প্রথমে অনেক সময় দিয়ে, অনেক ধাপ পার করে উচ্চশিক্ষার জন্য Technische Universität Kaiserslautern থেকে এডমিশন পেয়েছেন, এজন্য আপনাকে আন্তরিক অভিনন্দন এবং কাইজারস্লটার্নে আপনাকে স্বাগতম। জার্মানিতে আসার পরের কিছুদিন আমাদের বড় সড় একটা শকের মধ্যে কাটাতে হয়। চেনা জানা পরিবেশ, নিজের দেশ ছেড়ে নতুন এক দেশ, নতুন এক পরিবেশ, নতুন ভাষা, নতুন নিয়মকানুন, এসবে অভ্যস্থ হতে সময় লাগে। এই নতুন পরিবেশ, নতুন নিয়ম কানুন সর্বোপরি নতুন এই দেশে আপনার প্রথমদিনগুলো যাতে সহজ হয় এজন্য আমাদের এই ক্ষুদ্র প্রচেস্টা।

ইউনিভার্সিটির পক্ষ থেকে Newcomer’s Guide নামে একটা বুকলেট আছে, আমি সাজেস্ট করব বুকলেটটি প্রথমে পড়ে নেওয়ার জন্য। বুকলেটটি খুবই হেল্পফুল। এতে কাইজারস্লটার্ন, ইউনিভার্সিটি এবং বিভিন্ন নিয়মকানুন সম্পর্কে খুবই গোছানোভাবে বর্ণনা করা আছে। বুকলেটটি ইউনিভার্সিটির ওয়েবসাইট থেকে ডাউনলোড করা যাবে।

(link: https://www.uni-kl.de/fileadmin/isgs/pdf/07_Flyer_und_Broschueren/NCG_SS_2019.pdf)

ইউনিভার্সিটির ওয়েবসাইটে ইউনিভার্সিটির ম্যাপ পাবেন, ক্যাম্পাস পরিচিত হয়ে ওঠার আগ পর্যন্ত এই ম্যাপ খুবই কাজে দিবে।

University Map: https://www.uni-kl.de/lageplan/

বাংলাদেশ থেকে কাইজারস্লটার্ন

আশা করি ইতোমধ্যে এয়ারটিকেট কেটে ফেলেছেন। যদি না করে থাকেন এই আর্টিকেল (https://www.germanprobashe.com/archives/15013) সাহায্য করতে পারে। কাইজারস্লটার্ন আসতে হলে ফ্রাঙ্কফুর্ট এয়ারপোর্টই সবচাইতে ভাল অপশন। ফ্রাঙ্কফুর্ট থেকে বাস কিংবা ট্রেনে করে কাইজারস্লটার্ন আসতে -পারেন। তবে ট্রেনে আসলে খরচ তূলনামূলকভাবে বেশী পড়ে(৩০+ ইউরো), আগে থেকে বাস(flixbus) এ টিকেট করে রাখলে ৭-৮ ইউরোতেই হয়ে যায়। আপনি বাংলাদেশ থেকে টিকেট করতে না পারলে কাইজারস্লটার্ন এ আছে এমন কোন ভাইকে বললে আশা করি আপনাকে সাহায্য করবেন। বাস বা ট্রেন যেটাতেই আসেন না কেন আপনাকে Kaiserslautern Hauptbahnhof(Mainstation) এ নামিয়ে দিবে। আপনি যদি আগে থেকে ISGS(Heike Döring)কে আপনার পৌঁছানোর তারিখ এবং সময় বলে রাখেন থাকেন, তাহলে ISGS Hauptbahnhof থেকে আপনাকে রিসিভ করে বাসায় পৌঁছে দিয়ে আসার ব্যবস্থা করতে পারে। অথবা আপনি আমাদের কোন ভাই এর সাথে যোগাযোগ করতে পারেন, উনি যদি ফ্রি থাকেন তাহলে আশা করি আপনাকে বাসায় পৌঁছে দিয়ে আসবেন। অথবা আপনি চাইলে সরাসরি Hauptbanhhof থেকে একটা taxi নিয়ে সরাসরি আপনার বাসায় চলে আসতে পারেন।

