আত্মহত্যা কিছুতেই মুক্তি হতে পারেনা।
সাকিব বা তামিম এর কোন ভুল ব্যাটিং বা ক্যচ মিস করে ফেলার পরে এদের কি রকম মন্তব্য শুনতে হয় দেখেছেন? সেই অপমানে কান্নাকাটি করলে কি পরের ম্যাচ খেলতে পারবেন তারা?
একজন তরুণী কতই বয়স হবে, কিন্তু মা-বাবা ভাইবোন নিজের দেশে খুন হতে দেখেছেন! দেশের বাইরে পালিয়ে রাজনৈতিক আশ্রয় নিয়েছেন। সেখানে তিনি রাজনৈতিক আশ্রয়ে একজন ডক্টরেট এর পত্নি হয়ে বিদেশ বিভূঁইয়ে আরাম করে বাকি জীবন পার করে দিতে পারতেন। কিন্তু তিনি চ্যালেঞ্জ নিয়েছেন, ঘুরে দাঁড়িয়েছেন। রাজনীতি শুরু করেছেন, এরপর কি দেশের মানুষ তাকে মাথায় তুলে রেখেছে? কেউ হয়তো রেখেছে কিন্তু সেই সব পুরনো শত্রুরা সারাক্ষণ ওত পেতে রয়েছে এখনো! তাকে বার বার মেরে ফেলার জন্য আক্রমণ করা হয়েছে নিজের দেশে, চোখের সামনে ২০-২৫ টা লাশ পড়ে গেলো কাছের মানুষেদের সেই বিভীষিকা বা ট্রমা আর মৃত্যু ভয় নিয়ে শোককে শক্তিতে রূপান্তর করে বেচে আছেন। সবাই চিনতে পেরেছেন কার কথা বলছি, এতক্ষণে হয়তো গালাগালিও শুরু হয়ে গেছে তাকে নিয়ে, হ্যা তিনি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু সারাদিন কত মানুষ তাকে বাপমা তুলে গালাগালি করে যাচ্ছে অভিশাপ দিচ্ছে ভেবে দেখেন ,তো! তিনি যে বয়সে বাবামা কে হারিয়েছেন,কত বয়স বলুন তো? আজকে এই জীবনযুদ্ধে পিছিয়ে পরেননি বলেই তিনি দেশের প্রধানমন্ত্রী। তিনি সফল নাকি বিফল সে হিসেবে যাবো না কিন্তু তিনি পেরেছেন সেটা প্রধানমন্ত্রীত্ব অর্জন করতে। তাকে ডেকে এনে কি কেউ মাথায় সোনার সাজানো মুকুট আর রাজ্য তুলে দিয়েছে?
এরশাদকে নিয়ে দেশে হাসাহাসি করেনি এরকম মানুষ খুজে পাওয়া কঠিন। ৯০ এর দশকে তার তীব্র চাঁছাছোলা সমালোচনা সেই সব চামড়া তুলে নেয়া শ্লোগান শুনেছেন? এবারেও তিনি ভালো না খারাপ সেই আলোচনায় যাচ্ছি না।আবার খালেদা জিয়ার জীবনটা ভেবে দেখুন, কি সুন্দরী রূপবতী কিন্তু সেই অল্পবয়সে তার কিছু বুঝে ওঠার আগেই স্বামীকে মেরে ফেলে দিলো দেশের ভেতর। তিনি হয়তোবা একজন সাদাসিধে মেজরপত্নী হয়ে ঘরসংসার এর স্বপ্ন দেখেছিলেন। কিন্তু স্বামীর হত্যাকাণ্ডের পরে তার মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ে। তার মতো গৃহিণী তরুণী রাজনীতির হাল ধরেন। এরপর দেশের মানুষ তার শিক্ষাগত যোগ্যতা, জন্মদিন নিয়ে কত তুচ্ছতাচ্ছিল্য করেছে বলুন? কিন্তু এর সব শুনে তিনি কেঁদেকেটে হাল ছেড়ে দিলে কি প্রধানমন্ত্রী হতে পারতেন? এখনো এই বয়সে তাকে জেলেও যেতে হয়েছে ভেবে দেখুন এটা কি কম মানসিক যন্ত্রণা? নিজের সন্তানের মৃত্যুর শোক আরো কত কি! কে চিনতো তাকে বা মৃত জিয়ার স্ত্রীকে কে মনে রাখতো বলুন, যদি তিনি সব কিছুর উর্ধ্বে গিয়ে হাল ধরে ঘুরে না দাড়াতে পারতেন?
হুমায়ূন আহমেদের স্ত্রী শাওন কে তো চেনেন। আবারো তিনি ভুল করেছেন নাকি শুদ্ধ, সে হিসেবে যাবো না, কিন্তু তাকে মানুষ কি রকম নোংরা আর বাজে মন্তব্য করে ভিডিও এর নিচে গেলেই দেখতে পাবেন। সেইসব কিছুর কিছুই কি তাকে স্পর্শ করেনি? কিন্তু তার নিজের ইচ্ছে শক্তি বা এইসব মন্তব্যকে ইগনোর করে জীবন যাপনের শক্তি তার আছে। সমাজ সোসাইটি কে বৃদ্ধাংগুলি দেখিয়ে এরকম বয়স্ক একজব মানুষকে শুধু তিনি বিয়েই করেননি দুটি সন্তানের মাও হয়েছেন অনিশ্চয়তার নিশ্চয়তার ভেতরে।
