জগাখিচুড়ি সংস্কৃতির প্রকৃষ্ট উদাহরণ ইউরোপে বসবাসরত তার্কিশদের সংস্কৃতি। বিয়ের আগে সম্পর্ক নিষিদ্ধ, তবে এলকোহল খাওয়া তেমন কোন অপরাধ না! কয়েকবছর আগে জার্মান ছেলের সাথে সম্পর্ক করায় এক তার্কিশ মেয়েকে অনার কিল করেছিল তার ভাই, যেটা পুরো ইউরোপে আলোড়ন তুলেছিল। দেখা যাবে, সেই ভাইই হয়ত সপ্তাহান্তের কোন পার্টিতে গিয়ে সাদা চামড়ার কারো সাথে উদ্দাম নৃত্য করছে!

তবে মানুষ হিসেবে এদেরকে আমার বেশ পছন্দ। অনেক বন্ধু বতসল ও ঊষ্ণ হৃদয়ের। সেদিন দুরপাল্লার বাসে চেপে অন্য শহরে যাচ্ছিলাম। তার্কিশ ড্রাইভার ও টিকিট চেকার দেখে মনে মনে খুশি হলাম। নিঃসংকোচে ফোনে চার্জ দেওয়ার প্লাগসহ বিভিন্ বিষয়ে প্রশ্ন করলাম। তাছাড়া সে নিজ থেকেই বিভিন্ন আলাপ করল। ভাল ছিল ভ্রমণটা।
ইউরোপে থেকেছে অথচ ডুনার, ডুরুমসহ বিভিন্ন তার্কিশ খাবার খায়নি, এমন কাউকে পাওয়া মুশকিল। প্রায় প্রতি এলাকায় দুই চারটা দোকান দেখা যাবে। তাছাড়া বিভিন্ন ফোন কার্ড, শাক-সব্জি ও হালাল মাংসের জন্য এদের দোকানগুলো বিখ্যাত।
দেশে ফিরে গেলে সবচেয়ে বেশি মিস করব তার্কিশ ডুনার ও জার্মান ফুটবল!

২ এর অধিক সন্তান নেওয়া এদের জন্য স্বাভাবিক। বেশির ভাগই বড় হয়ে ব্যবসায়ী হয়। কালো চুলের ফর্সা তুর্কিরা প্রকৃতির যেন অপুর্ব সৃষ্টি। শুনেছি, অল্প বয়সেই অধিকাংশ তুর্কিদের বিয়ে হয়, বিশেষ করে তুরস্কে। পরিবারের সিদ্ধান্তের বাইরে যাওয়া অনেক কঠিন। ভাগ্য পরিবর্তনের আশায় তারা ঝাঁকে ঝাঁকে ইউরোপ বিশেষ করে জার্মানিতে চলে আসে। ২য় বিশ্বযুদ্ধের পর ধ্বংসপ্রায় জার্মানিকে নতুন করে গড়ে তোলায় জার্মানরা অনিচ্ছা সত্বেও এদেরকে গ্রহণ করে!

এখানকার মসজিদগুলো এদের দানে চলে। প্রতি ঈদের নামাজের পর এদের তৈরি নাস্তা খেয়ে কিছুটা হলেও ঈদের আনন্দ অনুভব করি। তখন এদের অনেক আপন মনে হয়।
এখানে আসার কয়েক মাস পরে রমজানের ঈদ আসে। নিয়মিত খদ্দের হওয়ায় এক তার্কিশ মহিলা দোকানদার জোর করে ১০টা মুরগির ডিম বিনামুল্যে দিতে চাইলেন। আমি কোনভাবেই নেবনা। শেষে ভদ্রমহিলা মন খারাপ করে বললেন, “ঈদের একদিন আগে তোমার মা তোমাকে কিছু দিতে চাইলে তুমি কি না করতে?”
বাধ্য হয়ে ডিমগুলো ব্যাগে পুরলাম। এরকম অনেক মিষ্টি অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েছি। অনেক ভাল থাকুক তুরস্কের অধিবাসীরা।

mm

By Shariat Rahman

আমি বর্তমানে রাইন-ওয়াল ইউনিভার্সিটি অফ এপ্লায়িড সাইন্সে সায়েন্টিফিক এসিস্ট্যান্ট (Wissenschaftlicher Mitarbeiter) হিসেবে কাজ করছি। ২০০৯ সালে বুয়েট থেকে আইপিইতে ব্যাচেলর আর ২০১২ সালে রাইন-ওয়াল ইউনিভার্সিটি অফ এপ্লায়িড সাইন্স থেকে বায়োনিক্সে মাস্টার্স সম্পন্ন করি। অবসর সময়ে সোস্যাল মিডিয়া, আড্ডাবাজি আর খেলাধুলা নিয়ে ব্যস্ত থাকার চেষ্টা করি।

Leave a Reply