ধরুন আপনি জার্মানির কোন ইউনিভার্সিটি থেকে অফার লেটার পেয়ে গেছেন। আলহামদুলিল্লাহ। খুশির কথা । সবাইকে মিষ্টি খাওয়ান। কিন্তু সবার আগে যে কাজটা করবেন, তা হল এম্ব্যাসিতে ভিসার ইন্টার্ভিউ এর জন্য এপ্লাই করা। এটা খুবই জরুরী একটা ব্যাপার। কারণ বেশীরভাগ মানুষই ভিসা পাওয়ার পরে পাড়া প্রতিবেশী আর বন্ধুবান্ধবদের মিষ্টি খাওয়ানোর কাজে এতই ব্যস্ত হয়ে পড়ে যে এই আসল কাজটা করতে ভুলে যায়। যার কারণে অনেকে এডমিশন পাওয়ার পরেও জার্মানি আসার সুযোগ পায় না।

তাই অফার লেটার পাওয়ার সাথে সাথে দেরী না করে ভিসা ইন্টার্ভিউ এর জন্য এপ্লাই করে ফেলবেন।

ভিসা এপ্লিকেশনের নতুন নিয়ামাবলী

ইন্টার্ভিউ ডেট পেয়ে গেছেন। মোটামুটি সব কাগজপত্র তৈরি। কিন্তু দেখলেন শুধু একটা কাগজই নাই। সেটা হল “proof of genuine efforts to secure appropriate accommodation in Germany”। ওমা, এটা আবার কি। এটার অর্থ হল, আপনি জার্মানিতে গিয়ে সম্ভাব্য কোথায় উঠতে পারেন, তার একটা প্রমাণপত্র। আপনার তো মাথায় হাত। কিভাবে পাব প্রমাণপত্র। আপনার তো চৌদ্দগুষ্টীর কেউ জার্মানি যায় নাই। থাকার জায়গা পাব কই। যেই যুগ আসছে, এখন আপনি ঢাকায় বসে চট্টগ্রামের কোন বাসা ঠিক করতে পারবেন না। আর এটা তো সুদূর জার্মানি। আর এটা তো আর এমন না যে, নীলক্ষেত থেকে বানাই নিলাম, আর হয়ে গেল !! এখন কি করা যায়।

কথায় আছে, যত মুশকিল, তত আসান। তাই এটা নিয়ে এতটা চিন্তিত হবার আসলে কিছু নাই। জার্মানির সব শহরেই স্টুডেন্টদের থাকার জন্য একটা সেন্ট্রাল হোস্টেল সিস্টেম আছে। এরা সবচেয়ে কম খরচে স্টুডেন্টদেরকে হোস্টেল সুবিধা দেয়। এটাকে বলে, Studentenwerk। ধরুন আপনি Berlin যাচ্ছেন। তাহলে google এ গিয়ে studentenwerk berlin লিখে search করুন। পেয়ে যাবেন আপনার কাঙ্ক্ষিত ওয়েবসাইট। এবার ওদের অনলাইন এপ্লিকেশন অপশন খুঁজে বের করুন। অনলাইনে এপ্লিকেশন করে ফেলুন। এপ্লাই করার সময় আপনাকে অফার লেটার এর pdf টা attach করে দিতে হবে। এইভাবে এপ্লাই করা শেষ হলে একটা কনফার্মেশন মেইল পাবেন। এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এমব্যাসিতে ভিসা ইন্টার্ভিউ দেবার সময় ওই মেইলের একটা কপি অবশ্যই নিয়ে যাবেন। আপনার যদি ভাগ্য ভাল থাকে তাহলে হয়ত আপনার ভিসা ইন্টার্ভিউ এর আগেই Studentenwerk এর কাছ থেকে একটা কনফার্মেশন পেয়ে যাবেন। আর না পেলে আপনি waiting list এ আছেন, এমন একটা মেইল ওদেরকে পাঠাতে অনুরোধ করবেন। ওরা মেইলিং এর ব্যাপারে খুব আন্তরিক। আপনি অনুরোধ করলে ওরা পাঠিয়ে দিবে। এমবাসি যাবার সময় waiting list এ আছেন, ওই মেইলটাও নিয়ে যাবেন।

কিছু ইউনিভার্সিটির অবশ্য নিজেদেরই স্টুডেন্ট ডর্ম আছে। এরকম হলে তো কেল্লাফতে। আর কোন চিন্তাই নাই। ইউনিভার্সিটির স্টুডেন্ট ডর্মে এপ্লাই করতে সমস্যা হলে, প্রোগ্রাম কোঅরডিনেটরকে মেইল করবেন। ওর কাছ থেকে হেল্প নেবেন। যদি ওদের স্টুডেন্ট ডর্মে সিট থাকে, তাহলে আপনাকে একটা Contract paper পাঠিয়ে দিতে বলবেন। এটাই এমব্যাসির জন্য যথেষ্ট।

