কয়েক বছর আগের ঘটনা। বার্লিন শহরের বিভিন্ন ভার্সিটিতে পড়ুয়া কয়েকজন তরুণ চিন্তা করল, সামনের রমজানের ঈদে তারা ব্যতিক্র্মী কিছু করবে।
দলের সবচেয়ে ত্যাঁদড় ছেলেটা বুদ্ধি দিল, “চল, ঈদের রাতে সবাই বাংগালী পোষাক পরে পুরো শহর হাটতে বের হই!।” ছাত্রজীবনের ধরাবাঁধা নিয়ম থেকে একটু মুক্তির আশায় সবাই তাতে সায় দিল।

যেই ভাবা সেই কাজ। ঈদের দিন সন্ধ্যার দিকে উদরপুর্তি করে ৭-৮ জন বাঙালী যুবক পরনে লুঙ্গী, গায়ে সেন্টো গেঞ্জি এবং মাথায় গামছা বেধে রাস্তায় বের হল। শহরের একটু ভিতরে আসতেই আশেপাশের লোকজন তাদের দিকে হা করে তাকিয়ে থাকতে লাগল। রাতের আলো আধারিতে তাদেরকে হয়ত এলিয়েনের মত লাগছিল!

চরম উত্তেজনা নিয়ে ডয়েচে ব্যাংকের (জার্মানীর অন্যতম বড় ব্যাংক) পাশ দিয়ে ইউ টার্ন নিচ্ছিল তারা। বলা নেই কওয়া নেই, হুট করে দুইটা পুলিশের গাড়ি দ্রুতগতিতে তাদের সামনে এসে ব্রেক কষলো, অনেকটা হলিউডি সিনেমার থ্রিলিং দৃশ্যের মত! গাড়ি থেকে নেমে পুলিশ অফিসাররা সতর্ক দৃষ্টিতে তাদের দিকে এগিয়ে আসলেন। উত্তেজিত কন্ঠে প্রধান অফিসার জিজ্ঞেস করলেন, “এই ছেলেরা, তোমরা কারা? জলদি আইডি কার্ড দেখাও”।
কালক্ষেপণ না করে যুবকেরা তাদের লুঙ্গির উপরের অংশে গুজে রাখা ওয়ালেট বের করতে লাগল। অফিসাররা মুর্তির মত ঠায় দাঁড়িয়ে বিস্মিত চোখে তাদের কান্ড দেখতে লাগলেন। এমন দৃশ্য পুর্বে কখনোই দেখেননি তারা, এ যে পুরাই সার্কাস!

“এই নিন আমার আইডি কার্ড” ওয়ালেট থেকে আইডি কার্ড বের করে অফিসারের দিকে বাড়িয়ে দিল ত্যাঁদড় ছেলেটা। অফিসাররা যেন বাস্তবে ফিরে এলেন। একে একে সবার আইডি কার্ড পরীক্ষা করলেন তারা। তরুণদের পরিচয় সম্পর্কে নিশ্চিত হয়েও পুলিশের ঘোর যেন কাটছে না।
প্রধান অফিসার জিজ্ঞেস করলেন, “এতো রাতে এই পোশাকে কই যাচ্ছ তোমরা”?
অনেক কষ্টে হাসি চেপে ত্যাঁদড়টা জবাব দিল, “আজকে আমাদের রামাদানের ঈদের দিন, তাই বাংগালী বেশে শহর ঘুরতে বের হয়েছি”।

অফিসারের অভিব্যক্তি দেখে পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে- এমন বেশে কেউ ঘরের বাইরে আসতে পারে এটা তার কিছুতেই বিশ্বাস হচ্ছে না।
কিছুক্ষণ পরে তিনি অনুরোধের সুরে বললেন, “বাবারা, কিছু মনে করো না। তোমরা যদি ঘরে ফিরে যেতে, তাহলে অনেক খুশি হতাম”।
যুবকদের বুঝতে বাকি রইল না যে, এমন বাহারী পোশাকে ব্যাংকের আশেপাশে ঘুরতে দেখে কেউ পুলিশকে ফোন করেছিল!

কথা না বাড়িয়ে তরুণের দল বাসায় দিকে রওনা দিল। ওদের দিকে লোকজনের তাকানোর ধরন দেখে হাসতে হাসতে পেটে খিল ধরেছে তাদের। পরের ঈদে শহরবাসীর জন্য নতুন কি চমক রাখা যায় সেই আলোচনাও করতে লাগল তারা।

mm

By Shariat Rahman

আমি বর্তমানে রাইন-ওয়াল ইউনিভার্সিটি অফ এপ্লায়িড সাইন্সে সায়েন্টিফিক এসিস্ট্যান্ট (Wissenschaftlicher Mitarbeiter) হিসেবে কাজ করছি। ২০০৯ সালে বুয়েট থেকে আইপিইতে ব্যাচেলর আর ২০১২ সালে রাইন-ওয়াল ইউনিভার্সিটি অফ এপ্লায়িড সাইন্স থেকে বায়োনিক্সে মাস্টার্স সম্পন্ন করি। অবসর সময়ে সোস্যাল মিডিয়া, আড্ডাবাজি আর খেলাধুলা নিয়ে ব্যস্ত থাকার চেষ্টা করি।

Leave a Reply