বিশ্ববিদ্যালয়ের ২য় বা ৩য় বর্ষে একবার এক গেষ্ট টিচার ক্লাস নিতে এসছিলেন ( নামটা মনে পড়ছে না), ক্লাসের শুরুতে তিনি বললেন “আমি কিন্ত জ্ঞানী নই, তোমাদের চেয়ে বেশী জানি তাও না । শুধু পার্থক্য হলো আমি কিছুদিন আগে জেনেছি তোমরা কিছুদিন পর জানবে ! আর আমি জানার সময় যে অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিনিময় করব তোমাদের সাথে ।”

উনার কথাগুলো আমার খুব মনে ধরেছিল, “Politeness” এর সর্বোচ্চ লেভেল যাকে বলে । শুধুমাত্র প্রকৃত জ্ঞানী না হলে এমন বিনয় দেখানো সম্ভব নয় ।

দুঃখ হলো, এমন বিনয়ী মানুষ আমাদের সমাজে এখন প্রায় বিলুপ্ত । আমাদের চারপাশে এমন অনেক আছে যাদেরকে কিছু জিজ্ঞেস করলে নিজেকে ইশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ভাবেন । আবার অনেকে আছেন যারা নিজেকে নিজে শেয়ার পন্ডিত ভেবে অন্যদের বোকা ভাবেন । আরেক শ্রেণী পাওয়া যাবে যাদের উপকার করলে নূন্যতম ভদ্রতা বজায় রেখে একটা ধন্যবাদ দেয়া তো দূরের কথা বরঞ্চ বিরূপ মন্তব্য করে বসবে । অন্যদিকে উপকার চাইলে অনেকে নিজেদের “মহাজন” ভাবেন । কখন কাকে কি রি-অ্যাকশন দিতে হবে সেই ব্যাপারেও আমরা সচেতন নই । আমরা শোনার আগে বলার চেষ্টা করি, বুঝার আগে প্রতিক্রিয়া দিই, অন্যের মতামত-দ্বিমত কেও মূল্যয়ন করতে আগ্রহী নই । মুলকথা হলো ইংরেজরা আমাদের সব শিখিয়ে দিয়ে গেছেন শুধুমাত্র “বিশুদ্ধ আচরন” শিখিয়ে যেতে পারেন নি ।

জার্মানদের কথায় কথায় ধন্যবাদ দিতে দেখি, রাস্তা না ছিনলে শুধুমাত্র ডানে-বামে বলে দায়িত্ব শেষ করেন না, গন্তব্য পৌছেঁ দিয়ে তারপর কান্ত হল । কোন কথা রাখতে না পারলে সুন্দর একটা হাসি দিয়ে অন্তত সরি বলবে । অন্যের কাজ-কথাকে কোনোভাবেই “ফালতু” মনে করেন না । আর সবকটি ক্ষেত্রেই আমাদের আচরণ যেন উল্টো ।
এই যে মহাপন্ডিতগণ, সব মানুষের সাথে সুন্দর ব্যবহার করে দেখুন ; নিশ্চিত করে বলতে পারি আপনি কখনো ছোট হবেন না । বিনয়ী হোন, উদার হোন; দেখবেন আপনার গ্রহনযোগ্যতা বাড়বে, কখনো কমবে না ।।

ATTITUDE IS EVERYTHING !!

 

mm

By Rabiul H Chowdhury

আমি রবি। আপাতত লেখাপড়া করছি University of Siegen, Germany তে। :)

One thought on “আমরা কি আরেকটু বিনয়ী হতে পারি ??”
  1. আমার একটা অভিজ্ঞতা বলি।
    মাইক্রোস্কপি ল্যাবে যাবো ল্যাব করতে। টারমিন ৫টায়, আমি বাস মিস করে ১০ মিনিট লেট। গ্রুপের বাকি ৪ জন আগেই চলে আসছে – ল্যাব টিউটর তাদের নিয়ে বেজমেন্টের মেশিন রুমে রওনা দিয়ে ফেলছে। আমি রুম নম্বর জানলেও রুমটা খুজে পাচ্ছি না, কারণ ইউনির ওই এরিয়ার বিল্ডিংগুলো বেজমেন্ট-সাব বেজমেন্ট মিলিয়ে আক্ষরিক অর্থেই গোলকধাধা। তারওপর প্রতিটা বিল্ডিং আন্ডারগ্রাউন্ড এ কানেক্টেড… এদিকে মাটির নিচের ফ্লোরগুলোতে মোবাইল নেটওয়ার্ক পাওয়া যায় না, ফেবু+হোয়াটএপস এও কেউ রেসপন্স দিচ্ছিলো না যে গ্রুপমেটদের কাছে হেল্প চাইবো। তাই সোজা গেলাম কোর্স টিচারের রুমে- মুরুব্বি দুনিয়ার কাগজপত্রের মাঝে ডুবে আছে – তাকে বললাম আমি রুমটা খুজে পাচ্ছি না। সে কোনো ডিরেকশন দিতে পারবে কি না। তিনি ধীরে সুস্থে কাগজগুলো এক সাইডে সরিয়ে উঠে রুম থেকে বের হতে হতে বললেন উনি নিজেও নাকি মাঝে মাঝে রুমটার পজিশন ভুলে যান, তাই উনি আমার সাথে যাবেন। কয়েকবার বলার ট্রাই করলাম কোনো দরকার নাই, জাস্ট কোন বিল্ডিং এর বেজমেন্ট সেটা বললেই হবে, তিনি পাত্তাই দিলেন না। তরপরেরটুকু ইতিহাস। ঝারা মিনিট ১৫ কয়েকটা বিল্ডিং এর আন্ডারগ্রাউন্ড গলিঘুপচি, random কিছু রুমে ঘুরাঘুরি করলাম আমরা। তিনি ওই মাইক্রোস্কোপের রুমের লোকেশন আবার ভুলে গেছেন। অতপর তিনি সঠিক রুমে আমাকে পৌছে দিয়ে উল্টো আমাকে দেরি হওয়ার জন্যে সরি বলে বিদায় নিলেন। আর আমি ভাবতে থাকলাম এই জার্মান বুড়োর যায়গায় আমাদের দেশি কোনো প্রফেসর থাকলে কি করতেন…

Leave a Reply