উর্দু আতা হ্যায়?
লুৎফর রহমান রিটন

দু’হাজার দুই এর মাঝামাঝি সময়। সদ্য এসেছি কানাডায়। প্রতিবেশী কারো সঙ্গেই তেমন একটা পরিচয় হয়ে উঠেনি। একটু একটু করে গুছিয়ে নিচ্ছি নিজেকে। নতুন করে সংসার পাতা হচ্ছে আবারো। চেয়ার-টেবিলের হাত-পা-পিঠ-কোমরগুলো আলাদা আলাদা প্যাকেটে পৌঁছে দিয়ে গেছে স্ট্যাপলস্ নামের দোকানের কর্মীরা। এখন এই চেয়ার-টেবিলগুলোকে নিজের পায়ে দাঁড় করাতে হবে। ওদের দেহের বিচ্ছিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলো মেনুয়াল অনুযায়ী খাপে-খাপ মিলিয়ে স্ক্রু লাগাতে হবে। এই কাজে মিস্ত্রি ডাকা যায়। কিন্তু ঘণ্টায় ওরা চার্জ করবে একশো ডলার। সুতরাং কুড়ি ডলারে যন্ত্রপাতির কিট কিনে নিজেই অবতীর্ণ হয়েছি কার্পেন্টারের ভূমিকায়। সকাল থেকেই খুট-খাট খুট-খাট, শুরু হয়েছে ‘চেয়ার-টেবিল দণ্ডায়মানকরণ প্রকল্প’। হাতুড়ি পেড়েক আর স্ক্রু-ড্রাইভার নিয়ে নতুন অ্যাডভেঞ্চারে ঝাঁপিয়ে পড়া কাঠমিস্ত্রি রিটনের ছবি তুলতে ব্যস্ত আমার কন্যা। এমন সময় দরোজায় নক।

ন’তলা এ্যাপার্টমেন্টের ন’তলাতেই অর্থাৎ সর্বোচ্চ ফ্লোরেই আমার ঠাঁই হয়েছে। কোনো দর্শনার্থী এলে নিচতলা থেকে নির্দিষ্ট বাজার নাম্বারে ডায়াল করতে হয়। গৃহের টেলিফোনটি তখন সমানে চিৎকার করে জানান দেয়—দর্শনার্থীর আগমন ঘটেছে। গৃহকর্তা বা গৃহকর্তী তখন টিভি অন করে চ্যানেল সিক্সটি নাইনে চলে যান। আর তখুনি টিভি পর্দায় ভেসে ওঠে দর্শনার্থীর চেহারা। দর্শনার্থী কাঙ্খিত হলে টেলিফোনের নাইন বাটন পুশ করেন গৃহস্ত। ক্র্যাক শব্দে তখন খুলে যায় নিচতলার মূল ফটক। দর্শনার্থী অনাকাঙ্খিত হলে গৃহস্ত নাইন বাটন পুশ করেন না। আর নাইন বাটন পুশ না করলে মূল ফটক খুলবে না কখনোই। এখানকার এ্যাপার্টমেন্টগুলোর সিকিউরিটি ব্যবস্থা এমনই। স্ট্রেঞ্জার বা অচেনা কেউ যাতে এ্যাপার্টমেন্টে ঢুকে পড়তে না পারে সেজন্যেই এই ব্যবস্থা। ব্যবস্থাটা ভালো কিন্তু তার পরেও উঠকো ঝামেলা এড়ানো মুশকিল হয়ে পড়ে কখনো কখনো। এটারও কায়দা আছে। অন্য আরেকটি পরিবারের অতিথি কিংবা দর্শনার্থীর অপেক্ষায় তখন দাঁড়িয়ে থাকতে হয় মূল ফটকে। সেই দর্শনার্থীর জন্যে দরোজা খোলা মাত্র এই উটকোরা সুড়ুৎ করে ঢুকে পড়ে। তারপর চলে আসে নির্দিষ্ট তলায় তার গন্তব্যে। আমার ক্ষেত্রে তেমন কিছু একটা ঘটেছে। আবারো দরোজায় নক।
চোখ রাখি ডোর হোলে। তিনজন। তিনজনেরই একটি কমন বৈশিষ্ট্য—মুখে লম্বা দাড়ি আর মাথায় টুপি। দরোজা না খুলেই পরিচয় জানতে চাইলে জবাব এলো, নেইবার।
—হু’জ দেয়ার? নেইবার। অগত্যা দরোজা খুলতেই হলো এইবার।
দরোজা খোলা মাত্র তিনজনেই, প্রায় একসঙ্গেই কোলাকুলি করার জন্যে ছ’বাহু বাড়িয়ে দিলো। আজ কোনো ঈদের দিন নয়। সুতরাং আমি কোলাকুলি থেকে বিরত থাকলাম এবং ওদেরও নিষ্ক্রিয় করলাম। কিন্তু হ্যান্ডশেকটাকে ওরা প্রায় মোসাফা’র পর্যায়ে নিয়ে ঠেকালো।

