Hasan Seam

Universtat Bremen
M.Sc Media Informatics

অবশেষে দীর্ঘ ৩১ দিন অপেক্ষার পর ভিসা সহ পাসপোর্ট হাতে পেলাম। আমার ক্লাশ শুরু সামনের মাসের মাঝামাঝি (অক্টোবর, ১৪) সময়ে। ৮-৯ তারিখে টিকিট কাটার প্ল্যান করেছি।

জানিনা সামনের দিনগুলো আমার জন্য কি নিয়ে অপেক্ষা করছে। লাস্ট ১০ মাস অনেক টেনশনে পার করেছি। আই এল টি এস দিবো দিবো করে ২০১৮ সাল গেলো, টুকটাক এক্সাম প্রিপ্রারেশন নিয়েছি। ২০১৯ সালে এসে সাথের দুই ফ্রেন্ড কে নিয়ে কয়েক দিন মেন্টরস এ মক টেস্ট দিয়ে এপ্রিলের ২৪ তারিখ আই এল টি এস এক্সামের রেজিষ্ট্রেশন করলাম, জবের প্রেশার এর কারনে ভালো প্রিপারেশন না থাকলেও রিস্ক নিলাম, না হলে উইন্টার সেশন ধরতে পারবোনা।

যা হোক এক্সাম দিলাম, মে ৬ তারিখ রেজাল্ট দিবে। আই এল টি এসরেজাল্ট দিলে এপ্লাই শুরু করবো ইউনি তে। এপ্লাই করার জন্য আই এল টি এস রেজাল্ট টাই মিসিং ছিলো ( তখনো জানতাম না মিডিয়াম অফ ইন্সট্রাকশন দিয়ে কিছু কিছু ভার্সিটি এপ্লাই করা যায়) কিন্তু না, বাসায় খোজাখুজি করে দেখি আমার বি এস সি সার্টিফিকেট, ট্রান্সক্রিপ্ট, এইচ এস সি ট্রান্সক্রিপ্ট সব মিসিং। বাসা পাল্টিয়ে ছিলাম মার্চে, তখনি মনে হয় খোয়া গেছে।

মনে হচ্ছিল মাথার উপর আকাশ ভেঙে পড়েছে। জিডি করা, ভার্সিটিতে ডুপ্লিকেট কপির জন্য আবেদন করা এর সময় গুলো খুব বাজে গেছে। সব জায়গায় কথা শুনেছি কি থানায়, কি ভার্সিটির রেজিষ্ট্রেশন অফিসে ( সার্টিফিকেট জীবনের বড় জিনিস এগুলা কেউ হারায়।) সবাইকে খুব করে বলতে ইচ্ছে করতো সাধ করে কেউ হারায় না মূল্যবান জিনিস। হারিয়ে যায়। ১৪-১৫ দিন অপেক্ষার পর মে ২২-২৩ তারিখ সব ডকুমেন্টস হাতে পেলাম ভার্সিটি থেকে। ২৪ তারিখ ব্রেমেন এ এপ্লাই করি। আমার কাজিন ব্রেমেন এ মিডিয়া ইনফরমেটিক্স এ পড়ছে সে সাহায্য করছে নির্ভুল ভাবে ফর্ম পূরন করতে। আরেক কাজিন ব্রেমেন থেকে মাস্টার্স শেষ করে ডেটা সায়েন্সটিস্ট হিসেবে হ্যনোওভার এ কর্মরত আছে, উনি মোটিভেশান লেটার থেকে শুরু করে, পোর্টফলিও সব ব্যাপারে হেল্প করেছে। উনার কাছে ৪ বার মোটিভেশনাল লেটার সাবমিট করার উনি ফাইনাল ভার্সন রেডি করে দিয়েছিলো। এদিকে আই এল টি এস এ ৬ পেয়েছিলাম।