বাসা

কাইজারস্লটার্নে বাসা খুঁজে পাওয়া অন্যান্য সিটির তূলনায় সহজ। এরপরেও আমরা রেকমেন্ড করব যতদ্রুত সম্ভব বাসা খোঁজ করার। বাংলাদেশে থেকেই বাসা খোঁজার ক্ষেত্রে ISGS আপনাকে সহযোগিতা করতে পারে। বাসা দুইধরনের হতে পারে: 1. Studentenwohnheim (Student Dormitory) 2. Private

Studentenwohnheim এর ব্যাপারে বুকলেট এর 4.1 Apartment সেকশানে বর্ণনা করা আছে। প্রাইভেট এপার্টমেন্ট এর ক্ষেত্রে (https://www.wg-gesucht.de/) ওয়েবসাইটটি দেখতে পারেন। এছাড়াও ফেসবুকে একটা গ্রুপ আছে (https://www.facebook.com/groups/280785635463819/), সেখানেও দেখতে পারেন।

প্রাথমিক কাজ

কাইজারস্লটার্নে এসে পড়েছেন। এখন কি করবেন?

১। হাউজ কন্ট্রাক্ট ২। ব্লক একাউন্ট এক্টিভেট ৩। হেলথ ইন্স্যুরেন্স ৪। সিটি রেজিস্ট্রেশান ৫। ইউনি এনরোলমেন্ট

৬। ভিসা এক্সটেনশান

সিটি রেজিস্ট্রেশান করতে হলে হাউজ কন্ট্রাক্ট লাগে। আবার ভিসা এক্সটেনশান এর জন্য সিটি রেজিস্ট্রেশান আবশ্যক। ভিসা এক্সটেনশান কয়েকমাস পরে করলেও সমস্যা নেই, কারণ বাংলাদেশ থেকে আসার সময় সাধারণত ৬ মাসের ভিসা দিয়ে দেয়। আপনার যদি হাউজ কন্ট্রাক্ট ম্যানেজ না হয় এরপরেও আপনি ব্লক একাউন্ট এক্টিভ করতে পারবেন। একটিভ করার জন্য আপনি অন্য কারো কেয়ার অফ এড্রেস ব্যবহার করতে পারেন। প্রাথমিক কাজগুলো করতে সরাসরি ISGS(Bulding 39) এ চলে যান, তারা আপনাকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করবে আশা করি।


বাজার/কেনাকাটা

সাধারণত সবচাইতে বড় ধাক্কাটা খায় এখানে এসে। বাংলাদেশে স্বপ্ন কিংবা আগোরার মত লিডল বা কাউফলান্ড থাকলেও, পণ্যের মধ্যে অনেক তফাত। যাদের রান্না করার অভ্যাস নেই, প্রথম কিছুদিন ধাক্কা সামলে রুটি খেয়ে চলা লাগতে পারে। বলে রাখা ভাল, এখানে শপিং এ সব কাজ নিজেকে করা লাগে। অর্থাৎ বাংলাদেশের মত কেও থাকে না যে আপনার কেনা জিনিসপত্র আপনাকে একটা পলিব্যাগে ভরে দিবে, নিজে নিজে ভরা লাগবে। পলিব্যাগ বা যেকোন প্রকারের ব্যাগ ফ্রি না, কিনে নেওয়া লাগবে। খুবই ভাল হয় যদি একটা দুইটা ব্যাগ শপিং এর সময় সাথে নিয়ে যাওয়া যায়। সাধারণ গ্রোসারি কেনাকাটার জন্য লিডল কিংবা আলডি তে যেতে পারেন, আপনার বাসার আশেপাশেই একটা পাবেন আশা করি। বড় পরিসরে কেনাকাটা করতে চাইলে কাউফলান্ড যেতে পারেন, কাইজারস্লটার্নে কাউফলান্ড একটাই আছে। বাসে করে যেতে চাইলে ১০১ বা ১১৪ করে ভাল্ডস্ট্রাসে (Waldstrasse) নামতে হবে। আমি রেকমেন্ড করব, প্রথমবার শপিং এ যাওয়ার ক্ষেত্রে পুরনো কারো সাথে যাওয়ার জন্য। পুরনো যারা আছেন, কোথায় কি পাওয়া যায় তা ইতোমধ্যে জানেন, আপনাকে সহজে দেখিয়ে দিতে পারবেন।

