জার্মানিতে শীঘ্রই আসবেন, তাদের জন্য এটি একটি সতর্কতামূলক পোস্ট । কাউকে ব্যক্তিগতভাবে আক্রমণ করা হয়নি। তাই কারো সাথে মিলে গেলে, ব্যক্তিগত আক্রমণ ভেবে না নেয়ার অনুরোধ করছি । । । ।

বিদেশে লেখাপড়া প্রায় সকল ছাত্র-ছাত্রীর একটা স্বপ্ন থাকে। যে স্বপ্নকে রূপ দিতে অনেক বাধা পেরোতে হয় । এই সকল বাধা পার হয়ে যখন স্বপ্নের বিশ্ববিদ্যালয়ের দেশে পাড়ি জমান একজন ছাত্র, তখন তাকে মুখোমুখি হত হয় অনেক বড় রকমের ধাক্কার । কারণ সেখানে আবেগের কোন স্থান নেই বললেই চলে। আবেগহীন বাস্তবতার একটা অন্ধকার দিক তুলে ধরবো আজ ।

আপনার স্বপ্নের দেশ সম্পর্কে বইয়ে পড়া এবং মুভিতে দেখা আর বাস্তবতার সাথে অনেক তফাৎ আছে। আপনাকে সর্বস্বান্ত করতে অনেকেই ওত পেতে আছে । তাঁদেরই একজন হয়তো আপনার দেশি ভাই! যে আপনাকে অনেক সুযোগ সুবিধার কথা মিষ্টি ভাষায় বলে, আপনাকে মানুষিক এবং আর্থিকভাবে পঙ্গু করার অবিরাম চেষ্টায় লিপ্ত । এইধরনের বিষাক্ত মানুষদের থেকে দূরে থাকার জন্য এইগ্রুপে আগে প্রায় নিয়মিত পোষ্ট থাকতো নতুন ছাত্রছাত্রীদের উদ্দেশ্যে । এখন সেটা আর তেমন চোখে পড়ে না। এর মানে এই না যে, আপনার আমার স্বদেশী বিষাক্ত মানুষদের অসৎ কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে । চলছে …… জানি না এর শেষ কোথায়…

শুধু বার্লিনে নয়, পুরো ইউরোপ জুড়ে এদের আদিপত্য। এদের মধ্যে একটা শ্রেণি হচ্ছে, গ্রিস, পর্তুগাল, পোল্যান্ডে ভুয়া বিয়ে করে, সহজ সরল ইউরোপিয়ান রাষ্ট্রের সরকারদের সাথে তারা প্রতারনা করছে । ভুয়া একারণেই বললাম যে, আমি যাদের চিনি, তাঁদের ৯০ শতাংশের বাংলাদেশে বিয়ে থাকার পরও তারা অবিবাহিত সনদ নিয়ে এসে ইউরোপে বিয়ে করে এবং করেছেন।আমি কেন এই বিয়ে করা লোকগুলোর পিছনে লাগলাম? আসলে এদের সাথে আমার কোন বিরোধ নাই । আমি চেয়েছি শুধু এদের সাথে পরিচয় করাতে । কেন? সেই ছোট্ট কথা বলার জন্যই, এতো বড় ভূমিকা নিয়ে ফেললাম ।

সাম্প্রতিক সময়ে আমার কিছু বাংলাদেশি ছাত্রের সাথে কথা হয়েছে। এর মাধ্যমে জানতে পেরেছি যে, গ্রিস, পর্তুগাল, পোল্যান্ডে বিয়ে করা বাঙ্গালি বাবুরা বাংলাদেশি ছাত্রদের মানবিকে বিপর্যয়ের একটা বড় কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে । প্রথম দেশ ছেড়ে ইউরোপিয়ান একটা শহরে এসে দাঁড়ানো একটা ছেলে অথবা মেয়ে মানুষিকভাবে খুবই অসহায় থাকে । ঢাকা শহরে অনার্স শেষ বর্ষে পড়া একটা ছেলে অথবা মেয়েকে অনেক সময়ই দেখা যায় যে তার মা অথবা বাবা হাত ধরে রাস্তা পার করিয়ে দেন । আবেগহীন বাস্তবতার ইউরোপিয়ান শহরে অবস্থারত ছাত্রের সেই বাবা মা তখন তার সন্তান থেকে অনেক দূরে অবস্থা করছেন ।

আপনাকে রাস্তা দেখিয়ে দেয়ার লোক কিন্তু আছে । ভাবছেন সে কে? সে আর কেউ না, সে আপনার স্বদেশী বিষাক্ত মানুষদেরই একজন । ফেসবুকে পরিচয় হওয়া কোন ছাত্রের সাথে আপনার স্বদেশী বিষাক্ত সেই ভাইটি হয়তো কোন না কোন ভাবে পরিচিত । আপনি যখন থাকার জায়গা নিয়ে ভেবে কূল পাচ্ছেন না, তখন হয়তো আপনি সেই ফেসবুকে পরিচিত হওয়া ছাত্র ভাইটির কাছে সাহায্য চাইবেন। তার হয়তো সাহায্য করার কোন উপায় নাই । কিন্তু আপনাকে তিনি নিজের অজান্তে পরিচয় করিয়ে দিবেন আপনার স্বদেশী বিষাক্ত মানুষের সাথে ।