শুরু থেকেই ব্রেমেন এ যাওয়ার ইচ্ছা ছিলো যেহেতু কাজিন ২ জন আছে আমি সাহায্য পাবো অনেক, আর সাবজেক্ট ও পছন্দসই। তারপর ইউনি এসিস্ট এর মাধ্যমে কেমিজ আর রাইনেভাল এ এপ্লাই করি। খুব বেশিদিন অপেক্ষা করতে হয়নি, মে মাসের ২৪ তারিখ এপ্লাই করে জুন এর ১৪ তারিখ ব্রেমেন থেকে অফার লেটার পাই। এই উইন্টার এ ভিসা ইন্টারভিউ এপোয়েনমেন্ট এর ক্রাইসিস র কারনে অনেক চেষ্টা করে ২৫ আগস্ট ডেট পাই। আমার ২ বন্ধু ই ভোর ৫ টায় সজাগ ফোন দিয়ে স্লট খালি আছে বলে রেজিষ্ট্রেশন টা করিয়ে দেয়। একটু দেরিতে হলেও তাদের দু জনের ই অফার লেটার আসে।

আমি অফার লেটার আগে পাওয়ার কারনে এম্বাসির চেকলিস্ট অনুযায়ী ডক রেডি করতে দৌড় ঝাপ শুরু করি। মাথার উপরে কাজিন থাকায় ফিন্টিবায় একাউন্ট খোলা, ব্লাক মানি জমা নিয়া ঝামেলা পোহাতে হয়নি। ভাইয়া স্পনরশিপ লেটার পাঠিয়ে দিয়েছিলো জুলাইয়ে। কিন্তু ঝামেলা আর বাধা যার কপালে লিখা তাকে তো একটু স্রোতে সাতার কাটতেই হবে, এইচ এস সি ট্রান্সক্রিপ্ট এর জন্য বোর্ডে দৌড়াদৌড়ি করে ২২-২৩ দিনে আগস্টে এর প্রথম সপ্তায় ডুপ্লিকেট কপি পাই। যাই হোক ডক সব রেডি এখন ২৫ আগস্ট

ভিসা ইন্টারভিউ। ভিসা ইন্টারভিউ এর অভিজ্ঞতা বাজে ছিলো। একজন ভিসা অফিসার হুদাই অফার লেটার না পড়েই ভিসা আবদেন না নেয়ার কথা মুখের বলে দিলো। কারন আমার অফার লেটার এ এনরোলমেন্ট এর কিছু শর্ত লিখা ছিলো যার মধ্যে একটা ছিলো আমাকে এনরোলমেন্ট এর সময় আই এল টি এস এ ৭.০ পেয়েছি সে প্রুফ দিতে হবে অথবা আমার বিএ এস সি তে মিডিয়াম ইনস্ট্রাকশন ইংলিশ থাকতে হবে। ভিসা অফিসার খামাখা ৭.০ দেখেই আমার এপ্লিকেশন নিবেনা বলে পাসপোর্ট ডক ফেরত দিয়ে দিচ্ছে। উনি অথবা অংশটুকু পড়লোই না। তারপর ২ মিনিট বোঝানোর পর উনি আমার এপ্লিকেশন খানা নিলেন। আমি উনাকে এই বলে বোঝায়ছি দেখুন আমি আই এল টি এস ৬.০ জমা দিয়েছি এম্বাসি রিকোয়ারমেন্ট হিসেবে আর ব্রেমেন এ এপ্লাই করেছি মিডিয়াম অফ ইন্সট্রাকশন দিয়ে। আমার এপ্লিকেশন ভেলিড। উনি কি বুঝলেন জানিনা চুপ করে আমাকে বললেন ব্রেমেন এ কোথায় থাকবেন। আমি একটা স্টুডেন্ট হোস্টেল এর ঠিকানা বললাম।