তিনজনের একজন ইরানি। কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার। একজন বাঙালি, সিভিল ইঞ্জিনিয়ার। অপরজন পাকিস্তানি। তার কোনো পেশা নেই। তিনিই দলনেতা। অটোয়ায় আমার মতো নতুন আসা বোকা কিসিমের মানুষদের হেদায়েত করেন এরা।
তিনজনই আমার অপরিচিত। বাঙালি ভদ্রলোকটিও। পরিচয় পর্বের পরপরই সবচে লম্বা দাড়িধারী পাকিস্তানি ভদ্রলোক তাদের আগমনের হেতু বর্ণনা করতে শুরু করলেন উর্দুতে,—হামনে ছুনা হ্যায় আপ বহুত বুজুর্গ আদমী হ্যায়…। তাকে থামিয়ে দিয়ে আমি বাংলায় বললাম—আপনি মোটেও ঠিক শোনেননি। আপনার কোথাও ভুল হচ্ছে।

পাকিস্তানি ভদ্রলোক দাড়িঅলা বাঙালি ভদ্রলোকের দিকে অর্থবোধক এবং প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে একবার তাকালেন। তারপর পুনরায় আমার দিকে দৃষ্টি ফিরিয়ে উর্দুতেই বললেন,—মেরা বেঙ্গালি ব্রাদারনে বোলা…

এইবারও তাকে মাঝপথে থামিয়ে আমি বাংলায় বললাম,—সমস্যাটা অন্যখানে। আপনাকে আজ একটা চমৎকার অন্যরকম অভিজ্ঞতা নিয়ে ফিরতে হবে বলে মনে হচ্ছে।

পাকিস্তানি ভদ্রলোক কিছুটা বিস্মিত ও বিরক্ত। কারণ আমি তার উর্দুতে করা প্রশ্নের জবাব বাংলায় দিচ্ছি। তিনি তার বিরক্তি ও বিস্ময় অনেক কষ্টে চেপে রেখে আমাকে প্রশ্ন করলেন,—উর্দু আতা হ্যায়?

আমিও তৎক্ষণাৎ পাল্টা প্রশ্ন করলাম,—বাংলা আতা হ্যায়?

