জার্মানিতে আসার পরে আমার ভিতরে কিছু ডিপ্রেশন চলে আসে। এখন অবশ্য অনেকটা অভারকাম করেছি। নতুন যারা আসেন সবার এমন হয় কিনা জানি। নিজের অভিজ্ঞতা শেয়ার করি ।

  • দুপুর বেলা হুট করেই আলু ভর্তা আর ডিম ভাজি দিয়ে ভাত খেতে ইচ্ছে করছে। আলু সেদ্ধ করার পর আবিস্কার করলাম কাঁচা মরিচ নাই। তখন নতুন এসেছি, এই দেশের কাঁচা মরিচের টেস্ট নিয়ে অভিজ্ঞতা নেই। রান্না মাঝ পথে রেখেই Kaufland এ গিয়ে সুন্দর দেখে লাল রঙের বড় বড় লাল মরিচ নিয়ে এলাম। ভর্তা বানানোর পর দেখা গেল মিস্টি লাগে কারন এদেশের মরিচ মিস্টি। আলু ভর্তা আর যাই হউক মিস্টি ভালো লাগে না। মাথার মধ্যে কি এক চিন্তা ঢুকে গেল, নাহ কাঁচা মরিচ লাগবেই। সেন্ট্রাল জার্মানির ছোট একটা শহরে থাকি। তখনো জানতাম না এখানকার আরব শপটা কোথায়। ফ্রী টিকিট দিয়ে হন্য হয়ে ৪০ বা ৮০ কিলোমিটার দুরের eisenach, erfurt শহরে কত দিন ঘুরেছি। প্রথমে ১০ ইউরোতে কেজি প্রতি কাঁচা মরিচ পেয়ে হার্ট ফেল করেছিলাম। পরে অবশ্য ৫ ইউরোতে প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ পেয়েছিলাম। আমি যে ঝাল খুব খাই তা নয়। কিন্তু কাঁচা মরিচ নাই এই ডিপ্রেশন আমাকে প্রায় দুই সপ্তাহ ভুগিয়েছিল।
  • আমি মাছের খুব একটা ফ্যান না। কিন্তু এইদেশে আসার মাসখানেক পরে দেশী মাছ খাওয়ার জন্য প্রানটা বেড়িয়ে যেতে বসেছিল। ঘুমাইলেও স্বপ্নে মাছ দেখি। এদের সুপার মার্কেটে যে মাছ পাওয়া যায় তা কিনে এনে রান্না করার পর দেখা গেল তা ডাল হয়ে গেছে। না আছে স্বাদ না আছে কিছু। পরে অবশ্য বুঝেছিলাম এগুলা হয় মশলা মাখিয়ে কাচায় খায় না হয় ফ্রাই করতে হবে। কিন্তু আমার দেশী মাছ লাগবে। গ্রুপে পোষ্ট দিয়ে আবিস্কার করলাম কোথায় পাওয়া যাবে সেই মাছ। ৮০ কিলো দূরে গিয়ে ৪+৪ কিলো হেটে সেই মৃগেল মাছ এনে নিজে আইশ ছাড়িয়ে কেটে কুটে রান্না করার পর মাছের ডিপ্রেশন দূর করেছিলাম। এখন অবশ্য এত ঝামেলায় যাই না। এইদেশের ফ্রাই করা মাছ কম ঝামেলার মনে হয়। কিংবা নেটোতে ৯৯ সেন্টে ছোট মাছ পাওয়া যায়। ওটা পেয়াজ দিয়ে রান্না করলে কিছুটা শুটকির টেস্টও পাওয়া যায় কিছুটা ছোট মাছের।

    বিদেশে বিষণ্ণতায় ভুগছেন?