যদি এই মানুষগুলো সমাজের রক্ত চক্ষু, রাগ, তীব্র ঘৃণা আর অভিশাপ গুলো ভেবে জীবন কে প্রভাবিত করতেন তো সবাই আজকে হারিয়ে যেতেন। কিন্তু ইতিহাস তাদেরকেই মনে রাখে যারা ঘুরে দাড়াতে পারে। যারা অন্ধকারে মুখ লুকিয়ে কেঁদে ঘুরে দাড়াতে পারে না, তারা ব্যর্থ। পৃথিবী কখনো কোন যুগে বা কালেই সহজ ছিলো না।
আমাদের মহানবী (সা:) যখন ধর্ম প্রচারে গিয়েছেন, তাকে অপমানে করা হয়েছে, পাথর মেরে রক্তাক্ত করা হয়েছে। ইসলামে কত যুদ্ধ আছে, আছে কত রক্তক্ষরণ! তিনি কি থেমে গিয়েছেন?
যিশুকে ক্রুশবিদ্ধ করে মেরে ফেলা হলো।
দেবদেবীদের কথা যদি বলি, ভগবান বিষ্ণু, শিব, কৃষ্ণ বা মা কালি কার জীবনে যুদ্ধ নেই?
মা কালির মূতিটা দেখেছেন ভালো করে? ঢাকা ভার্সিটির পাশেই ছিলো কালীমন্দির। আমার এক বান্ধবীকে দেখেছি মুগ্ধ চোখে মা কালীর দিকে তাকিয়ে থাকতে। কারণ তার কাছে মা কালী এই উপমহাদেশের সবচেয়ে শক্তিশালী নারী। গলায় দুষ্ট লোক নিধনের কংকাল মস্তক, আর পায়ের নিচে স্বামী, জিভ বেরকরে রক্তবর্ণ-চোখে তাকিয়ে আছেন।
ঘরে বাইরে সমাজ পরিবার, ক্যারিয়ার এবং নিজের সাথে কত কি দহন আর যুদ্ধের ভেতর দিয়ে যেতে হয় প্রতিটি জীবনকে ।জীবনটা আসলে তাহসান মিথিলার মিষ্টি প্রেমের নাটক না। কিন্তু সমস্যা হলো আজকাল সবাই শুধু সব ঠিকঠাক এরকম একটা অভিনয় করে যায়। তাহসান মিথিলার মতো মিষ্টি প্রেমের জুড়িরও বিয়ের প্রেম থেকে বিয়ের পর ছাড়াছাড়িও হলো। এরপরে তাদেরও কত জবাবদিহিতা করতে হয়েছে বা কত কত মন্তব্য শুনতে হয়েছে সেটাও ইন্টারনেট খুঁজলেই দেখতে পাবেন।
ঝড় ঝাঁপটার সাথে লড়াই করে মাথা উচু করে বেচে থাকার নামই জীবন। স্টুটগার্ট শহরের মাঝখানে যুদ্ধসাজে এক রুদ্রমূর্তি নারী মূর্তির দিকে আমি অনেক দিন তাকিয়ে থেকেছি। আজ থেকে ৬শ বছর আগের ভাস্কর্য। সেই সব রুদ্ররূপ যারা সব প্রতিকূলতা, বাধা, পায়ে দলে এগিয়ে যেতে পারে তারাই কেবল ইতিহাসে জায়গা করে নিয়েছে। আর যারা অপমানে দরজা বন্ধ করে কাঁদছে, বা আত্মহত্যা করে মুক্তি খোজে এদের স্থান ইতিহাসে পরাজিতদের আস্তা-কুঁড়ে।
It is really important to learn to ignore surrounding’s stupid words. In the end, it doesn’t even matter.
Be bold enough to live life on your terms, and never, ever apologize for it. Go against the grain, refuse to conform, take the road less traveled instead of the well-beaten path. You’ve only got one life to live, so why not make it your best one? Each day, there are an infinite amount of moments to change your life.
So beat it………
https://www.youtube.com/watch?v=T2PAkPp0_bY
লেখাটি আজকে প্রথম আলোতে প্রকাশিত হয়েছিলো লিংক
https://www.prothomalo.com/durporobash/article/1568495/%E0%A6%86%E0%A6%A4%E0%A7%8D%E0%A6%AE%E0%A6%B9%E0%A6%A4%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A6%BE%E0%A7%9F-%E0%A6%AE%E0%A7%81%E0%A6%95%E0%A7%8D%E0%A6%A4%E0%A6%BF-%E0%A6%B9%E0%A6%A4%E0%A7%87-%E0%A6%AA%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A7%87-%E0%A6%A8%E0%A6%BE-%E0%A6%95%E0%A6%BF%E0%A6%9B%E0%A7%81%E0%A6%A4%E0%A7%87%E0%A6%87?fbclid=IwAR0Z2jKj7ij8AfF8VLK5VulSWZvDB7nISiiDpCgbMOh94-Rnfl8mxEKx5SE
mm

By Rasha Binte Mohiuddin

স্টুডেন্ট অফ মাস্টারস ইন ইনভাইরনমেন্ট প্রটেকশন এন্ড এগ্রকালচারাল ফুড প্রডাকশন, ইউনি হোয়েনহেইম (স্টুটগার্ট জার্মানি)

Leave a Reply