আমার ইন্টার্ভিউ  ছিল আগষ্ট এর ২ তারিখে সকাল ৮.৩০ এ। নির্দিষ্ট দিনে আমি ৮.৩০ এর এক ঘন্টা আগেই পৌছে যাই। ৮.১৫ এর দিকে গেটের দারোয়ান একটা লিষ্ট নিয়ে ওই সময়ে যাদের ইন্টার্ভিউ ছিল তাদের নামের সাথে মিলিয়ে ভিতরে যাওয়ার অনুমতি দিচ্ছিল। ভিতরে যাওয়ার পর সিকিওরিটি মহিলা আমাকে বললেন  একটা টেবিলে ডকুমেন্টস সাজানোর লিষ্ট দেওয়া আছে। সে অনু্যায়ী সাজাতে হবে। এক কপি অরিজিনাল আর ফটোকপির দুই সেট লিষ্ট অনুযায়ী গুছিয়ে ওনার হাতে দিতে হবে। লিষ্টটা অনেকটা এমন ছিলঃ

১. অরিজিনাল পাসপোর্ট (ভিতরে ১ কপি ছবি)

২. ভিসা এপ্লিকেশন ফর্ম ( ১ অরিজিনাল + ২ ফটোকপি)। ফটো সাথে দিতে হবে

৩. পাসপোর্ট কপি (২ )

৪. এডমিশন লেটার (২)

৫. একোমডেশন লেটার/ ইয়ুথ হোষ্টেল বুকিং ( যার যেটা আছে) (২)

৬. ব্লক সার্টিফিকেট ( টাকা পাঠানোর পর  ডয়েচ ব্যাংক থেকে যে পিডিএফ টা দেয় সেটা) (২)

৭. ইন্স্যুরেন্স (২)

৮. এস.এস.সি + এইচ.এস.সি+ ব্যাচেলর

– সার্টিফিকেট (২)

– মার্কশীট (২)

– রেজিষ্ট্রেশন কার্ড (২)

– এডমিট কার্ড (২)

ব্যাচেলরের জন্যে শুধু সার্টিফিকেট আর মার্কশীট দেখালেই হবে

লিষ্টে ল্যাঙ্গুয়েজ সার্টিফিকেট এর উল্লেখ ছিল না। তাই এটাকে আমি একেবারে শেষে দিয়ে দিয়েছিলাম। এরপর অরিজিনাল ডকুমেন্টস আর এগুলোর দুই সেট ফটোকপি নিয়ে ওই মহিলার হাতে দিলাম। উনি আমাকে দুইটা ফর্ম দিলেন সেখানে আমার নাম, পাসপোর্ট নাম্বার , তারিখ আর সিগনেচার দিতে হলো। অতঃপর অপেক্ষার পালা শুরু হলো ইন্টার্ভিউ(Visa Interview) এর জন্যে। প্রায় এক ঘন্টা অপেক্ষা করার পর আমার ডাক আসলো। আমার ইন্টার্ভিউ নিয়েছিল এক নম্বর কাউন্টারে একজন ইয়াং ভদ্রলোক।

file

 

আমাকে খুব অল্প কিছু প্রশ্ন করেছিলেন ভদ্রলোক। প্রশ্ন গুলো এইরকম ছিলঃ

১. আমার প্রিভিয়াস একাডেমিক ব্যাকগ্রাউন্ড কি?

২. আমি কি মাষ্টার্স করতে যাবো নাকি?

৩. আমার কোর্স টার নাম কি?

৪. আমার ফিউচার প্ল্যান কি?

৫. আমার কোর্স টা সম্পর্কে কিছু জানি কিনা?

৬. জার্মানিতে এই সাব্জেক্ট এর ফিউচার কেমন?

এরপর উনি আমার ফিঙ্গারপ্রিন্ট নিলেন আর টাকা জমা দেওয়ার একটা রসিদ নিলেন। টাকা জমা দিয়ে আবার কাউন্টার এ যেতে বললেন । টাকা জমা দিয়ে যাওয়ার পর ভদ্রলোক আমাকে একটা কাগজ দিলেন হাতে, যেখানে লেখা ছিল আমি কত টাকা জমা দিয়েছি সেটা। আমাকে ডয়েচ ব্যাংকের কোন লিংক উনি দেননি তাই ধরে নিলাম যে আমার কনফার্মেশন পেয়ে গেছেন ওনারা। এরপর আমার অরিজিনাল ডকুমেন্টস গুলো ফেরত দিলেন আর বললেন আমার ইন্টার্ভিউ শেষ। আমি ওনাকে ধন্যবাদ দিয়ে চলে আসলাম।

