বেশ পুরোনো একটা কথা – মধ্যবিত্ত পরিবারের মানুষ না পারে উঠতে ,না পারে নামতে। সহজ হিসাব ,মাস শেষে টানাটানির সময় রিকশা চালিয়েও ইনকাম করা যাবে না আবার মাসের শুরুতে বেতন পাবার পর ফাইভ স্টারে ভোজনও সম্ভব নয় ! আর সেই পরিবারের ছেলে-মেয়ে গুলোও ঠিক সেই সেন্টিমেন্টে বড় হয়। যেহেতু এত বিশাল বিশাল উক্তি প্রদান করছি ,সহজেই অনুধাব্য যে আমি নিজেও মধ্যবিত্ত ঘরের সন্তান। তাই নিজের অভিজ্ঞতা থেকেই বলছি।

ছোটবেলা থেকেই শিখেছি কি করে অল্প-স্বল্প নিয়ে খুশি থাকতে হয়, কি করে ঈদের মার্কেটে যাবার পর চোখ ধাধানো সব জিনিসের দিকে শুধু তাকিয়ে থাকতে হয় (কারণ ঈদের ড্রেস একটাই :)) , কি করে স্কুল ড্রেসটা পুরো বছর চালানোর জন্য প্রায় ট্রিপল করে বানানো হতো (যদিও বছর শেষে সেটা আমার ট্রিপলই থাকতো !! )। একদিক থেকে বিষয়গুলো উপকারিও বটে, আমার মতে। ছেলেবেলা থেকে ধৈর্যশীল হতে শেখা,দূরদৃষ্টি সম্পন্ন হওয়া , খারাপ সময়গুলোকে কোপ-আপ করতে শেখার জন্য দরকার আছে এসবের।

আবার এর সাইড-ইফেক্ট এর সংখ্যাও হয়ত কম না। ইদানিং কালে যার ভুক্তভুগী আমি। দেশের বাইরে আসার পর স্বাভাবিকভাবেই নিজের জানাশোনার গন্ডিটা বাড়াতে হয়। কারণ ইউরোপ হোক বা আমেরিকা হোক এখানকার একটা ছোট বাচ্চার যেই আউট-নলেজ আছে,তাও হয়ত আমাদের থাকে না। তার উত্তরণের উপায় হচ্ছে প্রচুর মানুষের সাথে কথা বলা,তাদের অভিজ্ঞতা শোনা, নিজের ইনস্টিটিউট এ সময় দেয়া , নতুন দেশটার সংস্কৃতি জানা। এই কাজগুলোকে কখনই বার্ডেন বা এক্সট্রা ভাবাটা বুদ্ধিমানের কাজ না। আর এই বুদ্ধিমানের কাজটায় সবচেয়ে ধরা খায় আমার মত মধ্যবিত্ত মেন্টালিটিরা। কারণ সেই ভালো ভালো মধ্যবিত্ত গুনগুলো এখন ব্যাক-ফায়ার করে ! সবধরনের সচ্ছলতার পরও সেই মধ্যবিত্ত গুটানো স্বভাবটা সামনে আল্পস পর্বতের (!) মত দাড়ায়ে থাকে।

একটা সিম্পল উদাহরণ দেই। সামার চলতেসে তখন এখানে।ইনস্টিটিউট এর ক্লাস এর পোলাপান কয়জন ঠিক করলো হাইকিং এ যাবে কাছাকাছি কোনো পাহাড়ে। একদিনের বেপার। সেমিস্টার টিকেট আছে যাওয়ার সুতরাং টিকেট খরচও নেই। সবই ঠিক আছে কিন্তু আমার চিন্তাটা টা তখন অন্য কিছু নিয়ে- এর পরের দিন আমার অফিস আছে, যদি সকালে যাই তাহলে আসতে আসতে সন্ধ্যা – পরের দিন অফিস যাওয়ার জন্য তো টায়ার্ড হয়ে যাব!! ভাবেন একবার কি দূরদৃষ্টি সম্পন্ন চিন্তা ! যা বলছিলাম আর কি, এইটা আসলে ব্যাক-ফায়ার।

সাইড-ইফেক্ট তো সব কিছুরই আছে। কিন্তু কথা হলো আসল শিক্ষা যদি ঠিক থাকে তাহলে সাইড-ইফেক্ট গুলাও একদিন টা টা -বাই বাই করা সম্ভব আর তা করাটা জরুরিও বটে ।

মূল পোস্ট লিংক: http://www.somewhereinblog.net/blog/afrozairin/30013470

mm

By Afroza Irin

রিসার্চ এসিস্টেন্ট হিসেবে কাজ করছি Fraunhofer SCAI তে, পড়ছিঃ মাস্টার্স, Life Science Informatics, Rheinische Friedrich-Wilhelms-Universität Bonn, থাকিঃ Bonn, Germany তে।

4 thoughts on “মধ্যবিত্ত সাইড-ইফেক্ট”
  1. চমৎকার লেখা! ছোট্ট এই লেখার সাথে জীবনের অনেকগুলো কথার মিতালি। তবে, আমার জন্য অনেকগুলো কথার-ডালি আজ বিশ্রামরত। প্রাপ্তি, অতৃপ্তির দোলাচলে একটা সময় হয়ত সব কথাই হারিয়ে যায়, হারিয়ে যেতে চায় বলেই।।

    দোয়া ও শুভেচ্ছা রইল। আরো ভালো লিখবেন!

    -আমান
    কোলন, জার্মানি

Leave a Reply