মনে হলো এরকম অর্বাচীন প্রশ্ন তিনি তার এ জীবনে শোনেননি। তিনি না সূচক মাথা দুলিয়ে আমাকে বুঝিয়ে দিলেন বাংলাটা তার আসে না।
—দেন হোয়াই শুড আই?
অতঃপর শুরু হলো আমাদের কথোপকথন, ইংরেজিতে। আমি বিরক্তি না লুকিয়েই তাকে প্রশ্ন করলাম—
—জনাব আপনি আমার সহিত উর্দুতে কথোপকথন শুরু করিলেন ক্যানো?
—কারণ তোমাদের বাংলাদেশিরা আমার সহিত উর্দুতেই কথোপকথন করিয়া থাকে। উর্দুতে তাহারা স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে।
—তুমি কি কখনো তাহাদের সহিত বাংলায় কথোপকথন করিবার প্রচেষ্টা করিয়াছো?
—কস্মিনকালেও করি নাই। করিবার চেষ্টাও করি নাই।
—তাহা হইলে ক্যানো এইরূপ ধারণা তোমাদের বা তোমার মধ্যে বধ্যমূল হইলো যে, বাংলাদেশের বাঙালিরা উর্দৃতে কথা বলিতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। এবং বাংলাদেশিরা সকলেই তোমার সহিত উর্দুতেই বাৎচিৎ করিবে?
—তোমাদের বাংলাদেশের বাঙালিরা কখনোই তোমার ন্যায় এইরূপ ক্রুদ্ধ আচরণ করে নাই। এমনকি কেহ আমাকে এইরূপ প্রশ্নও করে নাই যে আমি বাংলা বলিতে সক্ষম কিনা।
—তোমার মধ্যে এইরূপ ধারণা কেন বদ্ধমূল হইয়াছে যে বাংলাদেশের বাঙালি মাত্রই উর্দু বলিতে সক্ষম?
—কারণ তোমাদের বাংলাদেশ একদা আমাদের পাকিস্তানের অংশ ছিল।
—তোমার এই যুক্তি মানিয়া লইলে তো তোমাদিগেরও বাংলা বলিতে পারাটা জরুরি হইয়া পড়ে।
—না, পাকিস্তানের অধিকাংশের ভাষা ছিল উর্দু, বাংলা নহে।
—পূর্ব পাকিস্তানের অধিবাসীদের অধিকাংশের ভাষা ছিল বাংলা। আর সেই কারণেই ১৯৫২ সালে রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন হইয়াছিল। পাকিস্তানি পুলিশের গুলিতে বাঙালি সালাম বরকত রফিক জব্বাররা শহিদ হইয়াছিল এবং বাংলা পূর্ব পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হইয়াছিল। তুমি কি ইহা অবগত নহো?
—আমি নিশ্চয়ই অবগত। সে যাহাই হউক আইসো আমরা প্রসঙ্গ পাল্টাইয়া ফেলি। তুমিও মুসলমান আমিও মুসলমান। আমরা মুসলমান মুসলমান ভাই ভাই। আপাতত সন্ধি স্থাপনের লক্ষ্যে আমার দিকে এবার তিনি হাত বাড়িয়ে দিলেন। আমি তার করমর্দন প্রত্যাখান করলাম। আমার হস্তযুগল আমি গ্রামীণ চেকের পাজামার পকেটে ঢুকিয়ে রাখলাম। প্রশ্ন করলাম,
—কী বলিলে?
—আমি বলিয়াছি যে আমরা মুসলমান মুসলমান ভাই ভাই।
—মুসলমান মুসলমান ভাই ভাই হইতে পারে কিন্তু আমি মনে করি পাকিস্তানি মুসলমান আর বাংলাদেশি মুসলমান কখনোই ভাই ভাই হইতে পারে না।
—ইহা তুমি কি বলিতেছো? পাকিস্তানি মুসলমান আর বাংলাদেশি মুসলমান ভাই ভাই নহে?
—জ্বি জনাব। ভাই ভাই হইলে তাহারা তাহাদের জননী ও ভগ্নিদের ধর্ষণ করিতো না। কিন্তু তাহারা করিয়াছে।
—তুমি এইসব কী বলিতেছো?
—আমি বলিতেছি যে উনিশ শ একাত্তর সালে তোমরা আমাদের তিরিশ লক্ষ বাঙালিকে হত্যা করিয়াছো। ছয় লক্ষ মা-বোনকে ধর্ষণ করিয়াছো। এই ছয় লক্ষের মধ্যে কতিপয় হিন্দু জননী ও ভগ্নিও রহিয়াছে। মুসলমান হইবার সুবাদে কেহ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান কিংবা অন্য কোনো ধর্মের কোনো নারীকেও ধর্ষণ করিবার অধিকার রাখে না। অথচ তোমরা তাহাই করিয়াছো বাংলাদেশে, ১৯৭১ সালে। ইসলামের নামে, মুসলমান মুসলমান ভাই ভাই জিকির তুলিয়া তোমরা বাংলাদেশের মুসলমান ভগ্নি এবং জননীকেও ধর্ষণ করিয়াছো। জননীকে ধর্ষণকারী ভগ্নিকে ধর্ষণকারী পাকিস্তানের মুসলমানরা বাংলাদেশের মুসলমানদের ভাই হইতে পারে না।
—ইহা রাজনীতির কথা। আমরা রাজনৈতিক আলোচনা করিতে আসি নাই।
