জার্মানিতে আসার পর থেকে ইচ্ছা ছিল ভবিষ্যতে যারা আসবে তাদের যেন সর্বোচ্চ সহযোগিতা করতে পারি। কারন আমি নিজের বেলায় এই গ্রুপ থেকে আর কয়েকজন সিনিয়র ভাইয়াদের কাছ থেকে অনেক সাহায্য পেয়েছি যেটা ছাড়া আমি এখানে এত সহজে হতে পারতাম না। তো যারা এবার এপ্লাই করেছেন বা অফার লেটার পেয়ে গেছেন, আশা করি আমার এই লিখা টা আপনাদের কাজে আসবে  

১। ভিসা এপোয়েন্টমেন্ট : এটা নেয়ার জন্য অফার লেটার এর প্রয়োজন হয়না। পাসপোর্ট এর ইনফো দিয়েই এপোয়েন্টমেন্ট নিয়ে ফেলা যায়। পরে চাইলে ক্যান্সেল / চেঞ্জ ও করা যায়। স্বাভাবিকভাবেই নতুন সেমিস্টার এর সিজনে একটু রাশ বেশি থাকে ফলে ডেট পেতে অনেক প্রব্লেম হয়ে যায়। যদিও সামার সেমিস্টারে উইন্টার এর মত রাশ থাকেনা, তবুও আগে থেকে ঝামেলা এড়িয়ে চলাটাই বুদ্ধিমানের কাজ। এখন এপোয়েন্টমেন্ট ডেট কখন নিবেন? সামার এর বেশিরভাগ ক্লাস মার্চ এর মাঝামাঝি থেকে এপ্রিল এর মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে শুরু হয় আর ক্লাস শুরুর এক-দুই সপ্তাহ আগে ভার্সিটি তে এনরোলমেন্ট করতে হয়। সুতরাং এই সময় হিসেব করে হাতে ৫০-৬০ দিন সময় রেখে এপোয়েন্টমেন্ট নিয়ে ফেলেন।

একটা ছোট উদাহরণ দিই। আমার ভার্সিটির বিবিএ কোর্সে একজন অফার লেটার পাওয়া সত্ত্বেও তার ভিসা ডেট পেতে অনেক লেট হয়ে যায়। এরপর ইন্টার্ভিউ দেয়ার পর ভিসা আসে ৫০ দিন পর, এনরোলমেন্ট এর লাস্ট ডেট এর ৪-৫ দিন আগে। এরই মধ্যে ভার্সিটি থেকে জানিয়ে দেয়া হয় লাস্ট ডেট পিছানো হবেনা (এর আগেও দুইবার পিছানো হয়েছিল)। এরপর ছেলেটি তারাহুরো করে ফ্লাইট ধরে আর তার ফ্লাইট ল্যান্ড করে লাস্ট ডেট এর ভোর বেলায়। সেখান থেকে দৌড়াদৌড়ি করে তাকে রিসিভ করে এনে আর এক ঘন্টা সময় বাকি থাকতে এনরোলমেন্ট সম্পন্ন করানো হয়।
এই সমস্যা অবশ্য সবাই ফেস করেনা সুতরাং ভয় পাওয়ার কিছু নাই, কিন্তু বিপদ কখন কোনদিক দিয়ে আসে এটাও কেউ বলতে পারেনা। সুতরাং হাতে সময় রেখে সবকিছু গুছানোর চেষ্টা করবেন।

২। ব্লক একাউন্ট খোলা / প্রয়োজনে এনরোলমেন্ট ফি পাঠানোঃ ব্লক একাউন্ট খোলা নিয়ে গ্রুপে লাখখানেক পোস্ট আছে সুতরাং আমি সেই কাহিনী তে যাব না। কোন ব্যাংক এ খুলবেন এটা নিয়ে কিছু আইডিয়া দিব। যদি ঢাকায় থেকে থাকেন, তাহলে সোনালী ব্যাংক (প্রধান শাখা) বেস্ট ! এক্সট্রা চার্জ, বাড়তি রেট এর ঝামেলা নাই। ঢাকা ছাড়া অন্যান্য শহর এর ক্ষেত্রে, EBL, City Bank, Commercial Bank of Ceylon এই ৩টি ব্যাংক সাজেস্ট করবো। তারা বেশ কিছু সময় ধরে ব্লক এর কাজ করে আসতেছে সুতরাং তাদের ও একটা ভালো আন্ডারস্ট্যান্ডিং হয়ে গেছে। আর যদি আত্মীয়স্বজনদের মধ্যে কারো ব্যাংক থাকে তাহলে তো মারহাবা !  