খেলা এখানেই শুরু !!!!!!! আপনি যখন আপনার স্বদেশী বিষাক্ত ভাইটিকে ফোন করে আপনার অসহায় অবস্থার কথা বলবেন, আপনার স্বদেশী বিষাক্ত ভাইটি আপনাকে এমন আশ্বাস দিবে যে, আপনার আর কোন সমস্যা নাই । আপনাকে ইউরোপিয়ান আইনের এমন সুন্দর ট্যাবলেট খাওয়াবে যে, আপনি ভাবতে পারেন যে, আরে!!!! এতো সেই রকম বিজ্ঞ ব্যক্তি !!!!! কারণ আপনি হয়তো তখনও ইউরোপিয়ান আইনের কোন কিছুই জানেন না। আপনাকে যা বলবে, তার ৯০ শতাংশই ভুয়া অথবা মনগড়া কথা । এরপর সে আপনাকে তার বাসায় থাকার প্রস্তাব দিবে। মোটামুটি আকাশ ছোয়া ভাড়া । কিন্তু এতেই আপনার সাহারা মরুভূমিসম মনে, এক ফোটা বৃষ্টি পড়বে । আপনার প্রত্যাশিত বাসায় গিয়ে দেখবেন সুযোগ সুবিধার কথা যা বলা হয়েছে তার কিছুই নেই । আপনাকে একটা ম্যাট্রেস-এ ফ্লোরিং করতে হবে!!!! বাকিটা এক সপ্তাহের মধ্যে জোগাড়ের আশ্বাস দেয়া হয়ে। সেটা আর কোনদিন বাস্তব হবে না…

এরপর আপনার স্বদেশী বিষাক্ত ভাইটি আপনাকে ছাগলের ৮ পা আছে সেই গল্প শোনাবে । তার অনেক ক্ষমতার গল্প আপনাকে শোনাবে। বাস্তবে সে আসলে একটা দালাল প্রকৃতির লোক ছাড়া কিছুই না । সে আপনার থেকে বিভিন্ন সময়, বিভিন্ন অজুহাতে টাকা ধার নিবে । আজ দেই, কাল দেই করতে করতে আপনার মানুষিক শান্তির ১২টা বাজিয়ে দেবে । এর’ই মধ্যে সে হয়তো আপনাকে দেয়া আনমেল্ডাং(সিটি রেজিস্ট্রেশন)টা গোপনে কেটে দিয়ে, বাসায় থাকছে না এমন লোকের কাছে ৬ মাসের জন্য ৩০০ ইউরোতে বিক্রি করবে । যদিও সে আনমেল্ডাং দেয়ার অজুহাতে আপনার থেকে মোটা অংকের বাসা ভাড়া নিচ্ছে!!!!!! আপনি জানতে পারবেন না কি হচ্ছে, কারণ লেটার বক্সের চাবিটা আপনার স্বদেশী বিষাক্ত ভাইটির হাতে । আপনি যখন ৭/৮ মাস থাকার পরে আপনার আরাধ্য প্রায় স্টুডেন্ট ডরমেটরিতে গিয়ে নতুন বাসার আনমেল্ডাং করতে যাবেন, তখন জানতে পারবেন যে আপনার পূর্বের বাসা থেকে আনমেল্ডাং বাতিল করা হয়ে গেছে ৪/৫ মাস আগেই !!!!!!!!!!!!

আমি সচারাচর ঘরকুনো মানুষ । বাহিরের জগতের সাথে আমি একটা কমই তাল মেলাতে পারি। সাম্প্রতিক সময়ে বার্লিনে অবস্থানরত কিছু বাংলাদেশী ছাত্রের সাথে সাক্ষাতে কম বেশি এমন অভিজ্ঞতার কথা জানতে পারলাম। আমি নিজেও কিছুটা এমন’ই পরিস্থিতির শিকার ।

তাই যারা নতুন আসতেছেন, তাঁদের প্রতি অনুরোধ, আপনার দেশি কোন ভাইকে পীর ভাবার দরকার নাই । আর সে যদি গ্রিস, পর্তুগাল, পোল্যান্ডে বিয়ে করে সেই জোরে থেকে থাকে, তাহলে তার থেকে ১০০ মিটার দূরে থাকুন। বাসা ভাড়ার সাব-কন্ট্রাক্ট নিয়ে নিবেন; যদি না পারেন, কমপক্ষে বাসা ভাড়াটা প্রতি মাসে আপনার ব্যাঙ্ক একাউন্ট থেকে ট্রান্সফার করুন।

আর যেসকল ভাইয়েরা স্টুডেন্ট ডরমেটরিতে থাকে, তারা ইচ্ছা করলে তাদের রুমে ৬ মাসের জন্য বৈধভাবে রাখতে পারেন (যদি রুমটা একটু বড় হয়) । তাই আপনাদের কাছে অনুরোধ, ৬ মাস না হলেও ২/৩ মাসের জন্য আপনার আরেক ভাইকে সাহয্য করুন ।

আর যারা এই ধরনের বিষাক্ত মানুষদের শিকার, তারা কমেন্টে বিষাক্ত মানুষটির ডাকনাম এবং তার বর্তমান শহরের নাম লিখে অন্যদের স্বপ্নের শহরে স্বপ্ন নিয়ে এগিয়ে চলতে সাহায্য করুন ।  

লেখকঃ হাসিবুল ইসলাম, বার্লিন স্কুল অব মাইন্ড এন্ড ব্রেইন, হুমবোল্ট ইউনিভার্সিটি বার্লিন, জার্মানি । 

2 thoughts on “স্বপ্ন, বাস্তবতা, আর রক্তচোষা জোঁকের অপতৎপরতা”
  1. Vaiya ami political science theke honours kortechi ..ami Germany te bachelor e kmn subject paite pari r kon subject ta amr jonno study ses e job er khetre help korbe ei bisoi ta janaben plzz

Leave a Reply to Harun Cancel reply