৪ বছর চাকরি করার পর জীবনটা যখন তেজপাতা হয়ে যাচ্ছিল তখন হঠাৎ করে সিদ্ধান্ত নিলাম আর রাখব না এই জীবন। মানে মরে যেতে না চাইনি! ভাবলাম একটা পরিবর্তন আনা দরকার। সত্যি বলতে মাস্টার্স পাশ করার পরই জিআরই -র বই কেনা হয়েছিল। চার বছরে তার একটা পাতাও নড়েনি। ইচ্ছা ছিল চাকরি করে টাকা জমিয়ে উত্তর আমেরিকা পড়তে যাওয়ার; যেহেতু বিপুল পরিমান টাকা খরচ করে পড়ার সামর্থ এবং ইচ্ছা কোনটাই ছিল না। কিন্তু সেটা কিছুতেই আর হয়ে উঠছিল না। তাই শেষমেশ বাসার সবাইকে বেশ বুঝিয়ে সুঝিয়ে ছেড়ে দিলাম চাকরি। ইচ্ছা জমিয়ে জিআরই পড়ব। এর মাঝেই স্কলারশিপের  প্রোগ্রাম কি কি আছে- শুধু আমেরিকা না, ইউরোপ, জাপান, চীন, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, হুনুলুলু সবই দেখতে থাকলাম। কারন ঐ …টাকা খরচ করার অনিচ্ছা। দেখতে গিয়ে বুঝতে পারলাম সব স্কলারশিআমার জন্য না। আবার আমিও সব স্কলারশিপের জন্য না। প্রতিটাস্কলারশিপের থাকে কিছু ক্রাইটেরিয়া। সেই অনুমিতিগুলো মিললে তবেই সম্ভাবনা থাকে স্কলারশিপটা পাওয়ার। এক্ষেত্রে কিছু জিনিষ লক্ষ্য রাখলে দরকারি প্রস্তুতি, নিজের এক্সপেক্টেশন ম্যানেজ করা এবং স্কলারশিপ পাওয়ার সম্ভাবনা বাড়াতে সুবিধা হয়।

১. নিজের একটা নির্মোহ মূল্যায়নঃ

নিজের রেজাল্ট, বিষয়, ভাষাগত দক্ষতা এবং বাইরে পড়তে যাওয়ার কারন সম্পর্কে একটা স্পষ্ট ধারনা থাকাটা জরুরি। কেননা এই প্রতিটা জিনিষই আপনাকে সঠিক স্কলারশিপ খুঁজে পেতে এবং সেটাতে আবেদন করতে সাহায্য করবে। কিছু স্কলারশিপ শুধুমাত্র একাডেমিশিয়ান খুঁজে আবার কিছু খুঁজে ইতিমধ্যে চাকুরির অভিজ্ঞতা আছে এমন শিক্ষার্থী। আপনার কোন বিষয়গুলো দশজনের মাঝে আপনাকে আলাদা করে সেটা জানতে হবে নিজেকেই। (আমি যে প্রোগ্রামে ডাড স্কলারশিপে এসেছি সেখানে দুবছরের চাকরির অভিজ্ঞতা থাকতে হয়। আমার ছিল ৪ বছরের। তার চেয়েও বড় বিষয় আমার কাজের অভিজ্ঞতা একেবারেই এই স্কলারশিপের সাথে সম্পূরক।)

২. প্রোগ্রাম বাছাইঃ

এবার সেই অনুযায়ি প্রোগ্রাম বাছাই করতে হবে। প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু পরিমান স্কলারশিপ থাকে, আবার উন্নত দেশের মোটামোটি সব সরকার স্কলারশিপ দেয়।  এরকম বিভিন্ন স্কলারশিপের তথ্য জোগাড় করে তার মাঝ থেকে যেগুলো আপনার আগ্রহ, দক্ষতা এবং ব্যাকগ্রাউন্ডের সাথে যায় সেগুলো আলাদা করতে হবে। আবার প্রতিটা স্কলারশিপেরও কিন্তু একটা অপরচুনিটি কস্ট আছে। অর্থাৎ আপনি অনেক সময়ই একসাথে সবগুলোতে আপ্লাই করতে পারবেন না। আপনাকে আগেই বাছাই করতে হবে কোনটা আপনি চান। বিশেষ করে সরকারি স্কলারশিপের ক্ষেত্রে এটা প্রযোজ্য। বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে কিন্তু ব্যাপারটা ভিন্ন। সরকারি স্কলারশিপ একেকটার ডেডলাইন থাকে একেকসময়। আর আগেই বলেছি এক একটার রিকোয়ারমেন্টও থাকে আলাদা আলাদা। যেমন জাপান সরকারের আইইএলটিএস রিকোয়ারমেন্ট আর জার্মান সরকারের আইইএলটিএস রিকোয়ারমেন্ট এক না।

