জার্মান প্রবাসে ব্লগে এটা আমার প্রথম লেখা। লেখার জন্য আসলে আর কোনও Topic বাকি নেই; মোটামুটি সব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়েই আগের ভাইয়া ও আপুরা লিখে ফেলেছেন। এমনকি ব্লক একাউন্টের টাকা ফেরত আনার বিষয়টাও লেখা হয়েছে।

যেহেতু সময়ের সাথে সাথে নিয়মের কিছু পরিবর্তন হয়েছে, তাই ব্লক একাউন্টের টাকা ফেরত আনার ব্যাপারটা নিয়ে লিখছি। আমি ২০১৭ এর সামারে RUHR University, Bochum এ মাস্টার্স ইন ইকনমিক্স এ ভর্তি হয়েছিলাম। একই সাথে অন্য একটি দেশের ইউনিভার্সিটিতে স্কলারশিপের জন্য আবেদন করেছিলাম এবং সেটা পেয়ে যাওয়ায় জার্মানিতে আর যাওয়া হয়নি। ইউনিভার্সিটিতে আবেদন থেকে শুরু করে এমব্যাসিতে ইন্টারভিউ দেওয়া পর্যন্ত সবকিছুর জন্য জার্মান প্রবাসে ব্লগের লেখাগুলো ফলো করেছিলাম বিধায় পুরো প্রক্রিয়াটা একা একাই খুব ভালভাবে শেষ করতে পেরেছিলাম।

ব্লক একাউন্টের টাকা ফেরত আনার জন্য ২ ধরনের পরিস্থিতি থাকেঃ

১। যারা ভিসা পেয়ে গেছেন

২। যাদের ভিসা রিজেক্ট হয়েছে

আমি যেহেতু প্রথম ক্যাটাগরির পরিস্থিতিতে অভিজ্ঞ, তাই সে ব্যাপারে বিস্তারিত বলবঃ

১। যারা ভিসা পেয়ে গেছেনঃ

যারা ভিসা পেয়ে গেছেন তারা যদি ভাবেন ভিসা পাসপোর্টে রেখেই টাকা ফেরত আনতে পারবেন, তাহলে ব্যাপারটা ভুলে যান ( যে ভুলটা আমি করেছিলাম 😛 ) । যাদের ভিসা হয়ে গেছে, তাদের ব্লক একাউন্টের টাকা ফেরত আনার জন্য দরকার Consular Certificate, যেটা জার্মান এমব্যাসির ভিসা অফিসার আপনার ভিসা ক্যানসেল করে ইস্যু করবেন। আপনি যদি অলরেডি ভিসা-ইন্টারভিউ দিয়ে ফেলেছেন বা ভিসার জন্য ওয়েট করছেন, তাহলে যতো দ্রত সম্ভব ভিসা ক্যানসেলেশনের জন্য ও কন্সুলার সার্টিফিকেট চেয়ে এপ্লিকেশন লিখে এবং প্রিন্ট আউট ও সাইন করে এমব্যাসির মেইন গেটে দিয়ে আসুন। চাইলে এমব্যাসিকে ইমেইলও করতে পারেন, কিন্তু অনেকের ক্ষেত্রেই এমব্যাসি একটু দেরিতে রিপ্লাই দিয়েছে।  এপ্লিকেশন পাওয়ার পর এমব্যাসি কন্সুলার সার্টিফিকেট ইস্যু করে সরাসরি ডয়েচে ব্যাংকে পাঠিয়ে দেবে।  এপ্লিকেশন জমা দেওয়ার পর থেকে জার্মান এমব্যাসির কন্সুলার সার্টিফিকেট ডয়েচ ব্যাংকে পাঠানোর সময়কাল ৭-১৪ দিন।

এমব্যাসিতে এপ্লিকেশন দিয়ে আসার সাথে সাথে ডয়েচ ব্যাংকের Closing Order Form পূরণ করে ব্যাংকের ঠিকানায় কুরিয়ার করে পাঠিয়ে দিন। সাথে ব্লক একাউন্ট সার্টিফিকেটের প্রিন্টকপি রেফারেন্স হিসাবে দিলে ভাল (আমি দিয়েছিলাম)। ৭-১৪ দিন পর ডয়েচ ব্যাংকের ওয়েবসাইটে গিয়ে Contact Form এ গিয়ে ‘I have sent my closing order/………” option-এ ক্লিক করুন এবং কাস্টমার ডিটেইলস দিন। ব্যাংক দ্রুত আপনাকে রিপ্লাই দেবে (১-২ দিন)। যদি ব্যাংক বলে ওরা এখনও আপনার কন্সুলার সার্টিফিকেট পায়নি, তাহলে এমব্যাসিকে আবার নক করুন এবং অবস্থা জেনে ব্যাংকের সাথে আবার যোগাযোগ করুন।

Deutsche Bank Sparkasse Volksbank ডয়েচে ব্যাংক, স্পারকাসে, ফল্কসব্যাংক ব্লকড একাউন্ট Blocked account German Student Visa জার্মান স্টুডেন্ট ভিসা

উল্লেখ্য যে, আপনি যে ব্যাংকের একাউন্ট নাম্বার দিবেন দিবেন, সেটা যে স্টুডেন্ট একাউন্টই হতে হবে, এমন কোনও কথা নেই; আপনি যেকোনও ব্যাংকের একাউন্ট নাম্বার দিতে পারেন, অবশ্যই সুইফট কোডসহ । যে ব্রাঞ্চের একাউন্ট নাম্বার দিবেন, সেই ব্রাঞ্চকে আগে থেকেই জানিয়ে রাখবেন যে, ডয়েচ ব্যাংক থেকে আপনার একাউন্টে টাকা আসবে। আগে থেকে না জানানো থাকলে অনেক ব্যাংক নখরামি করে। আমার টাকা আমি জনতা ব্যাংক থেকে স্টুডেন্ট ফাইল করে পাঠিয়েছিলাম, কিন্তু Closing Order Form এ ডাচ বাংলা ব্যাংকের একাউন্ট নাম্বার দিয়েছিলাম এবং কোনওরকম নোটিশ ছাড়াই ব্যাংকে টাকা ফেরত এসেছে Closing Order Form পাঠানোর ১২ দিনের মাথায়! কিন্তু পরিচিত একজন সিটি ব্যাংকের একাউন্ট নাম্বার দিয়েছিলেন, এবং তার টাকা ওই ব্যাংক গ্রহন না করায় টাকা আবার ডয়েচ ব্যাংকে ফেরত যায়! টাকা না গ্রহন করার পিছনে সিটি ব্যাংক কারণ দেখিয়েছিল যে তারা আগে থেকে জানত না। কাজেই আগে থেকে সাবধান!

২। যাদের ভিসা রিজেক্ট হয়েছে

যাদের ভিসা রিজেক্ট হয়েছে, তাদের ব্লক একাউন্টের টাকা ফেরত আনার প্রক্রিয়া অনেকটা একইরকম; তারা ভিসার জন্য আপিল না করলে, এমব্যাসি সরাসরি রিজেকশন লেটার ডয়েচ ব্যাংকে পাঠিয়ে দেয় এবং বাকি প্রক্রিয়া উপরের মতই।

 

One thought on “আমার ব্লক-একাউন্টের টাকা ফেরত আনার কাহিনী (সময়কালঃ এপ্রিল ২০১৭)”

Leave a Reply to Sania Cancel reply