এবার আসি এনরোলমেন্ট ফি পাঠানো নিয়ে। ইদানিং দেখলাম কয়েকটি (সবগুলো নয়) ভার্সিটিতে তে অগ্রিমে এনরোলমেন্ট ফি, লিভিং কস্ট ইত্যাদি পাঠিয়ে দেয়া লাগে। এটা আপনার ব্যাংক থেকে ট্রান্সফার করতে হবে। সেক্ষেত্রে ব্যাংকে স্টুডেন্ট ফাইল খোলার আগেই স্পষ্ট করে জানিয়ে দিবেন আপনার এসকল টাকা পাঠাতে হবে। তারা যদি রাজি হয় শুধুমাত্র তখনই স্টুডেন্ট ফাইল খুলবেন। এটা বলার মূল কারনঃ আমাদের দেশি ব্যাংক গুলো থার্ড পার্টি একাউন্ট এ অনেক সময় টাকা পাঠাতে চায়না, আর একজন ছাত্র সারা বাংলাদেশ মিলায় শুধু একটা ব্যাংকে স্টুডেন্ট ফাইল খুলতে পারবে। এজন্য সব কিছু ক্লিয়ার করে এরপর ফাইল খুলবেন।

৩। বাসা / ভাল-বাসা খুঁজা ঃ বাসা খুজার ক্ষেত্রে আপনাকে সবচেয়ে বেশি সাহায্য করতে পারবে আপনার ইউনিভার্সিটি। Studentenwerk একটা ভালো অপশন কিন্তু অনেক সময় এখানে ওয়েটিং এ থাকতে হয় ৫-৬ মাসের জন্য। আমি এপ্লাই করছিলাম আগস্ট মাসে আর এখনো মাঝে মাঝে মেইল আসে যে আমি ওয়েটিং এ আছি  অবশ্য আমার এটা আর দরকার নাই কারন আমার কোর্স এর জন্য আলাদা ডর্ম বরাদ্দ করা আছে আর আমি এখানেই একটা সু-বিশাল রুম পেয়েছি স্টুডেন্ট সার্ভিস কে বারবার বিরক্ত করার পর  মূলকথাঃ ভার্সিটি কে নক দিবেন। স্টুডেন্ট সার্ভিস, ইন্টারন্যাশনাল সার্ভিস, কোর্স-কোঅর্ডিনেটর যারে পান তারে বিরক্ত করবেন একটা থাকার জায়গা ম্যানেজ করে দেয়ার জন্য। তাছাড়া BSAAG Accommodation help গ্রুপে চোখ রাখবেন।
আমার মতে আরেকটি ভালো অপশন Immobilien Service অর্থাৎ হাউসিং এজেন্ট। আপনার শহরের Immobilien Service গুলোতে নক করেন, দেখেন তাদের কাছে স্টুডেন্টদের জন্য কোন বাসা আছে কিনা। তাদের কাছে প্রায়ই বাসা থাকে। আমার শহরে গত মাসে আসা বাঙালী দুইজন এভাবেই বাসা নিয়েছে আর তাদের বাসা টা ভাড়ার তুলনায় যথেষ্ট উন্নতমানের আর বানহোফ এর একদম পাশে।
কিন্তু যাই হোক ন কেন, কন্ট্র্যাক্ট পেপার এ স্বাক্ষর করবেন না জার্মানি না আসা পর্যন্ত। প্রয়োজনে তাদেরকে তেল-মালিশ করে বলবেন যে আপনি এত তারিখ এসেই কন্ট্র্যাক্ট সাইন করবেন। কিন্তু বাসা না দেখে, কন্ট্র্যাক্ট পেপার ভালো করে না পড়ে কন্ট্র্যাক্ট সাইন করবেন না। জার্মান এ যেকোন কিছুর কন্ট্র্যাক্ট এর মূল্য জীবন এর চাইতেও বেশি আর এটা ভাঙার ফলে আপনার উপর মামলাও হয়ে যেতে পারে।

৪। ভাষার উপর দক্ষতাঃ যদি আপনি এতদিন ধরে ভাষা শিখে আসছেন তাহলে এই পয়েন্ট আপনার জন্য না। যারা এখনো শুরু করেননাই, তাদের জন্য বলি। হাতে যে ২-৩ মাস সময়টুকু বাকি আছে এ সময়ে বন্ধুবান্ধব আর পরিবার-পরিজন এর পাশাপাশি, ডয়েচ ভাষার সাথেও একটু সময় কাটান, তাকে আপন করে বুকে জড়িয়ে ধরেন। :3 এখানে নামার পর যেন চলাফেরা করা, কুশল বিনিময় করার মত দক্ষতা থাকে, এতটুকু নিশ্চিত করেই জার্মানী আসেন।

আজকের জন্য এখানেই শেষ। সামনের লিখায় লাগেজ হ্যান্ডলিং, প্রয়োজনীয় জিনিস্পত্র আনা, ফ্লাইট থেকে নামার পর কিভাবে এদিক-সেদিক মুভ করবেন এসকল বিষয়ে লিখব।

ধন্যবাদ।
সকলের দোয়াপ্রার্থী 

mm

By Rafay

2 thoughts on “বাংলাদেশ টু জার্মানী- (অফার লেটার পরবর্তী প্রাথমিক ধাপসমূহ)”

Leave a Reply to sania Cancel reply