেখানে ‘বয়স আঠারো’ বছর প্রমাণ করার জন্যে ব্যাংক কার্ড প্রেস করতে হয়। প্রথম দিন আমার সিগারেট কেনা শেষ হতেই একজন এসে আমার সাহায্য চাইলো। আমরা বাঙ্গালীরা অতি বিনয়ী হতে যেয়ে মারাত্বক সব বিপদ ডেকে আনি। আমি বিপদে না পরলেও সেই নাবালক কে সাহায্য করেছিলাম। কোন একদিন চেইন শপ ‘রিয়ালে’ দেখি ক্যাশে বসা মহিলা একজনের কাছ থেকে ড্রিংক্স এবং সিগারেট নিয়ে নিলো। কারণ একটাই জার্মানীতে আঠারো বছরের কম বয়সী কারো কাছে সিগারেট, মদ বা মাদক বিক্রি করা ঘোরতর অপরাধ। এরপর থেকে ইচড়ে পাকাগুলোকে দেখলেই সাত হাত দুরে থাকতাম। আপনারাও সাবধান।

 

২) অফিস থেকে বের হয়ে সিক্সটি ফাইভ নম্বর বাসের জন্যে দাঁড়িয়ে আছি। আমার কানে ধরা মোবাইল। হঠাৎ করে পাখির মত উড়তে উড়তে দুই বালিকা আমার সামনে এসে হড়বড় করে ডয়েচে একগাদা কথা বললো যার সারমর্ম হলো আমার কাছে ‘এক ইউরো’ হবে কিনা? আমার দয়ার শরীরে বসন্তের হাওয়া এসে ধাক্কা দিলো। আমি অতি বিনয়ের সাথে এক ইউরো বের করে দিয়ে দিলাম। বালিকারা শালিকের ন্যায় উড়তে উড়তে চলে গেলো। মনে মনে নিজেকে ২য় আলেকজ্যান্ডার মনে হলো। পরদিন এই ব্যাপারটা এক বাঙ্গালী বড় ভাইকে বলতেই ভাই বললো আর জীবনেও এই কাম করবেন না কারণ ঐ মেয়ের বা ছেলের বাবা মা যদি দেখতো তবে আপনার সমস্যা ছিলো। জার্মানীতে চাইল্ড এবইউজড কেসে ফেসে গেলে আমার ১২টা বেজে যেতো। এখন বালিকা দেখলে আমিই ইদুরের মত গর্তে ঢুকে যাই।

 

৩) আগুন এবং পানি দুইটা জিনিষ থেকেই সাবধাণ। আপনার ভুলে যদি কোনভাবে আগুন ধরে যায় আর ফায়ার সার্ভিস কে আসতে হয় তবে পরবর্তি শাস্তির কথা বাদই দেই আপনাকে গুণে গুণে ফায়ার সার্ভিস যতক্ষণ মানে যেই কয় ঘন্টা কাজ করেছে তা পরিশোধ করতে হবে। রান্না করেন বা সিগারেট খান…সাবধাণ আগুন থেকে। একই ভাবে বাথরুমে বা রান্নাঘরের পানির ব্যাবহার থেকে সাবধান। আপনার এক মুহুর্তের অসাবধাণতা আপনার স্বপ্ন ভেঙ্গে টুকরা টুকরা করে দিতে পারে।

 

৩) পকেটে বা ব্যাগে  ভুলেও ধারালো ছুরি, কাচি বা নেইল কার্টার নিয়ে বের হবেন না। কোন সময় পুলিশ যদি চেক করে এগুলো পায় তবে আপনি মস্তবড় বিপদে পরে যাবেন।

 

৪) এখানে আপনি বড় বড় দোকান থেকে যাই কিনেন না কেনো সেগুলো মুল্য পরিশোধ করেছেন কিনা নিশ্চিত হয়ে তবেই সেই শপ বা দোকান ত্যাগ করুন। আপনি যদি ভুলে মুল্য না শোধ করেন তবে ক্যাশ কাউন্টার বা ক্ষেত্র বিশেষে সেই শপের মেইন ডোর অতিক্রম করার সাথে সাথে সিগ্ন্যাল বেজে উঠবে এবং আপনি পরে যাবেন মহা লজ্জায়।

