পৃথিবীর প্রতিটা মায়ের মতই আমার মায়ের মধ্যে স্নেহের কমতি নেই। এতটাই বেশী যে সে স্নেহের বৃত্ত ভেঙ্গে আমাকে বের হয়ে আসতে হয়েছিলো; সুদুর জার্মানীতে। উপায় ছিলোনা। হতে চাইনি এমন কম জিনিষই আমার ইচ্ছের তালিকায় ছিলো। যার প্রথম শুরু ব্যাচেলর শেষ করেই। মাত্রই সাতদিনের মাথায় মাঞ্জা মেরে গেলাম ইন্টারভিউ দিতে। আমার সাক্ষাতকার নিলেন খুব স্মার্ট কয়েকজন বড় ভাই। তাদের ভাষ্য হলো আমি এই চাকরী করবোনা। কারণ হিসেবে অদ্ভুত কথা শোনালেন। তাদের দরকার এমন কাউকে যে এই চাকরী পেলে ছেড়ে যেতে পারবেনা।

বিডি জবস, প্রথম আলো জবস, সহ এমন কোন জব সাইট ছিলোনা যেখানে আমার প্রোফাইল নেই। এমনকী কৃষিতে পড়া এই আমার গ্রামীন ফোন, সিটিসেল, এক্টেলেও পোর্টাল ছিলো। বিডি জবস থেকে একদিন কল পেয়ে গেলাম পরীক্ষা দিতে। আমাকে দেখে সবাই অবাক। না অবাক হবার কারণ ছিলো ঐ পোষ্টের নাম ”উপজেলা কীটনাশক বিক্রয় প্রতিনিধি” ইংরেজি যা মেডিকেল রিপ্রেজেন্টিটিভ মতই। ইন্টারভিউ বোর্ডের সবাই খুবই ভাল ছিলেন। বোর্ডের মধ্যমণি আমাকে বললেন,
-ভাইয়া, তুমি এই চাকরী করবানা।
=কেনো?
-কারণ, আমরা খুঁজছি এস এস সি পাশ। আর কাজ হলো কৃষকদের কাছে কীটনাশক এর বিজ্ঞাপণ দেয়া। তাদেরকে বুঝানো কেনো তারা কিনবেন। তুমি দুইদিনের মাথায় চাকরী ছেড়ে আমাদের বিপদে ফেলে দিবা। আর বেতন মাত্র ৮০০০টাকা।

আমি বুঝাতে ব্যার্থ হলাম। এরপরে মায়ের রক্তের সুত্রে ঝুঁকলাম ব্যবসাতে। রিয়ার চাকরীর জায়গা সুত্রে এক বড় ভাইকে পেলাম। উনার মত মানুষ দেখিনি। আমার স্বপ্নের কথা শুনে উনি আমাকে ফ্রী প্রায় ৭০০০টাকার পোশাক দিয়ে বললেন,
-বিক্রি করে দেখেন পারবেন কিনা।

শুরু করলাম। আমার বাসার নীচেই দোকান। না ছিলো ইন্টেরিয়র না ছিলো টেবিল। সেই দোকান নিজে ঝাড়ু দিয়ে বেচা শুরু করতাম। কোন একদিন এক বড় আপু আসলেন। কি মনে করে আমার চাওয়া দামের দুইগুণ বেশী দিয়ে আমাকে বললেন,
-বঙ্গবাজারে কিনতে গেলেও আমাকে চারগুণ বেশী দাম দিয়ে তিন নম্বর জিনিস কিনতে হত। ব্যবহারের কথা নাইবা বললাম।

আস্তে আস্তে পরিচিতি বাড়তে লাগলো। বেচা বিক্রি শুরু হলো। গোলাপবাগ থেকে সেই মীরপুর ১৪তে যেয়ে কার্টুন ভর্তি কাপর মাথায় করে নিয়ে আসতাম।আম্মার পছন্দ হলোনা। তার দৃষ্টিতে তার ছেলে দোকান ঝাড়ু দিয়ে কাপর বেচবে এটা হয়না। আম্মাকে পটাতে পারলাম না। আলমারী ভর্তি সেইসব কাপর অনেকের গায়ে উঠেছে। ঘরমোছা ন্যাকরা হয়ে ঘর পরিস্কার করেছে শুধু আমার কপালের দুঃশ্চিন্তার বলি রেখা পরিস্কার হয়নি। হতে চেয়েছিলাম টাইলসের খদ্দের ঠিক করে দিয়া কমিশন খাওয়া মানুষও। তাও হয়ে উঠেনি। হতে পারিনি এ এস পি কিংবা ম্যাজিষ্ট্রেট।

আজ যখন সদ্য ব্যাচেলর আর মাষ্টার্স শেষ করা ছেলে মেয়েদের বিষাদ মাখা চেহারা দেখি অথবা স্ট্যাটাস পড়ি তখন মায়া লাগে। মায়ের দোষ দেইনা। আমাদের মায়েরা এমনই। নিজের পায়ে দাঁড়াতে হলে সেইসব স্নেহের পরশ থেকে বের হতে হবেই। নিজের স্বপ্নে বাঁচতে হবে। দেরী করা যাবেনা।

দেরী হয়ে গেছে হয়তোবা। স্বপ্নের স্টেশনে দাঁড়িয়ে দূরে চলে যাওয়া স্বপ্নের ট্রেনের শেষ বগির লাল আলো দেখি। দৌড়ালে ধরা যাবেতো? যাবে হয়তো। লাইফ ইজ আ রেস; ভাগো! :/

mm

By Shah Waez

International Student Program Moderator bei horads 88,6 - Hochschulradio Stuttgart. Wohnt in Stuttgart.

Leave a Reply