আমি জার্মানির ভিসা পাওয়ার পর যাবতীয় ব্যাঙ্কিং সংক্রান্ত কাজ (ব্লক একাউন্ট ভাঙ্গানো, অথরাইজেশন পাল্টানো ইত্যাদি)/প্লেন টিকেট কাটা/মানি এক্সচেঞ্জে ইউরো কেনা/লাগেজ-ব্যাগ কেনা/দরকারী কাগজপত্রের স্ক্যান -ফটোকপি/শপিং সারার জন্যে সময় পেয়েছিলাম মোট ৫ দিন। তার মাঝে ২ দিন গেছে ব্যাংকে দৌড়াদৌড়ি করে। সর্বসাকুল্যে বাকি ৩ দিন অন্যসব কিছুর জন্যে।  কে জানে – হয়তো আপনার বেলায়ও হতে পারে এমন কিছু। সুতরাং কিছু প্রস্তুতি নিয়ে রাখা ভালো।

শপিং বিষয়ে জার্মান প্রবাসে সাইটে  ভাইয়ের এই পোস্টটা  ব্যাপক তথ্যবহুল। সার্বিক নির্দেশনার জন্যে এই পোস্টটাই যথেষ্ট – আমি শুধু এর সাথে আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে কিছু টিপস শেয়ার করছি।

প্রথমেই লাগেজ আর ব্যাগ এর প্রসঙ্গ। লাগেজ একটু দাম দিয়ে ভালো দেখে কিনবেন। জার্মানি আসার পর হয়তো বাসস্টপ/hbf থেকে ডর্ম পর্যন্ত আপনাকে হেটে আসা লাগতে পারে। তো হাটার মাঝে যদি লাগেজের চাকা খুলে যায় – আপনাকেই কিন্তু তখন সেটা মাথায় করে আনা লাগবে। আর ব্যাগ এমন একটা কিনবেন যেটায় ল্যাপটপও রাখা যাবে, ইউনিতেও চালাতে পারবেন আবার ট্রাভেলের কাজেও ব্যবহার করা যাবে। দরকার মনে করলে ইউনির জন্যে পরে ব্যাগ কিনে নিতে পারবেন অবশ্য, দাম বেশি না, ১৫-২০ € ।


জামাকাপড়:

টি/পোলো শার্ট – আপনি যদি স্বাস্থ্যবান (এবং মোটা) হোন, টি শার্ট চাইলে আনতে পারেন – না আনলেও সমস্যায় পড়বেন না। জার্মানিতে কিনে নিলেই হবে। কিন্তু যদি আমার মত রোগাপটকা হয়ে থাকেন – অবশ্যই টি শার্ট একটু বেশি করে কিনে আনবেন। কারণ এখানের স্টোরগুলোর টি সার্ট একটু ঢোলা টাইপের। প্রিন্টেড টি সার্ট সাধারণত ৭-১০ € এর মত। পোলো শার্টের বেলায়ও একই কথা প্রযোজ্য। ফরমাল শার্ট অল্প (ম্যাক্সিমাম ৪-৫ টা) আনবেন -এখানে অফিস আর বয়স্ক লোকজন ছাড়া লং/শর্ট স্লিভ শার্ট তেমন কেউ ব্যবহার করে না। জামার ভেতরে পড়ার জন্যে পাতলা গেঞ্জি আনবেন বেশি করে।


শীতের কাপড়:
দেশ থেকে ভালো দেখে (মানে দেখতে ভালো) ২-১ টা আনবেন যেগুলো হালকা ঠান্ডাতে পড়া যাবে। ভুলেও বঙ্গবাজারের জ্যাকেট না। জার্মানিতে ৩০-৬০ € তে ভালো উইন্টার জ্যাকেট পাবেন। হুডি যতগুলো ইচ্ছে আনতে পারেন। একই কথা পুলওভার/পাতলা সোয়েটারের বেলায় প্রযোজ্য। মাফলার/শীতের টুপি আনার দরকার নেই। এখান থেকে সুন্দর দেখে কিনে নিতে পারবেন। যদি বেসবল ক্যাপ পড়ার অভ্যাস থাকে – দেশ থেকে কয়েকটা কিনে আনবেন, জার্মানিতে এই জিনিসের দাম ১০ €+ । বঙ্গবাজারে থার্মাল ইনারের নামে যেগুলো বিক্রি করে সেগুলো না আনাই ভালো, তবে চাইলে আনতে পারেন। থার্মালের নামে দেশে turtleneck যেগুলো বিক্রি করে সেগুলো কেনার কোনো দরকার নেই। এই জিনিস এখানে কোনো ছেলেকে ব্যবহার করতে দেখি নি।


জিন্স/ট্রাউজার:
ঘরে/সামারে পড়ার জন্যে কয়েক সেট ভালো মানের থ্রি কোয়ার্টার/ট্রাউজার আনবেন। ফরমাল প্যান্ট আনা আপনার সিদ্ধান্ত। জিন্স কয়েক সেট মাস্ট। গ্যাবার্ডিন আনতে পারেন কয়েকটা যেগুলো ফরমাল কাজেও চালিয়ে দিতে পারবেন। আন্ডারগার্মেন্টস/বক্সার অবশ্যই বেশি আনবেন।

একটা বিশেষ টিপ: ওয়াশিং মেশিনে দেশ থেকে আনা জামাকাপড় কখনোই ৪০°C এর ওপরে দেবেন না। ৬০°C বা তার বেশিতে ধুতে দিলে আপনার প্রিয় জামাগুলো সাইজে অর্ধেক হয়ে যাবে।