 

৫) আমি প্রায়ই সিগারেট খেতে যেয়ে একটা সমস্যায় পরি তাহলো আশেপাশে থেকে কেউ এসে একটা চাইবেই। এটা এরা প্রায়ই করে। আপনি তাকে বিনয়ের সাথে বলে দেন আপনার কাছে আর কোন সিগারেট নেই কারণ এটা আপনার জন্যে মস্ত ঝামেলার কারণ হতে পারে।

 

৬) জার্মানীতে আপনি আইন মানলে সব আপনার পক্ষে আর একটু ভাঙ্গলেই দুনিয়া আধার হয়ে যাবে। যেমন অনেকেই রাস্তা পার হতে সিগ্ন্যালের তোয়াক্কা করেন না। ভাই একটু সবুজ বাতি দেখার জন্যে যদি অপেক্ষা না করতে পারেন তবে জার্মানী না এসে ঢাকার দৈনিক বাংলার মোড়ে থাকাই বেটার ছিলো।

 

৭) কাজের জন্যেই হোক বা যা কিছুর জন্যেই হোক না কেনো কোন স্থানে সিগ্নেচার করার আগে আপনি সেই বিষয়ে পুরোপুরি পরিস্কার হয়ে তবেই সিগ্নেচার করুন। আপনি একবার সাক্ষর বা সিগ্নেচার দিয়েছেন মানেই আপনি সেই প্রতিজ্ঞাপত্রে সম্মত হয়েছেন এবং পরবর্তিতে আপনার পক্ষে ফিরে আসা বা অনাস্থা প্রকাশ করা খুবই কঠিন হয়ে যাবে। আপনি প্রয়োজন হলে একবারের জায়গায় দশবার প্রশ্ন করুন বা আপনার পরিচিত যা কিনা ডয়েচ খুব ভাল জানে তাকে দিয়ে পড়িয়ে বুঝে নিন এবং তারপরেও সিগ্নেচার করুণ।

 

৮) বিনামুল্যে প্রাপ্ত জিনিষের প্রতি আগ্রহ কম দেখান। আমি ষ্টুটগার্টের বপসারে একটা পাকিস্থানি শপে গিয়েছিলাম। সেই লোক ‘ভাই’ ‘ভাই’ বলে হাতে ফ্রি বিস্কুটের প্যাকেট ধরায় দিলো। বাসায় এসে দেখি তিন মাস আগে মেয়াদ চলে গেছে। পরের দিন আমার বীরত্ব শো করার পালা ছিলো যা অন্যকোন দিন বলা যাবে।

 

৯) উ-ভান ষ্টেশনে আমরা প্রায় খুব রিক্স নিয়ে লাইন ক্রস করি। এটা মোটেও ঠিক না। আপনি যখনই দেখবেন আপনার সামনে থাকা দুইটা হলুদ বাতি উপর নিচে ক্রমান্বয়ে জ্বলছে এবং নিভছে বুঝে নেবেন কোন একটা উ-ভান আসছে। আপনার সাবধানতা আপনার জন্যেই শুভকর হবে।

 

১০) আপনি আরেকজনের যতই কাছের বন্ধু হোন না কেনো এটা জার্মানী তাই রাস্তায় বা বিশেষত কোন অপরিচিত নাগরীকের বা কোন জার্মানের সামনে হাতাহাতি বা কোন কিছু নিয়ে ইয়ার্কির ছলে মারামারিতে লিপ্ত হবেন না। এটা তার কাছে ভীতির ব্যাপার হলে আপনি মহাঝামেলায় পরে যাবেন।

 

আরো বিশেষ কিছু থাকলে আবারো যোগ করবো; সেই পর্যন্ত সবার জন্যে শুভ কামণা। ভাল থাকবেন সবাই।

লিখেছেন Shah Waez

mm

By Shah Waez

International Student Program Moderator bei horads 88,6 - Hochschulradio Stuttgart. Wohnt in Stuttgart.

One thought on “জার্মানী এবং কিছু সাবধাণতা।”

Leave a Reply