হালাল মাংস কিনতে চাইলে কিছু এরাবিক শপ আছে(Vitamin Garten 1, Pfaffplatz 16; Vitamin Garten 2, Richard Wagner Strasse 36; IM International Market, Eisenbahnstrasse 37; Syrian Market, König Strasse 3) বা Netto থেকেও প্যাকেট এর উপর “হালাল” লেখা দেখে কিনতে পারেন।

জামা কাপড় কিনতে চাইলে সিটি সেন্টারে(Stadtmitte) যেতে পারেন। জামা কাপড়ের দাম ইউরো থেকে টাকায় কনভার্ট করতে যেয়ে চোয়াল খুলে পড়তে পারে। কম খরচে কিনতে চাইলে Shopping Mall(K in Lautern) এর থার্ড ফ্লোরে Primark থেকে কিনতে পারেন। স্বপ মূল্যে জুতা কিনতে চাইলে Deichmann(Marktstrasse 31) যেতে পারেন। কেনাকাটা নিয়ে আরো তথ্য পাবেন বুকলেটের 4.2 Shopping সেকশানে।

সিমকার্ড কিনতে চাইলে আলডি টক বা O2 প্রিপেইড কিনতে পারেন। সাধারণত কন্ট্রাক্ট নেয়ার প্রয়োজন পরে না। মোটামুটি সব কোম্পানিই কম্পিটেটিভ ট্যারিফ দেওয়ার চেস্টা করে। এরমধ্যে, Aldi Talk 300 Packet খুবই সাশ্রয়ী মনে হয়েছে আমার কাছে। Aldi সিম কিনতে চাইলে নিকটস্থ আলডি স্টোরে গেলেই হবে, সাথে সিম রেজিস্টার করার জন্য পারপোর্ট নিয়ে যাবেন। ১৩ ইউরো চার্জ নিবে, ১০ ইউরো সিমকার্ডেই পাবেন।

ট্রান্সপোর্ট

আপনি যদি সেমিস্টার শুরু হওয়ার মাসে এসে থাকেন, তাহলে আপনি আপনার স্টুডেন্ট আইডি কার্ড(যা সেমিস্টার টিকেট হিসেবেও ব্যবহৃত হবে) দিয়ে পাবলিক VRN region এর পাবলিক ট্রান্সপোর্ট ব্যবহার করতে পারবেন। এ সম্পর্কে বুকলেট এর 4.9 Transport সেকশানে বর্ণনা করা আছে। আপনি যদি সেমিস্টার শুরু আগে এসে থাকেন এবং পাবলিক ট্রান্সপোর্ট নিয়মিত ব্যবহার করা প্রয়োজন হলে, উইকলি বা মান্থলি স্টুডেন্ট টিকেট করতে পারেন। স্টুডেন্ট টিকেট করতে হলে আপনি যে স্টুডেন্ট তার একটা প্রমাণ লাগবে, ISGS এ বললে তারা এই ডকুমেন্ট ম্যানেজ করে দিবে। স্টুডেন্ট টিকেট করতে হলে SWK/VRN Mobilitätszentrale (Fruchthallstrasse 14) যেতে হবে। অথবা আপনি চাইলে ৭৫ ইউরো জমা দিয়ে ভেলোপ্রজেক্ট এর সাইকেল বিনামূল্যে ব্যবহার করতে পারেন। এক্ষেত্রেও ISGS কে বললে আপনাকে সাহায্য করবে। তবে সিটি রেজিস্ট্রেশান করা না থাকলে সাইকেল নেয়া যায় না, সাইকেল নেওয়ার ক্ষেত্রে সিটি রেজিস্ট্রেশানের কাগজ দেখাতে হয়। পাবলিক ট্রান্সপোর্ট ব্যবহার করার ক্ষেত্রে VRN Companion বা DB Navigator এপ ফোনে ইন্সটল করে নিন। এই এপগুলো হবে জার্মানিতে চলাচলের আপনার নিত্যদিনের সংগী। হাতে সময় থাকলে সাজেস্ট করব বাসায় বসে না থেকে চারপাশে ঘুরে দেখুন(তার আগে অবশ্যই ফোনে গুগল ম্যাপ ইন্সটল করে নিবেন), আশা করি নতুন পরিবেশ খারাপ লাগবে না।


