“এমন দিনে তারে বলা যায় এমন ঘনঘোর বরিষায় –
এমন মেঘস্বরে বাদল-ঝরঝরে তপনহীন ঘন তমসায়।।
সে কথা শুনিবে না কেহ আর, নিভৃত নির্জন চারি ধার।
(বর্ষার দিনে – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর )
.
সম্ভবত প্রথম যে ইন্দ্রিয় আমরা ব্যবহার শুরু করি তা হল ঘ্রাণ। মানুষের প্রতি ৫০ টি জীনের একটি এই ঘ্রাণ কার্যে ব্যস্ত। মিলিয়ন বছরের ইভল্যুশন বাবদ প্রাপ্ত এই শক্তি তাই এক অনন্যসাধারণ প্রক্রিয়া বৈকি। তবে আজকের আলোচনার বিষয় কীভাবে ঘ্রাণ কাজ করে তা নয়। বরং কেন গন্ধ, দুর্গন্ধ বা সুগন্ধ হয় কোনকিছু তা।
সূত্রঃ ফিজিক্স.ওআরজি
কিছুদিন আগে বৃষ্টি নিয়ে জার্মান ভদ্রলোকের কথা শুনে অবাক হলাম। তাঁর নাকি জানা ছিল না বৃষ্টির একটা মিষ্টি গন্ধ থাকতে পারে। এটা নাকি শুধুমাত্র আমাদের অর্থাৎ উপমাহাদেশের মত জায়গাতেই সম্ভব। পুরো ব্যাপারটা আমার কাছে অতিরঞ্জন ছাড়া আর কিছু মনে হয় নি। সেই ভদ্রলোকের হয়ত নাকে সমস্যা রয়েছে যা তিনি জানেন না অথবা তাঁর এনজ-মিয়া (Anosmia) হয়েছে। সেটা যাই হোক, বৃষ্টির গন্ধের কারণ কী তা আজকে আমরা জেনে নিতে পারি। মাত্র দুইটি বুলেট পয়েন্ট যুক্ত প্যারাতেই সারকথা বুঝে নেয়া সম্ভব।
জানেন নিশ্চয়ই, বৃষ্টি হতে হলে যে মেঘের প্রয়োজন তা থাকে ট্রপোস্ফেয়ার এ। বিভিন্ন গ্রহে মেঘ কীভাবে তৈরি হয় সেটা অন্য আরেকদিন আলোচনা করার ইচ্ছা রইল। :/
সূত্রঃ scied.ucar.edu
  • বৃষ্টি হওয়ার আগেই কিন্তু আমরা এর গন্ধ পেয়ে যেতে পারি। মূলত বিদ্যুৎ চমকানোর কারণে নির্গত শক্তিতে বায়ুমন্ডলের অক্সিজেন(O2) এবং নাইট্রোজেন(N2) অনুগুলো বিশ্লিষ্ট হয়। পরবর্তীতে নাইট্রাস অক্সাইড (N2O) এবং নাট্রিক অক্সাইড (NO) মিলে মিশে তৈরি করে ওজোন (O3)। এই ওজোনের গন্ধ অনেকটা ক্লোরিনের (Cl2) মত এবং এই গন্ধ আমাদের মস্তিষ্ক বৃষ্টির সাথে সম্পর্কযুক্ত হিসেবে ধরতে পারে।
সূত্রঃ http://butane.chem.uiuc.edu/

বিশেষ সতর্কতাঃ কেউ যেন এই ওজোন (O3) কে স্ট্র্যাটোস্ফেয়ারের ওজোন লেয়ারের সাথে গুলিয়ে না ফেলেন। সেখানের ম্যাকানিজম একটু ভিন্ন। নিচের ছবিতে হালকা ধারণা পাওয়া যাবে। তবে আরো জানতে চাইলে এখানে দেখুন। 🙂


 

সূত্রঃ scienceinschool.org

  • পেট্রিকোর (Petrichor) হল এমন একটি উপাদান যা বৃষ্টির গন্ধের জন্য দায়ী। অনেকদিন বৃষ্টি না হলে শুষ্ক জায়গায় জন্ম নেয়া উদ্ভিদগুলো এক ধরণের তেল নিঃসরণ করে যাতে শুষ্ক মৌসুমে তাদের বৃদ্ধি কম হয় এবং পানির প্রয়োজন কমে যায়। এছাড়া মাটিতে থাকা এক্টিনোমাইসেটেস (Actinomycetes) ব্যাকটেরিয়া জিয়োসমিন (Geosmin) নামক এক প্রকার যৌগিক পদার্থ নিঃসরণ করে। বৃষ্টি হলে এই জিয়োসমিন এর গন্ধ আমাদের নাকে চলে আসে। মজার ব্যাপার হল আমাদের নাক মাত্র ৫ টি জিয়োসমিন পার্টিকেল/ট্রিলিয়ন এ ধরতে পারে। এটাকে বোঝার সুবিদার্থে আমরা তুলনা করতে পারি এক চা চামচ পানি যদি ২০০ টি অলিম্পিক সুইমিং পুল থেকে তুলে নেয়া হয় তার সাথে। আবারো বলতে হয়, ইভল্যুশন বাবদ প্রাপ্ত এই শক্তি তাই একটি অনন্যসাধারণ প্রক্রিয়া বৈকি।

 

সূত্রঃ pbworks.com
© 2003-2016, MAX-PLANCK-GESELLSCHAFT, MÜNCHEN
পরেরবার বৃষ্টির গন্ধে যখন বুঁদ হয়ে থাকবেন তখন ভেবে দেখবেন, ব্যাকটেরিয়া না থাকলে মাটির সোঁদা গন্ধ কিংবা বৃষ্টির পরার পর সতেজ গন্ধটি কখনও পেতেন? হয়ত পেতেন না। 🙂
শ্রাবণে বিরহ শুধু নয়, আগুনও রয়েছে
সেই তাপে শুদ্ধ হবে অসবর্ণ মিল পিপাষা।
 .
(হাসান হাফিজ, ‘বর্ষাভেজা পদাবলী’)

তথ্যসূত্রঃ
http://arcturan.com/
http://www.sciguru.org/
http://earthobservatory.nasa.gov/
www.quora.com/
www.howitworksdaily.com/

mm

By Rashidul Hasan

Founder and currently coordinator of the largest community platform of Bangladeshi people in Germany, named ''Bangladeshi Student and Alumni Association in Germany'' (www.facebook.com/groups/BSAAG) and GermanProbashe.

Leave a Reply