  • দেশে থাকতে পোলাউয়ের চাল বা চিনি গুড়া চালের প্রতি খুব যে একটা ভালোবাসা ছিল তা কিন্তু নয়। কিন্তু এইখানে আসার পর হুট করেই পোলাউ খেতে ইচ্ছে করল। মনে মনে খুব বিরক্ত হলাম। কারন আমি জানতাম এবার পোলাউ ডিপ্রেশন আমাকে ঘিরে ধরবে এবং তাই হলো। যাকেই দেখি জিজ্ঞেস করি ভাই পোলাউ কই পাওয়া যায়, ভাই পোলাউ। কপাল খারাপ হলে যা হয় বড় শহরের কাছা কাছি থাকলে হয়তবা এসব জিনিস পাওয়া যেত কিন্তু এখানে নেই এবং কেউ জানে না। বাসমতী চালের কাচ্চিকে আমি কোন ভাবেই কাচ্চি বলতে রাজি নই। পোলাউয়ের চাল ছাড়া আবার কাচ্চি হয় নাকি। যাই হউক পরে অবশ্য পোলাউয়ের চাল ম্যানেজ হয়েছিল ফ্রাঙ্কফুর্ট থেকে। মহা উদ্দমনে পোলাউ রান্না করার পরে দেখা গেল এক প্লেটের বেশী খেতে পারছি না এবং এটাই ছিল আমার শেষ পোলাউ রান্না। সেদিন সাক্সেস্ফুল ভাবে পোলাউ ডিপ্রেশনকে বিদায় করেছিলাম।
  • দোকানে গিয়ে মুরগীর সাদা চমৎকার রানের মাংশ দেখে মহা খুশি হয়ে কেজি খানেক কিনেছিলাম। আমার রান্নার হাত যে খুব একটা খারাপ তা নয়। দীর্ঘ ৮ বছর মেস লাইফ কাটিয়েছি। দেশে থাকতে আলু দিয়ে মুরগী খেতে ভালো লাগত। এখানে এসে সেটাই করেছিলাম। বিলিভ মি, রান্না সেদিন খারাপ হয়েছিল কিনা অথবা আমার মুখের টেস্ট নষ্ট হয়েছিল কিনা , সেই আলু দেওয়া কেজি খানেক মুরগী এতটাই খেতে বিরক্ত লেগেছিল যে আমি আর কোন দিন কাঁচা মুরগির মাংশ কিনি নাই এবং বলতে গেলে মুরগীর মাংশ দেখলে ১০০ হাত দূরে থাকি। রেডিমেট মশলা দেওয়া মুরগীর মাংশ এখন আমার শেষ ভরশা। তেলে ভাজো কাজ শেষ। কাঁচা মুরগীর মাংশ নিয়ে এই ডিপ্রেশন এখনো কাটাতে পারি নাই।

এরকম আরো অনেক ডিপ্রেশন নিজের ভিতরে এসেছিল। এই যেমন লাউ শাক খাইতে হবে, পটলের ঝোল কিংবা ভাজি ইত্যাদি ইত্যাদি। অদ্ভুত হয়ে খেয়াল করতাম এসব ক্রেজি ডিপ্রেশন বাংলাদেশ ছাড়ার পরেই হয়েছে। বাচ্চাদের মত আবদার পুরন না হলে মাথা খারাপ হয়ে যেত। আমি যে শহরে থাকি এখানে বাংলাদেশী নেই বললেই চলে। এবছর যে ৫ বা ৬ জন এসেছি। তাই নিজের দরকারী জিনিস কোথায় পাবো তা কাউকে জিজ্ঞেস করার মত ছিল না এবং নিজে নিজে খুজে বের করাটাকে বুদ্ধিমানের মনে হত। ফ্রী ট্রেনের টিকিট দিয়ে ১৬ হাজার বর্গ কিলোমিটারের Thuringen স্টেটের প্রায় প্রতিটা জায়গায় যেতে হয়েছিল শুধু এটা খুজে বের করতে যে কোথায় আমার ডিপ্রেশনের সমাধান আছে কিংবা কোথায় সঠিক দামে সঠিক জিনিসটা পাবো। কারন এত দিনে আমার বুঝা হয়ে গিয়েছিল যে আরব, পাকিস্থানি, ইন্ডিয়ান কিংবা শ্রীলংকান দোকানে গেলে দামাদামী না করলে বাঁশ খাওয়া নিশ্চিত। এক এক দোকানে এক এক দাম।

.
.
Md Rajwanul Kabir
Schmalkalden University of Applied Sciences
Masters in Mechatronics and Robotics

One thought on “নতুন অবস্থায় আমার জার্মানিতে কিছু ডিপ্রেশন”

Leave a Reply to Rashed khan Cancel reply