ক্রিসমাস মেলায় আসছি আখেনে। আখেনের ক্রিসমাসের মেলা খুব সুন্দর হয়। চমৎকার লাইটিং, কোথা থেকে যেন মিস্টি ক্রিসমাসের গান ভেসে আসছে, সবাই অনেক হাসাহাসি করছে (যেটা একটু দুর্লভ এখানে)। হাটতে হাটতে এলিসেনব্রুনেন থেকে মেলার মাঝে চলে আসলাম। ওয়াফেল, গ্লুভাইন, চকলেট ফাউন্টেইন, ফ্রেসলি বেকড কেকের সুগন্ধ সব জায়গায়। 

একটা দোকানে দেখি ওয়াফেল বিক্রি করছে। মোটামুটি ৩০ মিনিট লাইনে দাড়িয়ে থাকার পর ওয়াফেল হাতে পাইলাম। গরম গরম ওয়াফেল ৪° সেলসিয়াসে খাওয়ার পর মনে হইল’ ৩০ মিনিট দাড়িয়ে থাকা সার্থক।’ অনেক বেশি মিষ্টি না কিন্তু একটা স্যাটিসফাইং বিষয় আছে ওয়াফেলে।

আখেনের অনেক ভাল দিক থাকার পরও এখানে এসে যে জিনিসটা খুব মিস করি সেটা হল মাছ। আখেনে কোন নদী নাই। তার জন্য এখানে মাছের চেয়ে বেশি চলে গোস্ত।  দেশের মত এত প্রকারের মাছ এখানে পাওয়াও যায় না। মেলায় একটা দোকানে দেখি মাছ গ্রিল করছে।

জিজ্ঞেস করলাম- কি মাছ?

উত্তর আসল – স্যামন।

একটা স্যামনের বার্গার অর্ডার দিলাম। বার্গার নিয়ে দোকানের পিছে এসে দাড়ালাম। এখানে বসার জায়গা নাই। শুধু দাড়িয়ে খাওয়ার কিছু টেবিল আছে। হঠাত দেখি গ্যান্ডাল্ফের মত লম্বা এক লোক মুখ ভর্তি দাড়ি নিয়ে হটডগ খাচ্ছে। মোটামুটি সাড়ে ৬ ফিট লম্বা, হাসি হাসি চেহারা। 

আমাকে বলল – ‘আমি কি এই টেবিলে দাড়াতে পারি?’

আমি বললাম ‘অবশ্যই।’

গ্যান্ডাল্ফের ইংলিশ দেখি অনেক ভাল। এবং কোন জার্মান টান নাই। আর কথা বললে গ্যান্ডাল্ফের মতই গম গম করে সব জায়গা। 

আমি জিজ্ঞেস করলাম – ‘তুমি কি এখানেই থাক?’

বলল – ‘হ্যা। আখেনেই থাকি আমি।”

আমাকে জিজ্ঞেস করায় বললাম বাংলাদেশ থেকে আসছি। এর পরের প্রশ্ন সাধারণত হয় বাংলাদেশের আয়তন কত আর জনসংখ্যা কত এটা নিয়ে। এই প্রশ্নের উত্তর সব সময় আমার মুখস্ত থাকে।

 ‘তোমরা কোন সাব্জেক্টে পড়তে এসেছ?’

‘ডাটা সায়েন্স’

‘ওরে বাবা!! সাবজেক্টের নাম শুনেই আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে।’

‘If you don’t mind, তুমি কি কর?’

গ্যান্ডাল্ফ গলা নিচু করে ষড়যন্ত্র করার মত করে বলে ‘I am happily jobless now. আমার আব্বা একটু টেনশনে থাকে যে আমি কিছু করি না কেন কিন্তু আমি মাথা ঘামাই না।’ বলে হো হো করে হাসল।মুখ থেকে সস মুছে গ্যান্ডাল্ফ বলল ‘ কেমন লাগছে আখেন?’

সুহা বলল – ‘ ভাল কিন্তু আমি স্নো দেখার জন্য ওয়েট করছি।’

‘তোমরা জীবনে কখনো স্নো দেখো নাই!!!???’

‘না’

‘তোমরা অবশ্যই স্নো দেখতে যাবা। পাশের একটা শহর আছে ঐখানে গেলে স্নো দেখতে পাবা।’

স্নো নিয়ে কথা বলতে বলতে গ্যান্ডাল্ফের হটডগ শেষ হয়ে গেল। সে বলল ‘আচ্ছা আমি যাই।’

‘Thanks for the chat and you have a very friendly face’

‘That’s because I am little drunk’ বলে আবার হাসল। 

চলে যেতে যেতে আবার ফেরত এসে বলল ‘One very important thing to remember when you go to see the snow’

‘What?’

‘DO NOT EAT THE YELLOW SNOW.’

mm

By Tabib Mazhar

RWTH Aachen, Germany

One thought on “জার্মান অভিজ্ঞতা ৪ঃ আখেন ক্রিসমাস মার্কেট এবং Yellow Snow”

Leave a Reply