দেশ থেকে বাইরে আসার পর দেশি মানুষ পেলে বেশ মায়া লাগে আর আপন আপন মনে হয়। আবু ধাবি এয়ারপোর্টে ওয়াশরুমে আয়াদের ফোনে দেশে কথা বলা শুনে মনে হয়েছিল জড়ায় ধরে গল্প শুরু করে দেই। তবে চেহারা দেখে যাদেরকে দেশি মনে হয় তাদের বেশির ভাগই দেশি না। পাকিস্তান, ইন্ডিয়া, আর অনেকেই মধ্যপ্রাচ্যের। সেজন্যই আজ আলেক্সান্ডার প্লাতজে এক সহপাঠিনীর সাথে বসে লাঞ্চ করার সময় যখন একজন দেশি চেহারার লোক চারপাশ দিয়ে ঘুর ঘুর করছিল আমি খেয়াল করলেও তাকে না দেখার ভান করে খাবার খাচ্ছিলাম। অবশেষে সে না পেরে এগিয়েই এল।

-হ্যালো!! পাকিস্তান?

-No, Bangladesh. হাসিমুখেই বললাম। সাথে সাথে আকর্ণ বিস্তৃত হাসি।

-মুসলিম?

-হ্যাঁ।

-ভের‍ি গুড, ভেরি গুড! (আমি কিছু না বলে খেয়ে যাচ্ছি), ঊর্দূ তো পারই, না? (ঊর্দূতে)

-No, I can understand a little if you say it, but i can’t speak it.

-হিন্দি? হিন্দি সিনেমা তো দেখ, না? ঊর্দূ হিন্দি তো একই। সব বাংলাদেশি ঊর্দূ পারে।

– I understand because it is similar to Bangla. You will also understand Bangla. তুমি ঊর্দূতে বল, আমি বাংলায় বা ইংরেজিতে বলব। তুমিও বুঝবা।

সে মুখ কালো করে, (আমার বাংলায় বলা অংশটা বোঝা সত্তেও)

-ঊর্দূতে বল। তুমি তো ঊর্দূ পার, তুমি বলবা না। তাই না? সব বাংলাদেশি ঊর্দূ পারে। তুমি পার কিন্তু তুমি বলছ না।

অদ্ভূত ব্যাপার ওর এই কথাগুলা শুনে আমার মনে পড়ছিল ঠিক গতকালই দেখা হওয়া এক ইন্ডিয়ান লোকের কথা। সে আমি বাংলাদেশি শুনেই জোরের সাথে একই কথা বলেছিল, “হিন্দি তো পারই। সব বাংলাদেশি হিন্দি পারে”। আমি আসলেই খুব ভাল হিন্দি পারি না। হিন্দি সিনেমা দেখতে বসলে বোনদের কানের পোকা বের করে দিতাম ‘কি বলল? কি বলল!?’ বলে। ভাষা পারাটা অবশ্যই খুব ভাল একটা ব্যাপার। যেই ভাষাগুলো কাছাকাছি সাধারনত সেই ভাষার মানুষেরা খুব সহজেই একজনের কথা আরেকজন বুঝে। নেপালে গিয়ে আমরা আবিষ্কার করলাম আমরা যদি বাংলা আর গাইড যদি নেপালি ভাষাতেও কথা বলে তবু আমরা আকজন আরেকজনের কথা বুঝি অনেক শব্দ একই হওয়ার কারনে (বিড়াল হল নেপালি ভাষায় বিড়ালো!)। একই ব্যাপার দেখলাম আমার ল্যাটিন আমেরিকান সহপাঠীদের ক্ষেত্রে। পর্তুগিজ আর স্প্যানিশ কাছাকাছি হওয়ার কারনে (আমি এ দু ভাষার কোনটাই জানি না, এটা ওরা আমাকে বলেছে দেখে আমি বলছি) ওরা একজন আরেকজনের কথা অনেকটা বুঝতে পারে। কিন্তু এটা কি ধরনের আচরণ! গায়ের জোড়ে আমাকে দিয়ে হিন্দি/ঊর্দূ বলাবে! মেজাজ গরম হতে গিয়ে আমার মনে পরল  একজনের লেখা গত বানিজ্য মেলার অভিজ্ঞতার কথা। পাকিস্তানি স্টলে বাংলাদেশি সেলসম্যানরা পাকিস্তানি সেজে ঊর্দূতে কথা বলে ক্রেতা টানছেন! আর ক্রেতারাও কে কার চেয়ে বেশি হিন্দি বলতে পারে তার কম্পিটিশন দিচ্ছে! বুঝলাম আমাদের ভাইবোনদের উপর তাদের এই আস্থার কারন তাহলে আছে বৈকি!

ভাষা বলাটা কোন অসুবিধা না, সত্যি বলতে গর্বের ব্যাপার এইটা হওয়া উচিৎ যে আমরা ওদের ভাষায় কথা বলতে পারি। হওয়া উচিৎ ছিল ওরা আমাদের সম্মান দেখাবে নিজেদের ভাষার বাইরেও একটি অন্য ভাষায়, ওদের ভাষায় কথা বলতে পারি দেখে। তার বদলে ওরা যখন ভাবে এটা ওদের একটা আধিপত্যের চিহ্ন আমরা কি আমাদের এই বিশেষ ক্ষমতাটা লুকিয়ে রাখতে পারি না? দয়া করে কি আমরা অজায়গায় অপ্রয়োজনে পাকিস্তানি আর ইন্ডিয়ানদের সাথে গড়গড় করে হিন্দিতে কথা বলা থেকে বিরত থাকতে পারি?!!

আত্মসম্মানবোধ বলে একটা শব্দ তো বাংলা, হিন্দি সব ভাষাতেই আছে?


আরো পড়তে পারেনঃ

mm

By Tonny Nowshin

আমি তন্বী। আপাতত ডিএএডি স্কলারশিপ নিয়ে পড়তে এসেছি বার্লিন, জার্মানিতে। :)

2 thoughts on “ঊর্দূ মে বোলো!!!”
  1. আমার ক্লাসে তিন পাকি আর ১০টার মতো ইন্ডিয়ান। শুরুতে ইন্ডিয়ানগুলো হিন্দিতে কথা বলার ট্রাই করছিলো- আমি প্রতিবারই sorry I didn’t get it… পোলাগুলা বুদ্ধিমান, এর পর থেকে সব কথা ইংরেজিতে।
    বুদ্ধিপ্রতিবন্ধি হলো পাকিগুলো। ওরাও শুরুতে উর্দু ট্রাই করেছিলো, সরাসরি বলছি আমি উর্দু একবিন্দুও বুঝি না। একবছর পর এখনো মাঝে মাঝে এরা কথা উর্দু দিয়ে শুরু করে তারপর ইংরেজিতে রিপিট করে।
    একদিন এক পাকি ক্লাসমেট ঠান্ডামাথায় উর্দু শুরু করছিলো, ভাব দেখে মনে হলো টেস্ট করতে চাচ্ছে আমি আসলে উর্দু বুঝি কিনা বা কিভাবে রেসপন্স করি। যদিও পুরোপুরিই বুঝছি কি বলেছে – তবু এমন ভাব নিলাম যে এই জনমে উর্দু শুনিই নাই। বেচারা ২-৩ বার একই কথা বলে ক্ষান্ত দিলো 😀

    ইন্ডিয়ান বা পাকিরা আমাদের বাঙালদের দোষেই ভাষা নিয়ে এই ফাইজলামিটা করার সুযোগ পায়…

Leave a Reply to MNA Alam Cancel reply