—ইহা রাজনীতির কথা নহে। ইহা আমাদের বিপন্ন অতীত আর বিষণ্ন বর্তমানের দগদগে ক্ষতের কথা। আর ইহাকে ‘রাজনীতি’ আখ্যা দিয়াও তোমরা পার পাইবে না। রাজনীতির নামেও তোমরা জননী ও ভগ্নিকে ধর্ষণ করিতে পারো না। ধর্মের দোহাই দিয়া কিংবা রাজনীতির দোহাই দিয়া নারী ধর্ষণকে জায়েজ করিবার চেষ্টা যাহারা করে, তাহাগিদকে আমি মুসলমান কি, মানুষ বলিয়াই গণ্য করি না। তাহারা পশুরও অধম। পশুকে আমি কখনোই সহোদর গণ্য করি না।
—হইতে পারে কোনো কারণে অদ্য তুমি উত্তেজিত হইয়া পরিয়াছো। আমরা না হয় অন্য আরেকদিন আসিবো।
—অন্য আরেকদিন আসিয়া পাকিস্তানের মুসলমান আর বাংলাদেশের মুসলমানদের ভাই ভাই বলিলে আমার একই রকম উত্তর পাইবে। এই বিষয়ে আমার প্রতিক্রিয়ার কোনো ভিন্নতা হইবে না।
—যাহা হউক। আমরা চলিয়া যাইতেছি। যাইবার আগে বলি, নিকটেই সামনে ডানহস্তমুখী রাস্তায় এক ব্লক পরেই একটি মসজিদ রহিয়াছে। তুমি সেইখানে আসিও। আল্লাহর সন্ধানে আমরা সেইখানে সমবেত হই।
—আমার আল্লাহ এক ব্লক দূরের কোনো মসজিদে অবস্থান করেন না। আমার আল্লাহ সর্বত্র বিরাজমান। আমার আল্লাহ চার্চেও থাকেন, মন্দিরেও থাকেন। পৃথিবীর এমন কোনো স্থান নাই যেইখানে তিনি উপস্থিত নহেন। সুতরাং এক ব্লক দূরে আমার যাওয়া হইবে না।
—সেইখানে আসিলে দুই ডলার মূল্যের একটি পুস্তিকা তোমাকে বিনামূল্যে সরবরাহ করা হইবে যে পুস্তিকায় মুসলমান চিকিৎসকদের নাম ঠিকানা এবং ফোন নম্বর রহিয়াছে। তোমার স্ত্রী-কন্যার চিকিৎসার প্রয়োজনে মুসলমান চিকিৎসকদের সহিত যোগাযোগ করিতে পারিবে।
—আমি যখন চিকিৎসকের শরণাপন্ন হই তখন কখনোই জানিবার চেষ্টা করি না তিনি কোন ধর্মাবলম্বী। অতিসাম্প্রতিককালে জাপানে আমার স্ত্রীর একটি জটিল অস্ত্রোপচার করিয়াছেন একজন বুদ্ধিষ্ট চিকিৎসক। অস্ত্রোপচারের টেবিলে একজন রোগী এবং একজন চিকিৎসকের ধর্ম পরিচয়টি খুবই গৌণ একটি বিষয়। তখন তাহাদের মূল পরিচয় তাহারা মানুষ। সৃষ্টির সেরা, জীব। আশরাফুল মুখলুকাত।
পাকিস্তানি ভদ্রলোকের সঙ্গে আমার দীর্ঘ কথোপকথনের সময় ইরানি যুবক আর বাঙালি প্রবীণ ভদ্রলোক নিরব দর্শকের ভূমিকায় পরস্পরের দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকচ্ছিলেন। কিন্তু আমাদের সঙ্গে আলোচনায় শামিল হতে পারছিলেন না। সম্ভবত পাকিস্তানি লোকটিই তাদের নেতা। নেতার উপস্থিতিতে আলোচনায় অংশগ্রহণ সম্ভবত বেয়াদবির পর্যায়ে পড়ে। একাত্তরে পাকিস্তানিদের অপকীর্তির কথাগুলো বলবার সময় লক্ষ্য করেছি—দাড়িঅলা প্রবীণ আপাতঃ দৃষ্টিতে ধার্মিক বাঙালি ইঞ্জিনিয়ার ভদ্রলোকের চেহারায় বিরক্তির ছাপ। তিরিশ লক্ষ বাঙালিকে হত্যা আর ছয় লক্ষ মা-বোনের সম্ভ্রমহানীর ঘটনায় ভদ্রলোক বিচলিত নন মোটেই। বরং তিনি বিরক্ত, ক্যানো আমি তার পাকিস্তানি মুসলমান ব্রাদারকে মুখের ওপর কথাগুলো বললাম। পাকিস্তানি ভদ্রলোক বিদায় নেবার সময় বললেন,—আমাদের বেঙ্গলি ব্রাদার তোমার সহিত যোগাযোগ রক্ষা করিবে।

উটকো তিনজনকে আমি ঘরের ভেতর বসাইনি। আমরা কথা বলেছি লবিতে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়েই। তারা তিনজন চলে গেলেন এলিভেটরের কাছে। দরোজা বন্ধ করতে করতে আমি শুনলাম বাঙালি প্রবীণ আপাত: ধার্মিক ভদ্রলোক সেই পাকিস্তানির সঙ্গে কথা বলছেন আমার বিষয়ে। এবং সেটা উর্দুতে!

 


রচনাকাল ॥ ৩০ জুন, ২০০৪

mm

By টিম জার্মান প্রবাসে

আমি জার্মান প্রবাসে! আপনাদের সাথে ছিলাম, আছি, থাকব! :)

One thought on “উর্দু আতা হ্যায়? – লুৎফর রহমান রিটন”
  1. পাকিদের সাথে যারা উর্দুতে কথা বলে তারা নিজেদের
    বহুভাষাবিদ মনে করে এটা সত্যিই লজ্জার এদের
    কারনেই আমাদেরকে উপহাস করার সুযোগ পায় আর
    লেখক একটা উওর খুব ভাল দিয়েছেন আমার আল্লাহ
    মসজিদ মন্দির চার্চ সবজায়গায় থাকেন

Leave a Reply