৩. লেটার অফ পারপাস ঃ

কাউকে দিয়ে না লিখিয়ে নিজে সৎভাবে লেখাটা সবচেয়ে ভালবুদ্ধি কেননা হাজার হাজার চিঠির মধ্যে কোন লেখাগুলো গৎবাধা আর কোনটা অরিজিনাল এটা বোঝার চোখ বাছাইকারিদের আছে। আর আপনি কেন বিশেষ স্কলারশিপের জন্য যোগ্য বা কেন স্কলারশিপটা চান এটাতো আপনার চেয়ে ভাল কারও জানার কথা না, তাই না? লেটার অফ পারপাস লেখার আগে প্রোগ্রাম সম্পর্কে যত বেশি সম্ভব খুটিয়ে খুটিয়ে জানুন। নিজের লেখার মাঝে খুব সূক্ষভাবে সেই জ্ঞান ব্যবহার করুন। খোলাখুলিভাবে তেল দিবেন না। নিজের সম্পর্কেও বলার সময় মাত্রা বজায় রেখে লিখুন। মোটা ভাবে ঢোল পিটানোর দরকার নাই। এবং অবশ্যই অবশ্যই কাছের কাউকে দিয়ে পড়িয়ে নিন। দুইজন হলে আরও ভাল।

৪. রেফারেন্স লেটার সংগ্রহ (এবং লেখা)

রেফারেন্স লেটার বেশ গুরুত্বপূর্ণ একটা অংশ স্কলারশিপের। এমন কারও কাছ থেকে রেফারেন্স লেটার নিবেন যে আপনাকে গুরুত্ব দিবে। এমন কারও কাছ থেকে চাইলেন যিনি নিজে অনেক অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যাক্তিত্ব কিন্তু আপনার রেফারেন্স লেটার পাঠানোর মত সময় নেই- তাহলে তার কাছ থেকে না নেয়াই ভাল। বেশিরভাগ সময়ই নিজের রেফারেন্স লেটার নিজে লিখে শুধুমাত্র রেফারিকে দিয়ে দেখিয়ে সাইন করিয়ে নিলেই বা তার মাধ্যমে পাঠিয়ে দেয়া যায়। এক্ষেত্রে অবশ্যই চেষ্টা করবেন লেটার অফ পারপাসে আপনি নিজের সম্পর্ক যে কথাগুলো লিখেছেন রেফারিকে দিয়ে সেগুলো সূক্ষভাবে ভ্যারিফাই করানোর। অর্থাৎ আপনি যদি লেটার ওফ পারপাসে বলে থাকেন যে আপনি খুব সৎ, পরিশ্রমি এবং লেগে থাকতে পারেন কোন কিছুর পিছনে তাহলে রেফারির চিঠিতেও সেই কথাটা রেফারির মুখ দিয়ে বলাবেন। আপনি নিজের চিঠিতে বললেন আপনি নতুন নতুন সমাধান খুঁজে বের করতে আগ্রহী আর রেফারি তার চিঠিতে বললেন যে আপনি প্রতিষ্ঠিত পদ্ধতিতে কাজ করতে দক্ষ – এমনটা না হলেই ভাল।

আর কি…এই বিষয়গুলো খেয়াল রাখলে আশা করি কাজে দিবে। শুরু করেছিলাম আমার চাকরি ছেড়ে জিআরই পড়ার গল্প দিয়ে। শেষ পর্যন্ত এসে পড়লাম জার্মানিতে ডাড স্কলারশিপ নিয়ে। পরীক্ষা তাহলে কি হল??! সে গল্প পরে কখনো!

মাস্টার্স/ডক্টরেট/পোস্ট ডক্টরালদের জন্য Konrad-Adenauer-Stiftung (KAS) scholarship

স্কলারশিপ (scholarship) কি সোনার হরিণ নাকি দাবার গুটি?

স্কলারশিপ/বৃত্তি অভিজ্ঞতা – Abbe School of Photonics

KAAD scholarship

mm

By Tonny Nowshin

আমি তন্বী। আপাতত ডিএএডি স্কলারশিপ নিয়ে পড়তে এসেছি বার্লিন, জার্মানিতে। :)

4 thoughts on “DAAD স্কলারশিপ নিয়ে পড়াশোনা”
  1. i want to compleate my bsc in mechanical engineering in germany.my ssc gpa 4.50&hsc gpa 3.92.can this posssiable for me to read in a public univercity in german……………………

  2. I want to complete my bsc in EEE in Germany..my ssc gpa 4.44 and Diploma Eng CGPA 3.07…////// is this possible to study public University in Germany

Leave a Reply to Shanto Majumder Cancel reply