পড়াশোনা

এখানে ক্লাস করার জন্য সাধারণত আলাদা করে রেজিস্ট্রেশান করা লাগে না(ক্ষেত্র বিশেষে কিছু কিছু কোর্সে লাগে)। সেমিস্টার এনরোলমেন্ট হয়ে গেলে আপনি যে কোন ক্লাসে এটেন্ড করতে পারবেন। কারিকুলাম থেকে আপনার সাবজেক্ট এর কোর্সগুলো দেখে নিন। প্রাথমিকভাবে সিদ্ধান্ত নিন কোন কোন ক্লাস গুলো করবেন। কোন ক্লাস কখন হবে তা জানতে KIS (https://office.kis.uni-kl.de/) ব্যবহার করুন।  ক্লাস শুরু হয়ে গেলে নতুন উদ্মমে পড়াশোনা শুরু করে দিন। ক্লাসের জন্য রেজিস্ট্রেশান করা না লাগলেও এক্সামের জন্য রেজিস্ট্রেশান করা লাগে। সাধারণত ক্লাস শুরু হওয়ার ১-২ মাস পরে এক্সাম রেজিস্ট্রেশান শুরু হয়। কোর্সে এটেন্ড করলেই যে এক্সামে রেজিস্ট্রেশান করতে হবে, তা আবশ্যক নয়। এক্সাম রেজিস্ট্রেশানের ডেডলাইন খেয়াল রাখুন। কিছু কিছু কোর্সে একাধিক এক্সাম ডেট অফার করে, আপনি সঠিক কোর্সে এবং সঠিক ডেটে রেজিস্ট্রেশান করেছেন কিনা খেয়াল রাখুন। এক্সাম রেজিস্টার করার পরেও এক্সাম শুরু হওয়ার এক সপ্তাহ আগে পর্যন্ত এক্সাম ডিরেজিস্টার করা যায়। এক্সাম রেজিস্ট্রেশান ডিরেজিস্ট্রেশান সম্পর্কিত সব কাজকর্ম Prüfungsamt সম্পাদন করে থাকে। Prüfungsamt ডিপার্টমেন্ট অনুসারে ভাগ করা আছে। আপনি আপনার ডিপার্টমেন্ট সংশ্লিষ্ট Prufungsamt এ যোগাযোগ করুন। Prüfunsamt ছাড়াও পরীক্ষা সংশ্লিষ্ট যাবতীয় তথ্য আপনি https://qis.verw.uni-kl.de ওয়েবসাইটে পাবেন। এখানে বলে রাখা ভাল, ইউনিভার্সিটি নেটওয়ার্কের বাহিরে থেকে আপনি qis এ প্রবেশ করতে পারবেন না। বাসা থেকে কিভাবে ইউনিভার্সিটি নেটয়ার্কে কানেক্ট করতে পারবেন তার বর্ণনা RHRK website(https://www.rhrk.uni-kl.de/ ) এ দেওয়া আছে(জার্মান ভাষায় দেওয়া, translate করে নিতে পারেন)।

এরপরেও আপনার যদি কোন প্রশ্ন জানার থাকে আমাদের ভাইদের জিজ্ঞাসা করতে পারেন, আশা করি তারা সর্বাত্মক সহযোগীতা করবেন। একটা জিনিস খেয়াল রাখা ভালঃ আমরা যে সময়ে জার্মানি আসি (সেমিস্টারের শেষের দিকে, পরের সেমিস্টার শুরুর আগে), সে সময়ে অনেক ডিপার্টমেন্ট এ পরীক্ষা থাকে। এক্সামের সময়ে সবাই কমবেশী ব্যস্ত থাকেন। নক করার পরেও রিপ্লাই না পেলে ধরা যেতে পারে যে, ব্যস্ততার কারণে হয়ত সময় করে রিপ্লাই দিতে পারেন নি।

অনেক অনেক শুভকামনা!
We are looking forward to see you soon!

Leave a Reply