জার্মানির রিক্রুটিং প্রসেস নিয়ে অনেকেই জানতে চান। কেমন হয় ইন্টার্ভিউ, কি ধরনের প্রশ্ন করে। যদিও এর কোন ধরাবাঁধা নিয়ম নেই তবুও একটা ধরনগত মিল পাওয়া যায়। দেশে জবগুলোর একটা বড় অংশ হয়ে থাকে রেফারেন্সের মাধ্যমে। এখানেও রেফারেন্সে জব হয় তারপরও বেশ কয়েকটা ফর্মাল ইন্টারভিউ হয়ে থাকে। এই বিষয়গুলোর উপরেই আজকে ধারনা দেয়ার চেষ্টা করবো।

কিভাবে আবেদন করা উচিত

আবেদন করার জন্য সাধারনত সিভি দিতে হয়। মেইলে, কম্পানির নিজস্ব জব পোর্টালে বা অনেকসময় লিংকডইনের প্রফাইল দিয়েও আবেদন করতে পারবেন এমনকি স্ট্যাকওভারফ্লো প্রফাইল দিয়েও আবেদন করা যায়।

সবসময় কভার লেটার সহ আবেদন করা উচিত এবং কভার লেটারে খুব স্বল্প কথায় আপনার আগ্রহ এবং যোগ্যতার ব্যাপারে লিখবেন। অনলাইনে প্রচুর উদাহারন পাবেন কভার লেটারের সেগুলো থেকে ধারনা নিয়ে আপনি নিজের মত একটা বানিয়ে নিন। কভার লেটারের জব ইন্টারভিউ পাবার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ন ভুমিকা রাখে। এরপর সিভি, একটা সিভির ব্যাপারে কাউকে আগ্রহী করে তুলতে ৮-১০ সেকেন্ড সময় পাবেন। চেষ্টা করতে হবে ৬-৮ সেকেন্ডের মধ্যে আপনার সিভির ব্যাপারে আগ্রহী করে তুলতে। এজন্য সিভির প্রথম দিকে গুরুত্বপূর্ন তথ্য যেমন অভিজ্ঞতা, দক্ষতা এগুলা রাখতে হবে।

ইন্টারভিউ এর প্রথম ধাপ

সিভি এবং প্রফাইল দেখে পছন্দ হলে সাধারনত প্রথম ইন্টারভিউ ফোনে হয়, কেউ কেউ স্কাইপেও নিতে পারে। এই সেশনে মুলত রিক্রুটার বা HR ফোন দিয়ে থাকে আপনার সম্পর্কে একটা সাধারন ধারনা নেয়ার জন্য। কিছু কিছু জিনিস খুবই গুরুত্বপূর্ন এই সেশনে যেমন আপনার ইংরেজী বোঝা এবং বলার দক্ষতা তারা দেখবে, আপনার কথা বলার ধরন দেখবে এবং অনেক সময় ২-৩ টা টেকনিক্যাল প্রশ্নও করে থাকে। শুধু যে আপনার সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করবে ব্যাপারটা এমন না, পাশপাশি ওরা কম্পানি সম্পর্কেও বিস্তারিত বলবে এবং আপনি প্রশ্ন করতে পারবেন।

অফিসের রিক্রুটার যদি ফোন দেয়া তাহলে ওরা আপনার সম্পর্কে জানতেই বেশি আগ্রহী হবে কিন্তু যদি তৃতীয়পক্ষের কোন রিক্রুটার ফোন দেয় তাহলে মুলত আপনাকে কনভিন্স করাতে চাইবে। তবে ভিন্নতা আছে, দেশের বাইরে থেকে হায়ার করার সময় রিক্রুটারদের ভাব একটু বেশি থাকতে পারে 😉

যদি প্রফেশনাল রিক্রুটার ফোন দিয়ে থাকে তাহলে পরবর্তী ধাপে অফিসের রিক্রুটার ফোন দিতে পারে বা স্কাইপেও কথা হতে পারে। আমি এই পুরো ধাপটিকে প্রথম ধাপ হিসেবেই রাখছি। এটা মুলত পরিচয়পর্ব।

দরকার না থাকলেও দু তিনটা প্রশ্ন করা উচিত। এই ইন্টারভিউ সেশনের কমন কিছু বিষয় নিচে দেয়ার চেষ্টা করছি।

  • আপনি তাদের সম্পর্কে কতটুকু জানেন তা জিজ্ঞাসা করবে, যদি কিছুই বলতে না পারেন তাহলে জব হবার সম্ভাবনা একবারে শুন্য। এজন্য কম্পানি সম্পর্কে কিছু হালকা ধারনা নিয়ে রাখা উচিত। ফোন দেয়ার আগে সাধারনতো তারা সময় ফিক্স করে নেয় মেইলে যোগাযোগ করে তাই আপনি প্রস্তুতি নেয়ার যথেষ্ট সুযোগ পাবেন।
  • তাদের কম্পানির সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করবেন। কত জন ইঞ্জিনিয়ার আছে, টিম কেমন ফ্রেন্ডলি ইত্যাদি।

