আমাদের দেশের মানুষের সবসময়ই সাদা চামড়ার প্রতি টান অনেক বেশি, আমরা বিদেশে যেয়ে আমাদের দিকে অন্যরা যখন বাকা চোখে তাকায় তখন তাদেরকে রেসিস্ট বলি, কিন্তু আমরা কি করি, আমাদের দেশে যখন বিদেশীরা আসে আমরা ঠিক কয়জন ‘আফ্রিকা’ থেকে আশা লোকজন দেখে উৎসাহ দেখায়। আমাদের চরিত্রটা এমন, আমরা একজন সাদা চামড়ার ‘অভদ্র/অশিক্ষিত’ লোককে বেশি দাম দিই এমনকি ‘আফ্রিকার/কালো চামড়ার’ ‘ভদ্র/শিক্ষিত’ লোকের চেয়েও বেশি। আবার যদি গ্রাম এলাকা বা মফঃস্বলে যাই, দেখা যাবে ‘পোশাকধারী’ একজন কনস্টেবলই সামনে রাখা চেয়ারটা পাবে আপনি যতই ‘পদমর্যাদার’ ব্যক্তি হউন না কেন!


উচ্চশিক্ষার কথা বলতে এই ভূমিকা দিলাম কেন? কারণ উচ্চশিক্ষার মান, মাঝে মাঝে স্বনামধন্য(অবশ্যই বেসরকারি) শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দেখা যায় শিক্ষক লাগবে-হতে হবে ‘নর্থ আমেরিকার’ ডিগ্রী, কিন্তু কোন সারির প্রতিষ্ঠানে তার কথা বলা থাকেনা, আমরাও ও ‘কান নিয়ে যাওয়া চিলের মত’ অমনি ঝাপিয়ে পড়ি সবাই, “ইয়েস, দ্যাট ইউনি হ্যাজ দ্যা কুয়ালিটি”, যেমনটি ইদানিং কালের ভূমিকম্প প্রতিরোধী নির্মাণ সামগ্রী প্রস্তুতকারি কোম্পানিগুলোর বিজ্ঞাপনের মত, “বুয়েট টেস্টে স্বীকৃত”, কিন্তু কি টেস্ট কোন স্ট্যান্ডার্ড (কম্প্রেসিভ, ডাকটিলিটি না অন্য কিসু? ) এতকিসু আর বলা হয়না।আসলে আমরা কোন জায়গার ভাল না খারাপ কোনটা চাচ্ছি সেটা নিজেরাই বুঝতে চাইনা, শুধু তর্ক করতে চায় আর ফেচভ্যালু দেখাতে চাই।

তাই আমাদের সচেতন হওয়া দরকার পৃথিবীর সব জায়গায় ভাল খারাপ আছে, ভাল জিনিসটা বেছে নেওয়া জরুরী। যদি তুলনা করতে হয় তবে দুইটি সমমানের মর্যাদা সম্পন্ন প্রতিষ্ঠানের মাঝে তুলনা করতে হবে, জায়গা বা মহাদেশ হিসাব করে নয়। আমাদের সবচেয়ে বড় সমস্যা দাম্ভিকতা, যখন কেউ বিদেশে পড়াশুনা করতে যায় অনেকেই আছে জুনিয়রদেরকে ভুলভাবে দিক নির্দেশনা দিয়ে থাকে নিজের স্ট্যান্ডার্ড উপরে তুলতে, তখন হয়ত ঐ জুনিয়র স্বপ্ন দেখা বাদ দেয়। প্রকৃতপক্ষে, নিজের যোগ্যতা আর চাহিদার সাথে সামঞ্জস্য রেখে পরিকল্পনা করা প্রয়োজন। আমরা যেমন ক্রিকেটের কোন খবর মানেই আনমনে Cricinfo দেখি, বাস্তবে Cricinfo কিন্তু ICC এর অফিসিয়াল কিছু না হলেও সেটাকেই আনঅফিসিয়ালি সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য ধরা হয়, তেমনি University World Ranking বলতে QS World Ranking অন্যতম উল্লেখ্য। তবে, রাঙ্কিংগুলো অনেক সময় সাধারণ বিষয়ভিত্তিত, রিসার্চ স্কিল, জব রেপুটশন ইত্যাদি ক্যাটাগরি থাকে, তাই কোন একটি পিছিয়ে থাকা পপ্রতিষ্ঠানেরও যে কোন বিষয়ের সম্পর্কে ধারনা করা সম্ভব।


মানুষ স্বাভাবিকভাবে নিজে যা করে সেটাই বড় বলে দেখাতে চায়, তবে বাস্তবে আমরা একটু বেশিই আরামপ্রিয়, আর্থ-সামাজিক কারণে সেখানে যেতে চাই, যেখানে গেলে জব সিকুরিটি, ভাল ফ্যামিলি লাইফ হয়, সেকারণে ঢালাওভাবে সবকিছু বলি, NA/Aus ইত্যাদি জায়গায় হয়ত জব সিকুরিটি, ভাল ফ্যামিলি লাইফ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি, তাই সেই জায়গার সবকিছুই পারফেক্ট বলি, বাস্তবে কি তাই?


আমাদের শিক্ষার্থীদের বলব, যারা যোগ্যতায় অন্যদের চেয়ে অন্তত একটু এগিয়ে তাদের অবশ্যই ভাবা উচিৎ আমি কোথায় যাচ্ছি, আমার পরামর্শ সবার আগে নিজের যোগ্যতার সামঞ্জস্য রেখে পরিকল্পনা করা, এক-দুই বছর আগে যেতে হবে বলেই যেখানে সেখানে না যাওয়া, ভাল জায়গার ডিগ্রী থাকলে সব জায়গাতে যেয়েই জব করা যায়, ছোট্ট এই পৃথিবীর যেকোন প্রান্তে যেতে কয়েক ঘণ্টা লাগে মাত্র। So, Consider your future goals before making a decision!


[Disclaimer: লেখাটা ইউরোপিয়ান দৃষ্টিকোন থেকে তৈরি, যদি কেউ দ্বিমত পোষণ করে, ‘দুঃখিত, not interested to argue’]

mm

By Ram Krishna Mazumder

• Assistant Professor, IEER, CUET • Ambassador, Erasmus Mundus Association, Bangladesh

3 thoughts on “উচ্চশিক্ষার মান – কোনটা আসলেই ভাল?”

Leave a Reply