টাইটেল নিয়ে সময় নষ্ট করতে চাইনা তাই মনে যা আসলো লিখে দিলাম। কয়েকদিন ধরে অনেকেই ইমোশনাল বার্তা লিখতেসে হয়ত ব্লগ এ অথবা ফেইসবুকে। পড়তে গেলে মন খারাপ হয়ে যাই যেটা আমার তেমন পছন্দ না কেননা ইমোশনাল হলে দেশপ্রেম উতলাই উঠে, দিনটি আর প্রডাকটিভ হইনা। আমরা অনেকেই দেশপ্রেম মানে আবার দেশকে মিস করা বুঝাই, তাই যদি হতো তাইলে দেশ আর স্বাধীন হতোনা। যাই হোক দেশ বাদ দিয়ে আপাতত ইমশন এ আসি। যে কারণে এটি লিখা,তা হোল  নিজেকে বড় মনে করে এবং তোমাকে ছোট মনে করে কিছু জ্ঞান যেন ইমশনের অপব্যবহার না হয়। জার্মানি তে আমার প্রবাসী জীবন খুব বেশি দিন না কিন্তু প্রবাসী হিসেবে আমার দিন মোটামুটি বহন করার মত। আমার যখন বয়স ১৯, তখনি দেশের বাইরে পাড়ি জমাই। এমন একটা বয়স যে বয়সে তেমন দায়িত্ব থাকেনা। আড্ডা বাজি, প্রেম, ঘুরাঘুড়ি আর ফাঁকিবাজি  বদলে আমার ঠিকানা পুরা অন্য একটি জগতে।

আমার দিন টি এখনো মনে আছে, ১৯ই সেপ্টেম্বর ২০০৯ ভোর ৫ টা। সব কাছের বন্ধুরা এয়ারপোর্ট এ দাঁড়িয়ে আছে আর ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কান্না করছে। স্বাভাবিক স্কুল, কলেজ সারাদিন একসাতে সুখ দুঃখ ভাগাভাগি। আমার বুড়ি দাদী আমাকে জিজ্ঞেস করে আর দেখা হবে কিনা, উত্তরে আমি বলি অবশ্যই হবে। মায়ের কথা আর নাই বা বললাম। আমি আস্তে আস্তে দুর্বল হতে থাকি কিন্তু কাউকে দেখালাম না। সোজা প্লেন এর দিখে রউনা দি। নিজেকে বিশ্বাস করাতে লাগলাম আমার মাঝে ইমোশনাল কিছু নাই, তাই প্লেন এ উঠেই ডায়েরি লিখা শুরু করে দিলাম (ও  হে আমার আবার ডায়েরি লিখার অভ্যাস আছে)। আঁচড় টা লাগে কখন জানেন? টিক যখন প্লেন এর চাকা মাটি থেকে উপড়ে উঠতে থাকে। যুদ্ধ টা তখন কঠিন হয়ে পড়ে যখন আপনি চান  কান্না না করতে কিন্তু ??????? একটা সময় বুকের ব্যথা অনুভব হলে বুজতে পাড়ি যুদ্ধ আপাতত শেষ।

ঠিক এইভাবে নিজের সাথে হেরে গিয়ে আমার প্রবাস জীবন শুরু হয়। তখন থেকে নিজ দায়িত্বে কান্না করার একটা ভালো উপায় খুজা শুরু করি কারণ এইভাবে বুক ব্যথা করে কোন লাভ নাই। কান্না হতে হবে এমন যেন দুঃখ হাল্কা হয়। কান্না আসলে তার সাতে যুদ্ধ করতে যায়ওনা । তাকে আসতে দাও। জায়গা হিসেবে শাওয়ার রুম বেছে নাও। কান্না করার সময় ঝর্না ছেড়ে দাও যেন পানির সাতে তোমার দুঃখ টাও চলে যাই এবং এর ফলে বাইরের কেউ শুনবেনা তোমার সেই চিৎকারি কান্না। পারলে গোসল করে নাও , মন ও শরীর দুটোই হালকা হবে। মাঝে মাঝে ডাইরি লিখার অভ্যাস করতে পারো যদি ভালো লাগে। আর যদি আসলেই কান্না করতে ইচ্ছে না করে কিংবা এমন কোথাও আছো যেখানে এই সুবিধা পাবেনা তাইলে ওয়াশ রুম এ গিয়ে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে দেখো, কান্না আসলেও একটু পর থেমে যাবে। then wash your face and you are ready to go. এই ধরনের সময় গুলো সব সময় হয়না but যখন হয় তখন কেয়ামত থেকে কেয়ামত।

