প্রঃ ডঃ মখলেছুর রহমান, আমার পাশের গ্রামে বাড়ি,জাপানের একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। জাপানি সন্ধানী এনজিও আর মাধ্যমে উনি অনেক কিছু করেছেন, স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়(প্রস্তাবিত) হাসপাতাল, নার্সিং কলেজ অনেক কিছু। আর তিনি জাপান থেকে টাকা এনে ঠিক মত কাজ করছেন কিনা সেটা তদারকি করার জন্য প্রতি বছর জাপানীরা এসে দেখে যাই। প্রথম বার জাপানীরা এসে অবাক হয়ে বলেছিল এত সমস্যা জর্জরিত একটা দেশের মানুষ এত সময় পাই কোথাই যে সারাদিন চায়ের দোকানে আড্ডা দিয়ে কাঁটিয়ে দেই?? আর এত হাসি ই বা আসে কোথা থেকে?।

জার্মানিতে আসার পর এদের জীবনধারা আর কর্ম নিষ্ঠা দেখে আমারও ঠিক একই প্রশ্ন, আমরা জাতি হিসেবে সত্যি ডোন্ট কেয়ার…।। একটা দেশে টানা অবরোধ, হরতাল, প্রতিদিন এখানে সেখানে পেট্রোল বোমার আগুনে মানুষ পুড়ে মরছে,লঞ্চ ডুবে মানুষ মরছে অথচ তা নিয়ে কারো মাথা বেথা নাই। শুধু ব্লগে লেখালেখি করার কারনে রাস্তায় মানুষকে খুপিয়ে রেখে পুলিশের সামনে দিয়ে সন্ত্রাসীরা বুকফুলিয়ে চলে যাই, যে দেশে একটা পাবলিক এক্সাম শেষ করতে ৩ মাস সময় লাগে, এত সমসার মাঝেও যখন সেই দেশের বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া বিবেকবান মানুষগুলো আমাকে এসএমএস করে Happy rose day, Happy propose day,Happy kiss day, Happy 21st February (হাই বিটে বেবি ডল গান বাজিয়ে ভাষা দিবস পালন করা বেঙ্গালি আমরা) bla bla bla…….. তখন আমিও জাপানিজদের মত অবাক হয়ে ভাবি এত সমসার মাঝে ও এত Happy আসে কোথা থেকে??

জার্মানির অধিকাংশও মানুষ পৃথিবীর মানচিত্রের ছোট্ট একটা দেশ বাংলাদেশকে চিনে, না শেখ মুজিব, শহীদ জিয়া, শেখ হাসীনা , বেগম খালেদা, সাকিব আল হাসান বা ডঃ ইউনুস এর দেশ হিসেবে না, তারা বাংলাদেশকে চিনে কারন তারা বাংলাদেশের তৈরি পোশাক ব্যবহার করে। জার্মানির বড় বড় পোশাক চেইন শপ গুলাতে ৬০% এর ও বেশি পোশাক বাংলাদেশি তৈরি। আমি সময় পেলেই এইচ অ্যান্ড এম, সি অ্যান্ড এম, জ্যাক অ্যান্ড জোন্স, নিউ ওয়কারস এর শপ গুলাতে গিয়ে প্রতিটা পোশাকের টাগ উল্টিয়ে উল্টিয়ে দেখি, Made in Bangladesh দেখলে মনটা গর্বে ভরে যাই। আর সেই পোশাক শিল্পের উন্নয়ন ও নিম্ন মুখী।

১৬ কোটি মানুষের দেশে ৮ কোটির ও বেশি মানুষ তরুণ……। যা পৃথিবীর প্রায় ২০০ টা দেশের প্রত্যেকের আলাদা আলাদা মোট জনসংখ্যার থেকেও বেশি। মানে আমাদের দেশে যা ইয়উং জনসংখ্যা তা পৃথিবীর ২০০ টা দেশের প্রত্যেকের মোট জনসংখ্যার থেকেও বেশি।যে দেশে ৮ কোটি ইয়উং জেনারাশন (মোট জনসংখ্যার অর্ধেকের ও বেশি) সেটা অ্যামেরিকা, জার্মান, জাপান এর টেকনোলজি সম্পদের থেকে কোন অংশে কম না। আর এই বিশাল সম্পদকে কাজে লাগাতে পারলে ইকোনোমিক প্রবিদ্ধি ৬ % থেকে ১২% হতে বেশি সময় লাগবে না। কিন্তু গত এক যুগে যে পরিমাণ অস্ত্রের লাইছেন্স দেয়া হয়েছে বিশেষ করে তরুণদের কে টার্গেট করে রাজনৈতিক উদ্দেশে হাছিলের জন্য তাতে মুদ্রার উল্টাপিঠ ই আশা করা যাই উন্নতি নয়।
আজ সকালে ঘুম ভাঙল এক ছোট ভাইয়ের Happy Independence Day…….. এসএমএস এ।

আজ থেকে ৪৪ বছর আগে এই দিনে পাক হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে জেগেছিল বাঙ্গালি একটা নতুন দিনের প্রত্যাশাই। সেই দিনের যাত্রা বীর যোদ্ধারা শুরু করে দিয়েগেলেও আমার তার চলমান ধারাকে ধরে রাখতে পারি নি।বার বার আমাদের পরিচালনা করা হয়েছে কিছু মানুষের বাক্তি স্বার্থের দিকে। আসুন আমরা কারো ব্যাক্তি বা দলের স্বার্থে না গিয়ে দেশের স্বার্থে কাজ করি। সকলের নিজ নিজ জাইগা থেকে দেশটাকে ভালোবাসি। আমরা নিজের জাইগা থেকে দুর্নীতির বিরুদ্ধে দাড়ায়। আমি ব্যাক্তিগত ভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছি দেশে ফেরার পর আর কোনদিনও যেখানে সেখানে ময়লা আবর্জনা ফেলব না। সবসময় নিজের জাইগা থেকে দেশটার জন্য কিছু করার চেষ্টা করবো। আসুন আজ স্বাধীনতার দিবসে আমরা সবাই অন্তত একটা করে ভাল কাজ করার শপথ নেই। আমরা বদলালে তবেই তো দেশটা বদলাবে। তবেই Happy Independence Day…….. এই এসএমএস টা অর্থবোধক হবে।

সবাইকে স্বাধীনতা দিবসের শুভেচ্ছা…………।।

mm

By Rohid Islam

Research Assistant at Economic Policy group, TU Ilmenau. PhD candidate at TU Ilmenau. Studied Economics at Friedrich Schiller University Jena (Uni Jena). Lives in Ilmenau, Thuringen, Germany.

Leave a Reply