এখন ধরুন, আপনার ইউনিভার্সিটির স্টুডেন্ট ডর্ম নাই। আর studentenwerk এর কাছ থেকেও কোন কনফার্মেশন পান নাই। এখন কি করার আছে।

এখন আপনার হাতে দুইটা option খোলা আছে।

  1. Private housing
  2. Youth Hostel

Private Housing মানে আমাদের দেশের বাড়ি ভাড়া নেয়ার মতই ব্যাপার। বাড়ির মালিক আপনার কাছে রুম ভাড়া দেবে। কিন্তু এক্ষেত্রে বাড়ির মালিককে একটা ভাল পরিমাণ টাকা এডভান্স করতে হয়। তাই এই ব্যাপারটা একটু সতর্কতার সাথে ডিল করবেন। সম্ভব হলে পরিচিত কাউকে পাঠিয়ে কনফার্ম করলে সবচেয়ে ভাল। Private Housing এর জন্য Google এ search করুন। আশা করি পেয়ে যাবেন। ওখান থেকে আপনার স্বাদ এবং সাধ্যের মধ্যে যে সব বাসা মিলবে, সেগুলোর মালিকের সাথে মেইল বা ফোনে যোগাযোগ করুন। এই ব্যাপারে বলে রাখি, বেশিরভাগ জার্মান বাড়ির মালিকই ভাল ইংরেজি জানে না। তাই, Deutsch জানে, এমন কাউকে দিয়ে কথা বলাতে পারলে ভাল। নাহলে মেইল করার সময় Google translator এর সাহায্য নেবেন। আপনি যদি এরকম কোন Private Housing এ বাসা পান, তাহলে ওই বাড়ির মালিকের Signature সহ কন্ট্রাক্ট পেপার পাঠাতে বলবেন (ইমেইলে বা পোস্টে). ওই কন্ট্রাক্ট পেপারের কপিটাই এমবাসিতে দেখাবেন।

আরেকটা অপশন হল, youth Hostel। Youth Hostel হল টেম্পোরারি থাকার জায়গা, অনেকটা হোটেলের মত, কিন্তু হোটেল না। ইউরোপের বেশিরভাগ শহরেই এরকম অসংখ্য Youth Hostel আছে। ইউরোপ যেহেতু প্রতি বছর প্রচুর পর্যটক এবং স্টুডেন্ট আসে, তাই অল্প খরচে থাকার জন্য এই ব্যবস্থা। এটাকে বাংলাদেশের বোর্ডিং সিস্টেমের সাথে তুলনা করা যায়। এখানে থাকার খরচটা দৈনিক হিসেবে করা হয়। এইসব ইয়ুথ হোস্টেলের খোজও Google এ Search করলেই চলে আসবে। এইসব হোস্টেলে অনলাইন বুকিং সিস্টেম আছে। আপনি প্রয়োজন অনুসারে ১/২ মাসের জন্য বুকিং দিয়ে রাখতে পারেন। কারণ বেশিরভাগ Youth Hostel এ যাবার পরে যে কয়েকদিন থাকবেন, সে কয়েকদিন এর পেমেন্ট করতে হবে। তাই বেশিদিন বুকিং দিয়ে রাখলে কোন ক্ষতি নাই। বরং রিস্কে এ থাকবেন না। এরকম একটা Youth Hostel র লিঙ্ক দিলাম: http://www.aohostels.com/en/

Youth Hostel এ বুকিং করলে ওরা একটা কনফার্মেশন মেইল পাঠাবে। ওই মেইলের প্রিন্ট নিয়ে এমব্যাসিতে গেলেই হবে।

আশা করি এই পদ্ধতিতে আপনারা সহজেই আবাসন সমস্যার সমাধান করে ফেলতে পারবেন। সাথে সাথে আপনি যেই ইউনিভার্সিটি বা শহরে যাচ্ছেন, সেখানে অবস্থানরত বাঙ্গালী বা অন্য কোনভাবে পরিচিতদের সাথে যোগাযোগ করুন। তাদের কাছ থেকে পরামর্শ নিলে ব্যাপারটা আরও সোজা হয়ে যাবে।