মোজা যত বেশি আনবেন তত ভালো। অবশ্যই সূতির এবং ভালো মানের। জুতো ২-১ জোড়ার বেশি আনার দরকার নেই, স্নিকার অবশ্যই। শীতের জুতো কমদামে জার্মানিতেই পাবেন। অনলাইন কিংবা Deichmann টাইপ দোকানগুলোয় সস্তায় সবধরনের জুতো পাবেন।  ঘরে পড়ার জন্যে এক সেট স্যান্ডেল আনতে ভুলবেন না। বাইরে স্যান্ডেল জাতীয় কিছু কখনোই পড়ার প্রয়োজন হবে না।

আমার মতো সেমি আন্ধা হয়ে থাকলে দেশ থেকে কয়েক সেট চশমা আনবেন Anti-Reflective Lenses সহ। বাংলাদেশে চশমা/কনটাক্ট লেন্স অনেক সস্তা। এখানে চশমার দাম দেখলে মাথা গরম হয়ে যাবে।


রান্নার জিনিসপত্র:
মসলা অল্প পরিমাণ সব আনবেন (পেয়াজ রসুন বাদে অবশ্যই)। প্লেট-মগ-চামচের বাইরে হাড়িপাতিল আনার কোনো মানে নাই। জার্মানি আসার কয়দিন পর IKEA বা Hornbach গেলেই কমদামে সব পেয়ে যাবেন। এছাড়াও ইউরো শপ নামে কিছু দোকান আছে যেখানে রান্নার ছোটখাটো যন্ত্রপাতি/মসলা ১ € তে পাবেন।  এছাড়াও স্টোরগুলোয় রান্নার সব মসলাই কমবেশি পাওয়া যায়।


ইলেক্ট্রনিক্স:
মোবাইল ফোন দেশেই সস্তা (হাই এন্ড ফোনগুলো বাদে)। ল্যাপটপ জার্মানি এসে কিনলেই ভালো হবে। দুটো জিনিস অবশ্যই দেশ থেকে আনবেন। অন্তত ২-১টা থ্রি পিন টু ২ পিন সকেট কনভার্টার (যদি দেশ থেকে আনা কোনো ডিভাইস ৩ পিনের হয়ে থাকে), আর একটা wifi রাউটার। এগুলোর দাম এখানে অনেক বেশি। মনে রাখবেন – জার্মানিতে ৩ পিন সকেটের কোনো অস্তিত্ব নাই। একটা ইয়ারফোন আনলে ভালো করবেন প্রথম কিছুদিন চালানোর জন্যে।  মনে করে সব ডিভাইসের চার্জার আনবেন।


প্রাথমিক ব্যাবহারের জন্যে শ্যাম্পু/লোশন/কমদামি 2-1টা রেজার দেশ থেকে আনা বেটার। বডি স্প্রে/পারফিউম/সেভিং আইটেম এখানে সস্তা। ইলেকট্রিক রেজার/ট্রিমার সস্তায় amazon থেকে পরে  কিনে নিতে পারবেন।


ধর্মকর্মে মন থাকলে জায়নামাজ দেশ থেকে নিয়ে আসবেন। প্রচুর টার্কীশ/আরব স্টোর/ডোনার শপ আছে- হালাল খাবার নিয়ে কোনো ঝামেলায় পড়বেন না। এছাড়া বড় স্টোরগুলোর এই ব্র্যান্ডগুলোর অনেক আইটেমই হালাল (অবশ্যই হালাল লোগো দেখে নেবেন):

Gut Langenhof (usually available in Norma)

Dr.Oetker (some items are halal)

Wiesenhof (probably all items are halal, usually available in Kaufland)

Baktat (Turkish brand, usually available in Rewe)


বিয়ারে এলকোহল এড়াতে চাইলে খুব সহজেই সেটা সম্ভব। জার্মানিতে অনেকগুলো বিয়ার ব্রান্ডের 0% আলকোহল বিয়ার প্রোডাক্ট আছে (Rothaus Tannenzäpfle/Clausthaler/Beck’s non alcoholic/Bitburger Drive/Bock Dark Non Alcohol etc.)। স্টোরগুলোর কাউকে জিজ্ঞেস করলেই দেখিয়ে দেবে।


প্লেনের টিকেট/সিটি টিকেট: কমদামে প্লেন টিকেট খুজে বের করতে http://www.skyscanner.de এর কোনও বিকল্প নেই। তবে বাংলাদেশ থেকে প্রথমবার জার্মানীয় আসার জন্যে কোনো ট্রাভেল এজেন্সি থেকে টিকেট করাই  বেটার হবে। ট্রানজিট টাইম 2-4 ঘন্টার ভেতর হলে ভালো।  জার্মানিতে সব সিটিরই ট্রান্সপোর্ট নেটওয়ার্কের দিন/সপ্তাহ/মাস ভিত্তিক টিকেট কেনা যায়। যদি আপনার ছাত্রদের জন্যে বিশেষ সেমিস্টার টিকেট কিনতে দেরি হয় – তাহলে সাপ্তাহিক টিকেট কিনে নেয়াটা সাশ্রয়ী হবে। এব্যাপারে ইউনির সিনিয়র কোনও স্টুডেন্টের উপদেশ নিন।


আজ এ পর্যন্তই।

mm

By MNA Alam

Universität Ulm - DE, Jahangirnagar University - BD

2 thoughts on “জার্মানির ভিসাপ্রার্থী নতুন ছাত্রদের জন্যে কিছু শপিং টিপস (জার্মানি আসার আগে এবং পরে)”

Leave a Reply