দ্বীতিয় ধাপ

প্রথম ধাপ যদি সফলভাবে শেষ হয়ে থাকে তাহলে দ্বীতিয় ধাপের ইন্টারভিউতে আপনার ডাক পরবে। দ্বীতিয় ধাপটা মুলত টেকনিক্যাল ইন্টারভিউ। এই পর্বে অনেকে আপনাকে ছোট একটা প্রজেক্ট দিতে পারে আবার স্কাইপে ইন্টারভিউ নিতে পারে। অনেক সময় দেখা যায় প্রথমে প্রজেক্ট দেয় তারপর প্রজেক্টের কোড পছন্দ হলে স্কাইপে ইন্টারভিউতে ডাকে।

প্রজেক্ট

প্রজেক্ট যতদ্রুত জমা দিতে পারবেন তত ভাল, সময় চেয়ে নিবেন। একটা প্রজেক্ট করার জন্য ৭ দিন সর্বনিম্ন সময় তাই ৩-৪ দিনে প্রজেক্ট জমা দিয়ে দেয়ার জন্য কথা দিয়ে দেয়া উচিত না। ওরাও জানে আপনি চাকরি করে প্রতিদিন সময় বের করে প্রজেক্টটা করবেন তাই ৭-১০ দিন সময় চাওয়া পুরোপুরি যৌক্তিক। সময় প্রয়োজনের তুলনায় বেশি নিন কিন্তু চেষ্টা করুন আগে আগে জমা দেয়ার। এসব প্রজেক্টে সাধারনতো ছোট CRUD এপ্লিকেশন বানাতে দেয়া হয় এবং সাথে কি কি স্ট্যান্ডার্ড অনুসরন করে প্রজেক্টা করতে হবে তা জানিয়ে দেয়া হয়। স্ট্যান্ডার্ড সম্পর্কে যেগুলো উল্লেখ করার থাকবে সেগুলো তে বটেই তারপরও চেষ্টা করা উচিত অতিরিক্ত কিছু করা। নীচে কিছু কমন বেস্ট প্র্যাকটিস উল্লেখ করার চেষ্টা করছি।

  • Clean and commented code
  • Using preprocessor and task runner
  • Modular and Testable code
  • Highly organize code
  • Write Tests
  • Use environment variables
  • Proper documentation
  • Use GIT
  • Readable and organized commit.

টেকনিক্যাল ইন্টারভিউ

প্রজেক্টের আগে হোক পরে হোক সরাসরি টেকনিক্যাল ইন্টারভিউ দিতেই হবে। এসব ইন্টারভিউতে সাধারনত দুজন বা তার বেশিও ইন্টারভিউয়ার থেকে থাকে। আপনার জন্য এটা সবথেকে গুরুত্বপূর্ন স্টেপ। এখানে আপনাকে প্রচুর টেকনিক্যাল প্রশ্ন করা হবে। অ্যালগরিদম, ডাটা স্ট্রাকচার, বিভিন্ন সিনারিওতে কি পদক্ষেপ নিবেন ইত্যাদি বিষয়ে প্রচুর প্রশ্ন করা হবে। কোনকিছু না জানলে উল্টাপাল্টা না বলে বরং আপনার ধারনা থেকে মনেহচ্ছে সেটা উল্লেখ করে উত্তর দিতে পারেন। আগে করা প্রজেক্ট এবং সেগুলোর জটিলতা কি কি ছিল এগুলা নিয়েও প্রশ্ন আসাটা খুবই সাধারন এই ধাপে।

Behavioral Interview / HR Interview

অনেক সময় এই পর্বটা টেকনিক্যাল ইন্টারভিউ এর সাথে মিক্স করে ফেলা হয় বা শেষের দিকে HR এসে প্রশ্ন করে। HR এর পাশাপাশি টেকনিক্যাল লিডরাও এই সম্পর্কিত প্রশ্ন করে থাকে। আমি এখানে আলাদা একটা প্যারা করলাম কারন এর প্রশ্নগুলোর ধরন আলাদা। অনেক হাইপোথিটিক্যাল প্রশ্নও করা হবে এখানে। আমি কিছু উদাহারন দিচ্ছি নিচে।

  • Why are you leaving your current company?
  • Why are you leaving your country?
  • Where do you see yourself in 5 years?
  • Why should we hire you?
  • What are your weaknesses?
  • What is your strangeness?
  • Have you ever missed a deadline? how did you handle?
  • How do you align yourself with the project manager?
  • How would you like to report your lead?
  • What kind of team you would like to work with?
  • How is you current lead? etc.