ভিসা এপ্লিকেশনের নতুন নিয়ামাবলী

একটা বিশেষ ব্যাপার বলে রাখি। অনেকের আত্মীয় বা বন্ধু জার্মানিতে আছে, যাদের কাছে বা যাদের সাথে চাইলেই আপনি থাকতে পারবেন। কিন্তু এমব্যাসিতে ঠিকানা বা ডকুমেন্ট দেয়ার সময়, তাদের ঠিকানা বা তাদের কাছ থেকে কোন ডকুমেন্ট না দেয়াই ভাল। কারণ এসবক্ষেত্রে অনেক সময় আপনার visa Status টা Student Visa থেকে Family Reunion ভিসায় ফেলে দেয়। তখন আপনার ভিসা reject হবার ব্যাপক সম্ভাবনা থাকে। তাই এই ব্যাপারটা এড়িয়ে চলার চেষ্টা করবেন। যেমন আমার ব্যাপারটাই বলি। আমি Accommodation Confirmation হিসেবে Youth Hostel Booking ছাড়াও আমার জার্মান প্রবাসী এক মামার ঠিকানা দিয়েছিলাম এবং তার সাথে প্রয়োজনীয় কাগজ ও যোগ করে দেই। কিন্তু আমার ভিসা অফিসার আমাকে কড়াভাবে বলে দিয়েছে, কোন রিলেটিভের সাথে থাকবে না। Student Dorm বা Youth Hostel এ থাকবে।

তাই যত টা সম্ভব এই ব্যাপারটা পরিহার করবেন।

সবশেষে একটা জিনিশ বলতে চাই। আপনারা হয়তো জার্মান এমব্যাসির এই নিয়মের জন্য প্রচণ্ড নাখোশ। কিন্তু আসলে একটু চিন্তা করে দেখুন। ব্যাপারটা কিন্তু খুবই জরুরী। এটা বাংলাদেশ না, যে কমলাপুর রেলস্টেশনে বসেই রাত কাটিয়ে ফেলা যায়। এটা এখানে কোনমতেই সম্ভব না। কারণ এখানকার আবহাওয়ার একদম মা বাপ নাই। যেমন, কালকের কথাই বলি। দুপুরে সেই রোদ চারিদিকে। বিকেলে মোটামুটি টি-সার্ট আর ট্রাউজার পরেই আমরা ক্রিকেট খেললাম। তাপমাত্রা প্রায় ২০ ডিগ্রির মত ছিল। কিন্তু রাতে এক বড় ভাইয়ের বাসায় গিয়েছিলাম। বাসা থেকে বের হয়ে মোবাইল বের করে দেখি তাপমাত্রা -৪ ডিগ্রী। তাই, এখানে এক জায়গায় বসে সময় পার করে দিব, এই চিন্তা ভুলেও আনবেন না।

ধৈর্য হারাবেন না । খুঁজতে থাকুন, পেয়ে যাবেন। আপনাদের জার্মানি আগমন সুন্দর, সাবলীল ও সফল হোক, এই কামনা করি।

Tousif Bin Alam
Student of Master in Power Engineering
Technical University Munich

mm

By Tousif Bin Alam

এখনঃ Master of Science in Power Engineering, Technical University Of Munich, Germany. আগে: Islamic University of Technology এবং Govt. Hazi Mohammad Mohsin College, Chittagong.

7 thoughts on “কিভাবে খুঁজে পাব “ভাল-বাসা””
  1. ওয়াইফ আসতেছে মাস্টার্স করতে। আমার ইউনিতে এডমিসান নিচ্ছে। আমার ২৭ মিটার২ এর এক রুম এর বাসায় উঠবে। বাসাটা একসাথে ওর নামেও নেওয়া। ওটাই এম্বেসী তে একোমোডেসান হিসেবে দেখাবো। কি মনে হয় কোনো প্রবলেম হতে পারে? আমার অবশ্য মাস্টার্স শেষ এই সেপ্টেম্বর এ।

    1. হ্যা এটা দেখা হবে। একার নামে ২৫ স্কয়ার মিটার এর বেশি বড় রুম থাকলে couple থাকার পারমিশন দেয় নতুবা নয়, তারপরেও শহরের ওপর নির্ভর করে।

  2. আমি একজন ডিপ্লোমা ইন সিরামিক ইঞ্জিনিয়ারিং এর ছাত্র আমি কি জার্মান যাওয়ার জন্য আবেদন করতে পারব আমাকে একটু জানাবেন দয়া করে।

    1. অসম্ভব বলে কিছু নেই। একটু DAAD.de তে কোর্স খুঁজে দেখুন। আর ইমেলে যোগাযোগ করুন। আশা করি পারবেন।

  3. আমি ডিপ্লোমা ইন আর্কিটেকচার শেষ করেছি।
    এখন বিএসসি ইন সিভিল ইন্জিনিয়ারিং পড়ছি তৃতীয় বর্ষে।

    আমি আর্কিটেকচারের উপর Advance diploma করতে চাচ্ছি।

    আমি কি Application করতে পারবো?

    কাইন্ডলি একটু জানালে খুব উপকৃত হতাম।
    TIA.

Leave a Reply to Rakibul Hasan Cancel reply