পরিশেষে কয়েকটা কথা না বললেই নয়।

এক, আপনাদের যাদের ষ্টাডি গ্যাপ আছে তারা উপযুক্ত কারন সহ প্রমান সাথে নিয়ে যাবেন। এক বছরের ষ্টাডি গ্যাপ খুব একটা বড় সমস্যা না কিন্তু যাদের এর বেশি আছে তারা তাদের কারন আর প্রমান দুটোই সাথে রাখবেন। ধরুন, আপনি অনার্স শেষ করার পর জব করেছেন ২ বছর। ইন্টার্ভিউএ আপনাকে জিজ্ঞেস করলো এই দুই বছর কি করেছেন। আপনি বললেন, জব করেছেন। তখন হয়তো তারা জব এক্সপেরিয়েন্স সার্টিফিকেট চাইতে পারে। এইটাই প্রমাণ। এইগুলো নিয়ে যাযাওয়াই ভালো সাথে করে ইন্টার্ভিউ এর দিন। আপনি যদি মাষ্টার্স করেন অনার্স এর পর তাহলে সেটার সার্টিফিকেট বা মার্কশিট রাখবেন। মোটকথা যে কারণে গ্যাপ টা হবে সেটার একটা ভ্যালিড ডকুমেন্ট আপনি দেখাতে পারলে ভালো। আবার, মাস্টার্স করতে যারা যাচ্ছেন তাদের অনেকেই প্রশ্ন করেন যে MBA সার্টিফিকেট দেখাবেন কিনা? উত্তরে বলবঃ এখানে যেহেতু আপনার এমবিএ করা আছে সেহেতু সেখানে একটা নির্দিষ্ট সময় লেগেছে। আপনি ওই ডক গুলো দেখাবেন। কিন্তু এমবিএর পর কেন আবার মাষ্টার্স করতে চান, সেটা তো আপনার ভালো জানার কথা, তাইনা? 🙂

হতে পারে, ওই ইউনিভার্সিটি আপনার সাব্জেক্টের জন্যে খুবই ভালো! হতে পারে, ওখানে গবেষণাধর্মী পড়ালেখা ভালো হয় যেটার সুযোগ এখানে আপনি পাননি। আমি উত্তর দিয়ে দিলে সেটা মনে হয় ঠিক হবেনা! আর ওনারা যে প্রশ্ন করবেই বা করবেই না এমন গ্যারান্টি আমি দিতে পারবো না। কারণ আমাকে এই ব্যাপারে কিছু জিজ্ঞেস করেনি। কিন্তু আবার আর একজনকে করেছে। তাই এইটা সম্পূর্ণ তাদের উপর নির্ভর করে। কিন্তু জিজ্ঞেস করলে তার উপযুক্ত জবাব যদি না দিতে পারেন তাহলেই বিপদ!

দুই, যিনি ইন্টার্ভিউ(Visa Interview) নেন তার সাথে সহজ ভাবে কথা বলতে চেষ্টা করবেন। যা প্রশ্ন করবে তার বেশি কিছু না বলাই ভালো। কিছু মুখস্ত করে না যাওয়াই ভালো। তাতে আপনারই বিপদ। ওখানে এক আপুকে দেখেছিলাম যিনি প্রশ্ন গুলোর উত্তর একটা কাগজে লিখে এনেছিলেন আর সেটা পড়ছিলেন। ব্যাপরটা খুবই হাস্যকর ছিল।

তিন, এমন কিছু করবেন না যাতে নিজের ফাঁদে নিজেই পড়ে যান। প্রশ্নকর্তাকে আগ বাড়িয়ে কিছু বলতে যাবেন না বা আগ বাড়িয়ে কোন বাড়তি ডকুমেন্ট দেবেন না যাতে তিনি আপনাকে বিপদে ফেলার সু্যোগ পেয়ে যান।

সবার জন্যে অনেক অনেক শুভেচ্ছা রইলো আর লেখার ভুল ত্রুটির জন্যে ক্ষমাপ্রার্থী সবার কাছে! 🙂


এছাড়া পড়তে পারেনঃ

mm

By Sonali Dutta

আমি জার্মানির University of Hohenheim এ Crop Sciences বিষয়ে পড়ার সুযোগ পেয়েছি। আমার এতদূর আসার পেছনে গ্রুপের অবদান অপরিসীম। সবার কাছে আমি আন্তরিক ভাবে কৃতজ্ঞ :)

5 thoughts on “ভিসা ইন্টার্ভিউ অভিজ্ঞতা ২০১৫ – কিছু প্রশ্নোত্তর”
  1. documentlist is outdated for recent candidates, only specific documents mentioned by embassy is required, experiences from 2016 and onwards could be followed.

Leave a Reply