তৃতীয় ধাপ

জার্মানি থেকে আবেদন করলে তৃতীয় ধাপে সাধারনতো সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেয়া হয় অথবা ম্যানেজারিয়াল পোষ্টের কেউ হয়তো সংক্ষিপ্ত ইন্টারভিউ নেন যেমন CTO। এটাও মুলত হাইপোথিটিক্যাল ইন্টারভিউ হয়ে থাকে তবে সাথে কিছু টেকনিক্যাল প্রশ্ন।

দেশের বাইরে থেকে আবেদন করলে কম্পানিগুলো আরও কিছু ইন্টারর্ভিউ নিতে পারে যেমন লাইভ কোডিং সেশন বা এক্সট্রা টেকনিক্যাল ইন্টারভিউ। অনেক সময় দেখা যায় মোটামুটি একই ধরনের কয়েকজনকে সারা সর্টলিস্টেড করে ফেলেছে তখন অন্য কোন লিড সবার ইন্টারভিউ নিয়ে কে এদের মধ্যে বেশি ভাল তা বের করার চেষ্টা করেন। তো এই পর্বের বিষয়গুলো পুরোপুরি নির্ভর করে কম্পানির রিক্রুটমেন্ট প্রসেসের উপরে। মুলত আগের ইন্টাররভিউ গুলোর মতই হবে যা আগে জানিয়ে দেয়া হয়।

বেতনের দরদাম

বেতনের এক্সপেক্টেশন আপনাকে প্রথমেই জিজ্ঞাসা করবে। কিন্তু আপনার আপনার উত্তর কি হবে? আগে থেকে এ বিষয়ে একটু রিসার্চ করে নেয়া উচিত। কম্পানির অবস্থার দিকেও খেয়াল রাখতে হবে। কম্পানি যদি বড় একটা মাল্টিন্যাশনাল কম্পানি হয় তাদের বাজেট যদি খুব ভাল থাকে তাহলে আপনার চাওয়াটাও বড় হওয়া উচিত। আরেকটা বড় ফ্যাক্টর হল সিটি। বিভিন্ন সিটিতে জীবনধারন খরচ ভিন্ন তাই বেতনও ওটানামা করে। Stackoverflow এর একটি স্যালারি ক্যালকুলেটর আছে যেখানে সিটি, অভিজ্ঞতা এবং পদবী অনুযায়ী কেমন হতে পারে তার একটা ধারনা পাওয়া যায়। Linkedin এরও এরকম একটা টুল আছে যেটা এখানে পাবেন।

আমার রাফ একটা আইডিয়া হল জার্মানিতে বার্লিনে মিড লেভেল জবের জন্য ৫২০০০ – ৫৫০০০ ইউরো প্রতি বছর একটা ভাল একটা স্যালারী। এটাই এভারেজ এখানকার। মিউনিখে ১০০০০ এর মত বেশি আশা করতে পারেন বার্লিন থেকে কারন সেখানকার বসবাসের অতিরিক্ত খরচ। ফ্রাঙ্কফুর্টেও ৫-১০ হাজারের মত বেশি আশা করতে পারেন বার্লিন থেকে। ইচ্ছা আছে পরে স্যালারি নেগোশিয়েশন নিয়ে আলাদা একটা পোষ্ট লেখার।

প্রতিটি ইন্টারভিউতে যে জিনিসগুলো মাথায় রাখা উচিত

  • আপনার Greetings অবশ্যই খুব ভাল হওয়া উচিত। আপনি কতটা ভদ্রতাসহকারে কথা শুরু করেন এবং শেষ করেন তা খুবই গুরুত্বপূর্ন এবং আপনার ব্যাক্তিত্বের বহিঃপ্রকাশ।
  • খুবই সফটলি কথা বলুন এবং যথেষ্ট ফর্মালিটি এবং পেশাদারী মনোভাগ দেখান। ভুল হলে সরি বলা, গ্রিটিংস দিয়ে কথা শুরু করা এবং তার সাথে কথা বলে অনেক ভাল লাগল ইত্যাদি গ্রিটিংস দিয়ে শেষ করা।

যদি কোনকিছু বাদ পরে যায় কমেন্টে জানাতে পারেন আমি পরে সংযুক্ত করে দিবো। ধন্যবাদ আজকে এ পর্যন্তই আশাকরি আবার নতুন কোন টপিক নিয়ে হাজির হবো।

লেখাটি পূর্বে আমার ব্লগে (asifsaho.me) প্রকাশিত।

আমার কাছে বিভিন্ন টপিক নিয়ে লেখার জন্য অনুরোধ করতে পারেন। এজন্য আমাকে মেইল করুন asif.saho{at}gmail.com ঠিকানায়। আর লেখাটি যদি আপনার পছন্দ হয়ে থাকে তাহলে আপনার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করতে পারেন। হয়তো আপনার মত অনেকেরই কাজে লাগতে পারে।

Leave a Reply