প্রবাস জীবনে পা দেওয়ার পড় প্রথম কিছু দিন খুব ভালো যাই। সুন্দর জায়গা, সুন্দর- সুন্দরী আরও কত কিছু। জ্ঞানী লোকেরা বলেন homesick টা ৬ – ১২ মাসের মধ্যেই শুরু হতে থাকে যদিও মানুষ ভেধে ভিন্ন। এই সময় কিছু কিছু প্রশ্ন মাথাই অযথা কষ্ট দেয়। খুব বেশি সেনসিটিভ। সমাধান আমিও জানিনা। যেমনঃ কি হবে যদি কোন ফ্যামিলির বিপদ আসে। আবার দেখা হবে তহ। আমার দাদীর ক্ষেত্রে আমারও হয়ছিল। মনে রাখবা জীবনের সব ইচ্ছা পূরণ হবার নয়। তাই পারলে ১-২ বছরের মধ্যে একবার ঘুরে আসার প্ল্যান করতে পারলে ভালো।

ছুটির দিনে আর যাই করো দুপুরে ঘুম যাওয়ার প্ল্যান করিনা। এটা বড় আজিব কিসিমের ঘুম। ঘুম থেকে উঠলেই বুঝা যাই কতো সে মধুর পরটা, ডাল ভাজি, এক কাপ চা আর সেই কিছির-মিছির আড্ডা অথবা ফ্যামিলির সাথে কিছু মুহূর্ত।  আর হে যখনি মায়ের সাথে কথা হবে মনে রাখবা তার কিছু মুখস্ত করা প্রশ্ন থাকে। যেমনঃ হাতে টাকা-পয়সা আছে কিনা? পড়া – লেখা কেমন হচ্ছে? most importantly কি রান্না করছো অথবা কি খাইছ আজকে? ভুলেও সত্যবাদী যুধিষ্ঠির হতে যেওনা। নিজের মাকে সবসময় বুঝাবা যে তুমি খুব ভালো আছো । খাবার হিসেবে সেই মাছে-ভাতে বাঙ্গালি হয়েই আছো। তোমার কখনো অসুখ-বিসুখ হয়না, ঘুম ঠিক মত হয় bla bla. এইসব মিথ্যা বললে পাপ হয়না বরঞ্চ সোয়াব হয়।

আমি তাই সব সময় কথা বলার আগে কি রান্না করসি এবং কি রান্না করবো এই দুইটার উত্তর ready রাখি then call করি। আর নিজে always একটা প্রশ্ন করবা তোমার মাকে, “”তোমার কিছু লাগবে কিনা? আমাকে বলিও এইখানে প্রায় সব কিছুই সস্তা”। উত্তর যদিও না তারপরেও হাল ছেড়না বন্ধু বরং কণ্ঠ ছাড়ো জোরে। শুধু পড়া-লেখাই নিজেকে বিলিয়ে দিয়োনা, নিজের personality বলেও একটা কথা আছে যেটা অনেকেই “মানুষ” হিসেবে জানে। আমার প্রবাসী জীবনের গর্বিত শিক্ষাগত যোগ্যতা কি জানো? আমি নিজের প্লেট নিজে পরিষ্কার করি। দেশে গেলে মায়ের হাতে বাজারের ব্যাগ দেখলে দৌড়ে গিয়ে নিজের হাতে ব্যাগ টি তুলে নি। নিজের কাপড় নিজের ধোয়ার চেষ্টা করি, মায়ের জন্য রেখে দিইনা। মাঝে মাঝে মা ব্যস্ত থাকলে নিজে রান্না করার চেষ্টা করি। রাস্তার কোন ছোট ছেলে হাত পাতলে থাপ্পড় দিয়ে দৌড়াই দিইনা আবার রেস্টুরেন্ট এর কেউ টিপস খুঁজলে বেহাইয়ার মত টাকা দিইনা।

প্রবাস জীবনে নিজের দিনকে প্রডাকটিভ করো , সেটা যাই হোক এমনকি একটি নিউ জার্মান ওয়ার্ড শেখ but still make it productive. Emotion এর বন্যায় নিজেকে বিলিয়ে দিওনা।

mm

By Rinku Chowdhury

Studied at Anglia Ruskin University. Lives in Koblenz, Germany. From Chittagong, Bangladesh.

Leave a Reply