বইমেলায় একটা বই প্রকাশ হয়েছে। অন্তর্মুখী স্বভাবের কারনে কাকপক্ষী ছাড়া কাউকে জানতে দেই নি। কিন্তু এখন তো বিজ্ঞাপনের চটুল যুগ। একেবারে অচল পয়সা হয়ে বসেই বা থাকি কি করে। তাই আলসেমির আড়মোড়া ভেঙ্গে কলম চালাতে বসেছি। দু’টো লোক জানলে ক্ষতি কি?

এই বইটা আসলে একটা তোড়ায় বাঁধা ঘোড়ার ডিম। অনেকগুলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা খুচরো লেখা এক সাথে জুড়ে দিয়ে বই বানানোর অপচেষ্টা আর কি। তাই এটাকে সংকলন বলাও ঠিক হবে না। বড়জোর টংকলন বলতে পারেন। পাঠককে চালাকি করে সংকলনের নামে যে অখাদ্য গছিয়ে দেয়া হয়, তাকেই বলে টংকলন।

অখাদ্য হলেও আসল উদ্দেশ্য ছিল খিচুড়ি রাঁধা। গোটা দশেক রম্য আর গোটা পাঁচেক ভ্রমনের চাল-ডাল চাপিয়ে ধোঁয়া এক প্লেট খিচুড়ি। কাঁচা মরিচে এক কামড় মেরে পাঠক যেন বিনা টিকেটে ঘুরে আসতে পারেন নান্দনিক কোন ইউরোপীয় দেশে। কখনো, কল্পনার রন-পা ফেলে গ্রীসের সান্তরিনি থেকে এক লাফে ইতালির গার্দা লেকের পাড়ের ছোট্ট শহরে। আবার, ইচ্ছে হল তো ভূমধ্যসাগরের নীল জলে টুপ করে একটা ডুব। জল থেকে উঠেই রোদ ঝলমলে দেশ মাল্টা’র পথে-ঘাটে একটা উদ্দেশ্যহীন চক্কর দিতে মন্দ লাগবে না। ইউরোপীয় অমৃতে অরুচি ধরলে আটলান্টিক নামের বড় পুকুরটা ডিঙ্গিয়ে সোজা উড়াল দেয়া যাবে মার্কিন মুলুকে। সান ডিয়াগোর তীর ঘেঁষে পাথরের চাঁইয়ে জি্রানো সীল মাছের অলস বিশ্রাম দেখে সৈকতে গা এলিয়ে দেবার সাধ জাগলেও জাগতে পারে বৈ কি। আসলে দেশান্তরের তেপান্তরে হারিয়ে যাবার নেই মানা। এমনই টুকরো টুকরো গল্পগুলো নিয়ে সাজয়েছি ‘সোনালি ক্রীট আর শ্বেতপায়রা সান্তরিনি’, ‘কমলা রোদের মাল্টা’ আর বাকি সব ভ্রমনকাহিনী।   

প্রবাস জীবনের সুবাদে টো টো কোম্পানি হয়ে ঘুরে ফিরে বেড়ালেও জীবিকার দায়ে কিছু করে খেতে হয় বই কি। একাধিক জায়গায় চাকরি আর গবেষনার সুবাদে বিচিত্র সব মানুষের দেখা মিলেছে আর মিলছে। যেমন ‘কফিময় সকাল ও দেশী ফ্রাউ’ গল্পে বিয়ে পাগলা এক ক্ষ্যাপাটে বুড়োর আবদার টুকে রেখেছি। কিংবা প্রতিদিনের বাসা-টু-অফিস বাদুর ঝোলা ট্রেন যাত্রায় কত না রঙ্গিন চরিত্রের সাথে দেখা হয়। পাগড়ীওয়ালা শিখ সর্দার, পাঁড় মাতাল, আলসে ফকির সবার গল্পই অল্প অল্প করে লিখেছি, ‘পাতালরেলের কাব্য’-এ।

বইয়ের নামটাও বলিহারি। ‘কিম্ভূত স্বদেশীর অদ্ভূত বিদেশ’। রম্য আর ভ্রমনের এই অদ্ভূতুড়ে মিশেলের খিচুড়িতে পাঠকের কদ্দূর কি তৃপ্তি হবে, বলতে পারি না। তবে একটা ঘাউক ঢেকুর শুনতে পেলে লেখকের কানে বড় মিষ্টি লাগতো। সেই আশাতেই সবাইকে বইটার স্বাদ চেখে দেখার নেমন্তন্ন রইলো।

পুনশ্চঃ অগ্রজপ্রতিম মুশতাক ইবনে আয়ূব ভাইকে অশেষ ধন্যবাদ। অমন ভয়ংকর তাড়া না দিলে এমন অলস মানুষ বই বানানোর ঝক্কিতে যেত না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই ডাকসাইটে শিক্ষক ও লেখক তাঁর হাজার ব্যস্ততার ফাঁকেও এলেবেলে পান্ডুলিপিটাকে বইয়ের আদলে আনতে মূল্যবান সময় আর শ্রম দিয়েছেন। তাঁকে ধন্যবাদ দিলেও কুলাবে না। আর, প্রচ্ছদ শিল্পী জারিন সালসাবিল প্রজ্ঞাকে মন থেকে ভালবাসা। প্রচ্ছদ দেখে কে বুঝবে যে সেটা অভিজ্ঞতার ভারে পেশাদার কোন প্রাজ্ঞ আঁকে নি, বরং এঁকেছে প্রজ্ঞা নামের পঁচিশ-ছাব্বিশ বছরের বেনী দোলানো এক দুরন্ত তরুণী। সর্বোপরি, মাতৃভাষা প্রকাশ’-এর শ্রদ্ধেয় প্রকাশকের প্রতি রইল অফুরান আন্তরিক কৃতজ্ঞতা। প্রথম বই। তাও আবার বিনে খরচে। হতদরিদ্রের আসলে কপালই সহায়।

এক পলকে

বইয়ের ধরনঃ ভ্রমন, রম্য

লেখকঃ রিম সাবরিনা জাহান সরকার

প্রকাশনীঃ মাতৃভাষা প্রকাশ

স্টল নম্বরঃ ২০১-২০২

বিনীত,

ড. রিম সাবরিনা জাহান সরকার

মিউনিখ, জার্মানি

mm

By Rim Sabrina Jahan Sarker

A biologist. My PhD was on chronic lung disease and now doing a postdoc on image analysis on cancer tissues. I enjoy creative writing and running.

Leave a Reply