আমি সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হয়ে কেনো ইনফরমেটিক্স এ পড়তে যাচ্ছি তাও হালকা ব্যাখা দিলাম। জাসট এ দুইটা কোশ্চেন ই ছিলো আর কিছু জিজ্ঞেস করেনি ভিসা অফিসার তারপর টাকা আর আঙুলের ছাপ দিয়ে এপ্লিকেশন জমা দিলাম। ভিসা অফিসারের এই কনফিউজিং আচরণ এর কারনে ২৫ আগসট থেকে ১০ সেপ্টেম্বর একটা রাত ও ঠিকমতো ঘুম হয় নি জাস্ট রিজেকশন এর ভয়ে। ভয়টা বেশি ছিলো কারন লাইফ নিয়ে রিস্ক অতিরিক্ত নিয়ে ফেলেছিলাম ১৮ মাসের জব ছেড়ে দিয়েছি আগস্টের ৩১ তারিখে, তারপর বাইরে চলে যাবো এই প্ল্যান এ ৫ বছরে রিলেশন এ থাকা জি এফ এর সাথে আকদ করলাম। এখন ভিসা যদি না হয় তাহলে কারো কাছে মুখ দেখানো যাবে না। যেখানে যাই সবার মুখে একি বুলি, ‘কি!! কবে যাবা জার্মানি’। কিছু ই বলার নাই। সবাইকে গনহারে একি রিপ্লাই ‘এম্বাসি তে পাসপোর্ট ‘।

অনেকে ভিসা ২০-২৫ দিনে পেয়ে যায়, একটু দেরি হলেও আর ঝুট ঝামেলা হলেও ভিসা পেলাম। এখন সামনের দিনগুলোর জন্য অপেক্ষা।

আমার ফ্রেন্ড দু জন ভিসা পেয়েছে একজন পোস্টডাম আরেকজন রাইনেভাল। সফলতা আমার একার নয় কখনোই, আমার দুই ফ্রেন্ড, দুই বড় কাজিন, আমার ফ্যামিলি এরাও এর ভাগীদার।

একটু বেশিই লিখে ফেললাম। শুধুমাত্র অভিজ্ঞতা টা শেয়ার করার জন্যই লিখা। যারা সময় নিয়ে পুরোটা পড়েছেন সবাইকে ধন্যবাদ।

ব্রেমেন এ এই উইন্টার এ কে কে যাচ্ছেন সবাই কমেন্ট করলে ভালো হতো।

আমার প্রোফাইলঃ

BSc in Software Engineering (AIUB) : 3.45
IELTS : 6.00
VISA Interview : 25 August
VISA Collect : 25 September

mm

By টিম জার্মান প্রবাসে

আমি জার্মান প্রবাসে! আপনাদের সাথে ছিলাম, আছি, থাকব! :)

3 thoughts on “জার্মানিতে উচ্চশিক্ষা – ব্রেমেন, জার্মানি”
  1. hello there. আমি এ-ই বছর জার্মানএর জন্য কাজ শুরু করেছি। করোনা এর কারনে আইইএলটিস এর এখন পরিক্ষা কবে দিব বুঝতে পারছিনাহ। বাসায় পড়া শুরু করেছি কিছুদিন। daad এর স্কলারশিপএর মাধ্যমে এপ্লাই করব। সাব্জেক্ট অ চুজ করেছি। কিন্তু এপ্লিকেশন কোথায় দিব, ফরম ফিলাপ কিভাবে করব, আইইএলটিস এর রেজাল্ট ছাড়া এপ্লাই মানে সব ফরম জমা দিতে পারব ক্কনা সহ অনেক প্রশ্ন আছে। বিষয়গুলোজান্তে পারলে অনেক্টা উপকার হত। যদি পারেন সম্পউরন টা শেয়ার করলে ভাল হত

    1. 1. আপনি যদি DAAD তে দেখে থাকেন, তাহলে সেখানেই এপ্লিকেশন পদ্ধতি এবং বাকি রিকোয়ারমেন্টস বর্ণনা পেয়ে যাবেন। ভালো করে খুঁজে দেখুন।
      2. IELTS ছাড়া আপনি ভিসা পাবেন না। এটা ম্যান্ডেটরি রিকোয়ারমেন্টস জার্মান ভিসা পেতে হলে। জার্মান এম্ব্যাসি বাংলাদেশের ওয়েবসাইটে বিস্তারিত পাবেন।
      3. আরো প্রশ্ন থাকলে এখানে করতে পারেনঃ https://www.facebook.com/groups/BSAAG/
      4. এজেন্সি বা দালাল থেকে সাবধান।

Leave a Reply to Tanzila Mow Cancel reply